৭ কোটি ৬৫ লাখ বর্গমিটারের ইস্তানবুল বিমানবন্দরে by জনি হক
গত ১১ মে ২০১৯। দুপুর। তার্কিশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ তুরস্কের ইস্তানবুল
বিমানবন্দরের ট্যাক্সিওয়ে পেরিয়ে যখন এগোচ্ছিল, টিউলিপ আকৃতির কন্ট্রোল
টাওয়ারে চোখ আটকে গেলো। ২০১৬ সালে জার্মানির বার্লিনে বিশ্ব স্থাপত্য উৎসবে
ফিউচার প্রজেক্টস বিভাগে প্রথম পুরস্কার জেতে এটি। রাতে এটি দৃষ্টিনন্দন
লাগে বেশি। অনলাইনে ছবিতে দেখেছি। গত বছরের ২৯ অক্টোবর এর আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধন হয়।
কিছুদিন আগে লন্ডনে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল কনফারেন্সে ইস্তানবুল
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আতাতুর্ক বিমানবন্দরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ
ট্রাফিক নতুন ইস্তানবুল বিমানবন্দরে চলে এসেছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয়
আকাশসেবা সংস্থা তার্কিশ এয়ারলাইনস গত ৬ এপ্রিল থেকে নতুন বিমানবন্দরে
তাদের কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে। এখান থেকে মেট্রো, বাস ও দ্রুতগতির
ট্রেন পাওয়া যাচ্ছে অনায়াসে। শুধু সাইন দেখে এগোলেই হলো।
ইস্তানবুল বিমানবন্দরে সংযোগ ফ্লাইট ধরতে হলে ‘ইন্টারন্যাশনাল
ট্রান্সফার’ লেখা নির্দেশনা ধরে এগোতে হবে। তার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট
থেকে নামার পর হাঁটছি তো হাঁটছি। এত্ত বড় বিমানবন্দর যে মনে হতে পারে, পথ
যেন শেষ হয় না! ৭ কোটি ৬৫ লাখ বর্গমিটার জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ইস্তানবুল
বিমানবন্দর। দিনে ২ লাখ যাত্রী যাতায়াত করছেন এখানে। প্রতি বছর তাদের
সংখ্যা যোগ করলে দাঁড়াবে ১৫ কোটি। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টার্মিনাল আছে
এখানে।
প্রায়
১০ মিনিট এসকেলেটরে চেপে ও পায়ে হেঁটে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সফার পাওয়া
গেলো। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে নিয়ম মেনে জুতা, বেল্ট, হাতঘড়ি, চশমা খুলে
হ্যান্ড লাগেজ, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগসহ ট্রে’তে দিতে হলো। যেকোনও
বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি জীবাণু থাকে কিন্তু এই ট্রে’তে! বিএমসি ইনফেকশনস
ডিজিজ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জেনেছি, বিমানবন্দরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার
পেছনে সবচেয়ে বড় অপরাধী প্লাস্টিক ট্রেগুলো! যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব
নটিংহ্যাম ও ফিনিশ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ারের
বিশেষজ্ঞদের একটি দল এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ল্যাপটপ দিতে হলো
আলাদা ট্রে’তে।
যেকোনও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে পর্যাপ্ত চার্জ রাখা দরকারি। মেশিনে
স্ক্যানের পর ইস্তানবুল বিমানবন্দরের নারী নিরাপত্তা কর্মী ল্যাপটপ চালু
করতে বললেন। ভাগ্যিষ চার্জ ছিল। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা কোনও
ডিভাইস চালু করতে বলার পর ব্যর্থ হলে তা নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। তাই
অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব এড়াতে ডিভাইসে চার্জ আছে কিনা সেদিকে সজাগ থাকুন।
ভ্রমণের
সময় স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। বিশেষ করে দীর্ঘ যাত্রার
ক্ষেত্রে হালকা পোশাক পরলে বিমানবন্দরে আরামদায়কভাবে ঘোরাফেরা করা যায়।
