কাশ্মীরে নয়া দিল্লির জনমিতিক নীলনক্সা by ইদ্রিস ভাট
ভারত-শাসিত
কাশ্মীরে ১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গণআন্দোলন শুরুর পর
থেকে সরকারি হিসাব অনুযায়ী সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। শত শত
গণকবর আবিস্কৃত হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, এই
অঞ্চল ৩০ হাজার এতিম ও অন্তত এক হাজার ‘অর্ধ-বিধবার’ বাসস্থান। কাশ্মীরে
অর্ধ-বিধবা একটি বিশেষ পরিভাষা। তাদের স্বামীরা নিখোঁজ হয়ে গেছে। কিন্তু
তারা মারা গেছে, তার কোনো প্রমাণ নেই।
গত কয়েক বছর ধরে বেসামরিক বা বিদ্রোহীদের হত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিনই তরুণরা বন্দুকধারী ভারতীয় সৈন্যদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে। কাশ্মীরের ওপর ভারতীয় শাসনকে স্থানীয়রা দখলদারিত্ব বিবেচনা করে।
এই প্রেক্ষাপটেই ভারত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানে থাকা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাসূচক অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও অনুচ্ছেদ ৩৫ক বিলুপ্ত করে। একইসাথে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটি থেকে লাদাখ অঞ্চলকে আলাদা করা হয়। উভয় অংশকেই ইউনিয়নভুক্ত ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করার আগে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়, ইন্টারনেট, ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়।
নয়া দিল্লি কয়েক বছর ধরেই জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অনেক সুবিধা হ্রাস করে আসছিল। তবে তারপরও অনুচ্ছেদ দুটি কাশ্মীরীদের মনে আশাবাদ জাগিয়ে রেখেছিল যে তারা ভারতের কাছ থেকে একসময় ভালো আচরণ পাবে। তাছাড়া অনুচ্ছেদ ৩৫ক বাইরের লোকদের কাশ্মীরীদের জমি কেনায় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছিল। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে, বাইরের লোকজন জমি কেনা শুরু করলে এখানকার জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদলে যাবে।
এখন দুটি অনুচ্ছেদ বাতিল করায় কাশ্মীরী ও অবশিষ্ট ভারতীয়দের মধ্যে ব্যবধান আরো বাড়বে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন শান্তি বজায় রাখতে পারলেও উচ্চ মাত্রার সহিংসতা যেকোনো মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মনে হচ্ছে অনুচ্ছেদ ৩৫ক বিলুপ্ত করার ফলে কাশ্মীরের প্রকৃতি বদলে যাবে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের ১২.৫ মিলিয়ন লোকের ৬৮ ভাগ মুসলিম ছিল। নতুন পরিস্থিতির ফলে স্থানীয় সরকার আর বাইরের লোকদের ভূমি ক্রয়ে বাধা দিতে পারবে না। এতে করে নয়া দিল্লি হিন্দু অভিবাসীদের জমি কিনতে উৎসাহিত করবে। তিব্বতে হ্যান চীনা জনসংখ্যা বাড়াতে চীনও ঠিক একই নীতি অনুসরণ করেছিল।
ইকোনমিস্ট অনুযায়ী ২০০০ সালে হ্যান চীনারা তিব্বতের রাজধানী লাসায় ছিল সেখানকার মোট জনসংখ্যার ১৭ ভাগ। বর্তমানে তা হয়েছে ২২ ভাগ। বিশাল অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মিশ্র জনসংখ্যা পরিবর্তন ঘটেছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের ওপর আরো বেশি নজরদারি চালানোর সুযোগ পাচ্ছে চীন। কিন্তু এর ফলে তিব্বতিরা কিন্তু চীনাদের সাথে মিশে যাচ্ছে না। তারা বরং আরো দূরে সরে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। চীনা শাসনের প্রতিবাদে ২০১১ সাল থেকে ১৫০ জনের বেশি তিব্বতি আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
একইভাবে উন্নয়নের নামে কাশ্মীরে জাতিগত অবস্থানে পরিবর্তন আনা হবে। ক্ষমতাসীন বিজেপির মূল সংগঠন আরএসএস দীর্ঘ দিন ধরেই এমন দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা রাজ্যটিকে হিন্দুদের অনুকূলে আনার জন্য অনুচ্ছেদ দুটি বাতিল করার কথা বলছিল।
