নতুন প্রধানদের অধীনে আগ্রাসী অবস্থানে যেতে পারে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো by সুবীর ভৌমিক
অভ্যন্তরীণ
ও বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য নতুন প্রধান নিয়োগ করেছে ভারত। দুজন
প্রধানই তাদের ‘আগ্রাসী গোয়েন্দাবৃত্তির’ প্রবণতার জন্য পরিচিত।
বিদেশে সক্রিয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের’ (র) দায়িত্ব নিয়েছেন সামান্ত গোয়েল। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলার প্রস্তুতিমূলক গোয়েন্দাবৃত্তির কৃতিত্ব মূলত তাকেই দেয়া হয়। টার্গেট বাছাই করা থেকে শুরু করে সেখানে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে সবকিছুই নির্ধারণ করেছিলেন তিনি।
স্পেশাল ডিরেক্টর হিসেবে র’-এর ‘অপারেশান্স উইং’ এর নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। এই পদে আনা হচ্ছে আরেকজন মেধাবি কর্মকর্তা আর কুমারকে, যিনি গত চার বছরে পাকিস্তানের ভেতরে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বালাকোট হামলার পরিকল্পনার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন কুমার। এর আগে কুমারকে বাংলাদেশেও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
গোয়েলকে যখন আগে দুবাইয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, সে সময় তিনি উপসাগরীয় অঞ্চলের ‘শত্রু শক্তির’ বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নিয়েছিলেন। নকল মুদ্রা তৈরির কারখানা সন্ধানসহ ভারত যে সব ইসলামিক মৌলবাদীদের বিচার করার জন্য খুঁজছিল তাদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।
গোয়েল ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর অজিত দোভালের সুনজরে আছেন বলে মনে করা হয়। দোভাল নিজেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইটের বদলে পাটকেল নীতিতে বিশ্বাসী।
পাকিস্তানের বালুচিস্তানসহ যে সব এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা রয়েছে, সেখানে র অর্থায়ন ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলে প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে ইসলামাবাদ। অনেকে এমনকি এমন সন্দেহও করেন যে, জয়শ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার যে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখানে বোমা হামলার পেছনেও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে।
র-এর প্রধান হিসেবে গোয়েলকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি সহজ হয়ে যায়, যখন আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা এস এস এলানগো কয়েক মাস আগে অবসরে যান। গোয়েন্দা সংস্থাটিতে এলানগোর প্রচুর যশ-খ্যাতি রয়েছে, কারণ ২০১৫ সালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপাকসার পরাজয়ের পেছনে তার হাত ছিলে বলে মনে করা হয়।
ভারত মনে করেছিল রাজাপাকসা চীনের ঘনিষ্ঠ। এটা রাজাপাকসার দলের মধ্যে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে অন্যান্য প্রধান বিরোধী দলগুলোর জোট গড়তে সাহায্য করে যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে রাজাপাকসাকে পরাজিত করে।
যদিও নিজেকে কিছুটা লুকিয়ে রাখেন গোয়েল, কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ে যখন সিবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে, তখন তার নামও সামনে চলে আসে। মূলত সংস্থাটির সাবেক ডিরেক্টর অলোক কুমার এবং স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্তানার মধ্যে এই দ্বন্দ্ব লেগেছিল।
মইন কোরেশির মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতির তদন্তকে মধ্যসত্বভোগী, দুই ভাই মনোজ ও সোমেশ প্রাসাদের সহায়তায় ভিন্নপথে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে গোয়েলের বিরুদ্ধে। পরে আস্তানা ঘুষের তদন্তে তাদেরকে হেফাজতে নেয়া হয়।
অরবিন্দ কুমার নতুন আইবি প্রধান
অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) নতুন প্রধান অরবিন্দ কুমারও গোয়েলের মতো ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা।
এতদিন সংস্থার কাশ্মীর অপারেশান্স বিভাগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি। এর আগে তিনি জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী (উত্তর-পূর্ব) এবং মাওবাদী বামপন্থী মৌলবাদী (মধ্য ভারত) অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কাশ্মীরে আগ্রাসী গোয়েন্দা অভিযানের কৃতিত্ব দেয়া হয় কুমারকে, যার নেতৃত্বে বহু শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। গোয়েলের মতো কুমারও অজিত দোভালের সুনজরে রয়েছেন বলে মনে করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে মোদি সরকার কাশ্মীরে যে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে, সেটার সাফল্যের জন্য কুমার ও গোয়েল দুজনের ভূমিকাই হবে গুরুত্বপূর্ণ।
অল পার্টি হুররিয়াত কনফারেন্সে মোদি সরকারের সাথে আলোচনার যে খোলামেলা আগ্রহ দেখিয়েছে, মোদির পরিকল্পনা অনুযায়ী সেটাকে ব্যবহার করে কাশ্মীরের সঙ্ঘাতের অবসান ঘটানোর একটা বড় সুযোগ এসেছে শাহের হাতে।
কিন্তু সাবেক র প্রধান এ এস দুলাত প্রায়ই বলে থাকেন যে, অধিক দর কষাকষি এবং কম শক্তি প্রয়োগ করলে কাশ্মীরে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
দোভালের মতো অভিযান মানসিকতার দুজন প্রধান রয়েছে আইবি এবং র-তে। তাই আশির দশকে যখন এ কে ভার্মা র-এর দায়িত্বে ছিলেন, তখনকার মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আবারও আগ্রাসী ভূমিকায় চলে যেতে পারে।
