সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সমাপ্ত-সন্ত্রাস নির্মূলের অঙ্গীকার ২০ দফা আদ্দু ঘোষণা by মেহেদী হাসান,
২০ দফা আদ্দু ঘোষণার মধ্য দিয়ে মালদ্বীপের আদ্দু নগরীতে গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) ১৭তম শীর্ষ সম্মেলন। ঘোষণায় সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে অঙ্গীকারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) পূর্ণ বাস্তবায়ন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ এবং গণমাধ্যমের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে চূড়ান্ত করা এই ঘোষণা শীর্ষর্ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
সার্কের সভাপতি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ গতকাল বিকেলে আদ্দু নগরীর ইকুয়েটরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে আদ্দু ঘোষণা ব্যাখ্যা করেন। এ সময় সার্ক দেশগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সার্কের এবারের শীর্ষ সম্মেলনে এ অঞ্চলের মধ্যে ব্যাপক পরিসরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানুষের চলাচল বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুবিধার জন্য সম্মেলনের প্রতিপাদ্য 'সেতুবন্ধ রচনা'কে স্বাগত জানানো হয়। সার্ক দেশগুলো মানবাধিকার, সুশাসন, পারস্পরিক সম্মানবোধ, গণতন্ত্র, মানবিক গুরুত্ব, স্বাধীনতা, আস্থা বৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
এ ছাড়া মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সমাজে আয় বৈষম্য নিরসন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ব্যাপারে সার্ক দেশগুলো আবারও তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
নারী ও কন্যাশিশুদের মৌলিক অধিকারকে সার্বজনীন মানবাধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সার্ক দেশগুলো। এ ছাড়া লিঙ্গভিত্তিক সংঘাত-বৈষম্যকেও মানবাধিকার লংঘন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সার্ক দেশগুলো এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পরস্পর যোগাযোগের মাধ্যমে আন্তসাংস্কৃতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করতে এ অঞ্চলের মধ্যে বহু সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যের ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছে। আরো রয়েছে সব ধরন ও মাত্রার সন্ত্রাসবাদ, আন্তদেশীয় সংগঠিত অপরাধ বিশেষ করে অবৈধ মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচার এবং সমুদ্রে ক্রমবর্ধমান দস্যুতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার।
সার্ক দেশগুলো এ অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকির ব্যাপারে নিজেদের সচেতনতার কথা জানিয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজনও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলন থেকে সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন র্যাপিড রেসপন্স টু ন্যাচারাল ডিজাস্টার, সার্ক সিড ব্যাংক অ্যাগ্রিমেন্ট, সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন মাল্টিলেটারাল অ্যাগ্রিমেন্ট অন রিকগনিশন অব কনফরমিটি অ্যাসেসমেন্ট এবং সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন ইমপ্লিমেন্টেশন অব রিজিওনাল স্ট্যান্ডার্ডস স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সার্ক নেতারা দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সাফটার পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আদ্দু ঘোষণা : ২০ দফা আদ্দু ঘোষণার প্রথম দফায় সাফটার পূর্ণ বাস্তবায়ন, স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা কমিয়ে আনার পাশাপাশি অশুল্ক বাধাগুলো দূর এবং মান ও কাস্টমস প্রক্রিয়া দ্রুত সমন্বয়ের জন্য সাফটা মিনিস্টারিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় আর্থিক মূলধন ও দীর্ঘমেয়াদে আন্তআঞ্চলিক বিনিয়োগের সুযোগ দিতে প্রস্তাবনা তৈরির জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, ২০১২ সালে মালদ্বীপের কুলহুধুফ্ফুসিতে সার্ক ভ্রমণ ও পর্যটন মেলার পাশাপাশি দ্বাদশ সার্ক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠানের কথা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের কাছে এ অঞ্চলের পর্যটনকে উৎসাহিত করতে 'ডেস্টিনেশন সাউথ এশিয়া'র মোডালিটিজ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
চতুর্থ দফায় সার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠকের আগেই আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ চুক্তি ও মোটরযান চলাচলবিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রুপের বৈঠক করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে কনটেইনারবাহী ট্রেন চালুর পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশনাও রয়েছে।
পঞ্চম দফায় চলতি বছরের মধ্যেই ভারত মহাসাগরে কার্গো ও যাত্রীবাহী ফেরি সার্ভিস চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রস্তুতি পর্ব শেষ করতে বলা হয়েছে সার্ক মহাসচিবকে।
আদ্দু ঘোষণার ষষ্ঠ দফায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে থিম্পু ঘোষণা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সপ্তম দফায় জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আন্তসরকার কাঠামো চুক্তি ও আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিনিময় ধারণাপত্র সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুতের বাজার সৃষ্টির কাজও সম্পন্নের নির্দেশনাও রয়েছে। অষ্টম দফায় প্রত্যেক দেশের জাতীয় আয়ের যথার্থ একটি অংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
নবম দফায় সার্ক বীজ ভাণ্ডারের গতিশীল কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আগামী বৈঠকের আগেই এর পরিচালন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
দশম দফায় ক্ষুদ্রাস্ত্র ও অবৈধ মাদক চোরাচালানের মধ্যে যোগসূত্র আমলে নিয়ে সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে সমন্বিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদবিষয়ক জাতিসংঘ সনদ দ্রুত কার্যকর এবং অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার সার্ক সনদ দ্রুত অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। একাদশ দফায় রয়েছে এ অঞ্চলের সামুদ্রিক দস্যুতা মোকাবিলায় কাজ করার কথা।
দ্বাদশ দফায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ও এসডিজিগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংবিধানগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ অঞ্চলে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তসরকার বিশেষজ্ঞ গ্রুপের বৈঠক আহ্বানের কথা বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ দফায় পরবর্তী সম্মেলনে গৃহীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সার্ক রিজিওনাল কনভেনশন অন প্রিভেন্টিং অ্যান্ড ট্রাফিকিং ইন উইম্যান অ্যান্ড চিলড্রেন ফর প্রস্টিটিউশন চূড়ান্ত করার নির্দেশনা রয়েছে। চতুর্দশ দফায় নিরাপদ পানীয় জল ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধাকে এ অঞ্চলের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি এর বাস্তবায়নযোগ্য কাঠামো প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
পঞ্চদশ দফায় রয়েছে_এ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংকট্যাংকগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষার মান ও সনদের মধ্যে সমন্বয়ের কথা। ১৬তম দফায় দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাসহ এ অঞ্চলের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে দক্ষিণ এশিয়া ফোরামকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৭তম দফায় রয়েছে আন্তসরকার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সার্ক সচিবালয় ও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোসহ সার্কের কাঠামো শক্তিশালী করার বিষয়। ১৮তম দফায় সার্কের আওতায় সর্বসম্মত খাতগুলোতে প্রয়োজনে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে সার্ক সচিবালয় ও ইনস্টিটিউশনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৯তম দফায় আগামী বছর সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে সংলাপের অংশীদারিত্বসহ (ডায়ালগ পার্টনারশিপ) সার্কের পর্যবেক্ষক প্রশ্নে সমন্বিত পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০তম দফায় এ অঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক গণমাধ্যম দিবস পালন এবং গণমাধ্যমবিষয়ক আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সার্কের এবারের শীর্ষ সম্মেলনে এ অঞ্চলের মধ্যে ব্যাপক পরিসরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানুষের চলাচল বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সুবিধার জন্য সম্মেলনের প্রতিপাদ্য 'সেতুবন্ধ রচনা'কে স্বাগত জানানো হয়। সার্ক দেশগুলো মানবাধিকার, সুশাসন, পারস্পরিক সম্মানবোধ, গণতন্ত্র, মানবিক গুরুত্ব, স্বাধীনতা, আস্থা বৃদ্ধি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
এ ছাড়া মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সমাজে আয় বৈষম্য নিরসন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের ব্যাপারে সার্ক দেশগুলো আবারও তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
নারী ও কন্যাশিশুদের মৌলিক অধিকারকে সার্বজনীন মানবাধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সার্ক দেশগুলো। এ ছাড়া লিঙ্গভিত্তিক সংঘাত-বৈষম্যকেও মানবাধিকার লংঘন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সার্ক দেশগুলো এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পরস্পর যোগাযোগের মাধ্যমে আন্তসাংস্কৃতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করতে এ অঞ্চলের মধ্যে বহু সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যের ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছে। আরো রয়েছে সব ধরন ও মাত্রার সন্ত্রাসবাদ, আন্তদেশীয় সংগঠিত অপরাধ বিশেষ করে অবৈধ মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচার এবং সমুদ্রে ক্রমবর্ধমান দস্যুতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার।
