মারা যাওয়ার তিন দিন পরও চিকিৎসা

রাজধানীর নাখালপাড়ার হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ফল প্রত্যাশী উম্মে আফসানা আইভি। ১৮ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পান। চিকিৎসার জন্য রাজধানীর মহাখালীর মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়। টানা ১৫ দিন চিকিৎসার পরও কোনো উন্নতি না হওয়ায় আইভির পরিবার তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে চায়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ছাড়তে নারাজ। একপর্যায়ে প্রশাসনিকভাবে কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলে তারা জানায়, রোগী মারা গেছে। স্বজনদের অভিযোগ, আইসিইউতে রেখে বেঁচে আছে দাবি করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মৃত্যুর তিন দিন পার হয়ে গেলেও তারা বিষয়টি গোপন রাখে। আইভীর মা মোসাম্মৎ হাসি বেগম বলেন, আমার মেয়ে তিন দিন ধরে নড়াচড়া করে না। আমি গিয়ে ধরলেই দেখি হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করলেই বলে, এসি আর ফ্যান চলায় শরীর ঠাণ্ডা। সোমবার সকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়ার কথা। কিন্তু সেখানকার ডাক্তার এসে বলে গেছেন, এ রোগী তিন দিন আগেই মারা গেছে। রোগীর স্বজনরা জানান, আইভির উন্নত চিকিৎসার জন্য বোর্ড মিটিংয়ের নামে সম্প্রতি ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। চার ডাক্তার বোর্ড মিটিং করেছেন। মেয়ে কেমন আছে জানতে চাইলেই বলেছেন, অবস্থা ভালো। সুস্থ হয়ে উঠবে। পাঁচ মিনিট আগে রিপোর্ট দিয়েছে ভালো। যখনই স্থানান্তরের কথা বলা হয়, তখনই তারা বলেছে মারা গেছে। নাখালপাড়ার হোসেন আলী স্কুল সূত্রে জানা গেছে, আইভির চিকিৎসার্থে স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাধ্যমতো সাহায্য করেছে।
কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সোমবার স্কুলমাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এলাকাবাসী জানান, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনা নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর আগে ইয়াসমিন নামে একজন ডাক্তার সিজার করতে গিয়ে এক প্রসূতির গর্ভের সন্তানের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দেয়। এখানে বড় ডাক্তারদের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রোগী ভর্তি করা হয়। কিন্তু কোনো বড় ডাক্তার এখানে রোগী দেখেন না। এই হাসপাতালে ভালো কোনো চিকিৎসক নেই। এমনকি কোনো প্রশিক্ষিত নার্স পর্যন্ত নেই। এখানে এসে রোগীদের সুস্থ হওয়ার ঘটনা কমই ঘটে থাকে। এ প্রসঙ্গে জানতে হাসপাতালে ফোন করলে বিথী নামের একজন ফ্রন্ট ডেস্ক এক্সিকিউটিভ ফোন রিসিভ করেন। ডিরেক্টর হসপিটাল সার্ভিস লে.ক. (অব.) মাহবুবুর রহমানকে চাইলে তিনি কী বিষয়ে কথা বলব জানাতে চান এবং পরে ফোন করতে বলেন। পরে ফোন করলে বিথী জানান, স্যার ফোনে কোনো কথা বলবেন না। কথা বলতে হলে আগামীকাল ১২টার দিকে আসতে পারেন। স্যার থাকলে আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের অভিযোগ এলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে রোগীর স্বজনরা যদি আদালতের আশ্রয় নেয় তাহলে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই মেনে নিতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.