মাশরাফির অবসর নিয়ে ফেসবুকে মাতম
টি-টোয়েন্টি
ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজা সাংবাদিকদের বলেছেন,
নতুনদের জায়গা করে দিতেই তিনি ক্রিকেটের এ ফরম্যাট থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
কিন্তু শুধু এ ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন বাংলাদেশ অধিনায়কের
গোড়া সমর্থকেরা। তবে শুধু সমর্থকেরাই নয়, অবসরের সময় ও ধরণ নিয়ে প্রশ্ন
তুলেছেন ক্রীড়া সাংবাদিকদেরও কেউ কেউ। মাশরাফির জীবনী লেখক ক্রীড়া
সাংবাদিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বিবিসিকে বলেছেন, "সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করে
এলো। তবে এমন একটা পরিস্থিতি কিন্তু নানাভাবে তৈরি করা হচ্ছিলো।" তিনি
বলেন, মাশরাফির বয়স ৩৩ পার হয়েছে। নানা রকম ইনজুরি ছিলো, তাই অবসর সে
নিতেই পারে। কিন্তু যেটা বিস্ময়কর তা হলো একটা সিরিজ চলছে, দুটি ম্যাচ
বাকি। প্রথম ম্যাচের টসের সময় বলে দিলো যে সে এরপর খেলবে না। "সামনে বড়
কোন টি-টোয়েন্টির অ্যাসাইনমেন্ট নেই। এখনি কেন বলতে হলো। কী পরিস্থিতি
তৈরি হলো? গুঞ্জন হলো বোর্ড বা কোচের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই মাশরাফির মতের
অমিল চলছিলো। আমার ধারণা সেটার একটি বহি:প্রকাশ হলো" - বলছিলেন দেবব্রত
মুখোপাধ্যায়। আর এসব গুঞ্জন বা সন্দেহ থেকেই ফেসবুক সরগরম হয়ে উঠেছে তার
সমর্থকদের নানা ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও দাবিতে। এক্ষেত্রে অনেকেরই
সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট
নাজমুল হাসান পাপন। ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে মাশরাফির অবসরের প্রতিবাদে
শুক্রবার বিসিবি অফিসের সামনে কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ইভেন্ট
পাতায় সমালোচনাও করা হয়েছে বিসিবির। কাওসার সুমন নামে একজন প্রোফাইল
পিকচারে মাশরাফির ছবি দিয়ে লিখেছেন, "যে খেলা নিয়ে মানুষের এতো আবেগ,
উত্তেজনা, ভালোবাসা - সেই খেলা নিয়েই খেলছে বিসিবি! যে ছেলেটা জীবনের
তোয়াক্কা না করে দেশবাসীকে হাসাচ্ছে, কাঁদাচ্ছে,
আবেগে ভাসাচ্ছে - তাকে
নিয়েই খেলছে বিসিবি! কে হাতুরু, কে পাপন?" সাখাওয়াত হোসেন নামে একজন
দৈনিক সমকালের 'অবসরের নেপথ্যে' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ শেয়ার করেছেন। এ
সংবাদটিতে বলা হয়েছে, "...মাশরাফির ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, অবসরের পেছনে
নেপথ্যের কারণ আসলে বোর্ডের সিদ্ধান্ত। বোর্ড চাইছিল না, তিনি এই ফরম্যাটে
খেলা চালিয়ে যান। গেল নিউজিল্যান্ড সফরের মাঝেই একবার ঢাকায় বসে বোর্ড
প্রধান নাজমুল হাসান পাপন মিডিয়ার সামনে বলে দেন টি২০ থেকে অবসর নিতে
চাইছেন মাশরাফি.."। অফিউল হাসনাত রুহিন লিখেছেন, "যদি মাশরাফিকে দল ছেড়ে
দেয়ার কথা বলে থাকে, তাহলে এই মুহূর্তে কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের অপসারণ
চাই।" আবুল বাশার লিখেছেন, "মাশরাফির অবসরটা কেমন কেমন লাগছে। লম্বায়
টেস্ট এর পরে একদিনের ম্যাচ, তারপর টি-২০। দম যদি সমস্যা হয় তাহলেতো আগে
একদিনের ম্যাচ ছাড়ার কথা; টি-২০ এর আগে। সে ৫০-এ টিকে থাকে কিন্তু ২০-এ
কাবু হয়ে যায়; কি আজগুবি বিষয়! কোন নচ্ছার কলকাঠি নাড়ছে নাতো পিছন
থেকে?" সাখাওয়াত আল আমিন লিখেছেন, "ক্রিকেট দল ছাপিয়ে তিনি যেন হয়ে
উঠেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের ক্যাপ্টেন...।" আসাদ রহমানের
স্ট্যাটাস, "হাতুরের বিদায় চাই.. ম্যাশকে অবসরে বাধ্য করেছে হাতুরে-পাপন"।
এভাবেই মাশরাফির অবসর নিয়ে সমর্থকরা ক্ষোভ ঝাড়ছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট ও
কোচের বিরুদ্ধে। যদিও মাশরাফির দিক থেকে এ ধরনের কোন ইঙ্গিত আসেনি। আর
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাশরাফির অবসর নিয়ে এতো সরগরম হলেও এ বিষয়ে
বিসিবি কিংবা এর প্রেসিডেন্ট বা কোচের পক্ষ থেকে এখনও কোন মন্তব্য করা
হয়নি। তবে ক্রিকেট বিষয়ক সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো
মাশরাফির অবসরের সংবাদ প্রকাশ করে বলছে, "... মাশরাফি তার সিদ্ধান্ত প্রথমে
সিনিয়র খেলোয়াড়দের ও পরে পুরো টিমকে জানান। জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের
সাথে ৩-০ তে হারার পর টিম ও বিবিসি ম্যানেজমেন্টের ভেতরে নতুনদের নিয়ে দল
গড়া এবং সাকিব আল হাসানকে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা
হচ্ছিলো। শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টের পরাজয়ের পরও দলে পরিবর্তনের গুঞ্জন
শোনা যায়।" মাশরাফির নেতৃত্বে ২৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশে
জিতেছে নয়টিতে। আর মঙ্গলবারের আগে তিনি ৫২টি ম্যাচ থেকে উইকেট নিয়েছেন
৩৯টি। টি-২০ থেকে বিদায় নিলেও মাশরাফির নেতৃত্বেই আয়ারল্যান্ডে
ত্রি-দেশীয় সিরিজ এবং এরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে ইংল্যান্ডে যাবে
বাংলাদেশ। সূত্র : বিবিসি
No comments