তাদের দাবি অনুযায়ী অনুচ্ছেদ দুটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে হিন্দুদের কাশ্মীরে ভূমি ক্রয়ের সুযোগ দেয়া হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরে মোতায়েন প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় সৈন্যের অনেকে সম্ভবত ইতোমধ্যেই সেখানে ভূমি কিনেছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটানো হতে পারে। ভারত সরকার ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, অক্টোবরে সেখানে একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
তাছাড়া আইন পরিষদের আসনেও পরিবর্তন আনা হবে। জম্মু ও কাশ্মীরের আইন পরিষদে জম্মুর রয়েছে ৩৭টি আসন, কাশ্মীরের ৪৬টি, লাদাখের ৪টি। এখন লাদাখ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জম্মুর আসন বাড়ানো হলে মুসলিমদের আসন কমে যাবে। ফলে মুসলিমদের তাৎপর্য হ্রাস পাবে। মুসলিমদের অবস্থান যত হ্রাস পাবে, হিন্দুদের তত বাড়বে।
বিজেপি ১৯৯০-এর দশক থেকে তাদের হিন্দু ভোট ভিত্তি বাড়ানোর জন্য কাশ্মীরী পণ্ডিতদের ব্যবহার করছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে প্রায় এক লাখ উচ্চ বর্ণের হিন্দু কাশ্মীর থেকে পালিয়ে যায় বলে ধারণা কা হচ্ছে। মোদির বিজেপি তাদেরকে পুনর্বাসিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বারবার।
নতুন ব্যবস্থায় সরকার সম্ভবত তাদের জন্য আলাদা টাউনশিপ গড়ে তুলবে। সেখানে তাদের নিজস্ব শিল্পপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, হাসপাতাল থাকবে। এসবের মাধ্যমে কাশ্মীরকে আরো নানাভাবে বিভক্ত করে ফেলা হবে।
বর্তমানে ভারতজুড়ে লোকজন শক্তিশালী ভারতের গল্প বলছিল। শুরুতে জম্মু ও লাদাখের অমুসলিমরাও নয়া দিল্লির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু এখন তাদেরও অনেকে তাদের সংস্কৃতি ও চাকরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এদিকে ৫ আগস্টের পর কাশ্মীরে কী ঘটছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তথ্য নিষিদ্ধ, কারফিউ চলছে। লোকজন তাদের ঘরে আটকে রয়েছে, শত শত মানুষ রয়েছে কারাগারে। এ ধরনের বদ্ধ অবস্থা চিরদিন থাকতে পারে না। এটা প্রত্যাহার হওয়ার পরই বিশ্ব চরমভাবে বদলে যাওয়া ভিন্ন এক কাশ্মীর দেখতে পাবে।
গত কয়েক বছর ধরে বেসামরিক বা বিদ্রোহীদের হত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিনই তরুণরা বন্দুকধারী ভারতীয় সৈন্যদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে। কাশ্মীরের ওপর ভারতীয় শাসনকে স্থানীয়রা দখলদারিত্ব বিবেচনা করে।
এই প্রেক্ষাপটেই ভারত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানে থাকা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাসূচক অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও অনুচ্ছেদ ৩৫ক বিলুপ্ত করে। একইসাথে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটি থেকে লাদাখ অঞ্চলকে আলাদা করা হয়। উভয় অংশকেই ইউনিয়নভুক্ত ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করার আগে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়, ইন্টারনেট, ল্যান্ডফোন, মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়।
নয়া দিল্লি কয়েক বছর ধরেই জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ অনেক সুবিধা হ্রাস করে আসছিল। তবে তারপরও অনুচ্ছেদ দুটি কাশ্মীরীদের মনে আশাবাদ জাগিয়ে রেখেছিল যে তারা ভারতের কাছ থেকে একসময় ভালো আচরণ পাবে। তাছাড়া অনুচ্ছেদ ৩৫ক বাইরের লোকদের কাশ্মীরীদের জমি কেনায় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছিল। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে, বাইরের লোকজন জমি কেনা শুরু করলে এখানকার জনসংখ্যাগত ভারসাম্য বদলে যাবে।
