পাবনায় তিন মিনিটের ঝড়ে গৃহহীন ৪৫০ পরিবার
পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় গত সোমবার ৩ মিনিটের ঝড়ে ৪৫০ পরিবার গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঝড়ে টিনের চাল উড়ে বেঁধে আছে গাছের ডালে। আসবাব, জামাকাপড়, চাল, ডাল সবই মিশে গেছে মাটিতে। গাছপালা উপড়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া ঝড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাটসহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। এরপর আকস্মিকভাবে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুতের সংযোগ। কান্নার রোল পড়ে গ্রামজুড়ে। টিনে কেটে ও গাছের নিচে চাপা পড়ে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কিছু বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, গাছপালা ও ফসলের মাঠ। গাছ পড়ে পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়কে প্রায় ২ ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে সুজানগর ও বেড়া উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে গাছপালা অপসারণসহ আহত লোকজনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ঝড়ে গৃহহীন হয়ে মানবতের জীবন যাপন করছে গ্রামগুলোর দুই শতাধিক পরিবার। খবর পেয়ে পাবনা-২ আসনের সাংসদ খন্দকার আজিজুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাকসুদা বেগম, সুজানগর উপজেলার চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত হোসেন, পৌর মেয়র আবদুল ওহাবসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, তখনও লন্ডভন্ড পড়ে আছে ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন গোছানোর চেষ্টা করছেন সেসব। চোখে-মুখে সবার আতঙ্কের ছাপ। এ সময় চরগোবিন্দপুর গ্রামের মর্জিনা খাতুন (৬০) বলেন, ‘এত বছরের জীবনে এমন ঝড় দেখিনি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব শেষ।’
ইউএনও সাখাওয়াত বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল, নগদ ২ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ নগদ অর্থ ও শাড়িকাপড় দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ সাঁথিয়ার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সোমবার বিকেল ছয়টার দিকে প্রচণ্ড ঝড় বইতে শুরু করে উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের মিয়াপুর, রসুলপুর, ধাতালপুর, হাসানপুর ও পাইকপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে। এ ঝড়ের সময়সীমা ছিল মাত্র দুই মিনিট। এতেই পাঁচটি গ্রামের আড়াই শতাধিক পরিবারের ছয় শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় উপড়ে পড়ে গ্রামগুলোর অসংখ্য গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। আহত হয় অন্তত ২৫ জন। ঝড়ে ওই পরিবারগুলো গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। গতকাল গ্রামগুলো ঘুরে বিধ্বস্ত পরিবেশের মধ্যে অনেককেই ঝড়ে উড়ে যাওয়া ঘরের চালের টিন, বেড়া প্রভৃতি খুঁজতে দেখা যায়। এ সময় জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্তও তাঁদের কোনো খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে বিকেল থেকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়। তবে ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে মিয়াপুর, রসুলপুর ও ধাতালপুর গ্রামে। ওই গ্রাম তিনটির অনেক বাসিন্দা ঝড়ে উড়ে যাওয়া ঘরের চালের টিনও খুঁজে পাননি। গাছ উপড়ে পড়ায় গ্রামগুলোর রাস্তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। ধাতালপুর গ্রামের বাহাতুন্নেছা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মাত্তর দুই মিনিটের তাণ্ডবে আমরা পথের ফকির হয়া গেলাম।’ মিয়াপুর গ্রামের তহুরা খাতুন বলেন, ‘আমার চারটি ঘর আর ঘরের জিনিসপত্র পুরোপুরোরি শ্যাষ। উঠানে খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত কাটাচ্ছি।’ গতকাল অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাকসুদা বেগম সিদ্দিকা, ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ক্ষেতুপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মনসুর আলম ও গৌরীগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ২৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, ১ হাজার করে টাকা ও ২টি করে কম্বল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
No comments