শিক্ষকদের কথা ভাবুন by মো. রবিউল ইসলাম
'বে' উপসর্গ দিয়ে অনেক ইতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত শব্দকে নেতিবাচক অর্থে প্রকাশ করা যায়। যেমন_ বেকায়দা, বেমানান, বেহুঁশ ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি শব্দটিকেও নেতিবাচক বলা যায়। শব্দটির নেতিবাচকতা সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে।
বেসরকারি কলেজের একজন প্রভাষকের প্রারম্ভিক বেতন ১১ হাজার টাকা। এর মধ্যে চিকিৎসা ভাতা ও বাড়ি ভাড়া অন্তর্ভুক্ত। যেখানে একটি পরিবারের টয়লেট টিস্যু ও হারপিক বাবদ ২০০ টাকার বেশি খরচ হয়, সেখানে একজন প্রভাষক বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাতা পান মাত্র ১৫০ টাকা। এই বঙ্গদেশে এমন কোনো অজপাড়াগাঁ কি আছে যেখানে ১৫০ টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া পাওয়া সম্ভব?
উৎসব ভাতার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। একজন প্রভাষক উৎসব ভাতা পান ২ হাজার ৭০০ টাকা। এই দুর্মূল্যের বাজারে যা রীতিমতো হাস্যকর। পদোন্নতির বিষয়েও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বেপরোয়া বৈষম্য। এক বছর চাকরি শেষে ১২৫ টাকার একটি ইনক্রিমেন্ট দিয়ে অতিবাহিত করতে হয় ৮ বছর। এরপর একটি মাত্র টাইম স্কেল। পদবি প্রভাষকই রয়ে যায়। আবার রেশিওর রশি ধরে অনেকে ৮ বছর অতিক্রম করার পর সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ পান। অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা ২০ বছর প্রভাষক হিসেবে ও প্রায় একই পরিমাণ সময় পরীক্ষক এবং প্রধান পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পরও কোনো পদোন্নতি পাননি। বিষয়টি একজন শিক্ষাগুরুর কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হতাশাব্যঞ্জক।
মনোযোগ, একাগ্রতা ও উৎসর্গ এ তিনের সমাহারেই সৃষ্টি হয় একজন শিক্ষকের রঙ-তুলি। শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের জন্য নির্ধারিত বিষয়গুলোকে গভীরভাবে অনুধাবন, বিষয়টি শিক্ষার্থীদের স্মৃতিতে প্রবেশ করানোর জন্য কৌশল, সাদৃশ্য, উপমা ও দৃষ্টান্তের প্রয়োগ_ এসবই একজন শিক্ষকের রঙ। সেই সঙ্গে নিয়মিত অধ্যয়ন এবং ঘরে-বাইরের আর্থ-সামাজিক, ভূরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার ওপর হালনাগাদ খবরাখবর একজন শিক্ষককে নিপুণভাবে তার পেশায় দক্ষ করে তোলে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষকের পক্ষে এসব দক্ষতা অর্জন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, জীবিকার তাগিদে তাকে ক্লাসের বাইরে ব্যাচের পর ব্যাচ শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়াতে হচ্ছে। কৃষিকাজ কিংবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে হচ্ছে, যা তাদের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক শিক্ষাদান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে আজকের মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
শিক্ষকের ঘরে যদি অভাব থাকে, তবে তার প্রভাব গিয়ে পড়ে শিক্ষাদান পদ্ধতিতে। সামাজিক মান রক্ষার্থে তার মনোযোগ অন্য কোথাও চলে যায়। আর একজন শিক্ষকের এ মনোযোগহীনতা শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিতভাবে কল্যাণকর নয়। এ বিষয়টি বোঝার জন্য সরকার ও জনগণের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল।
স মো. রবিউল ইসলাম
প্রভাষক, ডি কে কলেজ
রানীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও
No comments