প্রকৃত দিনবদলের সংস্কৃতি চাই by মোহাম্মদ কায়কোবাদ
বর্তমান সরকারের দিনবদল আর ডিজিটাল বাংলাদেশের ইশতেহার যুগ যুগ ধরে সুবিধাবঞ্চিত এবং আশ্বাসে প্রতারিত মানুষকেও নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে, বিপুল ভোটে ক্ষমতাসীন করেছে বর্তমান সরকারকে। বর্তমান সরকার এক বছরের অধিক ক্ষমতায়। আশ্বাস আর অঙ্গীকারের বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন আর খবরে কিন্তু দিনবদলের নিশানা দেখা যাচ্ছে না। আগের মতোই শক্তিশালী সাংসদেরা স্কুলের ছেলেমেয়েদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে তাঁদের প্রতাপ দেখাচ্ছেন, সাত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা সাংসদদের সোনার নৌকা উপহার দেওয়া অব্যাহত রয়েছে, সরকারদলীয় ছাত্র বাহিনীর চাঁদাবাজি আর টেন্ডারবাজি থেকে দিনবদলের ধারা অনুমান করা যাচ্ছে না। সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতাদের মোটরসাইকেল বাহিনীর যেকোনো অনুষ্ঠানে বিনা আমন্ত্রণে অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। সরকারদলীয় ছাত্রদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। দিনবদলের মতোই নিজস্ব এলাকায় সার্বক্ষণিক সাংসদদের অভিপ্রেত ও অনভিপ্রেত নজরদারি, খবরদারি চলছে স্কুল-কলেজে, মাঠে, মসজিদে কিংবা ক্লাবে। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট আগের থেকে বেশি, ঠিক যেমনটি যানজট। সাধারণ মানুষ দিনবদলের আশা করেছিল উন্নতির দিকে। আগের মতো জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেই আন্তর্জাতিক বাজারের কারণ দেখানো হয়, নয়তো সিন্ডিকেটের। এমন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর যদি সিন্ডিকেট ভাঙা না যায়, তাহলে কিসের দিনবদলের সরকার আমরা পেলাম? চারদিকে নামবদলের হিড়িক, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, বিদ্যুৎ-বিভ্রাট, পানিসংকট কিংবা যানজট নিরসনের তেমন কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিপণিবিতানগুলোর সময় পরিবর্তন যানজটে কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও এখনো যানজট গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমে আসেনি। স্কুলের ছাত্ররা স্কুলের ছাত্রদের মেরে ফেলছে—এ রকম একাধিক ঘটনা অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘটেছে। তা ছাড়া রাজধানী ও এর বাইরে বিভিন্ন হত্যাসম্পর্কিত অপকর্ম ঘটে চলেছে। এসব কারণে অন্তত এ কথাটি বলা যায়, সরকার সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের কোনো রকম প্রশংসনীয় অর্জন নেই।
অতি ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের এ দরিদ্র দেশটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস, প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধি সম্পর্কেও তেমন বলার কিছু নেই, গ্যাস-সংকটে বিপন্ন কলকারখানা। এই সপ্তম জনবহুল দেশে চাহিদা অনেক এবং তা মেটানোর জন্য সম্পদ অপ্রতুল। সুতরাং অচিরেই মানুষের বিদ্যুৎ, পানি কিংবা যাতায়াতের চাহিদা—খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের চাহিদা মেটানো যাবে, তা কেউ আশা করেন না। তবে এ খাতগুলোয় অনুভবযোগ্য পরিবর্তন হবে, তা দিনবদলের সরকারের কাছ থেকে সবার প্রত্যাশা। এমন একটি জনবহুল দেশের দিনবদল চাট্টিখানি কথা নয়। এ জন্য যে অঙ্গীকার ও প্রত্যয় থাকা দরকার তা কিন্তু অনুভূত হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে দিনবদল একটি স্লোগান না হয়ে উন্নয়ন-অনুকূল সংস্কৃতির সূচনা হতে পারে এবং তা-ই হওয়া উচিত। কয়েক দিন আগে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করলাম কেক কেটে এবং কাজ না করে। এখানে একটি সুস্থ সংস্কৃতির সূচনা হতে পারত। এ দিন আমরা রাস্তাঘাট পরিষ্কার কিংবা মেরামতে ব্যয় করতে পারতাম এবং এই কাজে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা নেতৃত্ব দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন। অবশ্য একই সঙ্গে দেখা যেত ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামী লীগে কতজন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক রয়েছেন। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো কিছু উন্নয়ন-অনুকূল সংস্কৃতির সূচনা করলে নিশ্চয়ই আগামী বছর দেশবাসীও তাতে শামিল হতো। এমনটি তো হয়নি। দিনবদলের দিনে উন্নয়ন-প্রতিকূল ধারাবাহিকতা তো বজায় থাকল। শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, খোদ রাজধানীতে অকল্পনীয় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে জনজীবন বিপর্যস্ত। তার চেয়েও আশঙ্কার বিষয় হলো, কলকারখানাগুলোর উৎপাদন বিদ্যুতের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দিনবদলের ইশতেহারে মানুষের যে প্রত্যাশা, তা মিটছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন সামান্য বাড়লেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে আরও বেশি। চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান, তা অল্প সময়ে মেটানো সম্ভব নয়। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের বঞ্চিত হওয়ার অনুভূতিকে সামান্য হলেও কমানো যেতে পারে, মন্ত্রী ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মানুষের এলাকায় বিদ্যুতের প্রথম লোডশেডিং করার মাধ্যমে। জনগণের নেতারা জনগণের দুর্ভোগ পোহাবেন না, অনুভব করবেন না—তা কী করে হয়? এমন সিদ্ধান্তে মানুষের কষ্টের অনুভূতি এক লাফে অর্ধেকে নেমে আসবে। এর থেকে ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে মানুষের অভাবের অনুভূতি মেটানোর আর কোনো পদ্ধতি নেই। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাশ্রয়ও নেতারা নিজেরা অনুশীলন করে আমাদের শেখাতে পারেন। একইভাবে যানজটের দুর্ভোগও আমাদের নেতাদের পোহানো উচিত। কারণ তাঁদের সুযোগ্য নেতৃত্বেই তো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেওয়ায় উভয়ের প্রতি উভয়ের যে সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠিত হবে, তা তাঁদের ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়াটাকেও নিশ্চিত করবে। বিদ্যুতের সুষম ব্যবহারের জন্য সময় অনুসারে এর মূল্য পরিবর্তন করে জনগণকে তা র্যাশনালি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা উচিত। একইভাবে গ্যাসের ব্যবহারের জন্যও মিটার-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শোনা যাচ্ছে, যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে যে ট্রান্সমিশন লাইন রয়েছে তা অব্যবহূত পড়ে আছে, আবার নতুন করে খাম্বা ক্রয়ের খবরও পত্রিকায় এসেছে। সীমিত সম্পদের দেশে অব্যবহূত বিনিয়োগ কোনো অবস্থাতেই কাঙ্ক্ষিত নয়। যেখানে বর্তমানের জরুরি চাহিদাই মেটানো যাচ্ছে না, সেখানে ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ আগলে রাখার মানে হয় না।
হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে যমুনা সেতু তৈরি করা হলো। এলাকায় বসবাসরত মানুষ ও তাঁদের অধিগৃহীত জমির জন্য নিশ্চয়ই ফসলি জমি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হয়েছে। এই হাজার হাজার লোকের জন্য অল্প জায়গায় পরিকল্পিত আবাসন তৈরি করে অপ্রতুল ভূমির দেশে একটি অনুকূল সংস্কৃতি তৈরি করা যেত।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের বড় বড় কর্মসূচিতে, প্রজেক্টে কম্পিউটারের ব্যবহার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের মুদি দোকানদারেরা কম্পিউটার ব্যবহার করুক এই প্রত্যাশার পূর্বশর্ত হলো, বড় বড় প্রকল্পে কম্পিউটারের ব্যবহার নিশ্চিত করা। এটা মনে রাখতে হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার সহায়কের ভূমিকা যেমন পালন করবে, তেমনি উদ্যোগীর ভূমিকাও পালন করবে। জনগণকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটারের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করবে। তথ্যপ্রযুক্তির যে ভৌত অবকাঠামো ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার সাপেক্ষে অবকাঠামোগুলোর সম্প্রসারণ করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির ভৌত অবকাঠামোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত হবে বলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইন্টারনেটসহ অন্য সুবিধাদির নির্মিত ভৌত অবকাঠামোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। দেশের কাজে দেশের সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমেও দিনবদলের সংস্কৃতির সূচনা হতে পারে।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, বুয়েট। ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স।
পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন আর খবরে কিন্তু দিনবদলের নিশানা দেখা যাচ্ছে না। আগের মতোই শক্তিশালী সাংসদেরা স্কুলের ছেলেমেয়েদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড় করিয়ে তাঁদের প্রতাপ দেখাচ্ছেন, সাত বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা সাংসদদের সোনার নৌকা উপহার দেওয়া অব্যাহত রয়েছে, সরকারদলীয় ছাত্র বাহিনীর চাঁদাবাজি আর টেন্ডারবাজি থেকে দিনবদলের ধারা অনুমান করা যাচ্ছে না। সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতাদের মোটরসাইকেল বাহিনীর যেকোনো অনুষ্ঠানে বিনা আমন্ত্রণে অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। সরকারদলীয় ছাত্রদের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। দিনবদলের মতোই নিজস্ব এলাকায় সার্বক্ষণিক সাংসদদের অভিপ্রেত ও অনভিপ্রেত নজরদারি, খবরদারি চলছে স্কুল-কলেজে, মাঠে, মসজিদে কিংবা ক্লাবে। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট আগের থেকে বেশি, ঠিক যেমনটি যানজট। সাধারণ মানুষ দিনবদলের আশা করেছিল উন্নতির দিকে। আগের মতো জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেই আন্তর্জাতিক বাজারের কারণ দেখানো হয়, নয়তো সিন্ডিকেটের। এমন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর যদি সিন্ডিকেট ভাঙা না যায়, তাহলে কিসের দিনবদলের সরকার আমরা পেলাম? চারদিকে নামবদলের হিড়িক, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, বিদ্যুৎ-বিভ্রাট, পানিসংকট কিংবা যানজট নিরসনের তেমন কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিপণিবিতানগুলোর সময় পরিবর্তন যানজটে কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও এখনো যানজট গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমে আসেনি। স্কুলের ছাত্ররা স্কুলের ছাত্রদের মেরে ফেলছে—এ রকম একাধিক ঘটনা অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘটেছে। তা ছাড়া রাজধানী ও এর বাইরে বিভিন্ন হত্যাসম্পর্কিত অপকর্ম ঘটে চলেছে। এসব কারণে অন্তত এ কথাটি বলা যায়, সরকার সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের কোনো রকম প্রশংসনীয় অর্জন নেই।
অতি ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের এ দরিদ্র দেশটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস, প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধি সম্পর্কেও তেমন বলার কিছু নেই, গ্যাস-সংকটে বিপন্ন কলকারখানা। এই সপ্তম জনবহুল দেশে চাহিদা অনেক এবং তা মেটানোর জন্য সম্পদ অপ্রতুল। সুতরাং অচিরেই মানুষের বিদ্যুৎ, পানি কিংবা যাতায়াতের চাহিদা—খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের চাহিদা মেটানো যাবে, তা কেউ আশা করেন না। তবে এ খাতগুলোয় অনুভবযোগ্য পরিবর্তন হবে, তা দিনবদলের সরকারের কাছ থেকে সবার প্রত্যাশা। এমন একটি জনবহুল দেশের দিনবদল চাট্টিখানি কথা নয়। এ জন্য যে অঙ্গীকার ও প্রত্যয় থাকা দরকার তা কিন্তু অনুভূত হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে দিনবদল একটি স্লোগান না হয়ে উন্নয়ন-অনুকূল সংস্কৃতির সূচনা হতে পারে এবং তা-ই হওয়া উচিত। কয়েক দিন আগে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করলাম কেক কেটে এবং কাজ না করে। এখানে একটি সুস্থ সংস্কৃতির সূচনা হতে পারত। এ দিন আমরা রাস্তাঘাট পরিষ্কার কিংবা মেরামতে ব্যয় করতে পারতাম এবং এই কাজে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা নেতৃত্ব দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন। অবশ্য একই সঙ্গে দেখা যেত ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামী লীগে কতজন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক রয়েছেন। উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো কিছু উন্নয়ন-অনুকূল সংস্কৃতির সূচনা করলে নিশ্চয়ই আগামী বছর দেশবাসীও তাতে শামিল হতো। এমনটি তো হয়নি। দিনবদলের দিনে উন্নয়ন-প্রতিকূল ধারাবাহিকতা তো বজায় থাকল। শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, খোদ রাজধানীতে