ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অনিয়ম, বিতর্ক by মনির হোসাইন
বিতর্ক
পিছু ছাড়ছে না প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। বার বার
গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছে দেশসেরা বিদ্যাপীঠটি। যার কারণে
সাধারণ মানুষের আস্থা হারাচ্ছে এ উচ্চ শিক্ষালয়। উচ্চ শিক্ষার্জনে
শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি বেশ কিছু
কারণে আলোচনায় এসেছে। ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ৩৪ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো,
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়া, ভর্তি জালিয়াতির দায়ে ৬৯ শিক্ষার্থীর
বহিষ্কারাদেশ, ভিসি প্যানেল নিয়ে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, সাত কলেজ নিয়ে
স্থায়ী সমাধানে আসতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা, শিক্ষকদের গবেষণা
চৌর্যবৃত্তি ও গবেষণা কমে যাওয়া, গণরুম গেস্টরুম বন্ধে প্রথম বর্ষের
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ বেশ কিছু কারণে কাঠগড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসন। এছাড়া ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।
৩৪ শিক্ষার্থীর নিয়মবহির্ভূত ভর্তি: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের আওতাধীন মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজম্যান্ট প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের ৩৪ নেতাকর্মীকে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি করানোর খবর প্রকাশ হয়। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জানা গেছে, ভিসি ও অনুষদটির ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের চিরকুটে তাদের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি করানো হয়েছিল। এ প্রোগ্রামে ভর্তির নির্ধারিত সময় পার হলেও ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন ভিসি ও ডিন। এদের মধ্যে ৮জন ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চিরকুট দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, পরীক্ষা ছাড়া ভিসির শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে উল্লেখ করে সৎ সাহসের সঙ্গে অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগণ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। এদিকে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগের পর নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন কোনো ধরনের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, এই সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কেবল মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
এমনকি এই ভর্তির জন্য কোনো সার্কুলারেরও প্রয়োজন হয় না। যদিও এমন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা। অধ্যাপক শিবলী বলেন, অনুষদের ‘চেয়ারম্যানস কমিটিতে’ এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটিও তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। ছাত্রলীগের ৩৪ নেতার ভর্তির বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাদের অনুষদের অনেক শিক্ষার্থী আগেই চাকরি পেয়ে যাওয়ায় মাস্টার্স করতে পারেন না। এসব শিক্ষার্থীর ইভিনিংয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া যায় কি না, দুই বছর আগে চেয়ারম্যানস কমিটিতে এমন একটি বিষয় উত্থাপিত হয়। সভায় আলোচনার ভিত্তিতে অনুষদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তির সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য অনুষদ থেকে পাশ করা যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন পেশায় আছেন, তাঁদের জন্য মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার একটি সুযোগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর উদ্দেশ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট বা রেজিস্টার্ড স্টুডেন্ট, কোনো সমস্যা হলেও তাঁরা যেন এখানে পড়াশোনা করতে পারেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেউ যদি এখানে পড়তে চান, তাঁদের লিখিত, মৌখিক দুটি পরীক্ষাই দিতে হয়। এদিকে জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াদের ডাকসু পদ শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনসহ ৩ দাবি নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো: ক্ষমতার অপব্যবহার ও নৈতিক স্খলনের দায়ে বাণিজ্য অনুষদের ডিনের পদত্যাগ এবং চিরকুট সুপারিশে ভর্তি করানোর দায়ে ঢাবি ভিসি ও ডাকসু সভাপতির পদত্যাগ। মানববন্ধনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাসান আল মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন চিরকুটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতাকে যে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বিরোধী কাজ ও নৈতিকতার স্খলন। তাই তাদের উচিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা। এছাড়া ডাকসুর পদগুলো থেকে ছাত্রলীগের আটজন নেতাকে বহিস্কার করে তাদের শূণ্য পদগুলোতে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়া: এদিকে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়া নিয়ে আবারো সমালোচিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা। যদিও ভিসির দাবি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এসব র্যাঙ্কিং করা হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সময়ের আবর্তনে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন শিক্ষবিদেরা। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং নিয়ে কাজ করা লন্ডন ভিত্তিক টাইম হায়ার এডুকেশন ৯২টি দেশের ১৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করে। পাঁচটি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করে শিক্ষা বিষয়ক এ সাময়িকি। গণ বছর এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও এবার ১৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান হয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের। কিন্তু এ তালিকায় দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এক হাজারের পর। শুধু তাই নয়, গত চার বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৪০০ ধাপ পিছিয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দাবি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই এসব র্যাঙ্কিং করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বাস করে না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষাবিদরা বলছেন শিক্ষকদের রাজনীতিতে জড়ানো ও গবেষণায় অনাগ্রহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দিনদিন তলানিতে যাচ্ছে।
ভিসি প্যানেল নিয়ে বিতর্ক: গত ৩১শে আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেল নির্বাচন হয়। দীর্ঘ আড়াই যুগ পর পূর্ণাঙ্গ সিনেট নিয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ এ অধিবেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল নির্বাচিত হন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে নীল দলের অভ্যন্তরে হওয়া ভোটের ফলাফল অনুযায়ী ভিসি প্যানেলে তিনজনের ক্রম ঠিক হওয়ার কথা থাকলেও তা মানেননি বর্তমান ভিসি। তিনি নিজের নাম সর্ব প্রথম দিয়েছেন। যদিও সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মু. সামাদ সবার ওপরে থাকার কথা ছিল। এ নিয়ে নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে সিনেট অধিবেশনে কথা বলতে চাইলেও বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেয়া সিনেট সদস্য ও রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটরা। নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. হুমায়ুন কবির এ বিষয়টিকে নীল দলের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন ভিসি ড. আখতারুজ্জামান। তার দাবি ভিসি প্যানেল সব নিয়মনীতি মেনেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ভর্তি জালিয়াতির দায়ে ৬৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ: এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে গত ২৯ আগস্ট ৬৯ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ১৬জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সিআইডির দেয়া তথ্য মতে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাদের বহিষ্কার করতে সিন্ডিকেটে সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদ। পরে ২৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক সভা থেকে তাদের বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হয়। এর আগে ২৩ জুন ঢাবিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে ৮৭ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত প্রশ্নফাঁস মামলায় দু’টি পৃথক আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মোট চারটি চার্জশিট দাখিল করে সংস্থাটি।
সাত কলেজ নিয়ে স্থায়ী সমাধানে আসতে না পারা: সেশনজট কমানো আর মানোন্নয়নের আশায় রাজধানীতে অবস্থিত ঢাকার সর্ববৃহৎ সাত সরকারী কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হলেও সেই উদ্যোগ শিক্ষায় মহাসঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতা দেখানোর খেলায় কোন প্রস্তুতি ছাড়াই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে এনে অতি আগ্রহে গিলে ছিল ঢাবি। তবে আগ্রহ নিয়ে গিললেও অধিভুক্ত সাত কলেজ এখন ঢাবির ‘গলার কাঁটা’। ক্রমেই শিক্ষার ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে উঠছে অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত। দুই বছরের মাথায় আজ খুশি নয় ঢাবি ও সাত কলেজের কোন পক্ষই। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন পরপরই রাস্তায় নেমে পড়ছে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত জুলাইয়ে সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ আন্দোলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে অচলাবস্থা বিরাজ করে পুরো ক্যাম্পাসে। বন্ধ থাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম। এনিয়ে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও ডাকসুর ভিপি জিএসদেরও রাখা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় প্রো-ভিসি অধ্যাপক মু. সামাদকে। এ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা বলা হলেও তারা আরো ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নেয়।
রোকেয়া হলে নিয়োগ বাণিজ্য: সম্প্রতি রোকেয়া হলের কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সামনে আসলে আবারো বিতর্কের মুখে পড়ে হল প্রশাসন। অভিযোগের পর নিয়োগটি স্থগিত করে হল প্রশাসন। হল সংসদের ভিপি, জিএস ও হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন হলের কয়েকজন ছাত্রী। হলে নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ দিতে তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন তাঁরা, এমন অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন রোকেয়া হলের প্রায় ১৫ জন ছাত্রী। ছাত্রীদের অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা-কর্মীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। গত ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহায়ক পদে ১ জন, বাগানের মালি পদে ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে ৩ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। ৩১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ দিন। ১ সেপ্টেম্বর এসব পদে আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রীদের অভিযোগ, অফিস সহায়ক পদে হলের এক কর্মচারীর ছেলেকে এবং বাগানের এক মালির ছেলেকে মালি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে যথাক্রমে ৮ ও ৫ লাখ করে টাকা নিয়েছেন হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান ও জিএস সায়মা প্রমি। আর নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ দিতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক ইশাত কাশফিয়া। এ সময় হল সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ফাল্গুনী দাসের সঙ্গে হলের এক কর্মচারীর কথোপকথনের রেকর্ডও সাংবাদিকের কাছে দেন অভিযোগকারী ছাত্রীরা। এ ছাড়া হল প্রাধ্যক্ষের তাৎক্ষণিক অপসারণ ও হল সংসদ বাতিল ঘোষণা করার দাবি জানান অভিযোগকারী ছাত্রীরা।
