বর নাকি বর্বর!

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। ৫০০ বরযাত্রীসহ প্রায় ৮০০ লোকের খাবার গ্রহণও শেষ। শেষের দিকে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে খেতে বসেন বর। আর খাবার টেবিলে চিংড়ী মাছ না দেখেই পাল্টে গেল রাজার বেশে সেজে আসা বরের আসল চেহারা। টেবিল থেকে উঠে বর নিজেই দাঁড়িয়ে কনে পক্ষকে গালাগাল শুরু করলেন। ভাঙচুর করলেন খাবার টেবিলের থালা-বাসন। একপর্যায়ে উল্টিয়ে দেয় পুরো খাবার টেবিল। অনেক চেষ্টা করেও নিবৃত হচ্ছিল না বর।
বরং উল্টো হাতাহাতিতে লিপ্ত হলেন। আর এমন বর্বরতা দেখে হতভম্ব কনেপক্ষ ও বরযাত্রীরা। এতকিছুর পরও রাগ কমলো না বরের। শেষমেষ ভেঙে দিল বিয়ে। বন্ধুবান্ধব ও নিজ স্বজনদের নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে কনেপক্ষ অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কন্যাকে তুলে দিত পারলো না।
এমন এক নির্মম ও বর্বর কাহিনীর জন্ম হলো চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী বাজারের আলভী ম্যারেজ গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারে। গত বৃহ¯পতিবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটলেও মান যাওয়ার ভয়ে তা প্রকাশ করেনি কনেপক্ষ।
সমস্যা সমাধান না করতে পেরে সোমবার সালিশ বৈঠক ডাকা হয় স্থানীয়ভাবে। এতে প্রকাশ পায় ঘটনাটি। আজ সোমবার রাতেই বৈঠকটি বসছে উপজেলার জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী খোকার বাড়িতে।
যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী খোকা বলেন, রাতে বৈঠকটি হবে। সালিশ বৈঠকে বক্তব্য শুনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, চিংড়ি মাছের জন্য এমন একটি গর্হিত কাজ কোনো ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। একমাত্র বর্বর লোকের পক্ষেই সম্ভব এই কাজ করা। আর এই ঘটনা পুরো এলাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, আনোয়ারা উপজেলার ১১নং জুইদন্ডী ইউনিয়নের ৮নং খুরুসকুল গ্রামের হাজী বাড়ির আবদুল মোনাফের আরব আমিরাত প্রবাসী ছেলে মোহাম্মদ আলমগীরের (৩০) সঙ্গে একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক ব্যবসায়ীর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। ১৮ দিন আগে তাদের বিয়ের আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
গত বৃহ¯পতিবার ছিল বরপক্ষের বিয়ে ভোজের অনুষ্ঠান। উপজেলার বটতলী বাজারের আলভী ম্যারেজ গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারে এই প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। প্রবাসী বরের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে কনেপক্ষ ৫০০ বরযাত্রীসহ প্রায় ৮০০ লোকের প্রীতিভোজের আয়োজন করে।এমনকি খাবার মেন্যুতে মুরগির রোস্ট ও কোরমাসহ নানা আইটেম রাখা হয়। সবকিছু ঠিকঠাকমত চললেও টেবিলে চিংড়ি মাছ না দেখে বর আলমগীর ক্ষুব্ধ হয়ে কনে পক্ষের লোকজনকে গালাগাল শুরু করে।
শেষে বিয়েও ভেঙে দেয় বর। আত্মীয়স্বজন  নিয়ে চলে যেতে চাইলে কনেরপক্ষ তাদেরকে আটকিয়ে রাখে। পরে আনোয়ারা থানার এসআই জালালউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
থানার এসআই জালাল উদ্দিন জানান, বিষয়টি সামাজিক হওয়ায় বর ও কনে পক্ষকে তিনদিনের মধ্যে সমাধান করার কথা বলা হয়। শুনলাম এ ব্যাপারে সোমবার রাতে সালিশী বৈঠক ডাকা হয়েছে।
আনোয়ারা থানা ওসি (তদন্ত) মাহবুব মিল্কী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বরের একগুয়েমী আচরণে বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। এই নিয়ে কনেপক্ষ কোনো অভিযোগও করেনি। তবে তা সামাজিক ভাবে মিমাংসা করে স¤পর্কটা টিকিয়ে রাখায় যায় কিনা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
কনের বাবা বলেন, সামান্য চিংড়ি মাছের জন্য যে ছেলে বিয়ের আসরে এত বর্বরতা দেখাতে পারে, সেই ছেলে ভবিষ্যতে আমার মেয়েকে সুখে রাখবে? অত্যাচার করবে না তার গ্যারান্টি কী?
তাই ওই ছেলের হাতে আমি আর মেয়ে তুলে দিতে রাজী নই।

No comments

Powered by Blogger.