টাকার বাদশাহ এনামুল
বছর
খানেক আগে গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পান। এর আগে
ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা। তখন থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও
চাঁদাবাজি শুরু করেন এনামুল হক। এসব কাজে আসতে থাকে অঢেল অর্থ। পরে
স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক শীর্ষ নেতার সান্নিধ্যে যুক্ত হন ক্যাসিনো ক্লাবে।
র্যাবের অভিযানে বন্ধ হয়ে যাওয়া মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের তিনি
অন্যতম পরিচালক। এখান থেকে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। এই টাকা দিয়ে কিনেছেন
একের পর এক বাড়ি। প্লট, জমি কিনেছেন নামে বেনামে। এতো কিছুর পরও তার হাতে
টাকা আর টাকা। সেই টাকা রাখার জায়গা নেই। তাই অনেকটা নিজের বাড়িকেই
বানিয়েছেন ব্যাংক!। বিশেষ অর্ডারে পাঁচটি ভল্ট বানিয়েছেন টাকা রাখার জন্য।
তবে এই ভল্টেও যে টাকা ধরবে না এমনটা ভেবে টাকা দিয়ে কিনেছেন স্বর্ণ। ভরি
বা ছটাকে নয়। কেজিতে। এ যেন টাকার এক বাদশাহ। গতকাল র্যাবের অভিযানে
বেরিয়ে এসেছে এনামুলের সেই গুপ্ত ভান্ডারের চিত্র। নিজের বাসা, তার এক
কর্মচারীর আর বন্ধুর বাসায় রাখা পাঁচটি ভল্ট উদ্ধার করে পাওয়া গেছে পাঁচ
কোটিরও বেশি টাকা। উদ্ধার করা হয়েছে ৭২০ ভরি স্বর্ণ। প্রচলিত বাজার মূল্যে
এর দাম হবে অন্তত ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এতো টাকা বাসায় জমিয়ে রেখেও নিজেকে
নিরাপদ মনে করতে পারেননি এনামুল। গত কয়েক দিন ধরে ক্যাসিনো মালিক ও
টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে চলা অভিযানের মধ্যে পরিস্থিতি আঁচ করে তিনি
থাইল্যান্ডে পালিয়েছেন। তারই অবৈধ সম্রাজ্যের আরেক সহযোগী সূত্রাপুর থানা
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযান
পরিচালনাকারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় টাকার নেশায় বুঁদ ছিলেন
গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক। টাকার জন্য তিনি সবই
করতেন। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী
কর্মকান্ড, মাদক ব্যবসা ছিল তার আয়ের উৎস। এসব করে তিনি কামিয়েছেন শত শত
কোটি টাকা। অবৈধ এসব টাকা দিয়ে ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন অন্তত ১৫টি। বিভিন্ন
এলাকায় ছোট-বড় প্লট কিনেছেন ডজন খানেক। শহরের বাইরে কিনেছেন অনেক জমি।
অভিযোগ আছে দেশের বাইরেও তার আছে শতকোটি টাকার সম্পত্তি। হুন্ডি করে তিনি
এসব টাকা বিদেশে পাঠিয়েছেন। ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংকে আরও শত কোটি টাকা আছে
বলে ধারণা করা হচ্ছে। র্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল তিনটি বাসায়
অভিযান চালিয়ে এনামুলের ৫টি ভল্ট জব্দ করেছে। এসব ভল্ট থেকে উদ্ধার করা
হয়েছে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। এছাড়া ৭২০ ভরি স্বর্নসহ উদ্ধার করা হয়েছে ৬টি
আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
শাহে আলম মুরাদ জানান, এনামুল থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হয়েছেন বছর
খানেক আগে। এর আগে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন।
গেন্ডারিয়া ছিলো এনামুল হকের রাজত্ব। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই চলতো নির্যাতন। চলতো অস্ত্রের মহড়া। অস্ত্র ঠেকিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি থেকে সবই হতো তার নেতৃত্বে। এলাকবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার আলাদা আলাদা দুটি গ্রুপ নানান সময় করতো অপকর্ম। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসলে একসাথে বসে দেনদরবার করতো দুইজন। এই এলাকায় দু’জন ছিলো এক আতংকের নাম। এনামুল হক ও রূপন ভুঁইয়া গ্রুপ দোকান পাট থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত তুলতো চাঁদা। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতো। এসব চাঁদার একটি অংশ থানায় গিয়ে দিয়ে আসতো এই নেতারা। এসবের বাইরেও তাদের অর্থের একটি বড় অংশ আসতো রাজধানীর ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে। এসব অভিযোগে গতকাল রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার এনামুল হকের বাসা ও সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সূত্রাপুরের বানিয়া নগরে এনামুলের ছয়তলায় বাসার দোতলা ও পাঁচতলায় এই অভিযান চালানো হয়। তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ভল্ট থেকে ১ কোটি টাকা ৫ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। বাজার মূল্য হিসাবে এ স্বর্ণালংকারের দাম কমপক্ষে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। জানা যায়, তারা দুজনই ক্যাসিনোর লাভের টাকা বাসায় নিয়ে রাখতেন। প্রতিদিন সকালেই এসব টাকা ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে আসতেন তাদের কর্মীরা। র্যাব জানায়, টাকা রাখলে বেশি জায়গা লাগে তাই তারা স্বর্ণ কিনে সেগুলো ভল্টে রাখতেন। এছাড়া তাদের বাসা থেকে পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এনামুল হকের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ ও বন্ধু হারুন সরদারের নারিন্দার বাসায় রাখা ভল্ট থেকে র্যাব উদ্ধার করেছে আরো চার কোটি টাকা, বিশ রাউন্ডগুলিসহ একটি পিস্তল।
তার কর্মচারী আবুল কালামের স্ত্রী শিলা আহাম্মেদ বলেন, গত দুই তিন আগে এক সন্ধ্যায় দুইজন লোক এসে আমাদের বাসায় এই ভল্টটি রেখে যান। কিন্তু এই ভল্টিতে কি আছে আমরা কেউ জানতাম না। আমার স্বামীও এই বিষয়ে কিছু জানে না। তার স্বামী কোথায় আছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নামাজ পড়তে গিয়েছেন। যদিও এর পর আর আবুল কালামকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে অভিযান চালানোর আগে গভীর রাতেই বাসাটি ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। র্যাব জানিয়েছে এক সপ্তাহ আগে এনামুল হক থাইল্যান্ড পালিয়েছেন। এনামুলের ভাই সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূইয়াও পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা দু’জনই ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত। অভিযান শেষে এক ব্রিফিংয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, কয়েকদিন আগে এখানকার ইংলিশ রোডে পাঁচটি ভল্ট বানানোর অর্ডার দেন এই দুইজন। সেই সূত্রে জানতে পারি এই বাসায় তিনটা ভল্ট আছে। এরপর সোমবার মধ্যরাতের পর এই বাড়িতে আমরা অবস্থান নেই। অভিযানে তিনটি ভল্ট খোলা হয়। এখান থেকে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও আট কেজি (৭২০ ভরি) স্বর্ণ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আরও তথ্য ছিল, এনামুল হক ওরফে এনু ও রূপন ভূঁইয়া ক্যাসিনোর শেয়ারহোল্ডার। ক্যাসিনোর লাভের টাকা তারা বাসায় নিয়ে রাখতেন। নগদ টাকা রাখলে অনেক জায়গার প্রয়োজন হয় তাই তারা টাকা দিয়ে স্বর্ণ কিনে রাখতেন। তিনি আরও বলেন, এই বাড়ি থেকে পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্রগুলো দিয়ে তারা স্থানীয় লোকদের ভয়ভীতি দেখাতেন। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আমরা প্রায় পাঁচ কো?টি পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার ক?রে?ছি। এনামু?লের কর্মচারীর আবুল কালাম আজা?দের বাসা থে?কে দুই কো?টি টাকা এক?টি পিস্তল ও বিশ রাউন্ড গু?লি উদ্ধার করা হয়। এদিকে এনামুলের বন্ধু হারুন সর্দারের বাসায় অ?ভিযা?নে চা?লি?য়ে দুই কো?টি টাকা উদ্ধার করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনামুলরা ছয় ভাই। একসময় নিজেই জুয়া খেলতেন এনামুল। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন। ছয় ভাই থাকায় তাদের লাঠির জোরটা ছিল বেশি। তাই তারা ইচ্ছেমত যা খুশি তাই করতেন। গেন্ডারিয়া এলাকার প্রতি দোকান থেকে এনামুলের ক্যাডার বাহিনী চাঁদা উঠাত। ওই এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও ছিল এনামুলের হাতে। মাদক ব্যবসা করেও কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তারা দুই ভাইয়ের কথার বাইরে যাওয়ার সাহস পেত না কেউ। এলাকার মানুষ তাদের ভয়ে তটস্থ থাকতেন। কেউ যদি তাদের কথার বাইরে যেত তবে তার উপর চলত নির্যাতন। অস্ত্র ঠেকিয়েও আদায় করে নিতেন অনেক কিছু। থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদে থাকার পরেও কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ক্যাসিনোর টাকার ভাগ তাদেরকে দিতেন। অভিযোগ আছে দেশ পলাতক এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। স্থানীয়রা জানান, ওয়ান্ডারর্স ক্লাবে জুয়া খেলতে খেলতে এনামুল ও রুপণ ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার হয়ে যান। এরপর থেকে তারা কিনতে থাকেন একের পর বাড়ি।
