সেনা সমর্থিত সরকারও আমাকে পদত্যাগ করতে চাপ দেয় -সুরেন্দ্র কুমার সিনহা
সাবেক
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আলোচিত বই ‘অ্যা ব্রোকেন
ড্রিম’-এর একটি অংশে তিনি বর্ণনা করেছেন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
সময়কার কিছু ঘটনা। তিনি লিখেছেন, ওই সরকারের সময় তাকে পদত্যাগ করার জন্য
চাপ দেয়া হয়েছিল।
বইয়ের ‘জরুরি অবস্থা’ (ইমারজেন্সি) শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। একদিন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার আমাকে জানালেন যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীন আহমেদ আমাকে পরেরদিন বিকেলে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আমি যখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, দেখতে পেলাম তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আমিনুল করিম তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে একটি ফাইল।
প্রথম দিকে আমার মনে তেমন সন্দেহ জাগে নি। আমি বরং ভাবছিলাম যে, আমাকে হয়তো বিশেষ কোনো দায়িত্ব নিতে ডাকা হয়েছে। কিন্তু এক মিনিটের মধ্যেই আমার অনুমান ভুল প্রমাণিত হলো।
প্রেসিডেন্ট আমাকে বললেন, আমাকে পদত্যাগ করতে হবে।
কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমি বললাম এই প্রতিবেদন মিথ্যা। তার উচিত এ বিষয়টি নিয়ে পুনরায় চিন্তা করা। ওই সময় তার সামরিক সচিব কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন। হাতে রাখা ফাইলের দিকে চোখ তার। তখন আমি তাকে থামিয়ে দিলাম। বললাম, এখানে তার কথা বলার কথা নয়। কারণ, আমাকে প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আমি প্রেসিডেন্টকে বললাম যে, আমি এভাবে পদত্যাগ করবো না। তাকে মনে করিয়ে দিলাম, আমি যদি পদত্যাগ করি তাহলে আমার অবসর সুবিধাও (পেনশন) পাবো না। তখন তিনি বললেন যে, আমি যদি তার প্রস্তাবে রাজি হই তাহলে সরকার আমাকে দ্বিগুণ অর্থ দেবে। এমনকি আমি যদি ভারত যেতে চাই, তাহলে সরকার সব ধরণের প্রয়োজনীয় সুবিধা দেবে।
আমি বললাম, দুঃখিত। তাকে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় চিন্তা করতে বললাম। এরপর বেরিয়ে গেলাম। আমাকে দেওয়া চা-ও পান করলাম না।
প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন তখন দেশের বাইরে। দেশে ফেরার ৩ দিন পর আমি ঘটনাটি তাকে জানালাম। তার পরামর্শ চাইলাম। তিনি চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে বিচারিক কাজ চালিয়ে যেতে বললেন।
ততদিনে ডিজিএফআইতে নিযুক্ত হন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন, যিনি বিহারি আমিন বলেও পরিচিত ছিলেন। তিনি আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে লাগলেন যাতে আমি পদত্যাগ করি। একদিন প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব সুপ্রিম কোর্টের টেলিফোন এক্সেঞ্জের মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। আমি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাই।
ড. কামাল হোসেন তখন যুক্তরাজ্যে ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি তার মেয়ে সমাজকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে আমার কাকরাইলের বাসায় পাঠালেন একটি বার্তা নিয়ে যে, তার (কামাল হোসেন) দেশে ফেরার আগে আমার কিছু করা উচিত হবে না।
এরপর প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ের কাছ থেকে আমি একটি চিঠি পেলাম। প্রেসিডেন্ট ও আমার মধ্যে যে বিষয়ে কথা হয়েছে তা নিয়ে আমার মত জানাতে বলা হলো চিঠিতে। ড. কামাল হোসেন ততদিনে বিদেশ থেকে ফিরেছেন। ফিরে আমার চেম্বারে দেখা করলেন। তিনি প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ের চিঠির পাল্টা লিখিত জবাব আমার কাছে হস্তান্তর করলেন। আমিও একটি জবাব প্রস্তুত করেছিলাম। সেটি ড. কামালকে দেখাই। আমার জবাব পড়ে, তিনি বেশ আবেগী হয়ে বললেন, আমার জবাব তারটার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।
আমি প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জানালাম যে, আমরা উভয়েই সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছি। সংবিধান আমাদের উভয়ের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সুতরাং, তার এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা তার শপথ ভঙ্গ করে। এই জবাবের পর এই অধ্যায়ের ইতি ঘটে।
