বাংলাদেশের স্পর্শকাতরতা ভারতকে বুঝতে হবে
প্রথম আলো : ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের দরকার কী?
ফারুক সোবহান : আমাদের জানা প্রয়োজন এই সমঝোতার ধরনটা কী। আমরা জানি, কতিপয় সামরিক সহযোগিতা ইতিমধ্যেই বিদ্যমান। তাতে যৌথ মহড়া, উচ্চপর্যায়ের সফর এবং পরস্পরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ রয়েছে। ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ভারত আমাদের ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে বলে আমরা বুঝতে পারছি। তাই চলমান সহযোগিতাকে সন্নিবেশিত করে কোনো চুক্তি করা হলে আমি তাতে ক্ষতির কারণ দেখি না। আমার মনে হয়, একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, তবে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না।
প্রথম আলো : ভারত এটাই কি প্রথম বাংলাদেশকে এ ধরনের চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে?
ফারুক সোবহান : আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুদেশের নিরাপত্তা-সহযোগিতা শক্তিশালী করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ভারতের দিক থেকে একটি মত রয়েছে যে, আমরা যদি পরস্পরের নিরাপত্তা
বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে সেটা সামরিক সহযোগিতায় বিস্তৃত হতে পারে না কেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে একে একটি বাধ্যবাধকতামুক্ত সমঝোতা স্মারক বা এর চেয়েও বড় কিছুতে পরিণত করার প্রয়োজন আছে কি না। ভারত এটা মনে করে থাকতে পারে যে, বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে একই ধরনের বিষয় ভারত পারবে না কেন।
প্রথম আলো : চীন থেকে দুটি সাবমেরিন ক্রয় এবং তার পরপরই ভারতীয় তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের সফরের প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। এখন কি চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি জটিলতা সৃষ্টি করেছে?
ফারুক সোবহান : আমরা জানি, একটি পর্যায়ে ভারত ও চীনের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে; কিন্তু অন্য পর্যায়ে একধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো, আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগের জায়গা থেকে একটি ত্রিদেশীয় সহযোগিতাকে আরও বিস্তৃত করতে পারি কি না। কানেকটিভিটিকে সার্থক করতে চাইলে আমাদের শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের দরকার পড়বে, আর তা এ রকম একটি ত্রিদেশীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের কূটনীতিকে এতটা পর্যাপ্ত কার্যকর করতে হবে যে, চীন ও ভারত উভয়ের সঙ্গে গঠনমূলক রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত করতে হবে, অন্য কোনো দেশের স্বার্থ নয়। শুধুই বাংলাদেশের স্বার্থ।
প্রথম আলো : ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত সামরিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়—এই মতের ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী?
ফারুক সোবহান : অবশ্যই অনেকে যুক্তি দিতে পারেন যে এর কোনো প্রয়োজন নেই। দুদেশের মধ্যে যেহেতু প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা রয়েছে, তাই কেউ প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। অনেকের প্রশ্ন, এ ধরনের চুক্তি দিয়ে কী উদ্দেশ্য পূরণ হবে? দেশের মানুষের মধ্যে কি এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না? বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি যখন আটকে রয়েছে। কিন্তু সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির যে ব্যাখ্যা অন্যদের কাছ থেকে পাচ্ছি, সে অনুয়ায়ী এটা যদি ভালো সমঝোতার পথ প্রশস্ত করে এবং ভারতের কোনো উদ্বেগ থেকে থাকলে এই চুক্তি যদি তা দূর করে এবং যদি ভারতের কাছ থেকে একটা আনুপাতিক সাড়া মেলে, তাহলে আমি বলব, এ নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। বরং একে সম্পর্কের আরেক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে দেখা চলে।
প্রথম আলো : আপনি গত মাসে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন বিজেপির থিংকট্যাংক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন সফর করেছেন। আপনি কি মনে করেন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা একমত যে এই ব্যবস্থায় সব থেকে ভালোভাবে ভারতের স্বার্থরক্ষা ঘটবে?
