দিনবদলের যাত্রা শুভ -ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা by মুনির হাসান
সরকার মানে ’সরকার বাহাদুর’ সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাদের কাজের পদ্ধতি বা কী, তা জানা যাবে না, কেবল ফলাফল জেনে খুশি থাকতে হবে! এমন ধারণা এখনো বিরাজিত এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এর অনেকখানি এখনো বাস্তব। তবে গত ৪ থেকে ৬ মার্চ ঢাকার নভোথিয়েটারে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে যে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা হয়ে গেল, সেখানে এর ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। দেশে প্রথমবারের মতো এমন মেলা আয়োজন করা হয়েছে যেখানে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অংশ নিয়েছে, জনগণের কাছে কে কত বেশি সেবা কত সহজে দিতে পারে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের দেখা গেছে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের স্টলে দাঁড়িয়ে সাধারণ জনগণকে তাঁদের সেবা সম্পর্কে তথ্য দিতে। মেলার শেষ দিন বিকেলে সে রকম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দেখা গেল কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন স্টলে। জানতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য তাঁর মন্ত্রণালয় আর কী করতে পারেন! শুধু তাই নয়, মেলার প্রথম দিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন খোদ মন্ত্রী মহোদয়রা! ভাবা যায়!!
দিনবদলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তার অবস্থান নিশ্চিত করেছে আগেই। ঠিক সময়ে সাড়া দিয়ে মহাজোট সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। সেই লক্ষ্যে প্রথম বছরে সরকারের ই-সেবা কার্যক্রমের জানান দেওয়ার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারের সব সংস্থা এই মেলায় উপস্থিত ছিল তাদের ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে’। মেলার শেষদিন মুহম্মদ জাফর ইকবাল লক্ষ করেছেন, যার একেবারে কিছু নেই তার অন্তত একটি ওয়েবসাইট আছে!
তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনী ব্যবহার যে কত সহজে মানুষের কাছে সরকারকে নিয়ে যেতে পারে, তার একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবারের উদ্ভাবনী মেলা। ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা তার একটি প্রবণতাও সেখানে লক্ষ করা গেছে। বেশির ভাগ সরকারি সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সংস্থাগুলো মোবাইল ফোনকে বেছে নিয়েছে। কারণ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বেশির ভাগের হাতেই এই জাদুবাক্সটি রয়েছে।
মেলায় একটি ভোটের ব্যবস্থাও ছিল। দর্শনার্থীরা ভোট দিয়ে সেরা ই-সেবাকে নির্বাচিত করেছে। মেলাটি হয়েছে ঢাকায়। এতে শহুরে নাগরিকদের অংশ গ্রহণই ছিল বেশি, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অথচ সরকারি এবং বেসরকারি দুই বিভাগেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে কৃষিবিষয়ক উদ্যোগ। কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র পেয়েছে সেরা সরকারি উদ্যোগের স্বীকৃতি। আর জনগণের ভোটে সেরা বেসরকারি উদ্যোগ হয়েছে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান উইন-ইনকরপোরেটের ই-কৃষি! ভালোভাবে দেখলে বোঝা যায়, দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি ও কৃষকের দিনবদলটা দেখতে চায় বেশির ভাগ মানুষ।
মন্ত্রণালয় হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেবা নিয়ে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছর থেকে শিক্ষার্থীদের তাদের এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ই-মেইলে পাঠিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছে মন্ত্রণালয়! সেখানে দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালের সবচেয়ে উদ্ভাবনী শিক্ষা উদ্যোগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম। স্বভাবতই জুরিদের বিচারে প্রথম হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ব্যবসায়ীদের জন্য ডিজিটালবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে শুরু হওয়া বেশ কিছু কাজের খবর জানা গেল সেখানে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কম্পিউটারায়নের কাজ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্দরের কাজ সম্পন্ন হবে এর মাধ্যমে, জুরিদের বিচারে এই প্রকল্পের সাফল্য তাই ছিল অবধারিত।
২০০৮ সালে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কম্পিউটারায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যে কাজ করতে এর আগে ৪২টি স্বাক্ষরের প্রয়োজন হতো এখন সেটি অনলাইনে করা যায়, মাত্র ছয়টি অনুমোদন লাগে! তবে, একই মডেলে সম্পন্ন হওয়া ঢাকা কাস্টম হাউস অটোমেশনের প্রকল্পটি এখনো চালু হয়নি। শুনেছি, একদল বিদেশি বিশেষজ্ঞ এসে এই কাজটি পরীক্ষা করে তার নিরাপত্তা ও কার্যদক্ষতার সনদ দিয়েছে (যদিও সেটার খুব প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় না)। আর সবচেয়ে বড় কথা, ২০০৯ সালের জুন মাসে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এই কর্মকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। ঢাকা কাস্টম হাউসের অটোমেশনটি চালু করা হলে তা এ সরকারের সাফল্যের মুকুটে আরও একটি উজ্জ্বল পালক যোগ করত।
আমাদের দেশে আইসিটিভিত্তিক যেসব মেলা ও সম্মেলন হয়, তার প্রায় সব কটি হয় বেসরকারি উদ্যোগে। এই মেলাটি কেবল সরকারি উদ্যোগে হয়েছে তা নয়, বরং এটি এমন একটি মেলা ছিল যেখানে সরকারকে সত্যিকারের সেবকের রূপে পাওয়া গেছে! আর
বাংলাদেশের সত্যিকারের দিনবদল হতে বেশ সময় লাগবে। কিন্তু কোনো না কোনো সময় সেটি শুরু হওয়ার দরকার ছিল। এই মেলা থেকে টের পাওয়া গেছে সীমিত আকারে হলেও সেই বদলটি শুরু হয়েছে। এখন এই বদলের ধারাটি ধনাত্মক পথে ধরে রাখতে পারলে দিনবদলের অঙ্গীকার পূরণ হবে এবং তখনই আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় আমরা বলতে পারব—দিনবদলের যাত্রা শুভ, বদলে যাচ্ছে দেশ।
মুনির হাসান : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
দিনবদলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তার অবস্থান নিশ্চিত করেছে আগেই। ঠিক সময়ে সাড়া দিয়ে মহাজোট সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। সেই লক্ষ্যে প্রথম বছরে সরকারের ই-সেবা কার্যক্রমের জানান দেওয়ার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সরকারের সব সংস্থা এই মেলায় উপস্থিত ছিল তাদের ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে’। মেলার শেষদিন মুহম্মদ জাফর ইকবাল লক্ষ করেছেন, যার একেবারে কিছু নেই তার অন্তত একটি ওয়েবসাইট আছে!
তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনী ব্যবহার যে কত সহজে মানুষের কাছে সরকারকে নিয়ে যেতে পারে, তার একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবারের উদ্ভাবনী মেলা। ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা তার একটি প্রবণতাও সেখানে লক্ষ করা গেছে। বেশির ভাগ সরকারি সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সংস্থাগুলো মোবাইল ফোনকে বেছে নিয়েছে। কারণ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বেশির ভাগের হাতেই এই জাদুবাক্সটি রয়েছে।
মেলায় একটি ভোটের ব্যবস্থাও ছিল। দর্শনার্থীরা ভোট দিয়ে সেরা ই-সেবাকে নির্বাচিত করেছে। মেলাটি হয়েছে ঢাকায়। এতে শহুরে নাগরিকদের অংশ গ্রহণই ছিল বেশি, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অথচ সরকারি এবং বেসরকারি দুই বিভাগেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে কৃষিবিষয়ক উদ্যোগ। কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র পেয়েছে সেরা সরকারি উদ্যোগের স্বীকৃতি। আর জনগণের ভোটে সেরা বেসরকারি উদ্যোগ হয়েছে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান উইন-ইনকরপোরেটের ই-কৃষি! ভালোভাবে দেখলে বোঝা যায়, দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি ও কৃষকের দিনবদলটা দেখতে চায় বেশির ভাগ মানুষ।
মন্ত্রণালয় হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেবা নিয়ে এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছর থেকে শিক্ষার্থীদের তাদের এসএসসি আর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ই-মেইলে পাঠিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছে মন্ত্রণালয়! সেখানে দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালের সবচেয়ে উদ্ভাবনী শিক্ষা উদ্যোগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম। স্বভাবতই জুরিদের বিচারে প্রথম হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ব্যবসায়ীদের জন্য ডিজিটালবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে শুরু হওয়া বেশ কিছু কাজের খবর জানা গেল সেখানে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কম্পিউটারায়নের কাজ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্দরের কাজ সম্পন্ন হবে এর মাধ্যমে, জুরিদের বিচারে এই প্রকল্পের সাফল্য তাই ছিল অবধারিত।
২০০৮ সালে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কম্পিউটারায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যে কাজ করতে এর আগে ৪২টি স্বাক্ষরের প্রয়োজন হতো এখন সেটি অনলাইনে করা যায়, মাত্র ছয়টি অনুমোদন লাগে! তবে, একই মডেলে সম্পন্ন হওয়া ঢাকা কাস্টম হাউস অটোমেশনের প্রকল্পটি এখনো চালু হয়নি। শুনেছি, একদল বিদেশি বিশেষজ্ঞ এসে এই কাজটি পরীক্ষা করে তার নিরাপত্তা ও কার্যদক্ষতার সনদ দিয়েছে (যদিও সেটার খুব প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় না)। আর সবচেয়ে বড় কথা, ২০০৯ সালের জুন মাসে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এই কর্মকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। ঢাকা কাস্টম হাউসের অটোমেশনটি চালু করা হলে তা এ সরকারের সাফল্যের মুকুটে আরও একটি উজ্জ্বল পালক যোগ করত।
আমাদের দেশে আইসিটিভিত্তিক যেসব মেলা ও সম্মেলন হয়, তার প্রায় সব কটি হয় বেসরকারি উদ্যোগে। এই মেলাটি কেবল সরকারি উদ্যোগে হয়েছে তা নয়, বরং এটি এমন একটি মেলা ছিল যেখানে সরকারকে সত্যিকারের সেবকের রূপে পাওয়া গেছে! আর
বাংলাদেশের সত্যিকারের দিনবদল হতে বেশ সময় লাগবে। কিন্তু কোনো না কোনো সময় সেটি শুরু হওয়ার দরকার ছিল। এই মেলা থেকে টের পাওয়া গেছে সীমিত আকারে হলেও সেই বদলটি শুরু হয়েছে। এখন এই বদলের ধারাটি ধনাত্মক পথে ধরে রাখতে পারলে দিনবদলের অঙ্গীকার পূরণ হবে এবং তখনই আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় আমরা বলতে পারব—দিনবদলের যাত্রা শুভ, বদলে যাচ্ছে দেশ।
মুনির হাসান : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
No comments