মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি প্রতিরোধ শক্তির বিস্ময়কর উত্থান: পর্ব-এক
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ শক্তি |
আমেরিকা
এবং তাদের মিত্র সৌদি আরব ও দখলদার ইসরাইলের শত্রুতামূলক নীতির কারণে
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা ও নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। এর
মোকাবেলায় এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ইসলামি প্রতিরোধ শক্তি। শত ষড়যন্ত্র ও
প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধ শক্তিগুলোর অবস্থান কোন
পর্যায়ে রয়েছে এবং তারা কি ধরণর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে সেটাই এখন প্রধান
প্রশ্ন।
গত প্রায় নয় বছরে পশ্চিম এশিয়ায় তিনটি দেশে বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটেছে। সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র, ইরাকের বিরুদ্ধে দায়েশকে লেলিয়ে দেয়া এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এসব যুদ্ধে ওই তিনটি দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই দেশগুলোতে এতোবড় সংকট চাপিয়ে দেয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে তারা অশুভ শক্তির সঙ্গে আপোষের বিরোধী এবং শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। কিন্তু ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ও ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ সংগঠন আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা এ অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষের আশা-ভরসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় গড়ে ওঠা প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে নির্মূল কিংবা দুর্বল করার জন্য গত নয় বছরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইরাক ও সিরিয়াকে দুর্বল করার জন্য উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল।
২০১১ সালের পর দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে চারটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অন্যদিকে ইসরাইলের বন্ধু রাষ্ট্র সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। সৌদি আরব ও তার মিত্রদের প্রধান লক্ষ্য ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ সংগঠনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। কিন্তু এতোসব ষড়যন্ত্র, রক্তপাত ও হামলা সত্বেও এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিগুলো দুর্বলতো হয়নি বরং আগের চেয়ে আরো জোরদার হয়েছে। এর প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই প্রথমত, বিশাল অঞ্চল জুড়ে প্রতিরোধ শক্তি প্রভাব বিস্তার করে আছে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে যেকোনো আপোষের বিরোধী এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোতে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর হস্তক্ষেপ মেনে নিতে রাজি নয়।
দ্বিতীয়ত, ইসরাইল ও আমেরিকার আধিপত্যবাদ বিরোধী প্রতিরোধ শক্তিগুলো পশ্চিম এশিয়ায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছ। ইরানের পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক গবেষক মাসুদ আসাদুল্লাহি এ ব্যাপারে বলেছেন, "বর্তমানে একমাত্র প্রতিরোধ শক্তিগুলোই এ অঞ্চলে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও শক্তিমত্তা ধরে রেখেছে। প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর প্রতি সরকারগুলোর সমর্থন রয়েছে এবং এ ঐক্য লেবানন, ইরাক ও সিরিয়াকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে। অন্যদিকে যারা প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করতে চেয়েছিল তারাই দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এ দেশগুলোতে শত্রুরা যে জায়গা করে নিয়েছিল তাও হাত ছাড়া হয়ে গেছে। তাই বলা যায়, প্রতিরোধ শক্তিগুলো যদি এগিয়ে না আসত তাহলে আজ আমরা পশ্চিম এশিয়ার ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতাম।"
পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল-মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ শক্তির আত্মপ্রকাশের তৃতীয় প্রভাব হচ্ছে, আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি জোট এবং তাদের সামরিক শক্তি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলোসহ কয়েকটি আরব দেশের সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েও দায়েশ সন্ত্রাসীরা পরাজিত হয়েছে এবং ইরাক ও সিরিয়ার সরকার ও প্রতিরোধ যোদ্ধারা বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেন যুদ্ধেও কোনো সাফল্য পায়নি। বরং বর্তমানে আনসারুল্লাহ সংগঠন ও তাদের মিত্রদের ছাড়া ইয়েমেনকে কল্পনা করা যায় না।
২০১৪ সালে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ৩৩ দিনের যুদ্ধে, ২০১৮ সালে চার দিনের যুদ্ধে ও ২০১৯ সালে দুই দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা আয়রন ডোম ফিলিস্তিনিদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতোসব ব্যর্থতার পর আমেরিকা ও সৌদি আরব এখন প্রতিরোধ শক্তির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হয়েছে। তারা ইরান, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর ওপর অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তাদেরকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল-মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ শক্তির আত্মপ্রকাশের চতুর্থ প্রভাব হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বহু বিশ্লেষক মনে করেন, আমেরিকা ও তার মিত্ররা প্রতিরোধ শক্তির মোকাবেলায় তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য দায়েশের মতো বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম দেয়। কিন্তু এতেও তাদের লাভ হয়নি বরং প্রতিরোধ শক্তির ছায়া তলে এ অঞ্চলের মুক্তিকামী জাতিগুলো আরো ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকা ও তার মিত্রদের সহায়তায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবেলা করতে গিয়ে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ শক্তিগুলো মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল-মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ শক্তির আত্মপ্রকাশের পঞ্চম প্রভাব হচ্ছে, গত নয় বছরের ঘটনাবলীতে প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিরোধ শক্তিগুলো যুদ্ধ ও মৃত্যুকে ভয় পায় না বরং তারা শত্রুর মোকাবেলা করাকে জিহাদ এবং মৃত্যুবরণকে শাহাদাতের মর্যাদা লাভের সুযোগ বলে মনে করে। এ কারণে ক্ষেপণাস্ত্রের চাইতেও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দৃঢ় মনোবল ও ঈমানি শক্তিকে শত্রুরা বেশী ভয় পায়।
নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠন পশ্চিম এশিয়ায় প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। ইসরাইলের গণমাধ্যমগুলো নাসরুল্লাহর কথিত অসুস্থতাসহ নানান মিথ্যা খবর প্রচার করে এ সংগঠনের সদস্যদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু হিজবুল্লাহ মহাসচিবের বিচক্ষণতার কারণে মিথ্যা প্রচার চালিয়েও তারা এ সংগঠনকে দুর্বল করতে পারেনি। হিজবুল্লাহর শক্ত অবস্থানের কারণে এবং তারা ৩৩ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের অপরাজেয় থাকার কাহিনীকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে সক্ষম হওয়ায় ২০০৬ সালের পর থেকে ইসরাইল আর লেবাননের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করতে পারেনি। ২০১১ সালের পর দায়েশ সন্ত্রাসীরা সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করার পর লেবাননের জন্যও ওরা হুমকি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু হিজবুল্লাহ ও সিরিয়া দায়েশ সন্ত্রাসীদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। ইরানের বিশেষজ্ঞ হোসেন অজারলু বলেছেন, হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতির কারণে অন্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। হিজবুল্লাহ ইসরাইলের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে তাদের টানেলগুলো ও সামরিক কৌশল ইসরাইলের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ও সিরিয়া সরকারের সাফল্যের কারণে সৌদি আরবসহ কয়েকটি আরব দেশ, আমেরিকা ও ব্রিটেন হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী অভিহিত করে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তি অর্জন ছাড়াও লেবাননের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সরকারেও এ সংগঠনের বিরাট প্রভাব রয়ছে। ২০১৮ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এ সংগঠনটি বহু সংখ্যক আসন লাভে সক্ষম হয়। এ বিষয়টিও ইসরাইলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত প্রায় নয় বছরে পশ্চিম এশিয়ায় তিনটি দেশে বিপর্যয়কর ঘটনা ঘটেছে। সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র, ইরাকের বিরুদ্ধে দায়েশকে লেলিয়ে দেয়া এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এসব যুদ্ধে ওই তিনটি দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই দেশগুলোতে এতোবড় সংকট চাপিয়ে দেয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে তারা অশুভ শক্তির সঙ্গে আপোষের বিরোধী এবং শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। কিন্তু ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ও ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ সংগঠন আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা এ অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষের আশা-ভরসার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পশ্চিম এশিয়ায় গড়ে ওঠা প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে নির্মূল কিংবা দুর্বল করার জন্য গত নয় বছরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইরাক ও সিরিয়াকে দুর্বল করার জন্য উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল।
২০১১ সালের পর দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে চারটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অন্যদিকে ইসরাইলের বন্ধু রাষ্ট্র সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়ে আসছে। সৌদি আরব ও তার মিত্রদের প্রধান লক্ষ্য ইয়েমেনের জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ সংগঠনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। কিন্তু এতোসব ষড়যন্ত্র, রক্তপাত ও হামলা সত্বেও এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিগুলো দুর্বলতো হয়নি বরং আগের চেয়ে আরো জোরদার হয়েছে। এর প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই প্রথমত, বিশাল অঞ্চল জুড়ে প্রতিরোধ শক্তি প্রভাব বিস্তার করে আছে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে যেকোনো আপোষের বিরোধী এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোতে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোর হস্তক্ষেপ মেনে নিতে রাজি নয়।