সার্ক দেশগুলো এ অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকির ব্যাপারে নিজেদের সচেতনতার কথা জানিয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজনও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলন থেকে সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন র্যাপিড রেসপন্স টু ন্যাচারাল ডিজাস্টার, সার্ক সিড ব্যাংক অ্যাগ্রিমেন্ট, সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন মাল্টিলেটারাল অ্যাগ্রিমেন্ট অন রিকগনিশন অব কনফরমিটি অ্যাসেসমেন্ট এবং সার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট অন ইমপ্লিমেন্টেশন অব রিজিওনাল স্ট্যান্ডার্ডস স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়েছে। সার্ক নেতারা দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সাফটার পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আদ্দু ঘোষণা : ২০ দফা আদ্দু ঘোষণার প্রথম দফায় সাফটার পূর্ণ বাস্তবায়ন, স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা কমিয়ে আনার পাশাপাশি অশুল্ক বাধাগুলো দূর এবং মান ও কাস্টমস প্রক্রিয়া দ্রুত সমন্বয়ের জন্য সাফটা মিনিস্টারিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় আর্থিক মূলধন ও দীর্ঘমেয়াদে আন্তআঞ্চলিক বিনিয়োগের সুযোগ দিতে প্রস্তাবনা তৈরির জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, ২০১২ সালে মালদ্বীপের কুলহুধুফ্ফুসিতে সার্ক ভ্রমণ ও পর্যটন মেলার পাশাপাশি দ্বাদশ সার্ক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠানের কথা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বেসরকারি খাতগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের কাছে এ অঞ্চলের পর্যটনকে উৎসাহিত করতে 'ডেস্টিনেশন সাউথ এশিয়া'র মোডালিটিজ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
চতুর্থ দফায় সার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠকের আগেই আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ চুক্তি ও মোটরযান চলাচলবিষয়ক বিশেষজ্ঞ গ্রুপের বৈঠক করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে কনটেইনারবাহী ট্রেন চালুর পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশনাও রয়েছে।
পঞ্চম দফায় চলতি বছরের মধ্যেই ভারত মহাসাগরে কার্গো ও যাত্রীবাহী ফেরি সার্ভিস চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রস্তুতি পর্ব শেষ করতে বলা হয়েছে সার্ক মহাসচিবকে।
আদ্দু ঘোষণার ষষ্ঠ দফায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে থিম্পু ঘোষণা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সপ্তম দফায় জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আন্তসরকার কাঠামো চুক্তি ও আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিনিময় ধারণাপত্র সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুতের বাজার সৃষ্টির কাজও সম্পন্নের নির্দেশনাও রয়েছে। অষ্টম দফায় প্রত্যেক দেশের জাতীয় আয়ের যথার্থ একটি অংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
নবম দফায় সার্ক বীজ ভাণ্ডারের গতিশীল কার্যক্রম নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আগামী বৈঠকের আগেই এর পরিচালন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
দশম দফায় ক্ষুদ্রাস্ত্র ও অবৈধ মাদক চোরাচালানের মধ্যে যোগসূত্র আমলে নিয়ে সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটন এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে সমন্বিত ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদবিষয়ক জাতিসংঘ সনদ দ্রুত কার্যকর এবং অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার সার্ক সনদ দ্রুত অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। একাদশ দফায় রয়েছে এ অঞ্চলের সামুদ্রিক দস্যুতা মোকাবিলায় কাজ করার কথা।
দ্বাদশ দফায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ও এসডিজিগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংবিধানগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ অঞ্চলে লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তসরকার বিশেষজ্ঞ গ্রুপের বৈঠক আহ্বানের কথা বলা হয়েছে। ত্রয়োদশ দফায় পরবর্তী সম্মেলনে গৃহীত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সার্ক রিজিওনাল কনভেনশন অন প্রিভেন্টিং অ্যান্ড ট্রাফিকিং ইন উইম্যান অ্যান্ড চিলড্রেন ফর প্রস্টিটিউশন চূড়ান্ত করার নির্দেশনা রয়েছে। চতুর্দশ দফায় নিরাপদ পানীয় জল ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধাকে এ অঞ্চলের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি এর বাস্তবায়নযোগ্য কাঠামো প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
পঞ্চদশ দফায় রয়েছে_এ অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংকট্যাংকগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষার মান ও সনদের মধ্যে সমন্বয়ের কথা। ১৬তম দফায় দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাসহ এ অঞ্চলের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে দক্ষিণ এশিয়া ফোরামকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৭তম দফায় রয়েছে আন্তসরকার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সার্ক সচিবালয় ও আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোসহ সার্কের কাঠামো শক্তিশালী করার বিষয়। ১৮তম দফায় সার্কের আওতায় সর্বসম্মত খাতগুলোতে প্রয়োজনে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে সার্ক সচিবালয় ও ইনস্টিটিউশনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৯তম দফায় আগামী বছর সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে সংলাপের অংশীদারিত্বসহ (ডায়ালগ পার্টনারশিপ) সার্কের পর্যবেক্ষক প্রশ্নে সমন্বিত পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০তম দফায় এ অঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক গণমাধ্যম দিবস পালন এবং গণমাধ্যমবিষয়ক আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
No comments