শীতে কাবু সারাদেশ, আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটে গ্রামের মানুষের
শীতে
কাবু সারা দেশ। বিশেষ করে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে
তাপমাত্রা অনেক হ্রাস পাওয়ায় মানুষের দুর্দশার মধ্যে পড়ে। ঠাণ্ডায় মানুষের
স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্ন ঘটছে। বিকেলের দিক থেকে রাত পর্যন্ত একান্ত
প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। খুব সকালে অফিসগামী চাকরিজীবী
ছাড়া অন্যদের রাস্তায় খুব কমই দেখা যাচ্ছে বলে আমাদের সংবাদদাতারা
জানিয়েছেন। রাজশাহী ঢাকাতেও রাস্তা অনেকটা ফাঁকা। সন্ধ্যা হলেই রিকসা
চলাচলও অনেকটা সীমিত যদিও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখানে ঠাণ্ডা অনেক
কম। তীব্র শীতকে মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে নির্ঘুম রাত
কাটে গ্রামের দরিদ্র মানুষের। কাঠ-খড়ের জ্বালানো আগুনের উত্তাপই তাদের
ভরসা। অন্যান্য বছর শীতের শুরুতেই দানশীল মানুষের কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণের
খবর পাওয়া গেলেও এবার এখন পর্যন্ত সে ধরনের তৎপরতার কোনো কোনো নেই। প্রতি
বছর মুষ্টিমেয় দানশীল মানুষের বদান্যতায় কিছু দরিদ্র-নিরন্ন মানুষের শীতটা
কিছুটা হলেও আনন্দে কেটে যায়। অন্তত: খোলা আকাশের নিচে বাস করা মানুষগুলো
পরিবার নিয়ে উষ্ণতার মধ্যেই রাতটা কাটিয়ে দিতে পারে। তবে গ্রামের
দরিদ্র-নিরন্ন মানুষের চেয়ে শহরের খোলা আকাশের নিচের বসবাসকারী, রাস্তার
ফুটপাতে ও বিভিন্ন স্টেশনের যাত্রী ছাওনীর নিচে বসবাস করা মানুষের দুর্দশা
ছিল অনেক বেশি। রাতে ঢাকার ফুটপাথে রাত কাটানো মানুষকে দেখা গেছে সন্ধ্যার
পর থেকে গ্যারেজের তেলমাখা কাপড় অথবা রাস্তায় পড়ে থাকা কাঠ-খড় সংগ্রহ করে
আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে। এদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এরা সারারাত
এভাবেই কাটিয়ে দেয়।
দিনে যেখানে মানুষের চলাচল কম সেখানে সুবিধা মতো জায়গায়
ঘুমায় বেলা ওঠার পর। এমনি একজন কাগজ কুড়ানী যুবক মমিন মিয়া জানান, তিনি
সারাদিন নানা কিছু কুড়ানীর সাথে গ্যারেজ থেকে তেলমাখা কাপড়ও নিয়ে আসেন।
বন্ধুদের নিয়ে সারারাত এসব জ্বালিয়েই কাটিয়ে দেন রাত। সারাদেশেই আজ
তাপমাত্রা বেশ হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে দেশের
অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ঠাণ্ডা ছিল অনেক বেশি। বিশেষ করে রাজশাহী ও
চুয়াডাঙ্গা ছিল তীব্র শৈত্য প্রবাহের কবলে। এই দুটি শহরের প্রত্যেকটিতে আজ
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল পাঁচ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়াবিদ
শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বছরে দেশের মধ্যে রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গার এই
তাপমাত্রাই ছিল সর্বনিম্ন। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ছিল চার দশকের মধ্যে
দেশের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে তিন দশমিক দুই ডিগ্রি
সেলসিয়াস। ১৯৬৮ সালের পর থেকে দিনাজপুরের ওই তাপমাত্রাই ছিল দেশের সবচেয়ে
কম। তবে ১৯৬৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা নেমেছিল দুই দশমিক
ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শুষ্ক আবহাওয়া, বাতাসের মধ্যে আদ্রতা কমে যাওয়া, জেট
বায়ু ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি চলে আসার কারণেই তাপমাত্রা এতো বেশি নিচে নেমেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জেট বায়ু খুবই ঠাণ্ডা থাকে। এটা অন্যান্য সময় ৪০
থেকে ৫০ ফুটের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে ঠাণ্ডা এ বায়ুর শীতলতা বাংলাদেশকে
ছুঁতে পারে না। এ বছর জানুয়ারি শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঠাণ্ডা
বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করে। গত ৩ জানুয়ারি বিকেল থেকেই দেশের অর্ধেক অঞ্চল
মৃদু থেকে মাঝারী শৈত্য প্রবাহের আওতায় চলে আসে। গত ৪ জানুয়ারি
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা নামে সাড়ে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আজ দেশের সবচেয়ে কম
তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী বিভাগের সর্বত্র। ঈশ্বরদীতে সাত দশমিক দুই ডিগ্রি
সেলসিয়াস, বদলগাছিতে সাত দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বগুড়ায় আট ডিগ্রি
সেলসিয়াস এবং তারাশে ছিল আট দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রাজধানী ঢাকায়
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকাল রাজশাহী, খুলনা,
রংপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গর অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারী
ধরনের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। কাল দিনের
তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সকালের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকবে।
No comments