জঙ্গিবাদের ভিত্তি ধ্বংস করতে হবে

পাকিস্তানের
প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নববর্ষের ‘সম্ভাষণ’ বাদই
দিলাম, সাধারণভাবেই জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ভারত ও আফগান নীতির
কারণে দ্রুত ধৈর্য হারাচ্ছে। আরও জানা যায়, ভারত ও আফগান নীতিপ্রণেতারাও
পাকিস্তানের ভুল শোধরানোর সম্ভাবনা না দেখে হতাশ হয়ে পড়ছেন। তাঁদের অভিযোগ,
পাকিস্তান ভারত ও আফগানবিরোধী জঙ্গিদের তার ভূখণ্ডে নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে।
এই দুই প্রতিবেশী দেশেই পাকিস্তান সম্পর্কে জনমত অত্যন্ত নেতিবাচক, এতে এ
ব্যাপারটা আরও তীব্র হচ্ছে। আবার পাকিস্তানেও এই দুই দেশ সম্পর্কে জনমত
একইভাবে নেতিবাচক। আর প্রতিদিনই যেন তার মাত্রা আরও তীব্র হচ্ছে। অন্যদিকে
পাকিস্তানের শান্তিকামী মানুষের ওপর জোরজবরদস্তি চালানো হচ্ছে। অভিযোগ
আছে, রাষ্ট্রের ভেতরের রাষ্ট্র এই মানুষদের দৌড়ের ওপর রাখছে। শান্তিবাদী
কর্মী রাজা খানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা দেশটির ক্ষুদ্র শান্তিকামী মহলে
ব্যাপক ভীতি তৈরি করেছে, যদিও এই খবর মূল ধারার গণমাধ্যমে একরকম আসেইনি।
সাধারণ মানুষকে এক বিপজ্জনক বাগাড়ম্বর শোনানো হচ্ছে আর তা হলো পাকিস্তান
ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে
দাঁড়িয়েছে। মানুষও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে তা গ্রহণ করেছে। সরকারকে
নানা কায়দা করে নতজানু করা হয়েছে। কারা করেছে বা কীভাবে সেটা করা হয়েছে, তা
নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এতে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে
সন্দেহের অবকাশ নেই যে এই সমস্যা পাকিস্তানের নিজের সৃষ্ট।
কিন্তু
ব্যাপারটা এ রকম আর এ নিয়ে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। ব্যাপারটা হলো
পাকিস্তানে গণতন্ত্র ঔদাসীন্যের সঙ্গে উৎখাত করা হয়েছে আর ক্ষমতা এমন এক
গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে, যা কখনো কাম্য নয়। এতে রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে
মানুষের যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অদৃশ্য নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে
জনগণের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কিছু নির্মম প্রচারণা, যা মানুষকে
ক্রমে এক বড় গোলকধাঁধার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে বাস্তবতার লেশমাত্র নেই।
ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ চোখে তারা দেখতে শুরু করেছে। আমরা চরম
বিভ্রান্তিতে পড়েছি। এটা নতুন বা অনন্য কিছু নয়। বস্তুত পাকিস্তানের
ইতিহাস এ রকম অনেক ঘটনা দ্বারা পরিপূর্ণ, যেখানে অদেখা বা জবাবদিহিহীন
ব্যক্তিরা মসৃণভাবে চলমান একটি ব্যবস্থা তালগোল পাকিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। আর
জাতির ভাগ্য অত সুপ্রসন্ন নয়, তার পক্ষে দুঃখজনক ঘটনা ছাড়া এখান থেকে
বেরোনোর পথ নেই। মানুষের ধারণা বা প্রকৃত নীতিপ্রণেতাদের ক্ষীণদৃষ্টি যেমনই
হোক না কেন, জাতির সব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় সৃষ্টিকর্তার পর যুক্তরাষ্ট্রই
পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে, যদিও এতে তার নিজের কৌশলগত উদ্দেশ্য ছিল। একমাত্র
ব্যতিক্রম হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের পতন (বাংলাদেশের স্বাধীন
হওয়া-অনুবাদক), পরিস্থিতি তখন এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে তা এড়ানোর উপায়
ছিল না। এবার বক্ষ্যমাণ বিষয়ে ফিরে আসি, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছ থেকে
কী দাবি করছে? ব্যাপারটা হলো জঙ্গিদের অবকাঠামো ভেঙে দেওয়া হলে তা এই
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মার্কিন স্বার্থের জন্য হানিকর হবে, পাকিস্তান
যেটাকে এককালের মার্কিন-পাকিস্তান কৌশলগত নীতির ধ্বংসাবশেষ বলতে ভালোবাসে।
ভারত পাকিস্তানের কাছ থেকে কী দাবি করছে? এই জঙ্গিদের অবকাঠামো ধ্বংস করা;
তো, যার কারণে অতীতে দেশ দুটি বেশ কয়েকবার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে
গিয়েছিল। আবার আফগানিস্তানই বা কী চাইছে?