৩৪ শিক্ষার্থীর নিয়মবহির্ভূত ভর্তি: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের আওতাধীন মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজম্যান্ট প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের ৩৪ নেতাকর্মীকে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি করানোর খবর প্রকাশ হয়। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জানা গেছে, ভিসি ও অনুষদটির ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের চিরকুটে তাদের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি করানো হয়েছিল। এ প্রোগ্রামে ভর্তির নির্ধারিত সময় পার হলেও ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন ভিসি ও ডিন। এদের মধ্যে ৮জন ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চিরকুট দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, পরীক্ষা ছাড়া ভিসির শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে উল্লেখ করে সৎ সাহসের সঙ্গে অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগণ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। এদিকে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগের পর নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন কোনো ধরনের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে। তাঁর ভাষ্য, এই সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কেবল মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
এমনকি এই ভর্তির জন্য কোনো সার্কুলারেরও প্রয়োজন হয় না। যদিও এমন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা। অধ্যাপক শিবলী বলেন, অনুষদের ‘চেয়ারম্যানস কমিটিতে’ এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটিও তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। ছাত্রলীগের ৩৪ নেতার ভর্তির বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাদের অনুষদের অনেক শিক্ষার্থী আগেই চাকরি পেয়ে যাওয়ায় মাস্টার্স করতে পারেন না। এসব শিক্ষার্থীর ইভিনিংয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া যায় কি না, দুই বছর আগে চেয়ারম্যানস কমিটিতে এমন একটি বিষয় উত্থাপিত হয়। সভায় আলোচনার ভিত্তিতে অনুষদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তির সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য অনুষদ থেকে পাশ করা যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন পেশায় আছেন, তাঁদের জন্য মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার একটি সুযোগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর উদ্দেশ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট বা রেজিস্টার্ড স্টুডেন্ট, কোনো সমস্যা হলেও তাঁরা যেন এখানে পড়াশোনা করতে পারেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেউ যদি এখানে পড়তে চান, তাঁদের লিখিত, মৌখিক দুটি পরীক্ষাই দিতে হয়। এদিকে জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াদের ডাকসু পদ শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনসহ ৩ দাবি নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অন্য দুটি দাবি হলো: ক্ষমতার অপব্যবহার ও নৈতিক স্খলনের দায়ে বাণিজ্য অনুষদের ডিনের পদত্যাগ এবং চিরকুট সুপারিশে ভর্তি করানোর দায়ে ঢাবি ভিসি ও ডাকসু সভাপতির পদত্যাগ। মানববন্ধনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাসান আল মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন চিরকুটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতাকে যে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বিরোধী কাজ ও নৈতিকতার স্খলন। তাই তাদের উচিত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করা। এছাড়া ডাকসুর পদগুলো থেকে ছাত্রলীগের আটজন নেতাকে বহিস্কার করে তাদের শূণ্য পদগুলোতে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।
বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়া: এদিকে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়া নিয়ে আবারো সমালোচিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা। যদিও ভিসির দাবি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এসব র্যাঙ্কিং করা হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সময়ের আবর্তনে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন শিক্ষবিদেরা। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং নিয়ে কাজ করা লন্ডন ভিত্তিক টাইম হায়ার এডুকেশন ৯২টি দেশের ১৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করে। পাঁচটি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করে শিক্ষা বিষয়ক এ সাময়িকি। গণ বছর এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও এবার ১৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান হয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের। কিন্তু এ তালিকায় দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এক হাজারের পর। শুধু তাই নয়, গত চার বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৪০০ ধাপ পিছিয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দাবি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই এসব র্যাঙ্কিং করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিক র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বাস করে না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষাবিদরা বলছেন শিক্ষকদের রাজনীতিতে জড়ানো ও গবেষণায় অনাগ্রহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দিনদিন তলানিতে যাচ্ছে।
