আরও ৫ জনপ্রতিনিধি সাময়িক বরখাস্ত
দুই সিটি করপোরেশন এবং এক পৌরসভার মেয়রকে বরখাস্তের দুই দিনের মাথায় আরও পাঁচ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সবার বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ, তাঁরা কোনো না কোনো মামলার আসামি এবং তাঁদের মামলাগুলোর অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে। তবে রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গতকাল মঙ্গলবার স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এর আগে সোমবার হাইকোর্ট রুল দেওয়ার পাশাপাশি সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন। গতকাল যাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাঁরা হলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জার্জিস হোসেন,
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং ফরিদপুরের সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এ ঘটনাকে অসহিষ্ণু রাজনৈতিক চর্চার স্থূল বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যদিও বিষয়টাকে একটা আইনি খোলসের মধ্যে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে মূলত একটা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, তা সবাই বুঝতে পারছে। এসব সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণ বা সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য সঠিক নয়। ফুলবাড়ীর মেয়র তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির নেতা মুরতুজা সরকার ফুলবাড়ী রক্ষা আন্দোলন এবং তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির একজন নেতা। অন্যরা বিএনপি বা জামায়াত-সমর্থিত হিসেবে নির্বাচিত। তবে ওয়াহিদুজ্জামান ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বিভিন্ন মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফুলবাড়ীর পৌর মেয়রকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। চিঠিতে বলা হয়, ফুলবাড়ী থানায় এশিয়া এনার্জির মামলায় মুরতুজাকে অভিযুক্ত করায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। একই আদেশে প্যানেল মেয়র মামুনুর রশীদকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মুরতুজা সরকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বরখাস্ত আদেশের চিঠি পাইনি। তবে লোকমুখে শুনেছি।
আমি কোনো দল করি না। ফুলবাড়ী রক্ষা আন্দোলনে জনগণের পাশে থাকায় পৌর এলাকার ভোটাররা আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছিল। এশিয়া এনার্জির মামলায় আমি জামিনে আছি। এরপরও কী কারণে আমাকে বরখাস্ত করা হলো, আমি বুঝতে পারছি না।’ ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর এশিয়া এনার্জির প্রধান গেরি এন লাই ফুলবাড়ী এসে বৈঠক করার সময় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি উত্তোলনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও করেন। এ সময় অফিসের বাইরে থাকা কয়েকটি আসবাব ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান মুরতুজা সরকারসহ তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির ১০ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে মামলাটি ফুলবাড়ী থানার উপপরিদর্শক শাহ আলম সরদার তদন্ত করে এজাহারভুক্ত ১০ জনসহ আরও ৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর দিনাজপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত মুরতুজাকে জামিন দেন। চেয়ারম্যান বিএনপি, ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জার্জিস হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে হরতাল-অবরোধ চলাকালে পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দীন। আমিরুল ইসলাম মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জার্জিস হোসেন উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি। দ্বিতীয় দফায় বরখাস্ত জসিম সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের কারণ হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নাশকতার অভিযোগে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানায় এক ডজনের বেশি মামলার কয়েকটিতে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জসিম উদ্দিনকে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারিও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মোহাম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরীকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আ.লীগে যোগ দেন ওয়াহিদুজ্জামান সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামানকে একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৮ সালের ২১ মার্চ করা একটি হত্যা মামলায় আমি আসামি। ২০০৯ সালে আদালত আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করলেও ২০১১ সালের ইউপি ও ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি মামলার যাবতীয় কাগজপত্র নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হই। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে আমার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার তথ্য সঠিক নয়। মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেব।’ হত্যা মামলা দায়েরের সময় ওয়াহিদুজ্জামান ভাওয়াল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে বিএনপির মনোনয়নে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে ২০১৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
No comments