শর্ত ভঙ্গ করেও তিনি বহাল by লুৎফর রহমান
পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে তার সার্বক্ষণিক থাকার কথা ক্যাম্পাসে।
কিন্তু তিনি থাকেন বাইরে, নিজের পছন্দের বাসায়। ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার
আড়াই বছরে তিনি বিদেশ সফর করেছেন অন্তত ২২ বার। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল
চালিকা শক্তি শিক্ষক-কর্মচারীদের পেনশনের টাকা নিতে শুধু দৌড় ঝাঁপই নয়
আদালতে পর্যন্ত যেতে হয়। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেও
ভিসি কার্যালয়ে আসেন দুপুরে। এসব অভিযোগ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
বুয়েটের ভিসি ড. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তার অদক্ষতা ও ব্যর্থতায় মেধাবী
শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, ভিসির স্বেচ্ছাচারিতার
জন্য ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা।
একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলাও এখন প্রশ্নের মুখে। আবরার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বুয়েট নিয়ে সারা বিশ্বে যে বার্তা পৌঁছে গেছে তার পরিণতি আরও দীর্ঘ দিন ভোগ করতে হবে। আর এর পুরো দায় ভিসি ড. সাইফুল ইসলামের। রোবরাত রাতে বুয়েটের শের ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। রাত আটটা থেকে দুইটা পর্যন্ত চলে তার ওপর নির্যাতন। ঘটনাটি অবহিত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। অনেকে বলছেন, ভিসিও নিশ্চয়ই অবগত হয়েছিলেন।
রাত দুইটায় আবরারের নিথর দেহ বাইরে ফেলে রাখে খুনিরা। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। চিকিৎসক এসে জানিয়ে ছিলেন নির্মম পিটুনির শিকার আবরার আর বেঁচে নেই। তারা ভিসিকে ফোনে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ড. সাইফুল সন্তানতুল্য ছাত্রটির জন্য ঘটনাস্থলে আসার গরজ অনুভব করেননি। বরং তিনি ফোনেই কর্মকর্তাদের সমাধান বাতলে দেন। বলেন, এটি পুলিশ কেস। পুলিশই ব্যবস্থা নেবে। হ্যাঁ, পুলিশ কেস বলেই হয়তো আবরারকে যখন পিটানো হচ্ছিল তখন পুলিশ হলের গেটে বসে অপেক্ষা করছিল। তারা কার নির্দেশ এবং কি পরিস্থিতির অপেক্ষায় ছিল এটির জবাব ভিসির কাছ থেকেই চাইছেন আন্দোলনকারীরা। সেদিন রাত পেরিয়ে সকাল হলেও ঘুম ভাঙেনি ভিসি সাইফুল ইসলামের। ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখটির জানাজায় যখন সারিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তখনও গরহাজির তিনি। নানা সূত্র থেকে বলা হলো তিনি অসুস্থ তাই বাইরে আসতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখেও এমনটি শোনা গেল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জনসমক্ষে ওই দিনই দাবি করেন ভিসি অসুস্থ নন। আবরার হত্যাকাণ্ডের রেশ সুপার সনিক গতিতে ছড়িয়ে পড়ে দেশময়, পুরো বিশ্বে। একজন বিনয়ী, মেধাবী শিক্ষার্থীর এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুতে নাড়া দিয়েছে প্রতিটি হৃদয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার দিন সকাল থেকেই ঘটনার খোঁজ খবর নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ভিসির রহস্যময় নিরবতায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ভিসি ক্যাম্পাসে প্রকাশ হন। শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তিনি নিজেই জানান, অসুস্থ ছিলেন না বরং মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তিনি এই সময় কাটিয়েছেন। মুখে না বললেও এ কারণেই যে তিনি ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি এটিই তিনি ইঙ্গিত করেন। ভিসি আসলেন না তাতে কি। আবরার যে ততক্ষণে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বময়। ক্ষোভ আর প্রতিবাদের উত্তাল দেশ। এই ক্ষোভের বাতাস যে অনেকটা তার দিকেই ধেয়ে আসছে এটিও টের পেলেন ভিসি।
তাই বুধবার তড়িঘড়ি করে তিনি রওনা দিলেন কুষ্টিয়া। আবরারের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। কিন্তু সে সুযোগ তাকে দিলেন না রায়ডাঙ্গা গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষের বাধায় ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হন ভিসি। কিন্তু তার এই আগমনে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ। লাঠিচার্জে আহত হন আবরারের ভাই ফায়াজ, তার এক আত্মীয়সহ কয়েকজন। এতো ঘটনার রেশ ধরেই বুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থীদের কারও কারও মুখে উঠে এমন দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দাঁড়িয়ে এমন দাবি তুলেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। কিন্তু যিনি নীতি আর নিয়মের ধার ধারেন না তার কাছে এমন দাবি হয়তো নিছকই দাবি। তাই অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি। তাই পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। ভিসি এমন দাবি করলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ অবশ্য পুরো পরিস্থিতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দিয়েছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বুয়েটে এমন পরিস্থিতি এক দিনে আসেনি। আগে যদি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজকের পরিস্থিতি দেখতে হতো না।