ভিসি প্যানেল নিয়ে বিতর্ক: গত ৩১শে আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেল নির্বাচন হয়। দীর্ঘ আড়াই যুগ পর পূর্ণাঙ্গ সিনেট নিয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ এ অধিবেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদ ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল নির্বাচিত হন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে নীল দলের অভ্যন্তরে হওয়া ভোটের ফলাফল অনুযায়ী ভিসি প্যানেলে তিনজনের ক্রম ঠিক হওয়ার কথা থাকলেও তা মানেননি বর্তমান ভিসি। তিনি নিজের নাম সর্ব প্রথম দিয়েছেন। যদিও সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মু. সামাদ সবার ওপরে থাকার কথা ছিল। এ নিয়ে নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে সিনেট অধিবেশনে কথা বলতে চাইলেও বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেয়া সিনেট সদস্য ও রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটরা। নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. হুমায়ুন কবির এ বিষয়টিকে নীল দলের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন ভিসি ড. আখতারুজ্জামান। তার দাবি ভিসি প্যানেল সব নিয়মনীতি মেনেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ভর্তি জালিয়াতির দায়ে ৬৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ: এদিকে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে গত ২৯ আগস্ট ৬৯ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ১৬জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সিআইডির দেয়া তথ্য মতে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাদের বহিষ্কার করতে সিন্ডিকেটে সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদ। পরে ২৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক সভা থেকে তাদের বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হয়। এর আগে ২৩ জুন ঢাবিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে ৮৭ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত প্রশ্নফাঁস মামলায় দু’টি পৃথক আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মোট চারটি চার্জশিট দাখিল করে সংস্থাটি।
সাত কলেজ নিয়ে স্থায়ী সমাধানে আসতে না পারা: সেশনজট কমানো আর মানোন্নয়নের আশায় রাজধানীতে অবস্থিত ঢাকার সর্ববৃহৎ সাত সরকারী কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হলেও সেই উদ্যোগ শিক্ষায় মহাসঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতা দেখানোর খেলায় কোন প্রস্তুতি ছাড়াই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে এনে অতি আগ্রহে গিলে ছিল ঢাবি। তবে আগ্রহ নিয়ে গিললেও অধিভুক্ত সাত কলেজ এখন ঢাবির ‘গলার কাঁটা’। ক্রমেই শিক্ষার ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে উঠছে অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত। দুই বছরের মাথায় আজ খুশি নয় ঢাবি ও সাত কলেজের কোন পক্ষই। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন পরপরই রাস্তায় নেমে পড়ছে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত জুলাইয়ে সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ আন্দোলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে অচলাবস্থা বিরাজ করে পুরো ক্যাম্পাসে। বন্ধ থাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম। এনিয়ে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও ডাকসুর ভিপি জিএসদেরও রাখা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় প্রো-ভিসি অধ্যাপক মু. সামাদকে। এ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা বলা হলেও তারা আরো ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নেয়।
রোকেয়া হলে নিয়োগ বাণিজ্য: সম্প্রতি রোকেয়া হলের কর্মচারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সামনে আসলে আবারো বিতর্কের মুখে পড়ে হল প্রশাসন। অভিযোগের পর নিয়োগটি স্থগিত করে হল প্রশাসন। হল সংসদের ভিপি, জিএস ও হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন হলের কয়েকজন ছাত্রী। হলে নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ দিতে তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন তাঁরা, এমন অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন রোকেয়া হলের প্রায় ১৫ জন ছাত্রী। ছাত্রীদের অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা-কর্মীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। গত ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহায়ক পদে ১ জন, বাগানের মালি পদে ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে ৩ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। ৩১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ দিন। ১ সেপ্টেম্বর এসব পদে আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রীদের অভিযোগ, অফিস সহায়ক পদে হলের এক কর্মচারীর ছেলেকে এবং বাগানের এক মালির ছেলেকে মালি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে যথাক্রমে ৮ ও ৫ লাখ করে টাকা নিয়েছেন হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান ও জিএস সায়মা প্রমি। আর নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ দিতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক ইশাত কাশফিয়া। এ সময় হল সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ফাল্গুনী দাসের সঙ্গে হলের এক কর্মচারীর কথোপকথনের রেকর্ডও সাংবাদিকের কাছে দেন অভিযোগকারী ছাত্রীরা। এ ছাড়া হল প্রাধ্যক্ষের তাৎক্ষণিক অপসারণ ও হল সংসদ বাতিল ঘোষণা করার দাবি জানান অভিযোগকারী ছাত্রীরা।
No comments