এখন দুটি অনুচ্ছেদ বাতিল করায় কাশ্মীরী ও অবশিষ্ট ভারতীয়দের মধ্যে ব্যবধান আরো বাড়বে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন শান্তি বজায় রাখতে পারলেও উচ্চ মাত্রার সহিংসতা যেকোনো মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মনে হচ্ছে অনুচ্ছেদ ৩৫ক বিলুপ্ত করার ফলে কাশ্মীরের প্রকৃতি বদলে যাবে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের ১২.৫ মিলিয়ন লোকের ৬৮ ভাগ মুসলিম ছিল। নতুন পরিস্থিতির ফলে স্থানীয় সরকার আর বাইরের লোকদের ভূমি ক্রয়ে বাধা দিতে পারবে না। এতে করে নয়া দিল্লি হিন্দু অভিবাসীদের জমি কিনতে উৎসাহিত করবে। তিব্বতে হ্যান চীনা জনসংখ্যা বাড়াতে চীনও ঠিক একই নীতি অনুসরণ করেছিল।
ইকোনমিস্ট অনুযায়ী ২০০০ সালে হ্যান চীনারা তিব্বতের রাজধানী লাসায় ছিল সেখানকার মোট জনসংখ্যার ১৭ ভাগ। বর্তমানে তা হয়েছে ২২ ভাগ। বিশাল অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মিশ্র জনসংখ্যা পরিবর্তন ঘটেছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের ওপর আরো বেশি নজরদারি চালানোর সুযোগ পাচ্ছে চীন। কিন্তু এর ফলে তিব্বতিরা কিন্তু চীনাদের সাথে মিশে যাচ্ছে না। তারা বরং আরো দূরে সরে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। চীনা শাসনের প্রতিবাদে ২০১১ সাল থেকে ১৫০ জনের বেশি তিব্বতি আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
একইভাবে উন্নয়নের নামে কাশ্মীরে জাতিগত অবস্থানে পরিবর্তন আনা হবে। ক্ষমতাসীন বিজেপির মূল সংগঠন আরএসএস দীর্ঘ দিন ধরেই এমন দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা রাজ্যটিকে হিন্দুদের অনুকূলে আনার জন্য অনুচ্ছেদ দুটি বাতিল করার কথা বলছিল।
তাদের দাবি অনুযায়ী অনুচ্ছেদ দুটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখন ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে হিন্দুদের কাশ্মীরে ভূমি ক্রয়ের সুযোগ দেয়া হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরে মোতায়েন প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় সৈন্যের অনেকে সম্ভবত ইতোমধ্যেই সেখানে ভূমি কিনেছে। তবে অল্প সময়ের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটানো হতে পারে। ভারত সরকার ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, অক্টোবরে সেখানে একটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
তাছাড়া আইন পরিষদের আসনেও পরিবর্তন আনা হবে। জম্মু ও কাশ্মীরের আইন পরিষদে জম্মুর রয়েছে ৩৭টি আসন, কাশ্মীরের ৪৬টি, লাদাখের ৪টি। এখন লাদাখ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জম্মুর আসন বাড়ানো হলে মুসলিমদের আসন কমে যাবে। ফলে মুসলিমদের তাৎপর্য হ্রাস পাবে। মুসলিমদের অবস্থান যত হ্রাস পাবে, হিন্দুদের তত বাড়বে।
বিজেপি ১৯৯০-এর দশক থেকে তাদের হিন্দু ভোট ভিত্তি বাড়ানোর জন্য কাশ্মীরী পণ্ডিতদের ব্যবহার করছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে প্রায় এক লাখ উচ্চ বর্ণের হিন্দু কাশ্মীর থেকে পালিয়ে যায় বলে ধারণা কা হচ্ছে। মোদির বিজেপি তাদেরকে পুনর্বাসিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বারবার।
নতুন ব্যবস্থায় সরকার সম্ভবত তাদের জন্য আলাদা টাউনশিপ গড়ে তুলবে। সেখানে তাদের নিজস্ব শিল্পপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, হাসপাতাল থাকবে। এসবের মাধ্যমে কাশ্মীরকে আরো নানাভাবে বিভক্ত করে ফেলা হবে।
বর্তমানে ভারতজুড়ে লোকজন শক্তিশালী ভারতের গল্প বলছিল। শুরুতে জম্মু ও লাদাখের অমুসলিমরাও নয়া দিল্লির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু এখন তাদেরও অনেকে তাদের সংস্কৃতি ও চাকরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এদিকে ৫ আগস্টের পর কাশ্মীরে কী ঘটছে তা বোঝা যাচ্ছে না। তথ্য নিষিদ্ধ, কারফিউ চলছে। লোকজন তাদের ঘরে আটকে রয়েছে, শত শত মানুষ রয়েছে কারাগারে। এ ধরনের বদ্ধ অবস্থা চিরদিন থাকতে পারে না। এটা প্রত্যাহার হওয়ার পরই বিশ্ব চরমভাবে বদলে যাওয়া ভিন্ন এক কাশ্মীর দেখতে পাবে।
No comments