নেটফ্লাইটস ডটকমের বিপণন পরিচালক পল হপকিনসনের পরামর্শ, একসঙ্গে অনেক পোশাক
আর ভারী বুট ও জুতা এড়িয়ে চলুন। কারণ সিকিউরিটি চেকিংয়ে সবই খুলে রেখে
স্ক্যানিংয়ের পর আবারও পরতে হয়। সেক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। ভ্রমণের বেলায়
অনেকের কাছে বিমানবন্দরের এসব আনুষ্ঠানিকতা ক্লান্তিকর মনে হয়। যতটা সম্ভব
তাড়াতাড়ি নিরাপত্তাজনিত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চায় প্রত্যেকে। একটু বুদ্ধি
খাটালে দ্রুত চেক-ইন ও সিকিউরিটি চেকিং প্রক্রিয়ার মতো ঝক্কির কাজ সেরে
নেওয়া যেতে পারে। যেমন— যথাযথ কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন। সিকিউরিটি চেকিংয়ে
পাসপোর্ট নয়, প্রয়োজন বোর্ডিং পাস। তাই শেষ মুহূর্তে তালগোল পাকিয়ে ফেলার
আগে স্ক্যানের প্রয়োজনীয়তার জন্য যাত্রীকে এই কাগজ হাতে রাখতে হবে।
লিকুইড
টয়লেট্রিজ আলাদা ব্যাগে রাখুন। তরল পদার্থের কারণে সিকিউরিটি চেকিংয়ে হঠাৎ
লাগেজ পুনরায় গোছানোর ঝামেলায় পড়েন অনেকে। তাই লন্ডনের গ্যাটউইক
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরামর্শ— ক্রিম, জেল, পেস্ট, স্প্রে ও অ্যারোসলসহ
সব ধরনের লিকুইড টয়লেট্রিজ একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিক ব্যাগে রাখুন। লাগেজ থেকে
আলাদাভাবে স্ক্যানিংয়ের সুবিধার্থে এই পন্থা বেছে নিলে যাত্রীর সময় বাঁচে।
সব পণ্যই হতে হবে ১০০ মিলিলিটার বা ১০০ গ্রামের কন্টেইনারের মধ্যে।
ল্যাপটপ ও আইপ্যাডসহ বড় আকারের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য পৃথকভাবে স্ক্যানিংয়ের
জন্য হাতের ব্যাগের বাইরে রাখুন।
ডিউটি-ফ্রি সুবিধায় কত পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারবেন তা কেনার আগেই শুল্ক
বিভাগ থেকে জেনে নিন। একাধিকবার ব্যবহারযোগ্য বোতল সঙ্গে রাখুন। এরপর
প্রয়োজনমাফিক তাতে পানি রাখুন। তা না হলে সিকিউরিটি চেকিংয়ে পুরো বোতলটাই
ফেলে দিতে হবে। আর একটা কথা, বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুব্যবহার
করুন ও তাদের বোঝার মানসিকতা রাখুন। কারণ দিনভর প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়
তাদের।
সিকিউরিটি
চেকিং শেষে এসকেলেটরে চেপে ওপরে উঠে স্ক্রিনে দেখলাম, নিসে যাওয়ার ফ্লাইট
ধরতে কত নম্বর গেটে যেতে হবে। হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। হাঁটা শুরু করলাম।
নয়নাভিরাম ইস্তানবুল বিমানবন্দর দেখে চোখ জুড়ালো।
অন্য কোনও দেশে যেতে আকাশপথে ভ্রমণের জন্যই সাধারণত বিমানবন্দরে যাওয়া
হয় মানুষের। তাদের কেউই কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে অযথা বিমানবন্দরে সময় অপচয়
করার পক্ষপাতী নন। তবে আলো ঝলমলে, পরিচ্ছন্ন ও চকচকে ইস্তানবুল বিমানবন্দরে
এলে সেই ধারণা বদলে যাবে। খাবার-দাবারের দারুণ সুবিধা, চলাফেরার বিশাল
ফাঁকা জায়গা, রানওয়ে দেখা, বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগসহ অনেক কিছুই আছে এখানে।
ইস্তানবুল বিমানবন্দর জুড়ে রেস্তোরাঁ, সুগন্ধি, ডিউটি-ফ্রি শপ মেলা!
বিভিন্ন দেশের মানুষ আর কেনাকাটা দেখতে দেখতে কখন সময় কাটবে টের পাওয়া
মুশকিল। যতই ঘুরবেন, শেষ হবে না।
আরেকটি
দরকারি কথা বলি। উড়োজাহাজের অভ্যন্তরও সমান অপরিচ্ছন্ন থাকে বলে
বিশেষজ্ঞরা নিরীক্ষায় দেখেছেন। ২০১৫ সালে ট্রাভেলম্যাথের আরেক গবেষণায় উঠে
এসেছে এই তথ্য। তখন জানা যায়, উড়োজাহাজের ভেতরে যাত্রীদের আসনের ওপরে
হ্যান্ডব্যাগ রাখার তাকগুলো জীবাণুতে ভরা থাকে। তাই যতটা সম্ভব হাত ধুয়ে
রাখা প্রয়োজন।
No comments