নগরে পরিবেশ দূষণ-শিশুরাই বেশি ভুক্তভোগী
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনিসেফের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বের শহরাঞ্চলে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় শিকার শিশুরা। বিশ্বের বড় বড় বেশ কয়েকটি শহরে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে শিশুরা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। শহরের অস্থায়ী নিবাস বা বস্তিতে কর্মজীবী বাবা-মার সঙ্গে শিশুরাও থাকতে বাধ্য হয়।
এই শিশুদের জন্য খেলাধুলা বা বিনোদনের ব্যবস্থা দূরের কথা_ সুপেয় পানি পেঁৗছানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু পানযোগ্য পানির দুষ্প্রাপ্যতাই নয়, স্যানিটেশন সমস্যাও মারাত্মক। ফলে বস্তি ও বস্তি-সদৃশ বাসস্থানগুলোতে শিশুরা পানিবাহিত মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। বস্তুতপক্ষে শহরের যে কোনো দূষণের প্রথম শিকার দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা। দূষণমুক্ত খাবার, পানীয় তো বটেই_ যে বাসস্থানে তাদের থাকতে হয় তা শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, যন্ত্রদূষণ থেকে শুরু করে চিকিৎসা বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনাজনিত সকল দূষণের শিকার। শিল্প কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি জলাধারগুলোতে পতিত হওয়ার ফলে ঢাকার মতো শহরের অধিকাংশ পানির উৎস ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ দূষণের শিকার শুধু নিম্নবিত্তের শিশুরা নয়, শ্রেণী ও বয়স নির্বিশেষে সকলেই। পরিবেশগত ছোট-বড় এমন নানা সমস্যায় শহরের পরিবেশ দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। কোনো কোনো স্থান রীতিমতো ভাগাড়ের সঙ্গে তুলনীয় হয়ে পড়েছে। দ্রুত বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে আমাদের শহর নগর। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আর এই উদ্বেগ থেকেই এ বিষয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো সমকাল ও ওয়ার্ল্ডভিশনের উদ্যোগে। আয়োজনে পরিবেশ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাদের মূল্যবান মতামত দিয়েছেন। করণীয় বিষয়ে নানা পরামর্শ এসেছে। এ কথা সত্য, পরিবেশ দূষণ রোধে আইন যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। আর দায়িত্বটি সর্বাগ্রে সরকারের ওপর বর্তায়। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলে কখনোই উন্নততর পরিস্থিতি নির্মাণ করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নততর একটি দেশ গড়তে তাই এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদেরও বিশেষ দায়িত্ব আছে। সমাজে এ সম্পর্কে যত সক্রিয়তা আর সচেতনতা বাড়বে, যত কথা হবে ততই অগ্রগতির পথে এগোতে পারব আমরা। সেদিকেই এগিয়ে যাক বাংলাদেশ, এটিই প্রত্যাশা।
No comments