গল্প- 'নতুন বন্ধু' by আশরাফুল আলম পিনটু

ডিং ডং ডিং। ডোরবেল বাজতেই দরজা খুলল হিমু। শুভ আর ওর মা দাঁড়িয়ে আছে। হাসি হাসি মুখ। হিমুর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন শিলা খালা। বললেন, 'তোমার মা নেই বাড়িতে?'

'আছে।' ছোট্ট জবাব দিল হিমু। সঙ্গে সঙ্গে মাও এলেন। খুশি হলেন ওদের দেখে।
'আসুন আপা, আসুন।' ওদের ড্রইংরুমে বসালেন মা। আদর করলেন শুভকে। তারপর হিমুকে বললেন, 'যাও, শুভকে নিয়ে খেলা করো। আমি নাস্তার জোগাড় করি।' শিলা খালা বললেন, 'নাস্তা-টাস্তা পরে। আপনি ব্যস্ত হবেন না। বসুন, গল্প করি।' দুই মা বসলেন গল্প করতে। আর শুভকে নিয়ে হিমু ভেতরের ঘরে গেল।
শিলা খালা মায়ের নতুন বান্ধবী। কয়েকদিন আগে পরিচয় হয়েছে। হিমুদের ইশকুলে ভর্তি হয়েছে শুভ। ওরা ক্লাস থ্রির ছাত্র। অনেক মা আসেন ইশকুলে।
গল্পগুজব জমে তাদের। সেখানেই পরিচয়। আজ বেড়াতে এসেছেন ছেলেকে নিয়ে। হিমুর অনেক খেলনা। বেশিরভাগই গাড়ি। ছোট ছোট গাড়ি। সবুজ। লাল। কালো। হলুদ। কমলা। অনেক রঙের। রেলগাড়িও আছে একটা।
ছোট ছোট গাড়ি বের করল হিমু। বলল, 'এসো, আমরা গাড়ি গাড়ি খেলি।' মাথা ঝাঁকাল শুভ।
'গাড়ি-গাড়ি খেলা আমার ভালো লাগে না। এটা তো পিচ্চিদের খেলা। 'তাহলে চলো, লুডু খেলি! খেলবে? জানতে চাইল হিমু।
'লুডু!' নাক কুঁচকে বলল শুভ, 'ধ্যাৎ, লুডু আবার খেলা হল নাকি! আমার প্রিয় খেলা দাবা। তুমি দাবা খেলো না?'
শুভর কথা শুনে হতাশ হল হিমু। ভাবল, এখন আর কী করা যায়?
'তাহলে এসো। ছবি আঁকি। আমার অনেক রঙ পেনসিল আছে।'
'পেনসিল দিয়ে তো পিচ্চিরা আঁকে।' ভাব দেখিয়ে বলল শুভ।
হিমু বলল, 'আমরাও তো পিচ্চি।'
'অত পিচ্চি নই। আমি ছবি আঁকি জলরঙ দিয়ে। রঙ তুলিতে। চারকোলও অনেক আছে আমার।'
শুভর ভাবসাব ভালো লাগল না হিমুর। কথা শুনে বিরক্তও হল। কী করবে এখন? কী বলবে? আর কীইবা খেলবে। কিছুই বুঝতে পারল না।
'তোমার এমন কিছু নেই, যা খুব সুন্দর?' জানতে চাইল শুভ।
'না। নেই। আর মজার কিছু নেই।' জেদের সঙ্গেই জবাব দিল হিমু। ভাবল, কেমন ছেলেরে বাবা! লুডু খেলে না। গাড়ি-গাড়ি খেলে না। ভাব দেখায় বড়দের মতো। আচ্ছা ছেলো তো!
'তাহলে থাক। মায়ের কাছে যাই।' শুভ চলে এলো ড্রইংরুমে। হিমু আর কী করবে! সেও এলো পিছু পিছু। শুভ ওকে পাত্তাই দেয়নি। তাই ওর মনভার। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিল না।
শিলাখালা আর কিছুক্ষণ গল্প করলেন। চা-নাস্তা খেলেন। তারপর চলে গেলেন শুভকে নিয়ে।
দুদিন পর। হিমুকে নিয়ে মা গেলেন শুভদের বাড়িতে। শিলা খালা আর মা বসলেন গল্পে। আর হিমুকে নিয়ে শুভ গেল ওর খেলনা দেখাতে। শুভরও অনেক খেলনা। সবই সৈনিক আর ঘোড়া। ছোট ছোট সৈন্য। ছোট ছোট ঘোড়া।
শুভ বলল, 'এসো, এগুলো নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি।'
'যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আমার ভালো লাগে না।' জবাব দিল হিমু।
'তাহলে এসো দাবা খেলি।'
'দাবা!' নাক কুঁচকে বলল হিমু, 'ধ্যাৎ দাবা আবার খেলা হল নাকি! আমার প্রিয় খেলা ক্রিকেট। তুমি খেলো না?'
ওর কথা শুনে একটু দমে গেল শুভ। শান্তস্বরে বলল, 'তাহলে এসো, ঘোড়া-ঘোড়া খেলি। আমার একটা ঘোড়া আছে। দেখবে চলো।'
হিমুকে নিয়ে বারান্দায় গেল শুভ। সেখানে একটা কাঠের ঘোড়া। দোলনা ঘোড়া। পিঠে চড়ে দোল খাওয়া যায়।
'এই তোমার ঘোড়া! ফুঁঃ। কাঠের ঘোড়া!' ঠোঁট উলটে বলল হিমু।