ফারুক সোবহান : আমি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, এর মধ্যে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ভিজ, যিনি বিবেকানন্দের প্রধান নির্বাহী এবং ভারতের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ড. অরবিন্দ গুপ্ত রয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, আমাদের দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী হওয়া দরকার। তাঁরা বিদ্যমান সহযোগিতার মধ্যে কিছু দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি বা উন্নতি আশা করেন, যেমনটা তাঁরা চীন-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে লক্ষ করেন।
প্রথম আলো : সাবমেরিন বিষয়ে তাঁদের কী অভিমত?
ফারুক সোবহান : সাবমেরিনের কথা তাঁরা তুলেছিলেন এবং আমরা ব্যাখ্যা করেছি যে বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে আগ্রহী। তিন দশক ধরে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে শান্তিরক্ষায় অবদান রেখেছে, সুনাম অর্জন করেছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশ হিসেবে আমরা একটি আধুনিক সেনাবাহিনী চাই। বাংলাদেশ বন্ধু প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের নিরাপত্তার প্রতি কোনো হুমকি হতে চায় না। যখন আমাদের নিরাপত্তাগত সম্পর্ক চমৎকার, তখন আমাদের সহযোগিতার সব ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও আস্থা নির্মাণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে ভারতীয়দের অনুভব হচ্ছে, সামরিক খাতেও আমাদের সম্পর্ক উন্নত হওয়া প্রয়োজন। তবে একই সঙ্গে আমি মনে করি, ভারতকে বাংলাদেশের জনমতের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার দরকার রয়েছে। এটা ভারতকে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশের নিজেরও কিছু ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রয়েছে। আমরা এখনো তিস্তা পানি চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় আছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আমি তাই সর্বাগ্রে বলব, আসুন, যেসব এলাকায় অমিল রয়েছে, তা বাদ দিয়ে যেসব এলাকায় মিল রয়েছে, সেদিকে গুরুত্বারোপ করি।
প্রথম আলো : এই যুক্তি কি দেওয়া যায় যে ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে গিয়ে সাবমেরিন কেনার বিষয়টিকে বাংলাদেশের ওপর চাপ দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবে নিয়েছে?
ফারুক সোবহান : আমি এ প্রসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক তথ্য স্মরণ করতে পারি। ১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির মেয়াদ ১৯৯৭ সালের মার্চে শেষ হয়েছিল। শেখ হাসিনা তখন প্রধানমন্ত্রী এবং আমি পররাষ্ট্রসচিব। উভয় দেশই একমত হয়েছিল যে মৈত্রী চুক্তি কোনো সুফল দেয়নি। আমরা বন্ধুপ্রতিম দেশ। সুতরাং বন্ধুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করতে চুক্তির প্রয়োজন নেই। সুতরাং ভারত বা বাংলাদেশের কোনো সরকারই ওই চুক্তি নবায়নে উদ্যোগী হয়নি। আমি মনে করি, সেটা ছিল অত্যন্ত রাষ্ট্রনায়কোচিত একটি দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, সেখানে জনমত এবং জনভাবাবেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান উপলক্ষটিও জনমতের জন্য স্পর্শকাতর হতে পারে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের জনগণ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে কী চোখে
দেখে। এই সম্পর্ককে কি সম-অংশীদারত্বমূলক হিসেবে ভাবা হয়? আমি মনে করি, যে দেশটি তার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, সেখানে তার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রবল দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ বিদ্যমান রয়েছে।
প্রথম আলো : আমরা জানি যে চীনের গণমাধ্যমে তাদের সরকারের বক্তব্য প্রতিফলিত হয়। তাদের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে ভারতকে সতর্ক করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
ফারুক সোবহান : চীন ও ভারতের মধ্যে কিছু বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। তাদের মধ্যে স্বার্থগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। ভারত মহাসাগরে তাদের দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা প্রভাব নিয়ে ভারতের স্পর্শকাতরতা রয়েছে। বিশেষ করে নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বিশেষ স্পর্শকাতরতা আছে। কারণ, এই দুটি দেশের ওপর ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমি মনে করি না যে বাংলাদেশকে ওই একই শ্রেণিতে ফেলা যায়। কোনো দিকে না ঝুঁকে উভয় দেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক রাখার সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। কোনো দেশকেই এই অনুভূতি দেওয়া ঠিক হবে না যে আমরা একদিকে যথেষ্ট বেশি ঝুঁকে পড়েছি এবং সে কারণে অন্যটির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়েছি। এটা আমাদের কূটনীতি দিয়েই বুঝিয়ে দিতে হবে।
প্রথম আলো : প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তার সপক্ষে যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে তা জরুরি ভিত্তিতেই সারতে হবে? আগামী সপ্তাহেই এটা সই করা কি সুবিবেচনাপ্রসূত, নাকি অন্যান্য অগ্রাধিকারের সঙ্গে একে যুক্ত করা সমীচীন?
