তির-ধনুকে ‘রোমান সাম্রাজ্য’ by বদিউজ্জামান
স্কুলে
মন টিকত না ছেলেটির। পড়ার বইয়ের চেয়ে বেশি টানত স্কুলের পাশের বাগান।
স্কুল পালিয়ে প্রায়ই বেরিয়ে পড়ত শখের গুলতি নিয়ে। গুলতি দিয়ে নিশানা ভেদের
সেই যে আকর্ষণ পেয়ে বসল ছোটবেলায়, সেটা আজও কাটেনি রোমান সানার। তাই তো ৭০
মিটার দূরের ‘বুলস আই’–এ অনায়াসেই ছুড়ে দেন হাতের তির। ধনুক থেকে বেরিয়ে
যাওয়া তিরটা তুলে এনে যখন স্কোরকার্ডের দিকে নজর বোলান, আনন্দে চোখটা চকচক
করে ওঠে বাংলাদেশের এই তরুণ তিরন্দাজের।
তিরন্দাজ রোমান সানা। ছবি: শামসুল হক |
রোমান
সাম্রাজ্য তো পৃথিবীর বিস্ময়। ইউরোপ, আফ্রিকা ছাপিয়ে একসময় যার বিস্তৃতি
ছিল এশিয়া পর্যন্ত। তির-ধনুকের খেলা আর্চারিতেও রোমান একের পর এক বিস্ময়
উপহার দিয়ে চলেছেন বিশ্বজুড়ে। দেশের আর্চারিতে গড়ে তুলেছেন সাফল্যের
সাম্রাজ্য। যে মুকুটের শেষ পালকটা মাথায় তুলেছেন গত সপ্তাহে। ১৩ জুন
হল্যান্ডে হুন্দাই বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের ব্যক্তিগত
রিকার্ভে হল্যান্ডের সেফ ফন ডেন বার্গকে হারিয়ে ওঠেন সেমিফাইনালে। আর এতেই
ইতিহাস গড়েন খুলনার যুবক। আগামী বছরের জুলাইয়ে টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি
খেলবেন রোমান।
অর্জনটা বাংলাদেশের গোটা ক্রীড়াঙ্গনের জন্যই অনেক বড়। বাংলাদেশের কোনো আর্চার এই প্রথম সরাসরি অলিম্পিকে যাবেন নিজের যোগ্যতায়। এর আগে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে যে গর্বের কীর্তিটি গড়েছিলেন শুধুই গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তবে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিযোগিতায় নয়, ওই সময় র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৬০ এর মধ্যে (৫৪ তম) থেকে সর্বশেষ রিও অলিম্পিকে সিদ্দিকুর খেলেছিলেন সরাসরি।
জহুরির চোখে
ঘটনাটা ২০০৮ সালের। আর্চারি ফেডারেশনের প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্প হয়েছিল খুলনা শহরের পুরোনো স্টেডিয়ামের পাশের সোনালী অতীত ক্লাবের মাঠে। অন্যদের মতো সেদিন খুলনা শিশু উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র রোমানও এসেছিলেন ট্রায়ালে। রোমানের তির ছোড়ার কৌশল আর প্রতিভা কোচ সাজ্জাদ হোসেনকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু সেদিন বাছাইয়ে রোমান টিকলেও তাঁর বদলে স্থানীয় আরেকজনকে নিতে চাপ দিয়েছিলেন খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা এবং ছেলেটির বাবা। সাজ্জাদও নাছোড়বান্দা, ‘আমি বলেছিলাম যদি একটি ছেলেকেও ঢাকায় নিয়ে যাই, সে রোমান।’ এতে কাজ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত রোমানকেই বেছে নিতে পেরেছিলেন সাজ্জাদ। তাই তো রোমান অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার পর কোচ সাজ্জাদ বলছিলেন, ‘আজ আমার খুব ইচ্ছা করছিল তাঁদের জানাতে—দেখেন, আমি সেদিন ভুল ছেলেকে বাছাই করিনি।’
হার না মানা প্রতিজ্ঞা
ক্যাম্পের শুরুর দিন থেকেই রোমানের ভেতরে ছিল হার না মানার এক অবিচল আকাঙ্ক্ষা। ক্যাম্পের শুরুর দিনে একবার ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন ঘোষণা দেন, যে ছেলে তির ছুড়ে সবচেয়ে বেশি স্কোর করতে পারবে, তাকে দেওয়া হবে আর্থিক পুরস্কার। রোমান চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেদিন টাকাটা জিতে নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে খুঁজে পেলেও ফেডারেশন বেশি দিন তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি। মাঝে দুই বছর খেলা ছেড়ে খুলনায় চলে গিয়েছিলেন রোমান। একসময় তো মনে হয়েছিল, আর কখনো তির-ধনুক হাতে নেওয়াই হবে না।