সূত্র জানায়, তিন-চার বছর আগে এনামুল ও তার ভাই একের পর এক বাড়ি কিনতে শুরু করেন। এখন পর্যন্ত এই দুই ভাই ঢাকা শহরে ১৫টি বাড়ি কিনেছেন। তবে স্থানীয়রা জানান, বংশাল, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, গেণ্ডারিয়া, ওয়ারী, কদমতলী এলাকায়ই তাদের অর্ধশতাধিক বাড়ি কেনা আছে। গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডি এলাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও দোকান। শহরের বিভিন্ন স্থানে কেনা আছে প্লট। এসব প্লটে বাড়ি নির্মানের প্রস্তুতি ছিল। এছাড়া শহরের বাইরেও তাদের শত শত বিঘা জমি কেনা আছে। ঢাকার বাড়িগুলো ভাড়া দেয়া আছে। গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে জানা গেছে, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বিদেশে। ধারণা করা হচ্ছে ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে আয়ের টাকা তারা বিদেশেও পাচার করেছেন। সেখানেও তাদের ব্যবসা বাড়ি-গাড়ি আছে। এলাকাবাসি জানান, অল্প কিছু দিনেই এই দুই ভাই এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেন। রাতারাতি যেন তারা আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান।
গত ১৮ই সেপ্টেম্বর অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এর পর থেকেই একেক করে বের হতে থাকে ক্যাসিনো সম্রাজ্যের নানা কাহিনী। একের পর এক অভিযানে বেরিয়ে আসছে ক্ষমতার ছায়ায় থাকা নেতাদের অবৈধ বিত্ত বৈভব গড়ে তুলার নানা তথ্য।
গেন্ডারিয়া ছিলো এনামুল হকের রাজত্ব। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই চলতো নির্যাতন। চলতো অস্ত্রের মহড়া। অস্ত্র ঠেকিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি থেকে সবই হতো তার নেতৃত্বে। এলাকবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার আলাদা আলাদা দুটি গ্রুপ নানান সময় করতো অপকর্ম। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা আসলে একসাথে বসে দেনদরবার করতো দুইজন। এই এলাকায় দু’জন ছিলো এক আতংকের নাম। এনামুল হক ও রূপন ভুঁইয়া গ্রুপ দোকান পাট থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত তুলতো চাঁদা। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতো। এসব চাঁদার একটি অংশ থানায় গিয়ে দিয়ে আসতো এই নেতারা। এসবের বাইরেও তাদের অর্থের একটি বড় অংশ আসতো রাজধানীর ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে। এসব অভিযোগে গতকাল রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার এনামুল হকের বাসা ও সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সূত্রাপুরের বানিয়া নগরে এনামুলের ছয়তলায় বাসার দোতলা ও পাঁচতলায় এই অভিযান চালানো হয়। তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ভল্ট থেকে ১ কোটি টাকা ৫ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। বাজার মূল্য হিসাবে এ স্বর্ণালংকারের দাম কমপক্ষে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। জানা যায়, তারা দুজনই ক্যাসিনোর লাভের টাকা বাসায় নিয়ে রাখতেন। প্রতিদিন সকালেই এসব টাকা ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে আসতেন তাদের কর্মীরা। র্যাব জানায়, টাকা রাখলে বেশি জায়গা লাগে তাই তারা স্বর্ণ কিনে সেগুলো ভল্টে রাখতেন। এছাড়া তাদের বাসা থেকে পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এনামুল হকের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ ও বন্ধু হারুন সরদারের নারিন্দার বাসায় রাখা ভল্ট থেকে র্যাব উদ্ধার করেছে আরো চার কোটি টাকা, বিশ রাউন্ডগুলিসহ একটি পিস্তল।