ফারুক সোবহান : আমার এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। দরকারি সব ধরনের তথ্য যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে, তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরই বিশেষ সুবিধা রয়েছে। সুতরাং কখন উপযুক্ত সময় কিংবা এটা কতটা জরুরি ভিত্তিতে করা, এ বিষয়ে কী চাপ এবং পাল্টা চাপ রয়েছে এবং সর্বোপরি কী উপায়ে তিনি ভারত ও চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন, সেটা তিনিই নির্ধারণ করবেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী চীন ও ভারতের সঙ্গে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ব্যাপক বিস্তৃত সম্পর্ক রাখতে চান। সুতরাং দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে কানেকটিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব বিষয়ের সুফল যাতে বাংলাদেশের অনুকূলে সর্বোত্তমভাবে সুরক্ষা পায়, সেই উপায়ে তিনি অগ্রসর হবেন।
প্রথম আলো : শেখ হাসিনার সম্মানে ভারতের রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণের বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ফারুক সোবহান : আমরা জানি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। যদি তিনি দিল্লিতে হাজির হন, তাহলে ভারতের রাষ্ট্রপতি কিংবা মি. মোদি তিস্তা চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারাজের বিষয়ে তাঁকে নমনীয় করতে কতটা সক্ষম হন, সেটা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ভারতের এটা স্পষ্টভাবে বোঝা প্রয়োজন যে শুধু তিস্তাই নয়; অভিন্ন সব নদীর পানির হিস্যার বিষয়ে স্পর্শকাতরতা এবং গভীর ভাবাবেগ রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে ভারত এই আবেগ এবং বাংলাদেশের জনমতের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কেও সচেতন।
প্রথম আলো : অনেকে বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে দিল্লি। আপনি এর সঙ্গে একমত?
ফারুক সোবহান : আমি বিশ্বাস করি, ভারত কূটনীতিতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং তারা বাংলাদেশের মতো একটি দেশের ওপর প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে চাপ দিলে তার উল্টো ফল হতে পারে। এটা আমাদের কূটনীতির অংশ হওয়া উচিত। ভারতকে এটা বোঝাতে হবে যে যদি তারা সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং সামনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে সরকারের ভেতরে ও বাইরে বাংলাদেশি জনগণ কী অনুভব করছে, তা বুঝতে এবং আমাদের স্পর্শকাতরতার বিষয়ে তাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। আমি মনে করি, এটা উভয় পক্ষের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে গেছে এবং আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তা অত্যন্ত জটিল। আমার মতে, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের প্রতি তিন মাস অন্তর বৈঠকে বসা উচিত। দুই প্রধানমন্ত্রীর উচিত দুই দেশের সম্পর্ক পর্যবেক্ষণের বিষয়টিকে সরাসরি ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসেবে গ্রহণ করা।
প্রথম আলো : প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক কি চীনকে হতাশ করতে পারে?
