এটা আত্মহত্যা নয় দাবি পরিবারের
রাজশাহীতে মালদ্বীপের মডেল রাউধা আথিফের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছে তাঁর পরিবার। মৃত্যুর পর রাজশাহীতে এসে নিজেদের মতো করে খোঁজখবর নিয়ে তাঁরা বলছেন, এটা আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে না। অনেক আলামত তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন, যাতে মনে হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এদিকে এই মৃত্যু সম্পর্কে তদন্ত করতে গত সোমবার রাজশাহীতে এসেছেন মালদ্বীপ পুলিশের দুই কর্মকর্তা। গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে রাউধা যে কক্ষে থাকতেন, সেটি পরিদর্শন করেন। ওই দুই কর্মকর্তা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। গত ২৯ মার্চ রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহী আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের ১২ সদস্য। ৩১ মার্চ মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে বোর্ড পরের দিন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়। ওই দিন দুপুরে রাজশাহীর হেতেম খাঁ কবরস্থানে রাউধার দাফন সম্পন্ন হয়। মৃত্যুর পাঁচ দিন পরও রাজশাহীতে অবস্থান করছেন রাউধার মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। গতকাল বিকেলে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন রাউধার বাবা মোহাম্মদ আথিফ। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রাউধা অনেক মেধাবী। মালদ্বীপ সরকারের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে সে এখানে পড়তে এসেছিল। আমরাও পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতাম। ফলে অর্থ নিয়ে তার কোনো কষ্ট ছিল না।’ তিনি আরও বলেন,
‘আমরা বিশ্বাস করি না এটা আত্মহত্যা। এখানে এসেই আমি তার মরদেহ দেখি। সেটা একজন বাবা হিসেবে নয়, একজন চিকিৎসক হিসেবে। আমিও ফরেনসিক মেডিসিন পড়েছি। আমি তার দেহে চিহ্ন (সাইন) দেখেছি, যা নির্দেশ করে এটা আত্মহত্যার ঘটনা নয়। আমরা সত্যটা খুঁজে বের করতে চাই, ঘটনাটা কীভাবে ঘটেছে।’ মোহাম্মদ আথিফ বলেন, ‘কলেজ হোস্টেলে যে প্রথম লাশ দেখেছিল আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে বলেছে, দরজার ফাঁক দিয়ে সে ঝুলন্ত দেহ দেখেছে। তারপর অন্য শিক্ষার্থীরা এসে দরজা খুলে লাশ নামিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আমি হোস্টেলের ওই কক্ষে গিয়ে দেখেছি, ভেতর থেকে দরজা লাগানো থাকলে ধাক্কা দিয়ে তা বাইরে থেকে খোলা সম্ভব নয়। দরজা ভাঙারও কোনো চিহ্ন নেই। ধাক্কা দিয়ে খুলতে হলে ভাঙার চিহ্ন থাকবে। তাই তাদের বক্তব্য আমার কাছে সাংঘর্ষিক মনে হয়েছে। আমরা নিজেদের মতো করে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কলেজের ওই দিনের সিসিটিভির ফুটেজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ মোহাম্মদ আথিফ প্রশ্ন তোলেন, ‘মডেলিং করার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে অনেক জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু তার ইনস্টাগ্রাম আইডি এখন ডিঅ্যাকটিভ (নিষ্ক্রিয়)। সে মৃত, তার আইডি কীভাবে ডিঅ্যাকটিভেট করা সম্ভব?’ পরিবারের সঙ্গে রাউধার সর্বশেষ কবে কথা হয়েছিল এবং কী কথা হয়েছিল—জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাউধার মা প্রতিদিন দুবার তাঁর সঙ্গে কথা বলতেন। ভিডিওকলের মাধ্যমে কথা হতো। ঘটনার আগে সর্বশেষ রাত ১১টার দিকে মা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন।
স্বাভাবিক কথাই বলেছে। কিন্তু তার তিন দিন আগে সে তার মাকে বলেছিল, ওই রাতে সে পরীক্ষার পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তার ক্লাসের একটি মেয়ে তাকে জুস এনে দেয় এবং জুস খাওয়ার পর সে ঘুম ঘুম অনুভব করে। পরে সে গ্লাসে একটি ট্যাবলেট পেয়েছিল। এই বিষয়টি সন্দেহজনক। মোহাম্মদ আথিফ আরও বলেন, সবার সঙ্গে রাউধার দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। কিন্তু একটি মেয়ের সঙ্গে তার কিছুটা দ্বন্দ্ব ছিল। রাউধার মৃত্যুর দিনেই নগরের রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। গত রোববার সেটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আল আমিন হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাউধার মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করেছি। এ ছাড়া তার ভিসেরা প্রতিবেদন আসলেও অনেক তথ্য জানা যাবে।’ সিসিটিভি ফুটেজ না থাকার কারণ জানতে চাইলে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়েছি। ওই সিসি ক্যামেরা গত সাত মাস ধরে বন্ধ। তারপরও আমরা তদন্তে বিষয়টি রাখছি, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ দিয়ে দেখানো হবে।’ অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল আজিজ রিয়াদ বলেন, ‘আমাদের সাত-আটটি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। এর মধ্যে কিছু কাজ করে, কিছু করে না। তার মধ্যে ওটাও একটা। ফুটেজ নেই কথাটা সত্য নয়।’
No comments