পর্যটন নগরীকে বাঁচাও
যে
শহর ও সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশের গর্ব এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার
প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, সেই কক্সবাজারকে তিলে তিলে হত্যা করার আয়োজন
করেছেন বহুতল ভবন নির্মাতারা। একই সঙ্গে তাঁরা পর্যটন নগরীর পরিবেশ ও
সৌন্দর্য ধ্বংস করছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কক্সবাজার প্রতিনিধির
প্রতিবেদনে শহরের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। ৩২ দশমিক ৯০
বর্গকিলোমিটারের কক্সবাজারের ৩০ শতাংশ পাহাড়ি এলাকা। সমতল ছাড়িয়ে সেখানেই
পাহাড়-দস্যুরা থাবা ফেলেছে। ছোট-বড় ১২টি পাহাড় কেটে এবং পাহাড়ের বন উজাড়
করে ১৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে, যা পরিবেশকে মারাত্মক ঝুঁকিতে
ফেলছে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া ছাড়াও মানুষের মৃত্যুর
বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সমুদ্রসৈকতের আশপাশে ৭০০ বহুতল ভবন নির্মিত হওয়ায়
সাগরই এখন আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পর্যটকেরা কক্সবাজারে কেন আসবেন?
যেকোনো আধুনিক শহর হতে হয় পরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব। আর সেই শহরটি যদি
পর্যটনকেন্দ্র হয় তাহলে তো সরকারকে আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কক্সবাজারের সৈকত ও শহর এলাকায় কীভাবে ৯০
শতাংশ হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস নির্মিত হলো সেই প্রশ্নের জবাব নেই। অনেকে
আবার পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৬ তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ১০ থেকে ১৩ তলা ভবন
তৈরি করেছেন। সব মিলিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী ইটপাথরের জঙ্গলে পরিণত
হয়েছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কাউক) চেয়ারম্যান কক্সবাজারকে আধুনিক
ও পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলছেন। পরিকল্পিত নগরী বানাতে হলে
তাঁকে যে কাজটি করতে হবে, সেটি হলো অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত সব ভবন ও
স্থাপনা ভেঙে ফেলা। এসব ভবনের মালিকেরা যত ক্ষমতাধরই হোন কেন, তাঁরা আইনের
ঊর্ধ্বে নন। মাসখানেক আগে ছিনতাইকারীদের হাতে একজন পর্যটক খুন হয়েছেন। সে
ক্ষেত্রে পরিবেশের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে
ভাবতে হবে। সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় কক্সবাজারকে
পরিকল্পিত বা আদর্শ পর্যটন নগরী করার খোয়াব খোয়াবই থেকে যাবে।
No comments