ফারুক সোবহান : আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। কারণ, এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। চীনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বুঝেছি যে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে তাদের অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং পরিপক্ব বোঝাপড়া রয়েছে। আমার অনুভব হলো, বাংলাদেশ ও ভারতের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে চীন স্বাগত জানায়। চীন বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী হলে তার পক্ষে ভারত ও চীনকে কাছাকাছি আনা বা ত্রিদেশীয় সহযোগিতার ভিত্তি জোরালো করতে তার নেওয়া যেকোনো উদ্যোগের প্রতি ভারতের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রথম আলো : ধন্যবাদ।
ফারুক সোবহান : ধন্যবাদ।
ফারুক সোবহান : আমাদের জানা প্রয়োজন এই সমঝোতার ধরনটা কী। আমরা জানি, কতিপয় সামরিক সহযোগিতা ইতিমধ্যেই বিদ্যমান। তাতে যৌথ মহড়া, উচ্চপর্যায়ের সফর এবং পরস্পরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ রয়েছে। ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য ভারত আমাদের ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে বলে আমরা বুঝতে পারছি। তাই চলমান সহযোগিতাকে সন্নিবেশিত করে কোনো চুক্তি করা হলে আমি তাতে ক্ষতির কারণ দেখি না। আমার মনে হয়, একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, তবে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না।
প্রথম আলো : ভারত এটাই কি প্রথম বাংলাদেশকে এ ধরনের চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে?
ফারুক সোবহান : আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুদেশের নিরাপত্তা-সহযোগিতা শক্তিশালী করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ভারতের দিক থেকে একটি মত রয়েছে যে, আমরা যদি পরস্পরের নিরাপত্তা
বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে সেটা সামরিক সহযোগিতায় বিস্তৃত হতে পারে না কেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে একে একটি বাধ্যবাধকতামুক্ত সমঝোতা স্মারক বা এর চেয়েও বড় কিছুতে পরিণত করার প্রয়োজন আছে কি না। ভারত এটা মনে করে থাকতে পারে যে, বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে একই ধরনের বিষয় ভারত পারবে না কেন।
প্রথম আলো : চীন থেকে দুটি সাবমেরিন ক্রয় এবং তার পরপরই ভারতীয় তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের সফরের প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতিরক্ষা চুক্তির আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। এখন কি চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি জটিলতা সৃষ্টি করেছে?
ফারুক সোবহান : আমরা জানি, একটি পর্যায়ে ভারত ও চীনের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে; কিন্তু অন্য পর্যায়ে একধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো, আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগের জায়গা থেকে একটি ত্রিদেশীয় সহযোগিতাকে আরও বিস্তৃত করতে পারি কি না। কানেকটিভিটিকে সার্থক করতে চাইলে আমাদের শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের দরকার পড়বে, আর তা এ রকম একটি ত্রিদেশীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের কূটনীতিকে এতটা পর্যাপ্ত কার্যকর করতে হবে যে, চীন ও ভারত উভয়ের সঙ্গে গঠনমূলক রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত করতে হবে, অন্য কোনো দেশের স্বার্থ নয়। শুধুই বাংলাদেশের স্বার্থ।
প্রথম আলো : ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত সামরিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়—এই মতের ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী?
ফারুক সোবহান : অবশ্যই অনেকে যুক্তি দিতে পারেন যে এর কোনো প্রয়োজন নেই। দুদেশের মধ্যে যেহেতু প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা রয়েছে, তাই কেউ প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। অনেকের প্রশ্ন, এ ধরনের চুক্তি দিয়ে কী উদ্দেশ্য পূরণ হবে? দেশের মানুষের মধ্যে কি এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না? বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি যখন আটকে রয়েছে। কিন্তু সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির যে ব্যাখ্যা অন্যদের কাছ থেকে পাচ্ছি, সে অনুয়ায়ী এটা যদি ভালো সমঝোতার পথ প্রশস্ত করে এবং ভারতের কোনো উদ্বেগ থেকে থাকলে এই চুক্তি যদি তা দূর করে এবং যদি ভারতের কাছ থেকে একটা আনুপাতিক সাড়া মেলে, তাহলে আমি বলব, এ নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। বরং একে সম্পর্কের আরেক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে দেখা চলে।
প্রথম আলো : আপনি গত মাসে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন বিজেপির থিংকট্যাংক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন সফর করেছেন। আপনি কি মনে করেন ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা একমত যে এই ব্যবস্থায় সব থেকে ভালোভাবে ভারতের স্বার্থরক্ষা ঘটবে?
