দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন
খুলনায় শিশু রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলায় দুই আসামি ওমর শরীফ ও তাঁর সহযোগী মিন্টুর মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, এই অর্থ রাকিবের পরিবারকে দিতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে দুই আসামিকে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার আসামিদের দণ্ড সংশোধন করে এ রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যাননি, বরং শিশুটিকে (রাকিব) বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া আসামিরা অতীতে কোনো ফৌজদারি অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন রেকর্ডও পাওয়া যায়নি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাঁদের সাজা মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন হওয়া সমীচীন। এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) খারিজ করে দণ্ড সংশোধন করে রায় দেন আদালত। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দুই আসামি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচিত এই মামলার পেপারবুক তৈরি করা হয়। বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার ১৪ মাসের মাথায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর গত ১০ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়ে ২৯ মার্চ শেষ হয়। রায়ে আদালত বলেন, অপরাধ জগতে ১০০ বছরে এ ধরনের (মলদ্বারে কম্প্রেসার মেশিনের মাধ্যমে বাতাস ঢোকানো) ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যে এসেছে, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরাও দ্বিধায় ছিলেন কীভাবে চিকিৎসাসেবা দেবেন। এ ধরনের ঘটনা বিরল।
আসামিপক্ষ দাবি করেছে, তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যে এসেছে, শরীফ রাকিবকে রক্ত দিয়েছে, মিন্টু ওষুধ আনতে গেছে। ঘটনাস্থলে শিশুটি মারা যায়নি, ঘটনার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পর ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যায়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম। আসামি শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী ও মিন্টুর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এস এম আবদুল মুবিন। রায় শুনে হতাশ রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন। রায়ের পর আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দুই আসামির সর্বোচ্চ দণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে। কপি পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবে। মিন্টুর আইনজীবী বলেন, মিন্টুর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বিকেলে খুলনার টুটপাড়ায় শরীফ মোটরস নামের মোটরসাইকেলের গ্যারেজে মলদ্বারে কম্প্রেসার মেশিনের মাধ্যমে বাতাস ঢুকিয়ে ওই গ্যারেজে একসময় কাজ করা রাকিবকে হত্যা করা হয়। রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম এ ঘটনায় শরীফ মোটরসের মালিক শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই বছরের ৮ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন খুলনার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক। বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার নথিপত্র ওই বছরের ১০ নভেম্বর হাইকোর্টে আসে।
রায় শুনে রাকিবের পরিবারে কান্না
খুলনা অফিস জানায়, হাইকোর্টের রায় শুনে রাকিবের মা লাকি বেগম কখনো নির্বাক হয়ে পড়ছিলেন, কখনো মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কখনো করছিলেন আহাজারি। কাঁদছিলেন রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম ও বোন রিমি আক্তারও। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। দুপুরে খুলনা নগরের টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডে রাকিবদের ছোট্ট ভাড়া বাসায় গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুরুল আলম বলেন, ‘নিম্ন আদালতে ফাঁসির রায়ের পর সবাই খুশি হয়েছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, রায় বহাল রাখা গেল না।’ রায়ে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। এখনো আশা ছাড়িনি।’ পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নুরুল আলম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ শতক খাসজমি পেয়েছি। ইচ্ছা ছিল হাইকোর্টের রায়ের পর মেয়েটাকে নিয়ে ওই জায়গায় একটা ঘর বানিয়ে থাকতে পারব। কিন্তু দুই দিন পর তো ওরা বের হয়ে আসবে। আমাদের জীবনের গ্যারান্টি দেবে কে?’ রাকিবের ছোট বোন রিমি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমার ভাইকে যারা মারেছে (মেরেছে), ফাঁসির বদলে তাগো (তাদের) সাজা কমিছে। এডা ভীষণ কষ্টের।’ রাকিব হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব।’ টুটপাড়ার বাসিন্দা মো. গোলাপ হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা হতাশ হয়েছি।’
রায় শুনে রাকিবের পরিবারে কান্না
খুলনা অফিস জানায়, হাইকোর্টের রায় শুনে রাকিবের মা লাকি বেগম কখনো নির্বাক হয়ে পড়ছিলেন, কখনো মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কখনো করছিলেন আহাজারি। কাঁদছিলেন রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম ও বোন রিমি আক্তারও। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। দুপুরে খুলনা নগরের টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডে রাকিবদের ছোট্ট ভাড়া বাসায় গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুরুল আলম বলেন, ‘নিম্ন আদালতে ফাঁসির রায়ের পর সবাই খুশি হয়েছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, রায় বহাল রাখা গেল না।’ রায়ে অসন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। এখনো আশা ছাড়িনি।’ পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নুরুল আলম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ শতক খাসজমি পেয়েছি। ইচ্ছা ছিল হাইকোর্টের রায়ের পর মেয়েটাকে নিয়ে ওই জায়গায় একটা ঘর বানিয়ে থাকতে পারব। কিন্তু দুই দিন পর তো ওরা বের হয়ে আসবে। আমাদের জীবনের গ্যারান্টি দেবে কে?’ রাকিবের ছোট বোন রিমি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমার ভাইকে যারা মারেছে (মেরেছে), ফাঁসির বদলে তাগো (তাদের) সাজা কমিছে। এডা ভীষণ কষ্টের।’ রাকিব হত্যা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব।’ টুটপাড়ার বাসিন্দা মো. গোলাপ হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা হতাশ হয়েছি।’
No comments