ভারতের অগ্রাধিকারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে যখন প্রধানমন্ত্রী মোদি সন্ত্রাস দমনের জন্য বৈশ্বিক জোট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের সাথে আলোচনার তালিকায় সবার উপরে রেখেছেন সন্ত্রাস দমন ইস্যুকে।
বিদেশে সক্রিয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের’ (র) দায়িত্ব নিয়েছেন সামান্ত গোয়েল। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলার প্রস্তুতিমূলক গোয়েন্দাবৃত্তির কৃতিত্ব মূলত তাকেই দেয়া হয়। টার্গেট বাছাই করা থেকে শুরু করে সেখানে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে সবকিছুই নির্ধারণ করেছিলেন তিনি।
স্পেশাল ডিরেক্টর হিসেবে র’-এর ‘অপারেশান্স উইং’ এর নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। এই পদে আনা হচ্ছে আরেকজন মেধাবি কর্মকর্তা আর কুমারকে, যিনি গত চার বছরে পাকিস্তানের ভেতরে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বালাকোট হামলার পরিকল্পনার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন কুমার। এর আগে কুমারকে বাংলাদেশেও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
গোয়েলকে যখন আগে দুবাইয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, সে সময় তিনি উপসাগরীয় অঞ্চলের ‘শত্রু শক্তির’ বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নিয়েছিলেন। নকল মুদ্রা তৈরির কারখানা সন্ধানসহ ভারত যে সব ইসলামিক মৌলবাদীদের বিচার করার জন্য খুঁজছিল তাদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।
গোয়েল ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর অজিত দোভালের সুনজরে আছেন বলে মনে করা হয়। দোভাল নিজেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইটের বদলে পাটকেল নীতিতে বিশ্বাসী।
পাকিস্তানের বালুচিস্তানসহ যে সব এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা রয়েছে, সেখানে র অর্থায়ন ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলে প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে ইসলামাবাদ। অনেকে এমনকি এমন সন্দেহও করেন যে, জয়শ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার যে সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখানে বোমা হামলার পেছনেও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে।
র-এর প্রধান হিসেবে গোয়েলকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি সহজ হয়ে যায়, যখন আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা এস এস এলানগো কয়েক মাস আগে অবসরে যান। গোয়েন্দা সংস্থাটিতে এলানগোর প্রচুর যশ-খ্যাতি রয়েছে, কারণ ২০১৫ সালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহিন্দা রাজাপাকসার পরাজয়ের পেছনে তার হাত ছিলে বলে মনে করা হয়।
ভারত মনে করেছিল রাজাপাকসা চীনের ঘনিষ্ঠ। এটা রাজাপাকসার দলের মধ্যে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে অন্যান্য প্রধান বিরোধী দলগুলোর জোট গড়তে সাহায্য করে যারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে রাজাপাকসাকে পরাজিত করে।
যদিও নিজেকে কিছুটা লুকিয়ে রাখেন গোয়েল, কিন্তু গত বছরের জুলাইয়ে যখন সিবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে, তখন তার নামও সামনে চলে আসে। মূলত সংস্থাটির সাবেক ডিরেক্টর অলোক কুমার এবং স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্তানার মধ্যে এই দ্বন্দ্ব লেগেছিল।
মইন কোরেশির মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতির তদন্তকে মধ্যসত্বভোগী, দুই ভাই মনোজ ও সোমেশ প্রাসাদের সহায়তায় ভিন্নপথে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে গোয়েলের বিরুদ্ধে। পরে আস্তানা ঘুষের তদন্তে তাদেরকে হেফাজতে নেয়া হয়।
অরবিন্দ কুমার নতুন আইবি প্রধান
অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) নতুন প্রধান অরবিন্দ কুমারও গোয়েলের মতো ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা।
এতদিন সংস্থার কাশ্মীর অপারেশান্স বিভাগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি। এর আগে তিনি জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী (উত্তর-পূর্ব) এবং মাওবাদী বামপন্থী মৌলবাদী (মধ্য ভারত) অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কাশ্মীরে আগ্রাসী গোয়েন্দা অভিযানের কৃতিত্ব দেয়া হয় কুমারকে, যার নেতৃত্বে বহু শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। গোয়েলের মতো কুমারও অজিত দোভালের সুনজরে রয়েছেন বলে মনে করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে মোদি সরকার কাশ্মীরে যে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে, সেটার সাফল্যের জন্য কুমার ও গোয়েল দুজনের ভূমিকাই হবে গুরুত্বপূর্ণ।
অল পার্টি হুররিয়াত কনফারেন্সে মোদি সরকারের সাথে আলোচনার যে খোলামেলা আগ্রহ দেখিয়েছে, মোদির পরিকল্পনা অনুযায়ী সেটাকে ব্যবহার করে কাশ্মীরের সঙ্ঘাতের অবসান ঘটানোর একটা বড় সুযোগ এসেছে শাহের হাতে।
কিন্তু সাবেক র প্রধান এ এস দুলাত প্রায়ই বলে থাকেন যে, অধিক দর কষাকষি এবং কম শক্তি প্রয়োগ করলে কাশ্মীরে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
দোভালের মতো অভিযান মানসিকতার দুজন প্রধান রয়েছে আইবি এবং র-তে। তাই আশির দশকে যখন এ কে ভার্মা র-এর দায়িত্বে ছিলেন, তখনকার মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আবারও আগ্রাসী ভূমিকায় চলে যেতে পারে।
ভারতের অগ্রাধিকারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে যখন প্রধানমন্ত্রী মোদি সন্ত্রাস দমনের জন্য বৈশ্বিক জোট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের সাথে আলোচনার তালিকায় সবার উপরে রেখেছেন সন্ত্রাস দমন ইস্যুকে।
No comments