ফারুক সোবহান : আমি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, এর মধ্যে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ভিজ, যিনি বিবেকানন্দের প্রধান নির্বাহী এবং ভারতের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ড. অরবিন্দ গুপ্ত রয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, আমাদের দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা-সহযোগিতা সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী হওয়া দরকার। তাঁরা বিদ্যমান সহযোগিতার মধ্যে কিছু দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি বা উন্নতি আশা করেন, যেমনটা তাঁরা চীন-বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে লক্ষ করেন।
প্রথম আলো : সাবমেরিন বিষয়ে তাঁদের কী অভিমত?
ফারুক সোবহান : সাবমেরিনের কথা তাঁরা তুলেছিলেন এবং আমরা ব্যাখ্যা করেছি যে বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে আগ্রহী। তিন দশক ধরে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে শান্তিরক্ষায় অবদান রেখেছে, সুনাম অর্জন করেছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশ হিসেবে আমরা একটি আধুনিক সেনাবাহিনী চাই। বাংলাদেশ বন্ধু প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের নিরাপত্তার প্রতি কোনো হুমকি হতে চায় না। যখন আমাদের নিরাপত্তাগত সম্পর্ক চমৎকার, তখন আমাদের সহযোগিতার সব ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও আস্থা নির্মাণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে ভারতীয়দের অনুভব হচ্ছে, সামরিক খাতেও আমাদের সম্পর্ক উন্নত হওয়া প্রয়োজন। তবে একই সঙ্গে আমি মনে করি, ভারতকে বাংলাদেশের জনমতের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার দরকার রয়েছে। এটা ভারতকে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশের নিজেরও কিছু ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রয়েছে। আমরা এখনো তিস্তা পানি চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় আছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আমি তাই সর্বাগ্রে বলব, আসুন, যেসব এলাকায় অমিল রয়েছে, তা বাদ দিয়ে যেসব এলাকায় মিল রয়েছে, সেদিকে গুরুত্বারোপ করি।
প্রথম আলো : এই যুক্তি কি দেওয়া যায় যে ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে গিয়ে সাবমেরিন কেনার বিষয়টিকে বাংলাদেশের ওপর চাপ দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবে নিয়েছে?
ফারুক সোবহান : আমি এ প্রসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক তথ্য স্মরণ করতে পারি। ১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির মেয়াদ ১৯৯৭ সালের মার্চে শেষ হয়েছিল। শেখ হাসিনা তখন প্রধানমন্ত্রী এবং আমি পররাষ্ট্রসচিব। উভয় দেশই একমত হয়েছিল যে মৈত্রী চুক্তি কোনো সুফল দেয়নি। আমরা বন্ধুপ্রতিম দেশ। সুতরাং বন্ধুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করতে চুক্তির প্রয়োজন নেই। সুতরাং ভারত বা বাংলাদেশের কোনো সরকারই ওই চুক্তি নবায়নে উদ্যোগী হয়নি। আমি মনে করি, সেটা ছিল অত্যন্ত রাষ্ট্রনায়কোচিত একটি দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, সেখানে জনমত এবং জনভাবাবেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান উপলক্ষটিও জনমতের জন্য স্পর্শকাতর হতে পারে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের জনগণ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে কী চোখে
দেখে। এই সম্পর্ককে কি সম-অংশীদারত্বমূলক হিসেবে ভাবা হয়? আমি মনে করি, যে দেশটি তার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, সেখানে তার সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রবল দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ বিদ্যমান রয়েছে।
প্রথম আলো : আমরা জানি যে চীনের গণমাধ্যমে তাদের সরকারের বক্তব্য প্রতিফলিত হয়। তাদের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে ভারতকে সতর্ক করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
ফারুক সোবহান : চীন ও ভারতের মধ্যে কিছু বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। তাদের মধ্যে স্বার্থগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। ভারত মহাসাগরে তাদের দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা প্রভাব নিয়ে ভারতের স্পর্শকাতরতা রয়েছে। বিশেষ করে নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বিশেষ স্পর্শকাতরতা আছে। কারণ, এই দুটি দেশের ওপর ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমি মনে করি না যে বাংলাদেশকে ওই একই শ্রেণিতে ফেলা যায়। কোনো দিকে না ঝুঁকে উভয় দেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক রাখার সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। কোনো দেশকেই এই অনুভূতি দেওয়া ঠিক হবে না যে আমরা একদিকে যথেষ্ট বেশি ঝুঁকে পড়েছি এবং সে কারণে অন্যটির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়েছি। এটা আমাদের কূটনীতি দিয়েই বুঝিয়ে দিতে হবে।
প্রথম আলো : প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তার সপক্ষে যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে তা জরুরি ভিত্তিতেই সারতে হবে? আগামী সপ্তাহেই এটা সই করা কি সুবিবেচনাপ্রসূত, নাকি অন্যান্য অগ্রাধিকারের সঙ্গে একে যুক্ত করা সমীচীন?
