হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিচার হবে না? by রাকিবুল হাসান

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলমার্ক কেলেঙ্কারি। হলমার্ক একটি অপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। অথচ সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত আরও কয়েকটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে।


এই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠানটি কোনো সঠিক কাজে না লাগিয়ে এর অপব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। আমাদের মতো গরিব দেশে যেখানে ব্যাংকিং খাতের এমনিতেই নাজুক অবস্থা, সেখানে এ ধরনের ঘটনা আর্থিক খাতসহ অন্যান্য খাতের জন্য একটি অশনিসংকেত। ব্যাংক সাধারণত বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয় বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় সাধারণ জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আবার অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করে থাকে, যাতে তারা ক্ষুদ্র অর্থগুলো একত্রিত করে একটি বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। অথচ সেই অর্থই যদি এমনিভাবে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাতে সাধারণ জনগণ কেনই-বা আস্থা রাখবে ব্যাংকগুলোর ওপর?
জানা গেছে, হলমার্ক গ্রুপসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রই ভুয়া। তার কোনো বাস্তব রূপ নেই। তাহলে কি কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যাংকগুলো টাকা দিয়ে দেয়? নাকি টাকা আত্মসাতের এটি নতুন পন্থা! হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ। তিনি নাকি কিছুদিন আগেও গ্রামে বসবাস করতেন। পারিবারিক অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। অথচ রাতারাতি তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে যান তার গ্রামের পরিচিতজনদের চোখের আড়ালেই।
হলমার্ককে সেপ্টেম্বরের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর সমকাল জানাচ্ছে, সোনালী ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতিশ্রুত অর্ধেক টাকা পরিশোধ করেনি হলমার্ক গ্রুপ। এমনকি কবে নাগাদ এ টাকা ফেরত দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি তারা। দুদক বলেছে, এতে তারা মামলা করবে।
তবে হলমার্ক ইস্যু নিয়ে সরকার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এই অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে কি-না সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার জন্য বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আমাদের অর্থমন্ত্রী সরাসরি তার বিরোধিতা করে বলেছেন, এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ারের বাইরে। তাহলে কি দাগি আসামিরা সরকারেরই পৃষ্ঠপোষক_ এ প্রশ্ন কি খুবই অযৌক্তিক হবে? মনে হয় সরকার হলমার্ক বা সোনালী ব্যাংকের অপরাধীদের নয়, বরং খেটে খাওয়া কৃষকদের ওপর ব্যবস্থা নিতেই বেশি আগ্রহী। আসল অপরাধীরা বেঁচে যায় নানা কৌশলে। রাঘববোয়ালদের ঢাকতে সরকারেরও খুব বেশি বেগ পেতে হয় না।
স রাকিবুল হাসান :অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
rakibulju10@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.