পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট, খরচে স্বচ্ছতা কতটা? by আকবর হোসেন
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাজেট ক্রমাগত বাজেট বৃদ্ধি
পেলেও এই টাকা খরচের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির
অভিযোগ উঠেছে।
নানা অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আন্দোলনও করেছে।
গত ১০ বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকারি অনুদান বেড়েছে ৩৬১ শতাংশ।
২০০৯
সালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার জন্য প্রতিবছর ব্যয় হতো প্রায় ৮৫০
কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৭০ কোটি টাকা।
এছাড়া গত চার বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেড়েছে।
২০০৯ সালে ৩১ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪৯ টি।
জবাবদিহিতা কতটা?
অনেক
ক্ষেত্রে এসব টাকা খরচের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নেই বলে উল্লেখ করেন
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান,
যিনি গত মে মাসে দায়িত্ব শেষ করেছেন।
অধ্যাপক মান্নান বলেন, তিনি
যখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন তখন বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আর্থিক খাতে অনিয়ম লক্ষ্য করেছেন।
উদাহরণ
হিসেবে তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনের চেক সংক্রান্ত বিষয়ে
অনিয়ম থাকার কারণে অডিট আপত্তি উঠেছিল। তখন তাদের বেতনের চেক আটকে দেয়া
হয়।
আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ টাকা সে খাতে খরচ
না করে কিছু শিক্ষক সেটি ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক
মান্নান।
তিনি বলেন, "অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা যথাযথভাবে খরচ করা হয় না এবং
সেটার কোন হিসেবও দেয়া হয়না। ...যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম হচ্ছে সেটা
যদি ৫০ পার্সেন্টও দূর করা যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের
সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারে। "
"আমরা আশা করি এই টাকাটা সঠিক খাতে
ব্যয় হবে, এখানে কোন নয়-ছয় হবেনা, অপচয় হবেনা। এটা আমরা প্রত্যাশা করি
ঠিকই কিন্তু সবসময় সব বিশ্ববিদ্যালয় কাজটি সঠিকভাবে করে- সেটি কিন্তু
না।"
"জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত খুব বেশি যে কেউ করেছে, আমার কাছে সেটা
দৃশ্যমান না। জবাবদিহিতা যদি থাকতো তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডেফিসিট
বাজেট (ঘাটতি বাজেট) কীভাবে হয়," বলছিলেন অধ্যাপক মান্নান।
দুর্নীতি
বিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ -এর
নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম এবং
দুর্নীতির দায় বর্তায় সে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তিদের উপর।
"তাদের মধ্যে যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে আমরা যত চেষ্টাই করিনা কেন আইন করে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা," বলছিলেন মি: জামান।
হাজার-হাজার কোটি টাকা ব্যয়
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে
সরকারের কাছ থেকে দুই ধরণের বাজেট পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে,
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রতিবছরের ব্যয় এবং আরেকটি হচ্ছে উন্নয়ন
বাজেট, যেটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো তৈরি করা হয়।
গত চার
বছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সরকার ১২
হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে বড় ধরণের উন্নয়ন প্রকল্প
বরাদ্দ করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬৫৫ কোটি টাকা।
এর বাইরে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনার খরচ তো রয়েছেই।
দুর্নীতি
বিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ -এর
নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যয় বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটি এখনো প্রয়োজনের
তুলনায় অপ্রতুল।
তবে যে উদ্দেশ্যে এ অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে সেটি যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও নজর দেয়া দরকার বলে মনে করেন মি: জামান।
তিনি বলেন, এসব অনিয়মের দায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায়।
"
উন্নয়ন প্রকল্পকে এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে মোটা দাগে সকল পর্যায়ে যারা
বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সুযোগ-সুবিধা বা সম্পদ বৃদ্ধির উপায় হিসেবে ধরে
নেয়া হয়," বলছিলেন মি: জামান।
এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাজেট ঘাটতি বাড়তেই থাকে।
সরকারি
বরাদ্দের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা প্রজেক্ট-এর মাধ্যমে অর্থ
আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হায়ার
এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকাপ) শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য ২৪ লক্ষ ডলার দেয়া হয়,
যেটি বর্তমান বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো।এই প্রজেক্টের
আওতায় ডিজিটাল ক্লাসরুম, ভার্চুয়াল লাইব্রেরী এবং ল্যাব গড়ে উঠেছে।
উন্নয়ন প্রকল্প পাস হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে এ সম্পর্কিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় |
No comments