নকল মুঠোফোনে বাজার সয়লাব রাজস্ব ক্ষতি ১২০ কোটি টাকা by অনিকা ফারজানা
এক মুঠোফোনে অনেক কাজ। রঙিন মনিটর, এফএম রেডিও, লাউড স্পিকার, টর্চলাইট। দাম মাত্র এক হাজার ৩৫০ টাকা। সস্তার নকিয়ার এই মুঠোফোনটি কিনলেন সিরাজগঞ্জের আহমেদ আলী। সঙ্গে ওয়ারেন্টি কার্ডও রয়েছে। ইস্টার্ন প্লাজার একটি দোকান থেকে এটি কেনেন তিনি। আড়াই মাস পরে ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মুঠোফোনটি নকিয়ার সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে গেলে আহমেদ আলী জানতে পারেন, সেটটি নকল।
কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা এখন চেনা দায়। এই অবস্থা সারা দেশে। নিম্নমানের নকল মুঠোফোনে বাজার সয়লাব। কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আমদানি করা হচ্ছে নিম্নমানের এসব মুঠোফোন। আসছে চীন ও কোরিয়া থেকে। এর ফলে প্রতি মাসে সরকার হারাচ্ছে ১০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব, এই হিসাবে বছরে ১২০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির (বিএমপিআইএ) কোষাধ্যক্ষ এ টি এম মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে জানান, প্রতি মাসে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মুঠোফোন। এর মধ্যে বৈধ পথে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় প্রায় ১০ লাখ। বিএমপিআইএর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা মুঠোফোনের মধ্যে শুল্ক পরিশোধ করা হয় মাত্র সাড়ে সাত লাখের। বাকি আড়াই লাখ মুঠোফোন কোনো ধরনের কর পরিশোধ ছাড়াই বাংলাদেশের বাজারে চলে আসছে।
‘নকল মোবাইল ফোন সম্পর্কে আমরা অভিযোগ পেয়েছি’ জানালেন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সম্প্রতি ‘সরেজমিন তদন্ত শুরু হয়েছে’ বলেও জানান তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত ৬৪ লাখ ২১ হাজার ৮৫০টি মুঠোফোনের শুল্ক আদায় করা হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে বাজারে মুঠোফোন এসেছে নয় লাখ ১৭ হাজার ৪০৭টি। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে একই সময়ে আটক বা জব্দ করা হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ মুঠোফোন, যার কিছু অংশ পরে সরকারি শুল্ক ও জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাসে গড়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মুঠোফোন অবৈধ পথে বাজারে চলে আসে। কিছু চট্টগ্রাম হয়ে আর কিছু লাগেজ-ব্যাগেজ পার্টির কারণে। এতে সরকার মাসে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
কাস্টমস সূত্র আরও জানায়, অবৈধভাবে আমদানির অভিযোগে গত দুই মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে লাখখানেক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মুঠোফোন, যার অধিকাংশই আটক করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা যাত্রীর ব্যাগ থেকে। এ ছাড়া বেশির ভাগ অবৈধ চালান আসে যন্ত্রাংশ হিসেবে, যা আটক করার কোনো আইন নেই।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিটি মোবাইল ফোনসেট আমদানিতে ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক দিতে হয়। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, এর ফলে স্বল্পমূল্যের মোবাইল ফোনসেটের ওপর কম শুল্ক এবং দামি মোবাইল ফোনসেটের ওপর বেশি শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
বিএমপিআইএর কোষাধ্যক্ষ জানান, বিদেশ থেকে দামি সেটগুলো সাধারণত ‘আন্ডার ভয়েসে’ কাস্টমস পার করানো হয়। বিশেষ করে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার সেটগুলোর দাম কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে।
ইস্টার্ন প্লাস শপিং মলের একজন বিক্রেতা স্বপন আহমেদ বলেন, ‘নকল মোবাইল ফোনসেটের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম। নিম্নআয়ের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই। সাধারণত, এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যেই একজন ক্রেতা কালার মনিটরসহ মুঠোফোন কিনতে পারেন। এগুলোর কয়েকটিতে আবার এফএম রেডিও শোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে চায়নিজ ও কোরিয়ান ফোনসেটগুলোর ব্যাটারি খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ফলে ব্যবহারের কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাটারি চার্জ হয় না বা ডিসপ্লে সাদা হয়ে যায় বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা যায়।’
বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, নকিয়া ও স্যামসাং সেটগুলোর পার্টস বা যন্ত্রাংশ বেআইনিভাবে বিদেশ থেকে আসে। এগুলো পরে দেশে জোড়া লাগিয়ে পূর্ণাঙ্গ মুঠোফোন তৈরি (এসেম্বেল) করা হয়। ফলে সেটগুলো মূল প্রস্তুতকারী কোম্পানির মতো দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই হয় না। এ ছাড়া চোরাই বা ছিনতাইকৃত সেটের বাইরের খোলস পাল্টে ফেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ড সেটের কভার লাগিয়ে কম দামে বেচা হয়। ওই ধরনের মুঠোফোনগুলোর সঙ্গে আবার ওয়ারেন্টি কার্ডও থাকে। অবশ্যই সেটা জাল।
বিশ্বখ্যাত মুঠোফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নকিয়ার ইমার্জিং এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেমচাঁদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নকিয়া সেট সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি। অনুমোদিত পরিবেশক দিয়ে আসল নকিয়ার সেট বাজারজাত করা হয়। কোনো ধরনের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নকল ও বেআইনিভাবে আমদানি করা সেট ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নকল সেটে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর থাকে না বলেই সেটগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তবে ক্রেতারা যদি কোম্পানিগুলোর সিল দেখে সেট কেনেন, তাহলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি নকল মোবাইল ফোনসেট আমদানি ও বিক্রি ঠেকাতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
নকিয়ার বিপণন প্রধান নওফেল আনোয়ার বলেন, মুঠোফোনের ওপর বর্তমান কর আরোপের প্রক্রিয়াটাই অবৈধভাবে সেট আমদানিকে উত্সাহিত করছে। কর ফাঁকি দিতে পারায় চায়নিজ বা কোরিয়ান সেটগুলো কম দামে বিক্রি করলেও প্রচুর লাভ থাকে। এ ধরনের সেটগুলোর কোনো কাস্টমার সার্ভিস সুবিধা বা যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের সুবিধা নেই।
কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা এখন চেনা দায়। এই অবস্থা সারা দেশে। নিম্নমানের নকল মুঠোফোনে বাজার সয়লাব। কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আমদানি করা হচ্ছে নিম্নমানের এসব মুঠোফোন। আসছে চীন ও কোরিয়া থেকে। এর ফলে প্রতি মাসে সরকার হারাচ্ছে ১০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব, এই হিসাবে বছরে ১২০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন আমদানিকারক সমিতির (বিএমপিআইএ) কোষাধ্যক্ষ এ টি এম মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে জানান, প্রতি মাসে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মুঠোফোন। এর মধ্যে বৈধ পথে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় প্রায় ১০ লাখ। বিএমপিআইএর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি করা মুঠোফোনের মধ্যে শুল্ক পরিশোধ করা হয় মাত্র সাড়ে সাত লাখের। বাকি আড়াই লাখ মুঠোফোন কোনো ধরনের কর পরিশোধ ছাড়াই বাংলাদেশের বাজারে চলে আসছে।
‘নকল মোবাইল ফোন সম্পর্কে আমরা অভিযোগ পেয়েছি’ জানালেন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সম্প্রতি ‘সরেজমিন তদন্ত শুরু হয়েছে’ বলেও জানান তিনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত ৬৪ লাখ ২১ হাজার ৮৫০টি মুঠোফোনের শুল্ক আদায় করা হয়েছে। গড়ে প্রতি মাসে বাজারে মুঠোফোন এসেছে নয় লাখ ১৭ হাজার ৪০৭টি। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে একই সময়ে আটক বা জব্দ করা হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ মুঠোফোন, যার কিছু অংশ পরে সরকারি শুল্ক ও জরিমানা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মাসে গড়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মুঠোফোন অবৈধ পথে বাজারে চলে আসে। কিছু চট্টগ্রাম হয়ে আর কিছু লাগেজ-ব্যাগেজ পার্টির কারণে। এতে সরকার মাসে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