তারাও তো সেই জঙ্গি অবকাঠামো
ধ্বংসের দাবি করছে, যার কারণে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির কষ্টার্জিত ও
অনিশ্চিত স্থিতিশীলতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ও আফগানিস্তানের দাবির সঙ্গে একমত। আর শান্তিকর্মীরাই বা কী
চাচ্ছেন? তাঁরাও সেই একই দাবি করছেন। অর্থাৎ এই জঙ্গি অবকাঠামো ধ্বংস করে
দেওয়া যা স্নায়ুযুদ্ধের পর পাকিস্তানের জাতীয় চরিত্রে সবচেয়ে বড় আঘাত
হেনেছে। এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিমাপযোগ্য সুবিধা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের জনগণের রায় পাওয়া নওয়াজ সরকার কী দাবি করেছিল? তারা
এই জঙ্গি অবকাঠামো ভেঙে দেওয়াসহ পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্কের কাঁটা দূর
করাসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করেছে। এই দাবির কোনটা
অযৌক্তিক? কথা হলো এসব দাবি বাস্তবায়িত হলে কি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী
যুগ আসবে না? তখন কি পাকিস্তান দরিদ্রতম অঞ্চলের মানুষদের অর্থনৈতিক
উন্নয়নে নজর দিতে পারবে না? প্রতিবেশীদের সঙ্গে বৈরিতা থাকলে নানা
প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, সেটা না থাকলে তো এই সমস্যার মুখোমুখি হওয়া
যাবে না আর পারমাণবিক যুদ্ধেরও ভয় থাকবে না। এখন যা চলছে তাতে এক পক্ষ
যতটা হারাচ্ছে, আরেক পক্ষ ঠিক ততটাই অর্জন করছে। এখনকার বিশ্বরাজনীতির
পরিবর্তিত পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে আমরা পুরোনো নীতির অশুভ ছায়া থেকে বেরিয়ে
আসতে পারি, যার কারণে পাকিস্তানের কয়েক লাখ মানুষ মারা গেছে। আর অর্থনীতির
ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ কোটি ডলারের। পাকিস্তান বর্তমানে সবার সঙ্গে শত্রুতা
করার এবং ভুল আশার ওপর ভর করে চীনের ওপর অতি নির্ভরশীলতার যে নীতিতে চলছে,
তা টেকসই হবে না। সময় এসেছে নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে
যৌক্তিক ও বহুত্ববাদী পররাষ্ট্রনীতির কাঠামো তৈরি করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের
উচিত হবে অতীত ভুল পরিহার করে পাকিস্তানে বেসামরিক শাসন শক্তিশালী করা এবং
বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
তা না হলে লাখ লাখ অসহায় পাকিস্তানি নাগরিক জীবন হারাবে, পাকিস্তানের
এযাবৎকালের অনুসৃত নীতিতে যাদের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে, যেসব নীতিতে
একসময় যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, ‘দ্য নেশন ডটকম’ থেকে নেওয়া।
আদনান রানধাওয়া: পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, ‘দ্য নেশন ডটকম’ থেকে নেওয়া।
আদনান রানধাওয়া: পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক।
No comments