খবর- আমনের বাম্পার ফলনেও বাড়ছে চালের দাম by ইফতেখার মাহমুদ
সারা দেশে আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৩ শতাংশ কম। প্রতি মাসেই বঙ্গোপসাগরে ছিল একাধিক নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়। এই সবকিছুই উপেক্ষা করে কৃষকের মাঠে এখন সোনারঙা ধানের সমারোহ। তবে কৃষকের মুখের এই হাসি ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে পারছে না। এই সময়টায় সাধারণত ধানের দাম কমে যায়। ফলন ভালো হলে তো কথাই নেই, দাম কমবেই। কিন্তু এবার এর উল্টো চিত্র। আমন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ধান-চালের প্রধান মোকাম ও হাটগুলোতে ধানের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, এবারের আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এক কোটি ৩৫ লাখ টন চাল উৎপাদিত হবে। এরই মধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন ধান কৃষকের গোলায় উঠেছে। গত আউশে উৎপাদন ছিল প্রায় ৪০ লাখ টন। সরকারের গুদামে আট লাখ টন চাল-গম মজুদ আছে, ডিসেম্বরের মধ্যে আরও আট লাখ টন আমদানি হয়ে আসছে। কিন্তু তার পরও চালের দাম না কমে বরং বাড়ছে।
দেশের বিভিন্ন মোকাম ও বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতি মণ ধান ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মোকামগুলোতে প্রতি কেজি চালের দাম এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে। তবে খুচরো বাজারে চাল এখনো ৩১ থেকে ৩৪ টাকায় স্থিতিশীল আছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ফুড আউটলুক নভেম্বর সংখ্যায় বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্বে গত বছরের তুলনায় এক কোটি ১০ লাখ টন চাল অতিরিক্ত উৎপাদিত হয়েছে। এককভাবে কেবল ভারতেই উৎপাদন ১২ শতাংশ বেড়ে ১০ কোটি টন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বর্তমানে ৪১৫ থেকে ৫০০ ডলারে ওঠা-নামা করছে উল্লেখ করে এফএও আরও বলেছে, গমের দাম বাড়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চালের দাম কিছুটা বেড়ে বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। খুব দ্রুত বিশ্ববাজারে চালের দাম কমে আসবে। ভারত ও মিসর চাল রপ্তানি বন্ধ রাখায় দাম কমছে না। বাম্পার ফলন হওয়ায় ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে চাল বিক্রি শুরু করলে দাম আরও কমে আসবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সরকারের খাদ্য পরিধারণ ও মূল্যায়ন কমিটির হিসাব অনুযায়ী আমন মৌসুমে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ও চালে ২১ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি মণ ধানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ ধরলে দাম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা হওয়ার কথা। অথচ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি মণ মোটা চালের ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে এক মাস ধরে মোটা চালের দাম ৩১ থেকে ৩২ টাকায় স্থিতিশীল আছে। পাইজম ৩৭ থেকে ৩৮ ও নাজিরশাইল ৩৬ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আটার দাম ২৮ থেকে ৩৩ টাকা। গত এক মাসে সব ধরনের আটার দাম ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।
সরকারও চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে এবারের আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান বন্ধ রেখেছে। সরকার মনে করছে, ধান ও চালের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হলে বাজারে এসব পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে।
চালকলের মালিকদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ থাকা সাত থেকে আট হাজার চালকল চালু হয়েছে। হাট থেকে তারা একযোগে কেনা শুরু করায় বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ মোটা ও মাঝারি মানের ধানের দাম ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া ও রংপুরে প্রতি মণ ধানের দাম এখন ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।