কাস্টমস সূত্র আরও জানায়, অবৈধভাবে আমদানির অভিযোগে গত দুই মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে লাখখানেক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মুঠোফোন, যার অধিকাংশই আটক করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা যাত্রীর ব্যাগ থেকে। এ ছাড়া বেশির ভাগ অবৈধ চালান আসে যন্ত্রাংশ হিসেবে, যা আটক করার কোনো আইন নেই।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতিটি মোবাইল ফোনসেট আমদানিতে ২৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক দিতে হয়। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, এর ফলে স্বল্পমূল্যের মোবাইল ফোনসেটের ওপর কম শুল্ক এবং দামি মোবাইল ফোনসেটের ওপর বেশি শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
বিএমপিআইএর কোষাধ্যক্ষ জানান, বিদেশ থেকে দামি সেটগুলো সাধারণত ‘আন্ডার ভয়েসে’ কাস্টমস পার করানো হয়। বিশেষ করে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার সেটগুলোর দাম কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে।
ইস্টার্ন প্লাস শপিং মলের একজন বিক্রেতা স্বপন আহমেদ বলেন, ‘নকল মোবাইল ফোনসেটের দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম। নিম্নআয়ের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই। সাধারণত, এক হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যেই একজন ক্রেতা কালার মনিটরসহ মুঠোফোন কিনতে পারেন। এগুলোর কয়েকটিতে আবার এফএম রেডিও শোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে চায়নিজ ও কোরিয়ান ফোনসেটগুলোর ব্যাটারি খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ফলে ব্যবহারের কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাটারি চার্জ হয় না বা ডিসপ্লে সাদা হয়ে যায় বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা যায়।’
বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, নকিয়া ও স্যামসাং সেটগুলোর পার্টস বা যন্ত্রাংশ বেআইনিভাবে বিদেশ থেকে আসে। এগুলো পরে দেশে জোড়া লাগিয়ে পূর্ণাঙ্গ মুঠোফোন তৈরি (এসেম্বেল) করা হয়। ফলে সেটগুলো মূল প্রস্তুতকারী কোম্পানির মতো দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই হয় না। এ ছাড়া চোরাই বা ছিনতাইকৃত সেটের বাইরের খোলস পাল্টে ফেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ড সেটের কভার লাগিয়ে কম দামে বেচা হয়। ওই ধরনের মুঠোফোনগুলোর সঙ্গে আবার ওয়ারেন্টি কার্ডও থাকে। অবশ্যই সেটা জাল।
বিশ্বখ্যাত মুঠোফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নকিয়ার ইমার্জিং এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেমচাঁদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নকিয়া সেট সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি। অনুমোদিত পরিবেশক দিয়ে আসল নকিয়ার সেট বাজারজাত করা হয়। কোনো ধরনের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নকল ও বেআইনিভাবে আমদানি করা সেট ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নকল সেটে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর থাকে না বলেই সেটগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তবে ক্রেতারা যদি কোম্পানিগুলোর সিল দেখে সেট কেনেন, তাহলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি নকল মোবাইল ফোনসেট আমদানি ও বিক্রি ঠেকাতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
নকিয়ার বিপণন প্রধান নওফেল আনোয়ার বলেন, মুঠোফোনের ওপর বর্তমান কর আরোপের প্রক্রিয়াটাই অবৈধভাবে সেট আমদানিকে উত্সাহিত করছে। কর ফাঁকি দিতে পারায় চায়নিজ বা কোরিয়ান সেটগুলো কম দামে বিক্রি করলেও প্রচুর লাভ থাকে। এ ধরনের সেটগুলোর কোনো কাস্টমার সার্ভিস সুবিধা বা যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের সুবিধা নেই।
No comments