অভিনন্দন খুরশিদা by মাহবুবা নাসরীন
বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলার কেরনতলী গ্রামের খুরশিদা বিশ্বের শত শত জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগকে পেছনে ফেলে অর্জন করলেন ওয়াংগারি মাথাই পুরস্কার। এ অর্জনে তার দলের ২৮ জন নারীর অংশীদারিত্বের স্বীকৃতি তিনি দিয়েছেন। আমরা বলব, এই সাফল্য সমগ্র বাংলাদেশের।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করে যাওয়া যোদ্ধাদের। বিশেষত, ব্যক্তিমানুষকে ছাড়িয়ে একটি সম্মিলিত প্রয়াসের জয়। এতদিন পর্যন্ত নারী ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে উদাহরণ দিতে কেনিয়ার মৈথেয়ি দল অথবা ভারতের চিপকো আন্দোলনের উদাহরণ দিতাম। বাংলাদেশের উদাহরণ যথাযথভাবে দেওয়া যেত না। যখন প্রতিবেশ নারীবাদ প্রসঙ্গ আসবে তখন 'ওয়াংগারি মাথাই'-এর পাশাপাশি খুরশিদার নামও উচ্চারিত হবে। প্রসঙ্গ আসবে কীভাবে তিনি ২০০৬ সাল থেকে সহযোগী নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন সবুজ বেষ্টনী। জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন মিলে গড়ে তুলেছেন 'দ্য কোলাবরেটিভ পার্টনারশিপ অব ফরেস্ট' (সিপিএফ)। ২০১১ সালে নোবেল জয়ী ওয়াংগারি মাথাই-এর মৃত্যুর পর তার নামে সিপিএফ প্রচলন করে এই পুরস্কার।
যদিও নারী ও প্রকৃতির ঘনিষ্ঠতা স্বভাবজাত। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিবেশ নারীবাদ তত্ত্ব। তারপরও নারী বিশেষত, গ্রামীণ নারীদের পরিবেশ রক্ষায় অবদান কম স্বীকৃতি পায়। দীর্ঘকালীন গবেষণায় দেখেছি, অধিকাংশ নারী এবং পরিবেশ সাহিত্যে নারীদের পরিবেশবান্ধব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এ কারণে পরিবেশ রক্ষার যে কোনো উদ্যোগ নারীর জন্য শুভ উদ্যোগ বলে বিবেচিত হয়। নারী এবং পরিবেশের সম্পর্ক সমাজের স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন ও একটি সুস্থ জাতি গঠনের জন্য অবশ্যম্ভাবী। কারণ, শিশু ও নারীর আন্তঃসম্পর্ক শিশুর ভবিষ্যৎ ও দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। উন্নয়নশীল বিশ্বের নারীদের দেখা হয় পরিবেশ ব্যবস্থাপক হিসেবে। কারণ পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞান তাদেরই বেশি এবং পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা অপেক্ষাকৃত হিসাবী ও মিতব্যয়ী। অথচ বেশিরভাগ দেশেই নারীদের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আইনগত নিয়ন্ত্রণ নেই। পরিবেশ রক্ষায় পৃথিবীতে নারীরা যুগে যুগে বিভিন্ন আন্দোলনও করেছে, যার মধ্যে ভারতের চিপকো আন্দোলন, কেনিয়ার মৈথেয়ি দল, কেনিয়ার সবুজ বেষ্টনী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশে আছেন লক্ষ খুরশিদা, যারা দিনের পর দিন প্রকৃতি ও পরিবেশের লালন করেছেন। আমরা যারা শহরের আরাম কেদারায় বসে ইট-পাথরের ফাঁক দিয়ে সবুজ না দেখে দেখে দৃষ্টির ক্ষতি করি, খুরশিদারা তখন প্রকৃতি রক্ষায় সংগ্রাম করে যান। রক্ষা করেন এ দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য। খুরশিদার এই অর্জনের জন্য তাকে রোমে যেতে হবে। এমনি নারীদের প্রচেষ্টা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেসব সফলতাকে একসূত্রে গাঁথা হলে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশাল ঝুঁকির সামনেও আমরা করতে পারব অভিযোজন।
মাহবুবা নাসরীন :অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যদিও নারী ও প্রকৃতির ঘনিষ্ঠতা স্বভাবজাত। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিবেশ নারীবাদ তত্ত্ব। তারপরও নারী বিশেষত, গ্রামীণ নারীদের পরিবেশ রক্ষায় অবদান কম স্বীকৃতি পায়। দীর্ঘকালীন গবেষণায় দেখেছি, অধিকাংশ নারী এবং পরিবেশ সাহিত্যে নারীদের পরিবেশবান্ধব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এ কারণে পরিবেশ রক্ষার যে কোনো উদ্যোগ নারীর জন্য শুভ উদ্যোগ বলে বিবেচিত হয়। নারী এবং পরিবেশের সম্পর্ক সমাজের স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন ও একটি সুস্থ জাতি গঠনের জন্য অবশ্যম্ভাবী। কারণ, শিশু ও নারীর আন্তঃসম্পর্ক শিশুর ভবিষ্যৎ ও দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। উন্নয়নশীল বিশ্বের নারীদের দেখা হয় পরিবেশ ব্যবস্থাপক হিসেবে। কারণ পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞান তাদেরই বেশি এবং পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা অপেক্ষাকৃত হিসাবী ও মিতব্যয়ী। অথচ বেশিরভাগ দেশেই নারীদের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আইনগত নিয়ন্ত্রণ নেই। পরিবেশ রক্ষায় পৃথিবীতে নারীরা যুগে যুগে বিভিন্ন আন্দোলনও করেছে, যার মধ্যে ভারতের চিপকো আন্দোলন, কেনিয়ার মৈথেয়ি দল, কেনিয়ার সবুজ বেষ্টনী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশে আছেন লক্ষ খুরশিদা, যারা দিনের পর দিন প্রকৃতি ও পরিবেশের লালন করেছেন। আমরা যারা শহরের আরাম কেদারায় বসে ইট-পাথরের ফাঁক দিয়ে সবুজ না দেখে দেখে দৃষ্টির ক্ষতি করি, খুরশিদারা তখন প্রকৃতি রক্ষায় সংগ্রাম করে যান। রক্ষা করেন এ দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য। খুরশিদার এই অর্জনের জন্য তাকে রোমে যেতে হবে। এমনি নারীদের প্রচেষ্টা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেসব সফলতাকে একসূত্রে গাঁথা হলে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিশাল ঝুঁকির সামনেও আমরা করতে পারব অভিযোজন।
মাহবুবা নাসরীন :অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments