বিএনপি’র শোডাউন
জাতীয়
ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের উদ্দেশ্যে ৭ দফা দাবি
উত্থাপন ও দেশবাসীর প্রতি ১২টি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে বিএনপি। দাবিগুলো আদায়ে
ঘোষণা করেছে দুই দিনের শান্তিপূর্ণ নতুন কর্মসূচি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী
উদ্যানের জনসমুদ্র থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব
দাবি, লক্ষ্য ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি দুইটি হচ্ছে- আগামী ৩রা
অক্টোবর জেলা শহরে সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কাছে এবং পরদিন ৪ঠা অক্টোবর
বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান। কর্মসূচি
ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ৭ দফা যে দাবি দিলাম দাবিগুলো আদায়ে
এই কর্মসূচি দিচ্ছি। এরপরে পর্যায়ক্রমে আমরা আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে
নিয়ে যাবো। ইনশাআল্লাহ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে
মুক্তি দিতে বাধ্য করবো। সেই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে
ফিরিয়ে আনতে ও আমাদের যেসব নেতাকর্মী কারাবন্দি রয়েছেন তাদের মুক্তি দিতে
বাধ্য করবো।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়াই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটা প্রথম জনসভা বিএনপির। ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি স্বতন্ত্রভাবেই আয়োজন করেছিল সোহরাওয়ার্দীর এই জনসভা। ফলে জনসভায় জোটের শরিক দল বা জাতীয় ঐক্যের কোনো নেতা যেমন উপস্থিত ছিলেন না, তেমনি তাদের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও ছিল না। তার উপর জনসভা আয়োজনে আগের দিন বিকালে অনুমতি পাওয়া, যানবাহন সংকট, পথে পথে প্রতিবন্ধকতা ও গ্রেপ্তারের মধ্যেও বিএনপি অঙ্গদলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণ জনসভার মাধ্যমে সরকার ও দেশবাসীর প্রতি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি এবং জনপ্রিয়তার একটি বার্তা দিয়েছে বিএনপি।
সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে গ্রেপ্তার, হামলা গুম করছে। আমাদের বহু সহকর্মী এখন গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকেই গুম হয়েছেন, অনেককে খুন করা হয়েছে। ১লা সেপ্টেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত ২৯দিনে ৪ হাজার ৯৪টি মামলা করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৩১৯ জনকে, আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৩০ জনকে। এগুলো সবই গায়েবি মামলা। কোনো অস্তিত্ব নেই। একেবারেই ভৌতিক মামলা। একবার কি আমাদের প্রশাসনের ভাইয়েরা চিন্তা করছেন? ভবিষ্যতে যখন এগুলো তদন্ত হবে, যখন দেখা যাবে কোনো ভিত্তি নেই, তখন কি হবে? তখন সকলকেই জবাবদিহি করতে হবে, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। কয়লাকে ধুলা বানিয়ে দিয়েছেন, সোনাকে তামা বানিয়ে দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে বাংলাদেশ ব্যাংক খালি করে দিয়েছেন।
তাও তাদের আশ মিঠে না। ১০ বছর লুট করেছেন, আরো করতে চান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দেশকে ও জনগণকে রক্ষা করতে হবে। ’৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম, একটি গণতান্ত্রিক, সুখী সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সেটাকে নির্মাণ করতে হলে আজকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে, মারাত্মকভাবে ভয় পেয়েছে। এত ভয় পেয়েছে, মামলা করা, ভয় দেখানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। সবখানে তারা বিএনপির ষড়যন্ত্রের ভূত দেখছে। রাতে মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে। এরা (আওয়ামী লীগ) দুঃস্বপ্ন দেখে বিএনপি বলে চিৎকার করে ওঠে। খালেদা জিয়া বলে চিৎকার করে ওঠে। তারেক রহমান বলে চিৎকার করে ওঠে। আজকে দেশের প্রতিটি মানুষ খালেদা জিয়া হয়ে উঠেছে, তারেক রহমান হয়ে উঠছে। এ দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের করালগ্রাস থেকে মুক্ত করে আনবেই আনবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আপনারা ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করবেন। তারা কর দিতে দিতে আর টাকা দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছে। তারা আর বাঁচতে পারছে না। এ করের টাকা দিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) আজ লুটের টাকা তৈরি করছে। পদ্মা সেতু ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা, এখন ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি মেগাপ্রজেক্টে কয়েকগুণ টাকা দিচ্ছে। লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই লুটপাট বন্ধ করুন। মির্জা আলমগীর বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রতারণা বন্ধ করে অবিলম্বে কোটার সঠিক সংস্কারের পথ দেখান। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছেন, গ্রেপ্তার করেছেন। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। নিরাপদ বাংলাদেশ তৈরি করুন। মির্জা আলমগীর বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা শুনানি করে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম যুক্ত করা হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, এটা সম্পূর্ণ সাজানো মামলা। তিনবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রধান সাক্ষ্য মুফতি হান্নানকে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে মিথ্যা এফিডেভিট নিয়ে এ মামলা শেষ হওয়ার আগেই তাকে ফাঁসি দিয়ে এ মামলাকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। ৬২ জন সাক্ষী শেষ হওয়ার পরে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে নতুন চার্জশিট দিয়েছে। এ মামলা যেভাবে চলেছে তার শুনানিকে আমরা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। আমরা ২১শে আগস্টের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। কিন্তু এ ঘটনায় যারা অপরাধী নয় তাদের সাজা দেয়ার অপচেষ্টার আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করবো, বিচারক ন্যায়বিচার করবেন। তারেক রহমানসহ যারা এর সঙ্গে জড়িত নন, তাদের বেকসুর খালাস দেবেন। পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আজকে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের এখনই মুক্তি দিন। অন্যথায় এ ধরনের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার এ দেশের মানুষ কখনও গ্রহণ করবে না। আপনাদের তারা দাঁতভাঙা জবাব দেবে। বিএনপি ও অঙ্গদলের কারাবন্দি কিছু সিনিয়র নেতার নাম উল্লেখ করে তিনি সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, আজকের এ সভায় আসার পথে ও সভার আশপাশ থেকে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার গাড়ি ঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও স্বৈরাচার সরকারের পতন চেয়ে স্লোগান দেয়ার মাধ্যমে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
৭ দাবি ও ১২ লক্ষ্য বিএনপির
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্র থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে ৭টি দাবি ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিম্ন বর্ণিত দাবিগুলো পূরণ করতে হবে। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের বিরোধী-রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনী ফলাফল চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সকল রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো ধরনের মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সকলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ২. জাতীয় সংসদ বাতিল করা; ৩. সরকারের পদত্যাগ ও সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা; ৪. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে; ৫. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা; ৬. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা এবং ৭. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের উপর কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা।
দেশবাসীর প্রতি বিএনপির ১২ লক্ষ্য ঘোষণা করতে গিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, কি লক্ষ্যে আমাদের এই আন্দোলন। আমরা যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারি তাহলে এইসব লক্ষ্য পূরণ করবো। আমাদের লক্ষ্যগুলো হচ্ছে- ১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। ২. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ৩. রাষ্ট্র ক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। ৪. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। ৫. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীকে আরো আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা। ৬. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৭. কঠোর হস্তে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও অধিকতর কার্যকর করা। ৮. সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা। ৯. ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীনতা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
১০. কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় না দেয়া এবং কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া। ১১. ক) নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি নির্ধারণ ও আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে সমতাভিত্তিক নীতি গ্রহণ করা এবং সকলের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকারভাতা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্যবীমা চালু, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করা। খ. স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জীবনমুখী শিক্ষানীতি চালু করা, প্রযুক্তি-বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে মানব সম্পদের উৎকর্ষ সাধন করা, জাতীয় উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ. তৈরি পোশাক শিল্পের অব্যাহত উন্নয়ন এবং শিল্প ও রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করা, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে উন্নয়নের ধারাকে গ্রামমুখী করা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিভার বিকাশ ও তাদের আধুনিক চিন্তা চেতনাকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষা, তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং ১২. সকল প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা। ৭ দফা দাবি ও ১২টি লক্ষ্য ঘোষণার পর এগুলোর ব্যাপারে জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সমর্থন চান বিএনপি মহাসচিব। এ সময় সমাবেশের পুরো উপস্থিতি হাত উঁচিয়ে এসব দাবি ও লক্ষ্যে সমর্থন ব্যক্ত করেন।
পদত্যাগ করুন, দাবি মানুন, ভয় পাওয়ার কারণ নেই: মোশাররফ
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার আগে যেসব দাবিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন সে দাবিতে জনগণ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে যে, এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর এই নির্বাচন করতে হলে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ছাড়া কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না। জনগণ তা হতে দেবে না। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে জনগণের দাবি মানুন, পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দলীয় মনোভাবাপন্ন মানসিকতা পরিহার করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের অনুরোধও জানান প্রবীণ এ রাজনৈতিক। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে এক লাখ লোক মারা যাবে বলে আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার একমাস পর মহাজোটের শরিক নেতা রাশেদ খান মেনন সে সংখ্যা বাড়িয়ে বলেছেন ৩ লাখ।
তাদের বক্তব্যের রেশ ধরে ড. মোশাররফ বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছেন যার জন্য আপনারা ভয় পাচ্ছেন। ঐকিক নিয়মে হিসাব করে দেখেন গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকলে প্রতিদিন কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আপনাদের বাড়তে থাকবে। এখনো সময় আছে, জনগণের দাবি মানুন, সরকার থেকে পদত্যাগ করুন। আপনারা যে ভয় পাচ্ছেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই। আমাদের নেত্রী এই স্টেজ থেকে বলেছেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না, তাই আপনাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সরকার বিদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘুদের কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে না। তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন আজকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি থাকায় এ জনসভায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। আমরা তার স্মরণে মঞ্চে তার জন্য খালি চেয়ার রেখে এ জনসভা করছি। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে মিটিং করতে দিয়েছেন। এসে দেখে যান, এই সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। যদি সাহস থাকে ৭ দিন সময় দিয়ে অনুমতি দেন, ঢাকার একটি রাস্তাও ফাঁকা থাকবে না।
এবার ছেড়ে দেবো না: মওদুদ
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম এরা মাঠ দখলের কথা বলেন। আর আমরা যদি মাঠে নামি আমাদেরকে প্রতিহত করবেন। কেন প্রতিহত করবেন? আমরা বলতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি প্রতিহত করেন, আমরাও আপনাদের প্রতিহত করবো। এবার ছেড়ে দেবো না। যদি মনে করেন, আমরা বাড়িতে বসে থাকবো আর আপনারা মাঠ দখল করে থাকবেন- এটা দুঃস্বপ্ন। বাংলাদেশের মাটিতে এটা এবার করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, কর্মসূচি পালনে আগামীতে আমরা আর অনুমতি নেবো না। প্রশাসনকে কেবল অবহিত করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে বাকস্বাধীনতার ওপর মারাত্মক আঘাত হানা হয়েছে। জঘন্যতম কালো আইন। এই আইনের ধারা ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ এবং ৪৩ সবগুলোই সংবিধান পরিপন্থী। আজকে সময় এসেছে গণমাধ্যমের ভাইবোনদের জেগে ওঠার। দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আপনারা এটা প্রতিহত করার চেষ্টা করুন। সরকারকে এই আইন বাতিল করতে বাধ্য করুন। এই আইনে বিপুল সাজার বিধিসহ পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে এই আইন করেছে যাতে সংবাদপত্র এই সরকারের অপকর্মগুলো ছাপাতে না পারে। আমরা ক্ষমতায় গেলে ৭ দিনের মতো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে দেবো।
এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে: জমির
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। তারপরও তো আমাদের সংগ্রাম চলছে। ইনশাআল্লাহ এই সংগ্রাম চলবে, যতদিন না আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য শেখ হাসিনা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ছিল। আজকে জামায়াতকে তাদের পক্ষে নেয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যার জন্ম এদেশে হয়েছে- যার ভোটার তালিকায় নাম আছে সে ভোট দিতে পারবে যে দলেই হোক না কেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করে যদি আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকতে পারেন আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এদেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না: আব্বাস
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিচার করা ছাড়া কোর্টের আর কোনো কাজ নেই। তারপরও আমাদের আন্দোলনে সরকারের লোকজনের মুখ হয়ে গেছে আমচুরের মতো। সরকারের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, ভয় কাজ করছে। এখন একটা আওয়াজ উঠেছে জাতীয় ঐক্য হবে। হবে কিনা হবে আল্লাহই জানেন। সরকার বহু চেষ্টা করছে যাতে ঐক্য না হয়। হলে ভালো, না হলে ক্ষতি নেই। যাই হোক, ঐক্য হোক না হোক বিএনপিকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা অন্য কোনো দিকে তাকাতে রাজি নই। আব্বাস বলেন, এই দেশে এখন রাজতন্ত্র চলছে নাকি। এটা কি রাজার দেশ যে কিছু বললেই ষড়যন্ত্র হবে। এটা রাজার দেশ নয়, গণমানুষের দেশ। এখানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না। আর বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই অবৈধভাবে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছে।
যারাই রাজপথে আসবে তারাই বন্ধু, সে যদি শয়তানও হয়: গয়েশ্বর
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকের যে ঐক্য- এই ঐক্যে মানুষের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে। একটি চেতনা এবং শক্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই ঐক্যের ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার উক্তি, ঐক্যেই মুক্তি। বিএনপি ঐক্যের জন্য সবসময় প্রস্তুত। এই আন্তরিকতাকে কেউ দুর্বলতা ভাববেন না। লোক নেই, জন নেই, বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করে অনৈক্যের সুর বাজালে জনগণের কাছে ধিকৃত হবেন। জনগণ যতটুকু থু থু ফেলবে তা কিন্তু সাঁতরিয়ে কুল পাবেন না। সেই কারণেই গণতন্ত্রের দাবিতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে যারা রাজপথের আন্দোলনে আসবে তারাই আমাদের বন্ধু। সে যদি শয়তানও হয়। সুতরাং গণতন্ত্রের স্বার্থে যারা লড়াই করবে, বিএনপি তাদেরকে না করতে পারবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্য চাই, গণতন্ত্রের মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই; জনগণের মুক্তি চাই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবীব, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মাহবুবের রহমান শামীন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আকতার শিরিন ও শামা ওবায়েদ বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল হাবীব দুলু, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফুটবলার আমিনুল হক, আকন কুদ্দুসুর রহমান, স্বাস্থ্য সহসম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, শামীমুর রহমান, হেলেন জেরিন খান, এবিএম মোশাররফ হোসেন, কাদের গনি চৌধুরী, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম, ডা. মাজহারুল আলম, ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাসাস সভাপতি মামুন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, যুবদল ঢাকা মহানগর (উত্তর) সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, যুবদল ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি রফিকুল আলম মঞ্জু, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শুরুর আগে জাসাসের পক্ষ থেকে রণসংগীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় কণ্ঠশিল্পী মনির খান, চিত্রনায়ক হেলাল খান উপস্থিত ছিলেন।
সোহরাওয়ার্দীতে জনস্রোত
জনসভার মূল ব্যানারে লেখা ছিল- মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সকল নেতাকর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভা। প্রধান অতিথি হিসেবে নাম লেখা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। আমরা তার মুক্তি চাই।’ মঞ্চে খালেদা জিয়ার জন্য একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়। জনসভা থেকে প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘প্রতীক হিসেবে দেশনেত্রীর নাম প্রধান অতিথি হিসেবে লেখা হয়েছে। তিনি এখন কারাবন্দি। দুপুর ২টায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে সমাবেশের আশপাশ এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন জনসভায়।
দুপুর দুইটায় সমাবেশ শুরুর দিকে মৎস্য ভবন, রমনাপার্ক, প্রেস ক্লাব মোড়, টিএসসি ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যানার ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আবার অনেক থানা ও ইউনিট বিএনপির নেতাকর্মীরা খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দিচ্ছেন। বেলা তিনটার মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠ ও তার চারপাশে নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসভাটি পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ২টা ১৫ মিনিটের দিকে শ খানেক পুলিশ এক সঙ্গে বাঁশি বাজিয়ে মৎস্য ভবন মোড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথ পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ই নভেম্বর বিএনপির জনসভায় খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়াই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটা প্রথম জনসভা বিএনপির। ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি স্বতন্ত্রভাবেই আয়োজন করেছিল সোহরাওয়ার্দীর এই জনসভা। ফলে জনসভায় জোটের শরিক দল বা জাতীয় ঐক্যের কোনো নেতা যেমন উপস্থিত ছিলেন না, তেমনি তাদের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও ছিল না। তার উপর জনসভা আয়োজনে আগের দিন বিকালে অনুমতি পাওয়া, যানবাহন সংকট, পথে পথে প্রতিবন্ধকতা ও গ্রেপ্তারের মধ্যেও বিএনপি অঙ্গদলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণ জনসভার মাধ্যমে সরকার ও দেশবাসীর প্রতি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি এবং জনপ্রিয়তার একটি বার্তা দিয়েছে বিএনপি।
সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। জনগণকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে গ্রেপ্তার, হামলা গুম করছে। আমাদের বহু সহকর্মী এখন গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকেই গুম হয়েছেন, অনেককে খুন করা হয়েছে। ১লা সেপ্টেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত ২৯দিনে ৪ হাজার ৯৪টি মামলা করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৩১৯ জনকে, আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৩০ জনকে। এগুলো সবই গায়েবি মামলা। কোনো অস্তিত্ব নেই। একেবারেই ভৌতিক মামলা। একবার কি আমাদের প্রশাসনের ভাইয়েরা চিন্তা করছেন? ভবিষ্যতে যখন এগুলো তদন্ত হবে, যখন দেখা যাবে কোনো ভিত্তি নেই, তখন কি হবে? তখন সকলকেই জবাবদিহি করতে হবে, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। কয়লাকে ধুলা বানিয়ে দিয়েছেন, সোনাকে তামা বানিয়ে দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে বাংলাদেশ ব্যাংক খালি করে দিয়েছেন।
তাও তাদের আশ মিঠে না। ১০ বছর লুট করেছেন, আরো করতে চান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দেশকে ও জনগণকে রক্ষা করতে হবে। ’৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম, একটি গণতান্ত্রিক, সুখী সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। সেটাকে নির্মাণ করতে হলে আজকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে, মারাত্মকভাবে ভয় পেয়েছে। এত ভয় পেয়েছে, মামলা করা, ভয় দেখানো ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। সবখানে তারা বিএনপির ষড়যন্ত্রের ভূত দেখছে। রাতে মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে। এরা (আওয়ামী লীগ) দুঃস্বপ্ন দেখে বিএনপি বলে চিৎকার করে ওঠে। খালেদা জিয়া বলে চিৎকার করে ওঠে। তারেক রহমান বলে চিৎকার করে ওঠে। আজকে দেশের প্রতিটি মানুষ খালেদা জিয়া হয়ে উঠেছে, তারেক রহমান হয়ে উঠছে। এ দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের করালগ্রাস থেকে মুক্ত করে আনবেই আনবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আপনারা ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করবেন। তারা কর দিতে দিতে আর টাকা দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছে। তারা আর বাঁচতে পারছে না। এ করের টাকা দিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) আজ লুটের টাকা তৈরি করছে। পদ্মা সেতু ছিল ১০ হাজার কোটি টাকা, এখন ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিটি মেগাপ্রজেক্টে কয়েকগুণ টাকা দিচ্ছে। লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই লুটপাট বন্ধ করুন। মির্জা আলমগীর বলেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রতারণা বন্ধ করে অবিলম্বে কোটার সঠিক সংস্কারের পথ দেখান। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছেন, গ্রেপ্তার করেছেন। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। নিরাপদ বাংলাদেশ তৈরি করুন। মির্জা আলমগীর বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা শুনানি করে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম যুক্ত করা হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, এটা সম্পূর্ণ সাজানো মামলা। তিনবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রধান সাক্ষ্য মুফতি হান্নানকে নির্যাতন করে তার কাছ থেকে মিথ্যা এফিডেভিট নিয়ে এ মামলা শেষ হওয়ার আগেই তাকে ফাঁসি দিয়ে এ মামলাকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। ৬২ জন সাক্ষী শেষ হওয়ার পরে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে নতুন চার্জশিট দিয়েছে। এ মামলা যেভাবে চলেছে তার শুনানিকে আমরা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। আমরা ২১শে আগস্টের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। কিন্তু এ ঘটনায় যারা অপরাধী নয় তাদের সাজা দেয়ার অপচেষ্টার আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করবো, বিচারক ন্যায়বিচার করবেন। তারেক রহমানসহ যারা এর সঙ্গে জড়িত নন, তাদের বেকসুর খালাস দেবেন। পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা আজকে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের এখনই মুক্তি দিন। অন্যথায় এ ধরনের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার এ দেশের মানুষ কখনও গ্রহণ করবে না। আপনাদের তারা দাঁতভাঙা জবাব দেবে। বিএনপি ও অঙ্গদলের কারাবন্দি কিছু সিনিয়র নেতার নাম উল্লেখ করে তিনি সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, আজকের এ সভায় আসার পথে ও সভার আশপাশ থেকে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার গাড়ি ঘোড়া বন্ধ করে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও স্বৈরাচার সরকারের পতন চেয়ে স্লোগান দেয়ার মাধ্যমে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
৭ দাবি ও ১২ লক্ষ্য বিএনপির
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্র থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে ৭টি দাবি ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিম্ন বর্ণিত দাবিগুলো পূরণ করতে হবে। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের বিরোধী-রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনী ফলাফল চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সকল রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো ধরনের মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সকলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ২. জাতীয় সংসদ বাতিল করা; ৩. সরকারের পদত্যাগ ও সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা; ৪. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে; ৫. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা; ৬. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা এবং ৭. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের উপর কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা।
দেশবাসীর প্রতি বিএনপির ১২ লক্ষ্য ঘোষণা করতে গিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, কি লক্ষ্যে আমাদের এই আন্দোলন। আমরা যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারি তাহলে এইসব লক্ষ্য পূরণ করবো। আমাদের লক্ষ্যগুলো হচ্ছে- ১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। ২. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ৩. রাষ্ট্র ক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। ৪. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। ৫. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীকে আরো আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা। ৬. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ৭. কঠোর হস্তে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও অধিকতর কার্যকর করা। ৮. সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা। ৯. ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীনতা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
১০. কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় না দেয়া এবং কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া। ১১. ক) নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি নির্ধারণ ও আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে সমতাভিত্তিক নীতি গ্রহণ করা এবং সকলের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকারভাতা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্যবীমা চালু, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষির সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করা। খ. স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জীবনমুখী শিক্ষানীতি চালু করা, প্রযুক্তি-বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে মানব সম্পদের উৎকর্ষ সাধন করা, জাতীয় উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ. তৈরি পোশাক শিল্পের অব্যাহত উন্নয়ন এবং শিল্প ও রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করা, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে উন্নয়নের ধারাকে গ্রামমুখী করা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিভার বিকাশ ও তাদের আধুনিক চিন্তা চেতনাকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষা, তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং ১২. সকল প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা। ৭ দফা দাবি ও ১২টি লক্ষ্য ঘোষণার পর এগুলোর ব্যাপারে জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সমর্থন চান বিএনপি মহাসচিব। এ সময় সমাবেশের পুরো উপস্থিতি হাত উঁচিয়ে এসব দাবি ও লক্ষ্যে সমর্থন ব্যক্ত করেন।
পদত্যাগ করুন, দাবি মানুন, ভয় পাওয়ার কারণ নেই: মোশাররফ
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার আগে যেসব দাবিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন সে দাবিতে জনগণ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে যে, এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। আর এই নির্বাচন করতে হলে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ছাড়া কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না। জনগণ তা হতে দেবে না। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে জনগণের দাবি মানুন, পদত্যাগ করুন, সংসদ ভেঙে দিন। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দলীয় মনোভাবাপন্ন মানসিকতা পরিহার করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের অনুরোধও জানান প্রবীণ এ রাজনৈতিক। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে এক লাখ লোক মারা যাবে বলে আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার একমাস পর মহাজোটের শরিক নেতা রাশেদ খান মেনন সে সংখ্যা বাড়িয়ে বলেছেন ৩ লাখ।
তাদের বক্তব্যের রেশ ধরে ড. মোশাররফ বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছেন যার জন্য আপনারা ভয় পাচ্ছেন। ঐকিক নিয়মে হিসাব করে দেখেন গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকলে প্রতিদিন কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আপনাদের বাড়তে থাকবে। এখনো সময় আছে, জনগণের দাবি মানুন, সরকার থেকে পদত্যাগ করুন। আপনারা যে ভয় পাচ্ছেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই। আমাদের নেত্রী এই স্টেজ থেকে বলেছেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না, তাই আপনাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সরকার বিদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগই সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘুদের কোনো ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে না। তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন আজকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি থাকায় এ জনসভায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। আমরা তার স্মরণে মঞ্চে তার জন্য খালি চেয়ার রেখে এ জনসভা করছি। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে মিটিং করতে দিয়েছেন। এসে দেখে যান, এই সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। যদি সাহস থাকে ৭ দিন সময় দিয়ে অনুমতি দেন, ঢাকার একটি রাস্তাও ফাঁকা থাকবে না।
এবার ছেড়ে দেবো না: মওদুদ
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম এরা মাঠ দখলের কথা বলেন। আর আমরা যদি মাঠে নামি আমাদেরকে প্রতিহত করবেন। কেন প্রতিহত করবেন? আমরা বলতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি প্রতিহত করেন, আমরাও আপনাদের প্রতিহত করবো। এবার ছেড়ে দেবো না। যদি মনে করেন, আমরা বাড়িতে বসে থাকবো আর আপনারা মাঠ দখল করে থাকবেন- এটা দুঃস্বপ্ন। বাংলাদেশের মাটিতে এটা এবার করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, কর্মসূচি পালনে আগামীতে আমরা আর অনুমতি নেবো না। প্রশাসনকে কেবল অবহিত করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে বাকস্বাধীনতার ওপর মারাত্মক আঘাত হানা হয়েছে। জঘন্যতম কালো আইন। এই আইনের ধারা ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ এবং ৪৩ সবগুলোই সংবিধান পরিপন্থী। আজকে সময় এসেছে গণমাধ্যমের ভাইবোনদের জেগে ওঠার। দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আপনারা এটা প্রতিহত করার চেষ্টা করুন। সরকারকে এই আইন বাতিল করতে বাধ্য করুন। এই আইনে বিপুল সাজার বিধিসহ পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে এই আইন করেছে যাতে সংবাদপত্র এই সরকারের অপকর্মগুলো ছাপাতে না পারে। আমরা ক্ষমতায় গেলে ৭ দিনের মতো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে দেবো।
এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে: জমির
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হয়। তারপরও তো আমাদের সংগ্রাম চলছে। ইনশাআল্লাহ এই সংগ্রাম চলবে, যতদিন না আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য শেখ হাসিনা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন। তার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ছিল। আজকে জামায়াতকে তাদের পক্ষে নেয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যার জন্ম এদেশে হয়েছে- যার ভোটার তালিকায় নাম আছে সে ভোট দিতে পারবে যে দলেই হোক না কেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করে যদি আপনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকতে পারেন আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
এদেশে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না: আব্বাস
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিচার করা ছাড়া কোর্টের আর কোনো কাজ নেই। তারপরও আমাদের আন্দোলনে সরকারের লোকজনের মুখ হয়ে গেছে আমচুরের মতো। সরকারের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, ভয় কাজ করছে। এখন একটা আওয়াজ উঠেছে জাতীয় ঐক্য হবে। হবে কিনা হবে আল্লাহই জানেন। সরকার বহু চেষ্টা করছে যাতে ঐক্য না হয়। হলে ভালো, না হলে ক্ষতি নেই। যাই হোক, ঐক্য হোক না হোক বিএনপিকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা অন্য কোনো দিকে তাকাতে রাজি নই। আব্বাস বলেন, এই দেশে এখন রাজতন্ত্র চলছে নাকি। এটা কি রাজার দেশ যে কিছু বললেই ষড়যন্ত্র হবে। এটা রাজার দেশ নয়, গণমানুষের দেশ। এখানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না। আর বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই অবৈধভাবে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র করছে।
যারাই রাজপথে আসবে তারাই বন্ধু, সে যদি শয়তানও হয়: গয়েশ্বর
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকের যে ঐক্য- এই ঐক্যে মানুষের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে। একটি চেতনা এবং শক্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই ঐক্যের ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার উক্তি, ঐক্যেই মুক্তি। বিএনপি ঐক্যের জন্য সবসময় প্রস্তুত। এই আন্তরিকতাকে কেউ দুর্বলতা ভাববেন না। লোক নেই, জন নেই, বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করে অনৈক্যের সুর বাজালে জনগণের কাছে ধিকৃত হবেন। জনগণ যতটুকু থু থু ফেলবে তা কিন্তু সাঁতরিয়ে কুল পাবেন না। সেই কারণেই গণতন্ত্রের দাবিতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে যারা রাজপথের আন্দোলনে আসবে তারাই আমাদের বন্ধু। সে যদি শয়তানও হয়। সুতরাং গণতন্ত্রের স্বার্থে যারা লড়াই করবে, বিএনপি তাদেরকে না করতে পারবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্য চাই, গণতন্ত্রের মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই; জনগণের মুক্তি চাই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবীব, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মাহবুবের রহমান শামীন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আকতার শিরিন ও শামা ওবায়েদ বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল হাবীব দুলু, সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফুটবলার আমিনুল হক, আকন কুদ্দুসুর রহমান, স্বাস্থ্য সহসম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, শামীমুর রহমান, হেলেন জেরিন খান, এবিএম মোশাররফ হোসেন, কাদের গনি চৌধুরী, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম, ডা. মাজহারুল আলম, ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাসাস সভাপতি মামুন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, যুবদল ঢাকা মহানগর (উত্তর) সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, যুবদল ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি রফিকুল আলম মঞ্জু, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শুরুর আগে জাসাসের পক্ষ থেকে রণসংগীত পরিবেশন করা হয়। এ সময় কণ্ঠশিল্পী মনির খান, চিত্রনায়ক হেলাল খান উপস্থিত ছিলেন।
সোহরাওয়ার্দীতে জনস্রোত
জনসভার মূল ব্যানারে লেখা ছিল- মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সকল নেতাকর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভা। প্রধান অতিথি হিসেবে নাম লেখা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। আমরা তার মুক্তি চাই।’ মঞ্চে খালেদা জিয়ার জন্য একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়। জনসভা থেকে প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘প্রতীক হিসেবে দেশনেত্রীর নাম প্রধান অতিথি হিসেবে লেখা হয়েছে। তিনি এখন কারাবন্দি। দুপুর ২টায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে সমাবেশের আশপাশ এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন জনসভায়।
দুপুর দুইটায় সমাবেশ শুরুর দিকে মৎস্য ভবন, রমনাপার্ক, প্রেস ক্লাব মোড়, টিএসসি ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা ব্যানার ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আবার অনেক থানা ও ইউনিট বিএনপির নেতাকর্মীরা খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দিচ্ছেন। বেলা তিনটার মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঠ ও তার চারপাশে নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসভাটি পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ২টা ১৫ মিনিটের দিকে শ খানেক পুলিশ এক সঙ্গে বাঁশি বাজিয়ে মৎস্য ভবন মোড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথ পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ই নভেম্বর বিএনপির জনসভায় খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন।
No comments