বইয়ের ‘জরুরি অবস্থা’ (ইমারজেন্সি) শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। একদিন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার আমাকে জানালেন যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীন আহমেদ আমাকে পরেরদিন বিকেলে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আমি যখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম, দেখতে পেলাম তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আমিনুল করিম তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে একটি ফাইল।
প্রথম দিকে আমার মনে তেমন সন্দেহ জাগে নি। আমি বরং ভাবছিলাম যে, আমাকে হয়তো বিশেষ কোনো দায়িত্ব নিতে ডাকা হয়েছে। কিন্তু এক মিনিটের মধ্যেই আমার অনুমান ভুল প্রমাণিত হলো।
প্রেসিডেন্ট আমাকে বললেন, আমাকে পদত্যাগ করতে হবে।
কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমি বললাম এই প্রতিবেদন মিথ্যা। তার উচিত এ বিষয়টি নিয়ে পুনরায় চিন্তা করা। ওই সময় তার সামরিক সচিব কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন। হাতে রাখা ফাইলের দিকে চোখ তার। তখন আমি তাকে থামিয়ে দিলাম। বললাম, এখানে তার কথা বলার কথা নয়। কারণ, আমাকে প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আমি প্রেসিডেন্টকে বললাম যে, আমি এভাবে পদত্যাগ করবো না। তাকে মনে করিয়ে দিলাম, আমি যদি পদত্যাগ করি তাহলে আমার অবসর সুবিধাও (পেনশন) পাবো না। তখন তিনি বললেন যে, আমি যদি তার প্রস্তাবে রাজি হই তাহলে সরকার আমাকে দ্বিগুণ অর্থ দেবে। এমনকি আমি যদি ভারত যেতে চাই, তাহলে সরকার সব ধরণের প্রয়োজনীয় সুবিধা দেবে।
আমি বললাম, দুঃখিত। তাকে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় চিন্তা করতে বললাম। এরপর বেরিয়ে গেলাম। আমাকে দেওয়া চা-ও পান করলাম না।
প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন তখন দেশের বাইরে। দেশে ফেরার ৩ দিন পর আমি ঘটনাটি তাকে জানালাম। তার পরামর্শ চাইলাম। তিনি চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে বিচারিক কাজ চালিয়ে যেতে বললেন।
ততদিনে ডিজিএফআইতে নিযুক্ত হন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন, যিনি বিহারি আমিন বলেও পরিচিত ছিলেন। তিনি আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে লাগলেন যাতে আমি পদত্যাগ করি। একদিন প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব সুপ্রিম কোর্টের টেলিফোন এক্সেঞ্জের মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। আমি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাই।
ড. কামাল হোসেন তখন যুক্তরাজ্যে ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি তার মেয়ে সমাজকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে আমার কাকরাইলের বাসায় পাঠালেন একটি বার্তা নিয়ে যে, তার (কামাল হোসেন) দেশে ফেরার আগে আমার কিছু করা উচিত হবে না।
এরপর প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ের কাছ থেকে আমি একটি চিঠি পেলাম। প্রেসিডেন্ট ও আমার মধ্যে যে বিষয়ে কথা হয়েছে তা নিয়ে আমার মত জানাতে বলা হলো চিঠিতে। ড. কামাল হোসেন ততদিনে বিদেশ থেকে ফিরেছেন। ফিরে আমার চেম্বারে দেখা করলেন। তিনি প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ের চিঠির পাল্টা লিখিত জবাব আমার কাছে হস্তান্তর করলেন। আমিও একটি জবাব প্রস্তুত করেছিলাম। সেটি ড. কামালকে দেখাই। আমার জবাব পড়ে, তিনি বেশ আবেগী হয়ে বললেন, আমার জবাব তারটার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।
আমি প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জানালাম যে, আমরা উভয়েই সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছি। সংবিধান আমাদের উভয়ের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। সুতরাং, তার এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা তার শপথ ভঙ্গ করে। এই জবাবের পর এই অধ্যায়ের ইতি ঘটে।
No comments