ট্রাম্পের জামাতা কুশনার ‘সকল কাজের কাজি’
শ্বশুর
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো জামাতা জেয়ার্ড কুশনারেরও সরকারি কাজ
করার পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী ব্যক্তিতে
পরিণত হয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে আবাসন ব্যবসায়ী
৩৬ বছর বয়সী কুশনার দেশের অভ্যন্তরে ও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক
প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। সিএনএন জানায়, ট্রাম্পের বড় মেয়ে ইভাঙ্কার সঙ্গে
বিয়ের সুবাদে কূটনৈতিক, সরকারি কিংবা সামরিক কাজে অনভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও
পররাষ্ট্র নীতির অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি
প্রতিষ্ঠা, চীনের সঙ্গে আলোচনা ও মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, সরকারের
কর্মতৎপরতা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কাজ করছেন কুশনার। ছায়া
কূটনীতিকের ভূমিকা থেকে প্রকাশ্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন তিনি।
বর্তমানে মার্কিন সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল
জোসেফ ডানফোর্ডের সঙ্গে ইরাক সফর করছেন কুশনার। আইএস তথা জঙ্গিগোষ্ঠী
ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের মার্কিন
কমান্ডারদের কাছ থেকে প্রাথমিক খোঁজখবর নেয়া এবং ইরাকি কর্মকর্তাদের সঙ্গে
সাক্ষাৎ করাই তার এ সফরের উদ্দেশ্য। ইরাক সফর শেষে এ সপ্তাহে ট্রাম্প এবং
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে কুশনারের।
ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে কুশনারের এ ভূমিকা দিন দিন বেড়েই চলেছে
এবং এভাবে শ্বশুরের ওপর তার প্রভাব এখন সরকারের প্রায় প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে
বিস্তৃত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনে কুশনারের এ প্রভাব
নীতিগতভাবে কতটুকু সঠিক, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কেননা সরকারি কাজকর্মের সঙ্গে
সঙ্গে পারিবারিক আবাসন ব্যবসা সামলাচ্ছেন তিনি। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণকালে
রাশিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু
হয়েছে। শিগগিরই তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিনেটের তদন্তকারী দলের
পক্ষ থেকে ডাক পড়তে পারে। হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প প্রশাসনের বহু কর্মকর্তা
বলছেন, প্রভাবের দিক দিয়ে কুশনার বর্তমানে ট্রাম্পের সব মন্ত্রিসভা
উপদেষ্টার ওপরে অবস্থান করছেন। এছাড়া বিদেশি কূটনীতিক, বাণিজ্য কর্মকর্তা,
এমনকি কংগ্রেসের কিছু সদস্যসহ ট্রাম্প প্রশাসনের বাইরের অনেকের কাছে নিজেকে
একজন গুরুত্বপূর্ণ দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একটি সরকার সংস্কার বিল ও
অপরাধী বিচার সংস্কার প্রচেষ্টাও পরিচালনা করছেন তিনি।
কুশনারের এ অবস্থান
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে বেশ বিরক্তির জন্ম
দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা কুশনারের এ
কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কূটনীতিক টিলারসন হতাশা
প্রকাশ করেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। হোয়াইট হাউস প্রেস সচিব শন স্পাইসার
সোমবার বলেন, প্রশাসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কাজকর্ম ব্যবস্থাপনায় পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন কুশনার। তিনি বলেন, এরই মধ্যে বেশ
কিছু সম্পর্ক কুশনার ঠিক করেছেন। মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্ক সেগুলোর অন্যতম। এ
বিষয়ে মেক্সিকোর সঙ্গে কুশনারের আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এর মানে এটা
নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও সহযোগিতা ছাড়াই তিনি এগুলো করছেন।
বরং এর বিপরীতটাই ঘটছে।’ গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানকালে
এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গে
যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন কুশনার। যদিও তার এ ভূমিকা
চলতি সপ্তাহে তদন্তের মুখে পড়েছে। ওই সময় তিনি ওয়াশিংটনে রুশ রাষ্ট্রদূত
সের্গেই কিসলিয়াকসহ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের প্রধান সের্গেই গর্কোভের
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর মধ্য দিয়েও ট্রাম্পের ওপর তার প্রভাবের ব্যাপার
অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
No comments