জাতীয় সম্মেলনের নির্দেশে উজ্জীবিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা
সর্বশেষ
২০১৫ সালের ২৬ জুলাই সংগঠনের ২৮তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ
ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। এতে সাইফুর রহমান সোহাগকে সভাপতি এবং এস
এম জাকির হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে দুই বছরের (২৪ মাস) জন্য
কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগ। এর পর একে একে কেটে গেছে দুই বছর পাঁচ মাস ১১দিন
(প্রায় সাড়ে ২৯ মাস)। গঠনতন্ত্র উপেক্ষার এ ধারাবাহিকতার বিরোধিতা করে
সংগঠনটির একটি অংশের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো যথাসময়ে সম্মেলন দেয়া। কিন্তু
তাদের সে দাবি উপেক্ষিত ছিলো অনেকদিন। ‘২০১৯ সালের (একাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচন) আগে কি আদৌ ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে’ এমন জল্পনা-কল্পনা ছিলো সবার
মনে। অবশেষে সে ভাবনার অবসান ঘটিয়ে দলের (আওয়ামী লীগ) হাই কমান্ড জাতীয়
সম্মেলনের নির্দেশ দিয়েছে ছাত্রলীগকে। চলতি বছরের মার্চেই সম্মেলন দেয়ার
নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি
ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই নির্দেশ বলে গণমাধ্যমকে
জানিয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে নতুন সম্মেলনের আশায় উজ্জীবিত ছাত্রলীগের
নেতাকর্মীরা। ওবায়দুল কাদেরের সম্মেলনের নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে
নেতাকর্মীদের আনন্দ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা সমাবেশ স্থল।
আজ শনিবার
ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে র্যালি পূর্ববর্তী
সমাবেশে ছাত্রলীগকে সম্মেলনের নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন,
অনতিবিলম্বে নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিন।
নেত্রীর ইচ্ছা আগামী মার্চ (স্বাধীনতার) মাসেই সম্মেলন হোক। ছাত্রলীগকেই
সম্মেলনের তারিখ ঠিক করতে হবে। এখন তোমরা যারা পদে আছ সে পদ না ছাড়লে
আওয়ামী লীগে তোমরা আরো জুনিয়র হয়ে যাবে। এর আগে যথাসমেয় সম্মেলন দেয়ার
ব্যাপারে কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ না নেয়া, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের
বিলাসবহুল জীবনের সমালোচনা করেন ছাত্রলীগের একটি অংশ। নেতাকর্মীদের মধ্যে
বিভিন্ন ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সভায় তুলকালাম করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেশ
কয়েকজন নেতা। এছাড়া ছাত্রলীগের নামে আসা অনুদান থেকে সংগঠনের অন্যরা বঞ্চিত
হন বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের এ অংশের নেতারা। সেখান থেকেই নিজেদের মধ্যে
অন্তর্কোন্দল সৃষ্টি হয়। ফলে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি
হয়। সংগঠনে এক রকম স্থবিরতা বিরাজ করে বলে অভিযোগ ছিলো কেন্দ্রীয় এ
নেতাদের। এর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ চলতি জানুয়ারি মাসের ২ তারিখ ‘সম্মেলন
প্রত্যাশী নেতাকর্মী’দের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করে এ তারা। পরে
আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সংবাদ সম্মেলন না করার
সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তারা জানান, আমাদের দাবি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবি পৌঁছানো। এর মাধ্যমেই (দাবি পৌঁছানো)
সংগঠনের বাধ্যবাধকতা মেনে সম্মেলন দেয় হবে বলে প্রত্যাশা তাদের। অবশেষে
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সম্মেলনের ব্যাপারে ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে উজ্জীবিত
ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন
নেতৃত্বে কর্মচাঞ্চল্য আসবে বলে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে
সম্মেলন প্রত্যাশী অংশের নেতা এবং ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম
খান নয়া দিগন্তকে বলেন, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় দেখেছি গঠনতন্ত্র মেনে
নির্দিষ্ট সময়ে সম্মেলন করা হচ্ছে না। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে
দ্বিধা-বিভক্তি ছিলো। তাই কেন্দ্রীয় কমিটির পদপ্রাপ্ত হিসেবে আমাদের ওপর
আরোপিত দায়িত্ব থেকেই আমরা চেয়েছি যথাসময়ে সম্মেলন হোক। কারণ সংগঠনের
অভ্যন্তরীণ ঝামেলার কারণে অস্থিরতা বিরাজ করে। আমরা চেয়েছি প্রধানমন্ত্রী
আমাদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। অতঃপর আমরা তার পক্ষ থেকে একটা ইতিবাচক
সাড়া পেয়ে অনেক সন্তুষ্ট। মার্চের মধ্যেই সম্মেলন দেয়া সম্ভব কি না জানতে
চাইলে তিনি বলেন, অস্থির সময়েও ছাত্রলীগকে অল্প সময়ে অনেক কাজ করতে হয়। সেই
অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি খুব দ্রুত সময়ে, দক্ষতার সাথে এ সম্মেলন দেয়া
সম্ভব।
আগামীর নেতৃত্বের জন্য কেমন নেতার প্রত্যাশা এমন প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, কর্মী থেকে নেতা হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে যে কর্মকাণ্ড ও আদর্শের
ধারণ করতে হয় তেমন গুণের নেতা আসা উচিত। সম্মেলন প্রত্যাশী হিসেবে নিজের
অনুভূতি জানতে চাইলে ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী
বলেন, এটা আমাদের নৈতিক বিজয়। গঠনতন্ত্র সংগঠনের আমানত। গঠনতান্ত্রিক
বাধ্যবাধকতা থেকেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে যথাসময়ে সম্মেলনের দাবি জানিয়ে আসছি।
তাই নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকে সম্মেলনের নির্দেশ দেয়ায়
নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। তিনি বলেন, সম্মেলনের ঘোষণায় ছাত্রলীগ
নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। তবে আগামী দিনের নেতৃত্ব
নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত বলে মনে করেন
তিনি। এ বিষেয় ছাত্রলীগের এ কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, শেষ কমিটির অভিজ্ঞতা থেকে
বলছি এবার যেন নেত্রী নিজে দেখে বেস্ট দু’জনকে নির্বাচন করেন। সামনে
নির্বাচনকে মাথায় রেখে যেন যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয় সে জন্য তৃণমূল
নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে এটাই আমাদের দাবি। প্রয়োজনে নেত্রী যেন ডিভি,
ডিজিএফআই, এনএসআই এর মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের নির্বাচিত করেন।
No comments