অকল্পনীয় বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে জনজীবন বিপর্যস্ত। তার চেয়েও আশঙ্কার বিষয় হলো, কলকারখানাগুলোর উৎপাদন বিদ্যুতের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দিনবদলের ইশতেহারে মানুষের যে প্রত্যাশা, তা মিটছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন সামান্য বাড়লেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে আরও বেশি। চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান, তা অল্প সময়ে মেটানো সম্ভব নয়। তাই উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের বঞ্চিত হওয়ার অনুভূতিকে সামান্য হলেও কমানো যেতে পারে, মন্ত্রী ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মানুষের এলাকায় বিদ্যুতের প্রথম লোডশেডিং করার মাধ্যমে। জনগণের নেতারা জনগণের দুর্ভোগ পোহাবেন না, অনুভব করবেন না—তা কী করে হয়? এমন সিদ্ধান্তে মানুষের কষ্টের অনুভূতি এক লাফে অর্ধেকে নেমে আসবে। এর থেকে ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে মানুষের অভাবের অনুভূতি মেটানোর আর কোনো পদ্ধতি নেই। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাশ্রয়ও নেতারা নিজেরা অনুশীলন করে আমাদের শেখাতে পারেন। একইভাবে যানজটের দুর্ভোগও আমাদের নেতাদের পোহানো উচিত। কারণ তাঁদের সুযোগ্য নেতৃত্বেই তো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেওয়ায় উভয়ের প্রতি উভয়ের যে সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠিত হবে, তা তাঁদের ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাওয়াটাকেও নিশ্চিত করবে। বিদ্যুতের সুষম ব্যবহারের জন্য সময় অনুসারে এর মূল্য পরিবর্তন করে জনগণকে তা র্যাশনালি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা উচিত। একইভাবে গ্যাসের ব্যবহারের জন্যও মিটার-ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শোনা যাচ্ছে, যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে যে ট্রান্সমিশন লাইন রয়েছে তা অব্যবহূত পড়ে আছে, আবার নতুন করে খাম্বা ক্রয়ের খবরও পত্রিকায় এসেছে। সীমিত সম্পদের দেশে অব্যবহূত বিনিয়োগ কোনো অবস্থাতেই কাঙ্ক্ষিত নয়। যেখানে বর্তমানের জরুরি চাহিদাই মেটানো যাচ্ছে না, সেখানে ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ আগলে রাখার মানে হয় না।
হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে যমুনা সেতু তৈরি করা হলো। এলাকায় বসবাসরত মানুষ ও তাঁদের অধিগৃহীত জমির জন্য নিশ্চয়ই ফসলি জমি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হয়েছে। এই হাজার হাজার লোকের জন্য অল্প জায়গায় পরিকল্পিত আবাসন তৈরি করে অপ্রতুল ভূমির দেশে একটি অনুকূল সংস্কৃতি তৈরি করা যেত।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকারের বড় বড় কর্মসূচিতে, প্রজেক্টে কম্পিউটারের ব্যবহার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা দরকার। আমাদের মুদি দোকানদারেরা কম্পিউটার ব্যবহার করুক এই প্রত্যাশার পূর্বশর্ত হলো, বড় বড় প্রকল্পে কম্পিউটারের ব্যবহার নিশ্চিত করা। এটা মনে রাখতে হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার সহায়কের ভূমিকা যেমন পালন করবে, তেমনি উদ্যোগীর ভূমিকাও পালন করবে। জনগণকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম্পিউটারের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করবে। তথ্যপ্রযুক্তির যে ভৌত অবকাঠামো ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে, তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার সাপেক্ষে অবকাঠামোগুলোর সম্প্রসারণ করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির ভৌত অবকাঠামোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত হবে বলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইন্টারনেটসহ অন্য সুবিধাদির নির্মিত ভৌত অবকাঠামোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। দেশের কাজে দেশের সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমেও দিনবদলের সংস্কৃতির সূচনা হতে পারে।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, বুয়েট। ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স।
No comments