আগাম বন্যায় তলিয়ে গেলো হাকালুকির বোরো ধান : কৃষকের কান্না
ভারতের
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ভেসে গেছে হাকালুকি হাওরের
কৃষকের স্বপ্ন। ফসল হারিয়ে হাহাকার করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই তাদের সামনে।
ধান কাঁচা থাকায় সেগুলো কাটা যাচ্ছে না ফলে এ বছর ঘরে ফসল উঠবে না। এক
ফসলি বা বোরো ধাননির্ভর এলাকা হওয়ায় সামনের দিনগুলো কী করে কাটাবেন এই ভেবে
কৃষকরা দিশাহারা। এই অসময়ের পানির ঢল থেকে ফসল রক্ষা করা যায়নি তাই জমির
পাশে দাড়িয়ে কৃষকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজার জেলার
কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা অঞ্চল এবং সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা অঞ্চলের ২৫ হাজার হেক্টরে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়।
অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ধানে তেমন রোগ-বালাই দেখা না দেয়ায় ফলনও ভালো হয়।
ধানের শীষ বের হওয়ার পর ৯ দিন থেকে ভারি বর্ষণ ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু
হয়। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে হাওরে বন্যার পানি টুইটুম্বুর। ইতোমধ্যে হাওর
ও হাওর তীরের সবক’টি উপজেলার ৮৫ ভাগ বোরো ধান তলিয়ে গেছে। আর বৃষ্টি না
দিলেও যে হারে হাওরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বোরো ধান কাটার আর কোন
সম্ভাবনা নেই বলে কৃষকরা জানান। সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের ভুকশিমইল
ইউনিয়নের বাদে ভুকশিমইল, জাবদা, শশারকান্দি, ছকাপন, সাদিপুর গ্রাম ঘুরে
দেখা যায়, বিলের তীর ঘেঁষে সামান্য কিছু বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়
রয়েছে। হাওরপারের কৃষক ফরিদ আলী, সুলেমান মিয়া,
আকল মিয়া, হারিছ আলী, ফজলু
মিয়া, রাসেল আহমদ প্রমূখ জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে
আসা বন্যার পানিতে চোখের সামনে তাদের কষ্টের ফসলের হচ্ছে সলিল সমাধি। এবার
বোরো ধান না পেলে হাওর তীরে দূর্ভিক্ষ লাগতে পারে। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ না
থামলে ফসল বাঁচানোর কোন উপায় তারা দেখছেন না। আর মাত্র ১০-১৫ দিনের মধ্যে
ফসল কাটা শুরু হতো। এবার আর কাচি নিয়ে ধান কাটতে হাওরে নামতে হবে না বলে
হতাশা ব্যক্ত করেন তাঁরা। হাওরপারের ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর
রহমান মনির জানান, তার ইউনিয়নের শতভাগ কৃষকের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষকরা হাওরপারে এখন শুধু চোখের পানি ফেলছেন। তিনি কৃষকদেরকে সরকারি
সহযোগিতার অনুরোধ জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জগলুল হায়দার জানান,
ভারী বর্ষণ উজানের ঢলে হাকালুকি হাওরের বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তিনি জানান, কুলাউড়া
উপজেলার ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান এখন পানির নিচে। আরও প্লাবিত হওয়ার আশংকা
রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহজাহান
জানান, হাকালুকি হাওরে যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে আর বৃষ্টিপাত না হলেও
বোরো ধান রক্ষা করা কষ্টকর হবে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে রোদের দেখা মিললে কৃষকরা
কিছুটা হলেও ধান তুলতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে অধিকাংশ
ধান কাচা থাকার ফলে নষ্ট হয়ে যাবে।
No comments