নেশার টাকা জোগাড়ে জড়াচ্ছেন ছিনতাইয়ে
কক্সবাজার
শহরে নেশার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছেন তরুণদের একটি অংশ। তাঁদের
মূল লক্ষ্য থাকে পর্যটকেরা। বিশেষ করে ভোর, সন্ধ্যা ও মধ্য রাতে বাস
টার্মিনালসহ পর্যটনস্পটে তাঁদের আনাগোনা থাকে বেশি। সম্প্রতি গ্রেপ্তার
ছিনতাইকারীরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের
উপস্থিতিতে এই প্রতিবেদকের কাছে কমপক্ষে ১০ জন ছিনতাইকারী নেশার টাকার জন্য
ছিনতাইয়ে নেমেছেন বলে জানান। পুলিশ জানায়, গত এক সপ্তাহে ৫৩ জন
ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ ছিনতাইকারীর বয়স ১৮
থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাঁরা প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। এর সত্যতা নিশ্চিত করে
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া
প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইকারীদের অনেকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আবার
অনেকে নিজেরাই মাদকাসক্ত। গ্রেপ্তার সবাই পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী।
ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। সর্বশেষ পুলিশ গত
বুধবার শহরের বাইপাস সড়ক থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ পাঁচজন ছিনতাইকারীকে
গ্রেপ্তার করেছে। ওই দিন (গত বুধবার) সকাল ছয়টার সময় কেন্দ্রীয় বাস
টার্মিনালের পাশে (লারপাড়া মসজিদের সামনে) এক পর্যটক দম্পতিকে জিম্মি করেন
কয়েকজন ছিনতাইকারী। এ সময় শারমিন নামের পর্যটকের গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে
পালাতে থাকেন ছিনতাইকারীরা। এই নারীর চিৎকারে এগিয়ে আসে পুলিশের একটি দল।
এরপর ধাওয়া করে বাইপাস সড়কের পালস স্কুলের সামনে পুলিশ পাঁচ ছিনতাইকারীকে
গ্রেপ্তার করে। ওই সময় ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে একটি
আগ্নেয়াস্ত্র (এলজি), দুই রাউন্ড কার্তুজ, চারটি ছোরা ও দুটি মুখোশ।
ছিনতাইকারীরা হলেন শহরের টেকপাড়ার মো. ইমন, বইল্যাপাড়ার আবদুর রহিম,
খুরুলিয়ার মো. রুবেল, পেশকারপাড়ার নবী হোসেন ও পিএমখালীর সামছুর রহমান। ওই
দিন দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে থানা-হাজতে মো. ইমন (১৯) প্রথম আলোকে বলেন,
দুই বছর আগে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তিনি প্রথমে গাঁজা, এরপর ইয়াবায় আসক্ত
হয়ে পড়েন। নেশার টাকা জোগাড় করতে প্রথমে চুরি করতেন। এখন শহরের অলিগলিতে
দাঁড়িয়ে ছিনতাই করেন। আরেক ছিনতাইকারী আবদুর রহিম (২০) বলেন, ছিনতাইকারীদের
অনেকে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসা বন্ধ থাকলে নেশার টাকার
জন্য সবাই দল বেঁধে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছিনতাই করেন। এর আগে গত সোমবার
গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারী সাইফুল ইসলাম (২২) বলেন, ছিনতাইকারী দলের নেতা
তাঁদের প্রথমে বিনা পয়সায় ইয়াবা সেবন করতে দেন। এরপর আসক্ত হওয়ার পর
নিজেরাই ইয়াবার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাইয়ে নেমে পড়েন। একই কথা বলেন আরেক
ছিনতাইকারী মোহাম্মদ তারেকও (২৩)। গত ২৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোর দ্বিতীয়
পৃষ্ঠায় ‘কক্সবাজারে পর্যটকের পেছনে ২০০ ছিনতাইকারী, আতঙ্ক’ শিরোনামে একটি
প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ছিনতাইকারীদের ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু করে
পুলিশ। তরুণেরা নেশার টাকা জোগাড়ে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ
করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কক্সবাজার পিপলস
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার শহরে
ইয়াবার এখন ছড়াছড়ি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও ইয়াবার
বেচাকেনা বন্ধ হচ্ছে না। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ
চৌধুরী বলেন, মাদকের সহজলভ্যতার কারণে তরুণদের একটি অংশ নেশায় জড়াচ্ছেন।
নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য তাঁরা অপরাধে জড়াতে দ্বিধা করছেন না।
No comments