২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় রোমান পা হারাতে বসেছিলেন। খুলনায় হাসপাতালে ছিলেন তিন মাস। পাঁচ মাস ছিলেন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে। সেদিনের সেই দুঃস্মৃতির কথা মনে করে রোমান বলছিলেন, ‘আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আর কখনো খেলতে পারব না। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতাম। মাও কান্নাকাটি করত। তারপরও নিজের ওপর আস্থা হারাইনি।’
চমক বাংলাদেশ গেমস দিয়ে
বাংলাদেশ আনসারে রোমানকে বেছে নিয়েছিলে কোচ জিয়াউর রহমান। এই দলের হয়ে ঢাকায় বাংলাদেশ গেমসে যখন তির হাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রোমান, অনেকেই তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়েছিল। কিন্তু সেদিন সেরা আর্চারদের পেছনে ফেলে রিকার্ভের ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমি আসছি।’
অর্জনটা বাংলাদেশের গোটা ক্রীড়াঙ্গনের জন্যই অনেক বড়। বাংলাদেশের কোনো আর্চার এই প্রথম সরাসরি অলিম্পিকে যাবেন নিজের যোগ্যতায়। এর আগে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে যে গর্বের কীর্তিটি গড়েছিলেন শুধুই গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তবে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিযোগিতায় নয়, ওই সময় র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৬০ এর মধ্যে (৫৪ তম) থেকে সর্বশেষ রিও অলিম্পিকে সিদ্দিকুর খেলেছিলেন সরাসরি।
জহুরির চোখে
ঘটনাটা ২০০৮ সালের। আর্চারি ফেডারেশনের প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্প হয়েছিল খুলনা শহরের পুরোনো স্টেডিয়ামের পাশের সোনালী অতীত ক্লাবের মাঠে। অন্যদের মতো সেদিন খুলনা শিশু উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র রোমানও এসেছিলেন ট্রায়ালে। রোমানের তির ছোড়ার কৌশল আর প্রতিভা কোচ সাজ্জাদ হোসেনকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু সেদিন বাছাইয়ে রোমান টিকলেও তাঁর বদলে স্থানীয় আরেকজনকে নিতে চাপ দিয়েছিলেন খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা এবং ছেলেটির বাবা। সাজ্জাদও নাছোড়বান্দা, ‘আমি বলেছিলাম যদি একটি ছেলেকেও ঢাকায় নিয়ে যাই, সে রোমান।’ এতে কাজ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত রোমানকেই বেছে নিতে পেরেছিলেন সাজ্জাদ। তাই তো রোমান অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার পর কোচ সাজ্জাদ বলছিলেন, ‘আজ আমার খুব ইচ্ছা করছিল তাঁদের জানাতে—দেখেন, আমি সেদিন ভুল ছেলেকে বাছাই করিনি।’
হার না মানা প্রতিজ্ঞা
ক্যাম্পের শুরুর দিন থেকেই রোমানের ভেতরে ছিল হার না মানার এক অবিচল আকাঙ্ক্ষা। ক্যাম্পের শুরুর দিনে একবার ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন ঘোষণা দেন, যে ছেলে তির ছুড়ে সবচেয়ে বেশি স্কোর করতে পারবে, তাকে দেওয়া হবে আর্থিক পুরস্কার। রোমান চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেদিন টাকাটা জিতে নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে খুঁজে পেলেও ফেডারেশন বেশি দিন তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি। মাঝে দুই বছর খেলা ছেড়ে খুলনায় চলে গিয়েছিলেন রোমান। একসময় তো মনে হয়েছিল, আর কখনো তির-ধনুক হাতে নেওয়াই হবে না।