'হঁ্যা । এটাতে চড়ে আমি দোল খাই। খুব মজা লাগে। চড়বে তুমি?'
'না! কাঠের ঘোড়ায় পিচ্চিরা চড়ে। আমি চড়ি সাইকেলে। আমার সুন্দর সাইকেল আছে। এবার হতাশ হল শুভ। কী করবে? কী বলবে? কোনও কিছু ভেবে পেল না।
'তোমার এমন কিছু নেই। সুন্দর কিছু নেই। জেদের সঙ্গে বলল শুভ। ভাবল, কেমন ছেলেরে বাবা! দাবা খেলে না। ঘোড়া-ঘোড়া খেলে না। ভাব দেখায় বড়দের মতো। আচ্ছা ছেলে তো!
'তাহলে থাক' বলল হিমু। ড্রইংরুমে ফিরে এলো ওরা। গল্প শেষে মা ফিরে এলেন হিমুকে নিয়ে।
পরদিন। ইশকুলে ছুটে এলো শুভ।
'আমার কাছে সুন্দর একটা জিনিস আছে।' বলে হাসল শুভ, তোমার জন্য এনেছি।'
'তাই নাকি!' হাসল হিমুও। বলল, 'আমার কাছেও একটা সুন্দর জিনিস আছে। তোমার জন্য এনেছি।'
'তাই নাকি!' বলল শুভ। হাসিমুখে হাত বাড়াল, 'দাও দেখি তাড়াতাড়ি।'
'এই নাও।' একটা গোলাপ ফুল দিল হিমু। বলল, 'আমারটা দাও এবার। দেখি কী সুন্দর জিনিস এনেছ তুমি?'
'এই নাও।' শুভও একটা গোলাপ দিল হিমুকে।
দুজন দু'জনের গোলাপের দিকে তাকাল। দুজনেই বলে উঠল একসঙ্গে, 'বাহ, সুন্দর তো!' দুই ছেলের কাণ্ড দেখছিলেন দুই মা। তারাও হাসলেন। বললেন, 'হঁ্যা। ফুল সুন্দর। তার চেয়েও বেশি সুন্দর বন্ধুত্ব।
====================
গল্প- 'টপকে গেল টাপ্পু' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ  গল্প- 'নাচে বানু নাচায়রে' by আতা সরকার  গল্প- 'রূপকথার মতো' by নাসির আহমেদ  গল্প- 'বিয়ে' by আর্নল্ড বেনেট  গল্প- 'মাদকাসক্ত' by আলী ইদ্রিস  গল্প- 'বেঁটে খাটো ভালোবাসা' by রেজানুর রহমান  কবর by জসীম উদ্দীন (পল্লীকবি)  গল্প- 'নদীর নাম চিলমারী' by নীলু দাস  গল্প- 'লাউয়ের ডগা' by নূর কামরুন নাহার  গল্প- 'অপূর্ব সৃষ্টি' by পারভীন সুলতানা গল্প- 'ঊনচলিস্নশ বছর আগে' by জামাল উদ্দীন  গল্প- 'সুচ' by জাফর তালুকদার   গল্প- 'বাসস্ট্যান্ডে যে দাঁড়িয়েছিল' by ঝর্না রহমান  গল্প- 'গন্না' by তিলোত্তমা মজুমদার  গল্প- 'ঘুড়িয়াল' by শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়  গল্প- 'প্রক্ষেপণ' by মোহিত কামাল  গল্প- 'গন্তব্য বদল' by রফিকুর রশীদ  গল্প- 'ঝড়ের রাতে' by প্রচেত গুপ্ত  গল্প- 'শুধু একটি রাত' by সাইপ্রিয়েন এক্ওয়েন্সি। অনুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া  গল্প- 'পিতা ও কুকুর ছানা' by হরিপদ দত্ত  স্মরণ- 'শওকত ভাই : কিছু স্মৃতি' by কবীর চৌধুরী  সাহিত্যালোচনা- 'রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পালাকারের নাটক  স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ : কবি ও প্রাবন্ধিক' by রাজু আলাউদ্দিন  স্মরণ- 'সিদ্ধার্থ শংকর রায়: মহৎ মানুষের মহাপ্রস্থানে by ফারুক চৌধুরী  গল্প- 'ফাইভ স্টার' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  গল্প- 'নূরে হাফসা কোথায় যাচ্ছে?' by আন্দালিব রাশদী  গল্প- 'হার্মাদ ও চাঁদ' by কিন্নর রায়  গল্প- 'মাটির গন্ধ' by স্বপ্নময় চক্রবর্তী  সাহিত্যালোচনা- 'কবি ওলগা ফিওদোরোভনা বার্গলজ'  গল্পিতিহাস- 'বালিয়াটি জমিদারবাড়ির রূপগল্প' by আসাদুজ্জামান  ফিচার- ‘কাপ্তাই লেক:ক্রমেই পতিত হচ্ছে মৃত্যুমুখে' by আজিজুর রহমান


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ আশরাফুল আলম পিনটু

এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.