বাংলাদেশ অটো-মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার চালকল রয়েছে। তিন থেকে চার হাজার মিল সারা বছর চালু থাকে। আমন ও বোরো ধান ওঠার পর বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে চালু হয়। এ সময় চালকলগুলো প্রতিযোগিতা করে ধান কিনতে শুরু করায় দাম বেড়ে গেছে।
মিল মালিক সমিতির আহ্বায়ক লায়েক আলী চালকলের মালিকদের প্রতিযোগিতার কারণে ধানের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, মাঠে ধানের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বাম্পার ফলন হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ আমন কাটা হয়ে যাবে। প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎপাদন হলে ডিসেম্বর নাগাদ ধান ও চালের দাম কমে আসবে।
বর্তমানে বাজারে যেসব চাল বিক্রি হচ্ছে, তা গত বোরো মৌসুমে প্রতি মণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কেনা। এই দর অনুযায়ী চালের দাম ৩০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু বাজারে ৩১ টাকার নিচে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে লায়েক আলী বলেন, আমনের কিছু চাল বাজারে উঠছে। তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পুরোনো চালের দামও বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাত্তার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে দেড় কোটি কৃষক পরিবার ও প্রায় ৪০ লাখ কৃষি মজুর রয়েছেন। ধানের দাম বাড়ায় এই মানুষগুলোর হাতে টাকা আসছে, কৃষি অর্থনীতির জন্য তা ইতিবাচক। তবে চালের দাম বাড়লে তা শহুরে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জন্য সমস্যা। ফলে এই মানুষগুলোর জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে কম দামে চাল বিক্রির প্রয়োজন পড়বে।
ডিসেম্বর নাগাদ বেশির ভাগ আমন কাটা হয়ে গেলে দাম কমার আশা প্রকাশ করে সাত্তার মণ্ডল বলেন, প্রতি মণ ধানের দাম ৬৫০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। এতে সামগ্রিকভাবে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
দিনাজপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক আসাদুল্লাহ্ সরকার জানান, দিনাজপুর সদর, বিরল ও বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন ধানের হাটে ৭৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা বিআর-১১ ধান এক হাজার ৫৬০ থেকে এক হাজার ৫৭০ টাকায়, লাল ও সাদা গুটি স্বর্ণা এক হাজার ৫৬০ টাকা (আর্দ্রতা বেশি) থেকে এক হাজার ৬০০ ও এক হাজার ৬২০ টাকা (কম আর্দ্রতা) এবং পাইজম এক হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলার অটো রাইস মিলের মালিক আবুল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, জেলার বেশির ভাগ বড় বড় অটো রাইস মিল চালু হয়নি। তারা ধান কেনা শুরু করেনি। হাসকিং মিল, ছোট ছোট ব্যবসায়ী এবং কতিপয় মজুদদার না বুঝে মৌসুমের শুরুতেই আমন ধান কিনে মজুদ করতে শুরু করছেন। এ কারণে ধান ও চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল্লাহ্ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, আমনের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাজারে আসে। কারণ, শুকনো মৌসুমের কারণে কৃষক সেই ধান সহজেই গোলাজাত করতে পারেন। অল্প ধান নিয়ে ফড়িয়াদের প্রতিযোগিতার কারণে ধানের দাম বাড়ছে।
আমাদের ঈশ্বরদী প্রতিনিধি মাহাবুবুল হক জানান, উত্তরবঙ্গের বৃহৎ চালের মোকাম ঈশ্বরদীতে গত দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি (৮৪ কেজি) চালের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর খুচরো বাজারে বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন টাকা। চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মোকামের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় জোতদার কৃষকেরা প্রচুর ধান মজুদ করে রেখেছেন এবং চাহিদার তুলনায় তাঁরা অনেক কম পরিমাণ ধান বিক্রি করছেন। ফলে তাঁদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে।