২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় রোমান পা হারাতে বসেছিলেন। খুলনায় হাসপাতালে ছিলেন তিন মাস। পাঁচ মাস ছিলেন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে। সেদিনের সেই দুঃস্মৃতির কথা মনে করে রোমান বলছিলেন, ‘আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আর কখনো খেলতে পারব না। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতাম। মাও কান্নাকাটি করত। তারপরও নিজের ওপর আস্থা হারাইনি।’
চমক বাংলাদেশ গেমস দিয়ে
বাংলাদেশ আনসারে রোমানকে বেছে নিয়েছিলে কোচ জিয়াউর রহমান। এই দলের হয়ে ঢাকায় বাংলাদেশ গেমসে যখন তির হাতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন রোমান, অনেকেই তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়েছিল। কিন্তু সেদিন সেরা আর্চারদের পেছনে ফেলে রিকার্ভের ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমি আসছি।’
নেদারল্যান্ডসে ব্রোঞ্জ পদক জয়ের পর অন্য দুই প্রতিযোগীর সঙ্গে রোমান সানা (ডানে) |
এরপর
আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রোমানের। ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে
জিতেছেন টানা সোনার পদক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রোমানের সাফল্য আসছে নিয়মিত।
ব্যাংককে এশিয়া কাপ স্টেজ ওয়ানে সোনা জেতেন ২০১৪ সালে। ২০১৭ সালে
কিরগিজস্তানে আন্তর্জাতিক আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপেও জেতেন সোনার পদক। গত বছর
ঢাকায় হওয়া আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিকেএসপিতে
দক্ষিণ এশিয়ান আর্চারিতে জেতেন রুপা। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে হওয়া
সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে জেতেন রুপা। আর গত
সপ্তাহে হুন্দাই বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার
পরপরই জেতেন ব্রোঞ্জ। লন্ডন আর বেইজিং অলিম্পিকে খেলা অভিজ্ঞ ইতালির মাওরো
নেসপলিকে হারিয়ে বিশ্ব আসরে জেতেন বাংলাদেশের প্রথম পদক। আর এত সব সাফল্যের
পেছনের কারিগর অবশ্যই জাতীয় দলের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ।
স্বপ্নের শুরু, তবে শেষ নয়
হল্যান্ড থেকেই উত্তাপটা টের পাচ্ছিলেন রোমান। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ডামাডোলের মধ্যেও যে কীর্তিটা গড়েছেন, সেই রেশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনের জোয়ার। ১৮ জুন দেশে ফিরেই পেয়েছেন উষ্ণ সংবর্ধনা। এত ভালোবাসায় মুগ্ধ রোমান বলছিলেন, ‘সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। যদিও অলিম্পিক এখনো অনেক দূরে। সেখানে কী করতে পারব জানি না। কিন্তু হল্যান্ডে যেভাবে পদকমঞ্চে উঠেছি, সেভাবে অলিম্পিকেও উঠতে চাই।’
চোখে মাইনাস পাওয়ারের চশমা। কিন্তু শান্ত-সৌম্য রোমান তির-ধনুক হাতে নিলে হয়ে ওঠেন অশান্ত। টোকিও অলিম্পিকে পতাকা বহনই করতে চান না, লাল-সবুজের পতাকা মাথার ওপরে তুলে ধরতে যেন তর সইছে না রোমানের।
‘আমাদের ছেলে দেশের গর্ব’
আনন্দের খবরটা প্রথম দেখেছিলেন টেলিভিশনের স্ক্রলে। রোমান সানা অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছেন, টেলিভিশনে ছেলের এমন কীর্তির খবরটা দেখে আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলেন বাবা আবদুল গফুর সানা আর মা বিউটি পারভীন। রোমানদের অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জোগাড়। আবদুল গফুর দেড় যুগ ধরে খুলনার একটি মৎস্য খামারে চাকরি করেন মাত্র ছয় হাজার টাকা বেতনে! ছেলে পড়াশোনা করে একটা ভালো চাকরি করবে, সেটাই স্বপ্ন ছিল বাবার। কিন্তু বাবার সেই স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছেন রোমান। বাবা ঢাকা শহরেই এসেছেন একবার, তা–ও আবার বিশ্ব ইজতেমার সুবাদে। কিন্তু আর্চারি খেলতে গিয়ে ছেলে রোমান সানা এরই মধ্যে ঘুরে ফেলেছেন থাইল্যান্ড, ইরান, তাইওয়ান, তুরস্ক, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, কিরগিজস্তান, চীন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও হল্যান্ড। একের পর এক পদক জিতছেন ছেলে। অলিম্পিকে খেলার মর্যাদাটা এখনো বুঝতে পারেননি মফস্বলের এই শ্রমিক বাবা। কিন্তু একটা জিনিস ঠিকই বুঝেছেন, ছেলে বাংলাদেশের জন্য বড় একটা অর্জন নিয়ে এসেছেন। তাই তো মুঠোফোনের অন্য প্রান্তে যখন কথাগুলো বলছিলেন, কেঁপে কেঁপে উঠছিল রোমানের বাবার কণ্ঠ, ‘ছেলে আমার একার নয়, ও বাংলাদেশের সবার ছেলে। ও বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। আমাদের ছেলে দেশের গর্ব। আমি গরিব মানুষ, মাত্র অল্প টাকা বেতন পাই। ঠিকমতো সংসার চলে না। কিন্তু ওর এই অর্জনে নিজেকে অনেক ধনী মনে হচ্ছে।’
স্বপ্নের শুরু, তবে শেষ নয়
হল্যান্ড থেকেই উত্তাপটা টের পাচ্ছিলেন রোমান। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ডামাডোলের মধ্যেও যে কীর্তিটা গড়েছেন, সেই রেশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা আর অভিনন্দনের জোয়ার। ১৮ জুন দেশে ফিরেই পেয়েছেন উষ্ণ সংবর্ধনা। এত ভালোবাসায় মুগ্ধ রোমান বলছিলেন, ‘সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। যদিও অলিম্পিক এখনো অনেক দূরে। সেখানে কী করতে পারব জানি না। কিন্তু হল্যান্ডে যেভাবে পদকমঞ্চে উঠেছি, সেভাবে অলিম্পিকেও উঠতে চাই।’
চোখে মাইনাস পাওয়ারের চশমা। কিন্তু শান্ত-সৌম্য রোমান তির-ধনুক হাতে নিলে হয়ে ওঠেন অশান্ত। টোকিও অলিম্পিকে পতাকা বহনই করতে চান না, লাল-সবুজের পতাকা মাথার ওপরে তুলে ধরতে যেন তর সইছে না রোমানের।
‘আমাদের ছেলে দেশের গর্ব’
আনন্দের খবরটা প্রথম দেখেছিলেন টেলিভিশনের স্ক্রলে। রোমান সানা অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছেন, টেলিভিশনে ছেলের এমন কীর্তির খবরটা দেখে আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলেন বাবা আবদুল গফুর সানা আর মা বিউটি পারভীন। রোমানদের অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর জোগাড়। আবদুল গফুর দেড় যুগ ধরে খুলনার একটি মৎস্য খামারে চাকরি করেন মাত্র ছয় হাজার টাকা বেতনে! ছেলে পড়াশোনা করে একটা ভালো চাকরি করবে, সেটাই স্বপ্ন ছিল বাবার। কিন্তু বাবার সেই স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছেন রোমান। বাবা ঢাকা শহরেই এসেছেন একবার, তা–ও আবার বিশ্ব ইজতেমার সুবাদে। কিন্তু আর্চারি খেলতে গিয়ে ছেলে রোমান সানা এরই মধ্যে ঘুরে ফেলেছেন থাইল্যান্ড, ইরান, তাইওয়ান, তুরস্ক, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, কিরগিজস্তান, চীন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও হল্যান্ড। একের পর এক পদক জিতছেন ছেলে। অলিম্পিকে খেলার মর্যাদাটা এখনো বুঝতে পারেননি মফস্বলের এই শ্রমিক বাবা। কিন্তু একটা জিনিস ঠিকই বুঝেছেন, ছেলে বাংলাদেশের জন্য বড় একটা অর্জন নিয়ে এসেছেন। তাই তো মুঠোফোনের অন্য প্রান্তে যখন কথাগুলো বলছিলেন, কেঁপে কেঁপে উঠছিল রোমানের বাবার কণ্ঠ, ‘ছেলে আমার একার নয়, ও বাংলাদেশের সবার ছেলে। ও বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। আমাদের ছেলে দেশের গর্ব। আমি গরিব মানুষ, মাত্র অল্প টাকা বেতন পাই। ঠিকমতো সংসার চলে না। কিন্তু ওর এই অর্জনে নিজেকে অনেক ধনী মনে হচ্ছে।’
রোমান সানার বাবা–মা। ছবি: সাদ্দাম হোসেন |
No comments