তার কর্মচারী আবুল কালামের স্ত্রী শিলা আহাম্মেদ বলেন, গত দুই তিন আগে এক সন্ধ্যায় দুইজন লোক এসে আমাদের বাসায় এই ভল্টটি রেখে যান। কিন্তু এই ভল্টিতে কি আছে আমরা কেউ জানতাম না। আমার স্বামীও এই বিষয়ে কিছু জানে না। তার স্বামী কোথায় আছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নামাজ পড়তে গিয়েছেন। যদিও এর পর আর আবুল কালামকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে অভিযান চালানোর আগে গভীর রাতেই বাসাটি ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। র্যাব জানিয়েছে এক সপ্তাহ আগে এনামুল হক থাইল্যান্ড পালিয়েছেন। এনামুলের ভাই সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূইয়াও পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা দু’জনই ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত। অভিযান শেষে এক ব্রিফিংয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, কয়েকদিন আগে এখানকার ইংলিশ রোডে পাঁচটি ভল্ট বানানোর অর্ডার দেন এই দুইজন। সেই সূত্রে জানতে পারি এই বাসায় তিনটা ভল্ট আছে। এরপর সোমবার মধ্যরাতের পর এই বাড়িতে আমরা অবস্থান নেই। অভিযানে তিনটি ভল্ট খোলা হয়। এখান থেকে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও আট কেজি (৭২০ ভরি) স্বর্ণ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আরও তথ্য ছিল, এনামুল হক ওরফে এনু ও রূপন ভূঁইয়া ক্যাসিনোর শেয়ারহোল্ডার। ক্যাসিনোর লাভের টাকা তারা বাসায় নিয়ে রাখতেন। নগদ টাকা রাখলে অনেক জায়গার প্রয়োজন হয় তাই তারা টাকা দিয়ে স্বর্ণ কিনে রাখতেন। তিনি আরও বলেন, এই বাড়ি থেকে পাঁচটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্রগুলো দিয়ে তারা স্থানীয় লোকদের ভয়ভীতি দেখাতেন। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আমরা প্রায় পাঁচ কো?টি পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার ক?রে?ছি। এনামু?লের কর্মচারীর আবুল কালাম আজা?দের বাসা থে?কে দুই কো?টি টাকা এক?টি পিস্তল ও বিশ রাউন্ড গু?লি উদ্ধার করা হয়। এদিকে এনামুলের বন্ধু হারুন সর্দারের বাসায় অ?ভিযা?নে চা?লি?য়ে দুই কো?টি টাকা উদ্ধার করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এনামুলরা ছয় ভাই। একসময় নিজেই জুয়া খেলতেন এনামুল। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন। ছয় ভাই থাকায় তাদের লাঠির জোরটা ছিল বেশি। তাই তারা ইচ্ছেমত যা খুশি তাই করতেন। গেন্ডারিয়া এলাকার প্রতি দোকান থেকে এনামুলের ক্যাডার বাহিনী চাঁদা উঠাত। ওই এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও ছিল এনামুলের হাতে। মাদক ব্যবসা করেও কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তারা দুই ভাইয়ের কথার বাইরে যাওয়ার সাহস পেত না কেউ। এলাকার মানুষ তাদের ভয়ে তটস্থ থাকতেন। কেউ যদি তাদের কথার বাইরে যেত তবে তার উপর চলত নির্যাতন। অস্ত্র ঠেকিয়েও আদায় করে নিতেন অনেক কিছু। থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদে থাকার পরেও কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ক্যাসিনোর টাকার ভাগ তাদেরকে দিতেন। অভিযোগ আছে দেশ পলাতক এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। স্থানীয়রা জানান, ওয়ান্ডারর্স ক্লাবে জুয়া খেলতে খেলতে এনামুল ও রুপণ ক্লাবের শেয়ার হোল্ডার হয়ে যান। এরপর থেকে তারা কিনতে থাকেন একের পর বাড়ি।
সূত্র জানায়, তিন-চার বছর আগে এনামুল ও তার ভাই একের পর এক বাড়ি কিনতে শুরু করেন। এখন পর্যন্ত এই দুই ভাই ঢাকা শহরে ১৫টি বাড়ি কিনেছেন। তবে স্থানীয়রা জানান, বংশাল, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, গেণ্ডারিয়া, ওয়ারী, কদমতলী এলাকায়ই তাদের অর্ধশতাধিক বাড়ি কেনা আছে। গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডি এলাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও দোকান। শহরের বিভিন্ন স্থানে কেনা আছে প্লট। এসব প্লটে বাড়ি নির্মানের প্রস্তুতি ছিল। এছাড়া শহরের বাইরেও তাদের শত শত বিঘা জমি কেনা আছে। ঢাকার বাড়িগুলো ভাড়া দেয়া আছে। গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে জানা গেছে, এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বিদেশে। ধারণা করা হচ্ছে ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে আয়ের টাকা তারা বিদেশেও পাচার করেছেন। সেখানেও তাদের ব্যবসা বাড়ি-গাড়ি আছে। এলাকাবাসি জানান, অল্প কিছু দিনেই এই দুই ভাই এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেন। রাতারাতি যেন তারা আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান।
গত ১৮ই সেপ্টেম্বর অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এর পর থেকেই একেক করে বের হতে থাকে ক্যাসিনো সম্রাজ্যের নানা কাহিনী। একের পর এক অভিযানে বেরিয়ে আসছে ক্ষমতার ছায়ায় থাকা নেতাদের অবৈধ বিত্ত বৈভব গড়ে তুলার নানা তথ্য।
No comments