ঢাকায় কাশবন ছুটছেন মানুষ by নূরে আলম জিকু
শরৎকাল।
শরতের শুরুতে চারদিকে হাসতে শুরু করেছে কাশবন। প্রকৃতি যেন তার রূপ
পাল্টিয়ে নতুন রঙ ধারণ করেছে। শোভা পাচ্ছে কাশবন। কাশফুলের কোমল পরশ আর
সাদা মেঘের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছে সোনাঝরা রোদ। পড়ন্ত বিকালে সূর্য পশ্চিম
আকাশে হেলে পড়ায় কিরণ যখন কাশফুলের ওপর পড়ছে, তখন প্রকৃতির বুকে অদ্ভুত এক
আভা ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামবাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট নদীর বুকে জেগে ওঠা চরসহ
আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি এখন চোখে পড়ার মতো। গ্রামীণ
জনপদের মতোই রাজধানীর আফতাবনগর, উত্তরার দিয়াবাড়ী, কেরানীগঞ্জের হযরতপুর,
হাসনাবাদ, কাচপুর ব্রিজের দুই ধারে কাশফুলের মহাসমারোহ। তাই, চারদেয়ালে
বন্দি মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে প্রকৃতির কোমলতাকে স্পর্শ করতে ছুটে
আসছেন কাশবন এলাকায়। কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায়, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। শরৎ মানেই প্রকৃতি। শরৎ মানেই নদীর
তীরে কাশফুলের সাদা হাসি। রাজধানী থেকে সবচেয়ে কাছের বড় কাশবন আফতাবনগরে।
রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন জহুরুল ইসলাম সিটি/ ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের
সামনের পথ ধরে চলতেই দেখা মিলবে কাশফুলের। সড়কের দুই পাশে কাশবনের সারি।
বিশাল খোলা প্রান্তর। সবুজ বিছানো মাঠে সাদা হংসরাজের মেলা। তার শেষ
প্রান্তে নদী। এই সবুজ প্রান্তরে হারিয়ে যেতে যেন নেই কোনো মানা। এখানে
গেলে কাশফুলের ছোঁয়ায় প্রশান্ত হয়ে যায় প্রাণ। নদীর শীতল বাতাস আর সবুজের
সমারোহে কাশবনের নৃত্য মনকে ভুলিয়ে দেয়। হারিয়ে যেতে যেন নেই মানা এখানে।
চারদিক থেকে হু হু করে আসছে ঠাণ্ডা বাতাস। রাজধানীর ভেতরে এ যেন এক ভিন্ন
জগৎ। শরতের দিনগুলোতে প্রতিদিনই দল বেঁধে ঘুরতে আসছে ভ্রমণপিপাসুরা। ছুটির
দিনগুলোতে এখানে দর্শনার্থীদের যেন উৎসব বসে। ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সী মানুষের
পদচারণায় মুখরিত থাকে কাশবন। রংবেরঙের পোশাকে তরুণ-তরুণীরা ছবি তুলতে
ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ কাশফুলের পাশে বসে কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়।
তরুণীদের খোঁপায় শোভা পাচ্ছে কাশফুল। আফতাবনগরে ঘুরতে আসা ইসরাত জাহান ইতি
জানান, প্রতি বছরই এখানে ঘুরতে আসি। বিকালে পরিবেশটা শান্ত থাকে। বন্ধুদের
সঙ্গে আড্ডা আর গল্পে মেতে উঠি। রাজধানীর অন্যান্য স্থানের মতো শরৎকালে
এখানে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেশি থাকে। মাঝেমধ্যে এখানে শুটিং করতে
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসেন। সব মিলিয়ে পরিবেশটা অনেক সুন্দর। স্থানীয় এক
বাদাম বিক্রেতা জানান, এখানে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক হাজার
মানুষ যাওয়া-আসা করে। চারদিকে তাকালে মনে হয় যেন মেলা বসছে। দূর-দূরান্ত
থেকেও অনেকে আসে। তবে সন্ধ্যার পর এখানে কেউ থাকে না। বখাটের উৎপাত তখন
বেড়ে যায়। রাজধানীর দিয়াবাড়ীর কাশবনও অন্যতম দর্শনীয় জায়গা। এখানে লেকের
দুই ধারে যত দূরে চোখ যায় শুধু কাশবন আর কাশবন। এখানে আরেকটি অন্যতম
দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে বিশাল বটগাছ। এই বটগাছকে ঘিরে নাটকের শুটিং চলে। এখানে
এলে হয়তো দেখা হয়ে যেতে পারে আপনার প্রিয় কোনো তারকার সঙ্গে।
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এখানে রয়েছে লেক যা দিয়াবাড়ীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে
বহুগুণে। ভ্রমণকে আরো উপভোগ্য করতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নৌকায় ঘুরে
বেড়ানো। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায় বিমান। অদ্ভুত সুন্দর এ দৃশ্য দেখে
অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্নরকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়।
No comments