=============================
রাজনৈতিক আলোচনা- 'বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি' by ফজলুল বারী আলোচনা- 'খাদ্যনিরাপত্তা ও পশুসম্পদ' by ড. মো. সিদ আলোচনা- 'আমি বাস্তুহারা'_এ কথার মানে কী?' by এ এন রাশেদা গল্পালোচনা- 'বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র' by মোস্তফা কামাল রাজনৈতিক আলোচনা- 'যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধা সনদ' by হারুন হাবীব খবর ও ফিচার- কয়েন-কাহিনী প্রকৃতি- 'বৈরিতায় বিপন্ন বাঘ' by বিপ্লব রহমান প্রকৃতি- 'সুন্দরবন ঘেঁষে রেললাইন!' by পার্থ সারথি দাস খবর- কোরীয় সীমান্তে ব্যাপক গোলাবিনিময়ে নিহত ২ শিল্প-অর্থনীতি 'চামড়াশিল্প শিগগিরই সরছে না' by আলী আসিফ ফিচার- ‘র্যাগিং : পৌষ মাস না সর্বনাশ?' by সমুদ্র সৈকত ভর্তি এবার লটারিতে! by হাবিবুর রহমান তারেক ও তমাল আবদুল কাইয়ুম আলোচনা- 'পেট্রোবাংলার ভূমিকা এবং কিছু প্রশ্ন' by ড. এম শামসুল আলম আন্তর্জাতিক- 'যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকনীতি ইরানকে বিজয়ী করছে' by ফয়সাল আমিন ইস্ত্রাবাদি আলোচনা- 'ইভ টিজিং : দায়ী কে?' by ফখরে আলম কল্প গল্প- '...আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে!' by আলী আলী হাবিব রাজনৈতিক আলোচনা- ''উচিত কথায় ননদ বেজার, গরম ভাতে ভাতে বিলাই (বিড়াল)' by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রকৃতি- 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষশত্রু' by মেহেদী উল্লাহ ইতিহাস- 'ইতিহাসে মওলানা ভাসানীর আসন' by সৈয়দ আবুল মকসুদ
প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ ইফতেখার মাহমুদ
এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
রাজনৈতিক আলোচনা- 'বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি' by ফজলুল বারী আলোচনা- 'খাদ্যনিরাপত্তা ও পশুসম্পদ' by ড. মো. সিদ আলোচনা- 'আমি বাস্তুহারা'_এ কথার মানে কী?' by এ এন রাশেদা গল্পালোচনা- 'বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র' by মোস্তফা কামাল রাজনৈতিক আলোচনা- 'যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের যন্ত্রণা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধা সনদ' by হারুন হাবীব খবর ও ফিচার- কয়েন-কাহিনী প্রকৃতি- 'বৈরিতায় বিপন্ন বাঘ' by বিপ্লব রহমান প্রকৃতি- 'সুন্দরবন ঘেঁষে রেললাইন!' by পার্থ সারথি দাস খবর- কোরীয় সীমান্তে ব্যাপক গোলাবিনিময়ে নিহত ২ শিল্প-অর্থনীতি 'চামড়াশিল্প শিগগিরই সরছে না' by আলী আসিফ ফিচার- ‘র্যাগিং : পৌষ মাস না সর্বনাশ?' by সমুদ্র সৈকত ভর্তি এবার লটারিতে! by হাবিবুর রহমান তারেক ও তমাল আবদুল কাইয়ুম আলোচনা- 'পেট্রোবাংলার ভূমিকা এবং কিছু প্রশ্ন' by ড. এম শামসুল আলম আন্তর্জাতিক- 'যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকনীতি ইরানকে বিজয়ী করছে' by ফয়সাল আমিন ইস্ত্রাবাদি আলোচনা- 'ইভ টিজিং : দায়ী কে?' by ফখরে আলম কল্প গল্প- '...আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে!' by আলী আলী হাবিব রাজনৈতিক আলোচনা- ''উচিত কথায় ননদ বেজার, গরম ভাতে ভাতে বিলাই (বিড়াল)' by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রকৃতি- 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষশত্রু' by মেহেদী উল্লাহ ইতিহাস- 'ইতিহাসে মওলানা ভাসানীর আসন' by সৈয়দ আবুল মকসুদ
প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ ইফতেখার মাহমুদ
এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
No comments