ফারুক সোবহান : আমার এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। দরকারি সব ধরনের তথ্য যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে, তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরই বিশেষ সুবিধা রয়েছে। সুতরাং কখন উপযুক্ত সময় কিংবা এটা কতটা জরুরি ভিত্তিতে করা, এ বিষয়ে কী চাপ এবং পাল্টা চাপ রয়েছে এবং সর্বোপরি কী উপায়ে তিনি ভারত ও চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন, সেটা তিনিই নির্ধারণ করবেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী চীন ও ভারতের সঙ্গে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ব্যাপক বিস্তৃত সম্পর্ক রাখতে চান। সুতরাং দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে কানেকটিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব বিষয়ের সুফল যাতে বাংলাদেশের অনুকূলে সর্বোত্তমভাবে সুরক্ষা পায়, সেই উপায়ে তিনি অগ্রসর হবেন।
প্রথম আলো : শেখ হাসিনার সম্মানে ভারতের রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণের বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ফারুক সোবহান : আমরা জানি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে। যদি তিনি দিল্লিতে হাজির হন, তাহলে ভারতের রাষ্ট্রপতি কিংবা মি. মোদি তিস্তা চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারাজের বিষয়ে তাঁকে নমনীয় করতে কতটা সক্ষম হন, সেটা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ভারতের এটা স্পষ্টভাবে বোঝা প্রয়োজন যে শুধু তিস্তাই নয়; অভিন্ন সব নদীর পানির হিস্যার বিষয়ে স্পর্শকাতরতা এবং গভীর ভাবাবেগ রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে ভারত এই আবেগ এবং বাংলাদেশের জনমতের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কেও সচেতন।
প্রথম আলো : অনেকে বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে দিল্লি। আপনি এর সঙ্গে একমত?
ফারুক সোবহান : আমি বিশ্বাস করি, ভারত কূটনীতিতে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং তারা বাংলাদেশের মতো একটি দেশের ওপর প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে চাপ দিলে তার উল্টো ফল হতে পারে। এটা আমাদের কূটনীতির অংশ হওয়া উচিত। ভারতকে এটা বোঝাতে হবে যে যদি তারা সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং সামনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে সরকারের ভেতরে ও বাইরে বাংলাদেশি জনগণ কী অনুভব করছে, তা বুঝতে এবং আমাদের স্পর্শকাতরতার বিষয়ে তাদের অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। আমি মনে করি, এটা উভয় পক্ষের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে গেছে এবং আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে তা অত্যন্ত জটিল। আমার মতে, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের প্রতি তিন মাস অন্তর বৈঠকে বসা উচিত। দুই প্রধানমন্ত্রীর উচিত দুই দেশের সম্পর্ক পর্যবেক্ষণের বিষয়টিকে সরাসরি ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসেবে গ্রহণ করা।
প্রথম আলো : প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক কি চীনকে হতাশ করতে পারে?
ফারুক সোবহান : আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। কারণ, এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হচ্ছে কি না, তা আমি জানি না। চীনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বুঝেছি যে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে তাদের অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং পরিপক্ব বোঝাপড়া রয়েছে। আমার অনুভব হলো, বাংলাদেশ ও ভারতের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে চীন স্বাগত জানায়। চীন বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী হলে তার পক্ষে ভারত ও চীনকে কাছাকাছি আনা বা ত্রিদেশীয় সহযোগিতার ভিত্তি জোরালো করতে তার নেওয়া যেকোনো উদ্যোগের প্রতি ভারতের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব দেখানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রথম আলো : ধন্যবাদ।
ফারুক সোবহান : ধন্যবাদ।
No comments