দ্বিতীয়ত, ইসরাইল ও আমেরিকার আধিপত্যবাদ বিরোধী প্রতিরোধ শক্তিগুলো পশ্চিম এশিয়ায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছ। ইরানের পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক গবেষক মাসুদ আসাদুল্লাহি এ ব্যাপারে বলেছেন, "বর্তমানে একমাত্র প্রতিরোধ শক্তিগুলোই এ অঞ্চলে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও শক্তিমত্তা ধরে রেখেছে। প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর প্রতি সরকারগুলোর সমর্থন রয়েছে এবং এ ঐক্য লেবানন, ইরাক ও সিরিয়াকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে। অন্যদিকে যারা প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করতে চেয়েছিল তারাই দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এ দেশগুলোতে শত্রুরা যে জায়গা করে নিয়েছিল তাও হাত ছাড়া হয়ে গেছে। তাই বলা যায়, প্রতিরোধ শক্তিগুলো যদি এগিয়ে না আসত তাহলে আজ আমরা পশ্চিম এশিয়ার ভিন্ন চিত্র দেখতে পেতাম।"
পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল-মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ শক্তির আত্মপ্রকাশের তৃতীয় প্রভাব হচ্ছে, আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি জোট এবং তাদের সামরিক শক্তি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলোসহ কয়েকটি আরব দেশের সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েও দায়েশ সন্ত্রাসীরা পরাজিত হয়েছে এবং ইরাক ও সিরিয়ার সরকার ও প্রতিরোধ যোদ্ধারা বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেন যুদ্ধেও কোনো সাফল্য পায়নি। বরং বর্তমানে আনসারুল্লাহ সংগঠন ও তাদের মিত্রদের ছাড়া ইয়েমেনকে কল্পনা করা যায় না।
২০১৪ সালে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ৩৩ দিনের যুদ্ধে, ২০১৮ সালে চার দিনের যুদ্ধে ও ২০১৯ সালে দুই দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা আয়রন ডোম ফিলিস্তিনিদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতোসব ব্যর্থতার পর আমেরিকা ও সৌদি আরব এখন প্রতিরোধ শক্তির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হয়েছে। তারা ইরান, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর ওপর অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তাদেরকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল-মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ শক্তির আত্মপ্রকাশের চতুর্থ প্রভাব হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বহু বিশ্লেষক মনে করেন, আমেরিকা ও তার মিত্ররা প্রতিরোধ শক্তির মোকাবেলায় তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য দায়েশের মতো বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম দেয়। কিন্তু এতেও তাদের লাভ হয়নি বরং প্রতিরোধ শক্তির ছায়া তলে এ অঞ্চলের মুক্তিকামী জাতিগুলো আরো ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকা ও তার মিত্রদের সহায়তায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবেলা করতে গিয়ে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ শক্তিগুলো মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। পশ্চিম এশিয়ায় ইসরাইল-মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ শক্তির আত্মপ্রকাশের পঞ্চম প্রভাব হচ্ছে, গত নয় বছরের ঘটনাবলীতে প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিরোধ শক্তিগুলো যুদ্ধ ও মৃত্যুকে ভয় পায় না বরং তারা শত্রুর মোকাবেলা করাকে জিহাদ এবং মৃত্যুবরণকে শাহাদাতের মর্যাদা লাভের সুযোগ বলে মনে করে। এ কারণে ক্ষেপণাস্ত্রের চাইতেও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দৃঢ় মনোবল ও ঈমানি শক্তিকে শত্রুরা বেশী ভয় পায়।
নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠন পশ্চিম এশিয়ায় প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। ইসরাইলের গণমাধ্যমগুলো নাসরুল্লাহর কথিত অসুস্থতাসহ নানান মিথ্যা খবর প্রচার করে এ সংগঠনের সদস্যদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু হিজবুল্লাহ মহাসচিবের বিচক্ষণতার কারণে মিথ্যা প্রচার চালিয়েও তারা এ সংগঠনকে দুর্বল করতে পারেনি। হিজবুল্লাহর শক্ত অবস্থানের কারণে এবং তারা ৩৩ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের অপরাজেয় থাকার কাহিনীকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে সক্ষম হওয়ায় ২০০৬ সালের পর থেকে ইসরাইল আর লেবাননের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করতে পারেনি। ২০১১ সালের পর দায়েশ সন্ত্রাসীরা সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করার পর লেবাননের জন্যও ওরা হুমকি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু হিজবুল্লাহ ও সিরিয়া দায়েশ সন্ত্রাসীদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। ইরানের বিশেষজ্ঞ হোসেন অজারলু বলেছেন, হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতির কারণে অন্য প্রতিরোধ সংগঠনগুলা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। হিজবুল্লাহ ইসরাইলের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। বিশেষ করে তাদের টানেলগুলো ও সামরিক কৌশল ইসরাইলের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, দায়েশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ও সিরিয়া সরকারের সাফল্যের কারণে সৌদি আরবসহ কয়েকটি আরব দেশ, আমেরিকা ও ব্রিটেন হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী অভিহিত করে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তি অর্জন ছাড়াও লেবাননের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সরকারেও এ সংগঠনের বিরাট প্রভাব রয়ছে। ২০১৮ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এ সংগঠনটি বহু সংখ্যক আসন লাভে সক্ষম হয়। এ বিষয়টিও ইসরাইলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
No comments