সব কিছুতেই এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে by মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য ও বিশ্বব্যাংক ইস্যু অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের বক্তব্য এখন 'টক অব দ্য কান্ট্রি'। তাঁর বক্তব্যে সরকার যেমন বিব্রত; তেমনি বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে কালের কণ্ঠের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা


আজিুজল ইসলাম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদসম্প্রতি প্রচার মাধ্যমে ড. মসিউর রহমানের দীর্ঘ ছুটি প্রসঙ্গে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে এবং তা নিয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্য পরিষ্কার নয়। এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে সব কিছুতে। তিনি যা বললেন, তা থেকেও পরিষ্কার হচ্ছে না বিষয়টি। তিনি বললেন, 'এই মুহূর্তে আমার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গৌণ ও তুচ্ছ। দেশের স্বার্থ অনেক বড়। তাই আমার রক্ত দিলেও যদি পদ্মা সেতু হয় তাহলে আমি রক্ত দিতে রাজি আছি। আমি ছুটিতে গেলে যদি দেশের সুনাম ফিরে আসে তাহলে অবশ্যই আমি তা করব।'
আবার তিনি বলেছেন গুপ্তচরের কথা। এটা অবশ্যই দেখার বিষয়। তাঁর কাছে কী তথ্য আছে, এটা আমরা জানি না। তবে এটাও দেখতে হবে, আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহের জন্য কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে পারে। যারা এই দেশে কোনো প্রকল্পে সহযোগিতা করে সেই প্রকল্পের কাজকর্ম সম্পর্কে, সেই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগও করতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প নিয়ে। তারা তো বাংলাদেশে অনেক প্রকল্প পরিচালনা করছে। অনেক টাকা তারা সেসব প্রকল্পে প্রদান করেছে। এই প্রক্রিয়াও অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। সব প্রকল্প নিয়ে এত প্রশ্ন উত্থাপন হয়ে থাকে? এই পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে এত কথা ওঠে কেন?
ড. মসিউর মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি। তবে যখন বিভিন্নমুখী চাপ থাকে, তখন তো মানসিক চাপ তৈরি হতেই পারে। মানসিক চাপের কথাই কিন্তু তিনি বলেছেন।
আবার আমরা যদি বিশ্বব্যাংক প্রসঙ্গে আসি তখন আমাদের তাকাতে হবে তাদের শর্তগুলোর দিকে। আমরা তো অনেকটা অন্ধকারে রয়ে গেছি। সেসব বিষয়ে মাঝেমধ্যে কিছু ধারণা দেওয়া হচ্ছে। সরকার কখনো কিছু কিছু বলছে। আবার খোলাখুলি কিছু বলছেও না। আসলে ধারণাগুলো স্পষ্ট নয়। শুনেছি সরকারের কাছে তারা বলেছে, মন্ত্রী আবুল হোসেনকে সরিয়ে দিতে হবে। তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি সরে গেলেন। তারপর শুনলাম পদ্মা সেতু ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর ড. মসিউর রহমানকে দীর্ঘ ছুটিতে পাঠাতে হবে। সবই তো ধূম্রজালের সৃষ্টি করেছে।
জনগণ কি জানে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে কী চিঠি লিখেছে? সরকার সেই চিঠি সাধারণ্যে প্রকাশ করেনি। তাহলে আমাদের জানার সুযোগটা কোথায়? এত অস্পষ্টতার পরও আমরা কিছু শর্ত পালন করতে দেখছি সরকারকে। বিশ্বব্যাংক বলেছে দুদকে তদন্ত করতে হবে। তারা বলেছে বিশ্বব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি কিংবা তাদের নিয়োজিত ব্যক্তিকে তদন্তে যুক্ত করতে হবে। অনিশ্চিত অবস্থা সবখানে। কী হচ্ছে-কী হবে_সবই অস্পষ্ট।
এমন অস্পষ্টতার মধ্যে শর্ত পূরণ হওয়ার পরও যদি বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করে, সেটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এত বড় প্রকল্পের দাপ্তরিক ও প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য সময় তো লাগবেই। বিশ্বব্যাংক যদি অর্থায়নও করে তাহলে টেন্ডার থেকে শুরু করে নির্দেশনা, পরামর্শক নিয়োগ থেকে শুরু করে কাজের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে তো যেতে হবে। প্রাথমিক কাজগুলো সেরে নিতেই সময় লেগে যাবে বছরখানেক। ফলে প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো হয়তো এ সময়ে করা সম্ভব হতে পারে। এটা হবে যদি সব কিছু ভালোয় ভালোয় হয়। বিশ্বব্যাংক যদি এগিয়ে আসে।
অনেকেই বলছেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। এখানে অনেক বিষয় জড়িত আছে। এই কাজ করতে হলে তো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে যদি সেতু করা হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, সেটিও চিন্তা করতে হবে। তখন অনেক কাটছাঁট করতে হবে। সেটা কিন্তু আমাদের অর্থনীতির জন্য সুখকর ফল বয়ে আনবে না।
ড. মসিউর রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে সৃষ্ট ধূম্রজাল, পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের ফল নিয়ে বিরাজমান অস্পষ্টতা না কাটলে বোঝা যাবে না প্রকৃত অবস্থা কী? সব মিলিয়ে এখন যে পরিবেশ, তাও আমাদের জন্য সুখকর নয়।

No comments

Powered by Blogger.