এদিকে গত ১৩ই জুলাই শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বেশির ভাগ ফাইল সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এক থেকে দুই বছর পড়ে থাকে। প্রশাসন স্থবির। প্রভাষক নিয়োগ দিতে সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়। ভিসি নিয়মিতভাবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর অফিসে আসেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয় না। সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১৪টি সিন্ডিকেট সভা হয়েছে। তাঁর প্রশাসনিক অদক্ষতায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকার তহবিল ফেরত যায়। তাঁরই অন্যায্য সিদ্ধান্তে ২১ জন শিক্ষক ও ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন আটকে যায়। হাইকোর্ট, আপিল বিভাগে ও রিভিউতে হেরে যাওয়ার পরও তিনি সহজে রায় মেনে নিতে চাননি। ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সমিতির সভার রেজুলেশনেও এমন অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়। শিক্ষকদের দাবি ভিসি আড়াই বছরে অন্তত ২২ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
বুয়েট এ্যালামনাই’র দাবি একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাকে ওই অনুষ্ঠানে অতিথি করা হলেও তিনি জাননি। বুয়েট এ্যলামনাই’র বর্তমান সভাপতি প্রখ্যাত স্থপতি ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি এ ঘটনার বিষয়ে চরম বিরক্তি ও খেদ প্রকাশ করেন তার ঘনিষ্টজনদের কাছে। বুধবার বুয়েট ক্যাম্পাসে আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ও বুয়েট এ্যালামনাই’র সদস্য আবুল হায়াত ভিসির বিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানান। বুয়েটের শের ই বাংলা হলের সাবেক এই ছাত্র বলেন, আমরা যখন বুয়েটে পড়েছি তখনকার পরিবেশ এমন ছিলো না। আমরা যখন আন্দোলন করতাম তখন ভিসি এসে আমাদের সামনে বসে থাকতেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসতেন। কারণ তিনি আমাদেরকে নিজের সন্তানের মত মনে করতেন। আর আজকের ভিসি। আমার সন্তান মারা যাওয়ার খবর শুনে আমি যাবো না সেখানে? ভিসির সন্তান নয় ছাত্ররা। এর চেয়ে অবাক করার ঘটনাতো আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা ভিসিকে আমাদের অনুষ্ঠানের জন্য একটি চিঠি দিয়ে দেড় মাস অপেক্ষা করেছি। এবং তিনি বিশেষ অতিথি হয়ে আসবেন বলে কথা দিয়েও আসেননি। এমন একটা ভিসিকে আমরা কী বলতে পারি? তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান। আমাদের চোখের সামনে এখনো ড. রশিদ, ড. নাসের, শাহজাহান এইসব ব্যক্তিত্ব রয়েছে। তিনি এও বলেন, প্রশাসনকে আগে ধুয়ে-মুছে সাফ করতে হবে। হারপিক বা এর চেয়েও কড়া কিছু থাকলে তাদেরকে পরিষ্কার করতে হবে।
একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলাও এখন প্রশ্নের মুখে। আবরার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বুয়েট নিয়ে সারা বিশ্বে যে বার্তা পৌঁছে গেছে তার পরিণতি আরও দীর্ঘ দিন ভোগ করতে হবে। আর এর পুরো দায় ভিসি ড. সাইফুল ইসলামের। রোবরাত রাতে বুয়েটের শের ই বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। রাত আটটা থেকে দুইটা পর্যন্ত চলে তার ওপর নির্যাতন। ঘটনাটি অবহিত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। অনেকে বলছেন, ভিসিও নিশ্চয়ই অবগত হয়েছিলেন।
রাত দুইটায় আবরারের নিথর দেহ বাইরে ফেলে রাখে খুনিরা। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। চিকিৎসক এসে জানিয়ে ছিলেন নির্মম পিটুনির শিকার আবরার আর বেঁচে নেই। তারা ভিসিকে ফোনে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ড. সাইফুল সন্তানতুল্য ছাত্রটির জন্য ঘটনাস্থলে আসার গরজ অনুভব করেননি। বরং তিনি ফোনেই কর্মকর্তাদের সমাধান বাতলে দেন। বলেন, এটি পুলিশ কেস। পুলিশই ব্যবস্থা নেবে। হ্যাঁ, পুলিশ কেস বলেই হয়তো আবরারকে যখন পিটানো হচ্ছিল তখন পুলিশ হলের গেটে বসে অপেক্ষা করছিল। তারা কার নির্দেশ এবং কি পরিস্থিতির অপেক্ষায় ছিল এটির জবাব ভিসির কাছ থেকেই চাইছেন আন্দোলনকারীরা। সেদিন রাত পেরিয়ে সকাল হলেও ঘুম ভাঙেনি ভিসি সাইফুল ইসলামের। ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখটির জানাজায় যখন সারিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তখনও গরহাজির তিনি। নানা সূত্র থেকে বলা হলো তিনি অসুস্থ তাই বাইরে আসতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখেও এমনটি শোনা গেল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জনসমক্ষে ওই দিনই দাবি করেন ভিসি অসুস্থ নন। আবরার হত্যাকাণ্ডের রেশ সুপার সনিক গতিতে ছড়িয়ে পড়ে দেশময়, পুরো বিশ্বে। একজন বিনয়ী, মেধাবী শিক্ষার্থীর এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুতে নাড়া দিয়েছে প্রতিটি হৃদয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার দিন সকাল থেকেই ঘটনার খোঁজ খবর নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ভিসির রহস্যময় নিরবতায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ভিসি ক্যাম্পাসে প্রকাশ হন। শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তিনি নিজেই জানান, অসুস্থ ছিলেন না বরং মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তিনি এই সময় কাটিয়েছেন। মুখে না বললেও এ কারণেই যে তিনি ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি এটিই তিনি ইঙ্গিত করেন। ভিসি আসলেন না তাতে কি। আবরার যে ততক্ষণে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বময়। ক্ষোভ আর প্রতিবাদের উত্তাল দেশ। এই ক্ষোভের বাতাস যে অনেকটা তার দিকেই ধেয়ে আসছে এটিও টের পেলেন ভিসি।
তাই বুধবার তড়িঘড়ি করে তিনি রওনা দিলেন কুষ্টিয়া। আবরারের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। কিন্তু সে সুযোগ তাকে দিলেন না রায়ডাঙ্গা গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষের বাধায় ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হন ভিসি। কিন্তু তার এই আগমনে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ। লাঠিচার্জে আহত হন আবরারের ভাই ফায়াজ, তার এক আত্মীয়সহ কয়েকজন। এতো ঘটনার রেশ ধরেই বুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থীদের কারও কারও মুখে উঠে এমন দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দাঁড়িয়ে এমন দাবি তুলেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। কিন্তু যিনি নীতি আর নিয়মের ধার ধারেন না তার কাছে এমন দাবি হয়তো নিছকই দাবি। তাই অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি। তাই পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। ভিসি এমন দাবি করলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ অবশ্য পুরো পরিস্থিতির দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই দিয়েছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বুয়েটে এমন পরিস্থিতি এক দিনে আসেনি। আগে যদি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজকের পরিস্থিতি দেখতে হতো না।
এদিকে গত ১৩ই জুলাই শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বেশির ভাগ ফাইল সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এক থেকে দুই বছর পড়ে থাকে। প্রশাসন স্থবির। প্রভাষক নিয়োগ দিতে সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়। ভিসি নিয়মিতভাবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর অফিসে আসেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয় না। সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১৪টি সিন্ডিকেট সভা হয়েছে। তাঁর প্রশাসনিক অদক্ষতায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকার তহবিল ফেরত যায়। তাঁরই অন্যায্য সিদ্ধান্তে ২১ জন শিক্ষক ও ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন আটকে যায়। হাইকোর্ট, আপিল বিভাগে ও রিভিউতে হেরে যাওয়ার পরও তিনি সহজে রায় মেনে নিতে চাননি। ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সমিতির সভার রেজুলেশনেও এমন অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়। শিক্ষকদের দাবি ভিসি আড়াই বছরে অন্তত ২২ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
বুয়েট এ্যালামনাই’র দাবি একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাকে ওই অনুষ্ঠানে অতিথি করা হলেও তিনি জাননি। বুয়েট এ্যলামনাই’র বর্তমান সভাপতি প্রখ্যাত স্থপতি ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি এ ঘটনার বিষয়ে চরম বিরক্তি ও খেদ প্রকাশ করেন তার ঘনিষ্টজনদের কাছে। বুধবার বুয়েট ক্যাম্পাসে আয়োজিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ও বুয়েট এ্যালামনাই’র সদস্য আবুল হায়াত ভিসির বিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানান। বুয়েটের শের ই বাংলা হলের সাবেক এই ছাত্র বলেন, আমরা যখন বুয়েটে পড়েছি তখনকার পরিবেশ এমন ছিলো না। আমরা যখন আন্দোলন করতাম তখন ভিসি এসে আমাদের সামনে বসে থাকতেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসতেন। কারণ তিনি আমাদেরকে নিজের সন্তানের মত মনে করতেন। আর আজকের ভিসি। আমার সন্তান মারা যাওয়ার খবর শুনে আমি যাবো না সেখানে? ভিসির সন্তান নয় ছাত্ররা। এর চেয়ে অবাক করার ঘটনাতো আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, আমরা ভিসিকে আমাদের অনুষ্ঠানের জন্য একটি চিঠি দিয়ে দেড় মাস অপেক্ষা করেছি। এবং তিনি বিশেষ অতিথি হয়ে আসবেন বলে কথা দিয়েও আসেননি। এমন একটা ভিসিকে আমরা কী বলতে পারি? তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান। আমাদের চোখের সামনে এখনো ড. রশিদ, ড. নাসের, শাহজাহান এইসব ব্যক্তিত্ব রয়েছে। তিনি এও বলেন, প্রশাসনকে আগে ধুয়ে-মুছে সাফ করতে হবে। হারপিক বা এর চেয়েও কড়া কিছু থাকলে তাদেরকে পরিষ্কার করতে হবে।
No comments