স্বামীর মোবাইলে ফুটেজ, অতঃপর... by ওয়েছ খছরু
শেষ
পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ে নামলেন সিলেটের স্কুল শিক্ষিকা জাকিয়া আক্তার।
প্রথমদিকে কিছুটা মানসিক সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসা নিয়ে এখন
সুস্থ। এরপর নিজের চাকরি ফিরে পেতে নামলেন আইনি লড়াইয়ে। শিক্ষিকার অধিকার
ফিরে পেতে সাংবাদিকদের কাছেও জানালেন আকুতি। ওই স্কুল শিক্ষিকার পুরো নাম
জাকিয়া আক্তার ভূঁইয়া। স্বামী জহিরুল ইসলাম, পেশায় পাথর ব্যবসায়ী। ব্যবসার
সুবাদে সিলেটের গোয়াইনঘাটেই তাদের আবাস। একযুগ আগে গোয়াইনঘাট মডেল উচ্চ
বিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা হিসেবে জাকিয়া আক্তার ভূঁইয়া নিয়োগ
পেয়েছিলেন। ওই স্কুলের এখন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে তিনি পরিচিত। এছাড়া
‘ভালো’ শিক্ষিকা হিসেবেও বেশ পরিচিত এলাকায়। কিন্তু ওই শিক্ষিকাকে
জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই নিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর জোরপূর্বক
সই নিয়ে চাকরিচ্যুত করার কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছেন না
স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে, চাকরিচ্যুত করার পর্দার আড়ালের কারণ আছে। আর সেই
বিষয়টি অবশেষে গোয়াইনঘাটের সাংবাদিকদের কাছে খুলে বলেছেন শিক্ষিকা জাকিয়া
আক্তার। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু তার স্বামী জহিরুল ইসলামকে ঘিরে। জহিরুল ইসলাম
পাথর ব্যবসায়ী হলেও স্থানীয় প্রশাসনে তার প্রভাব বেশি। থানা পুলিশের সঙ্গে
তার ভালো সম্পর্ক। এ কারণে তিনি গোয়াইনঘাটে ‘প্রভাবশালী’ হিসেবেই পরিচিত
ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে জাকিয়া আক্তার গোয়াইনঘাট মডেল স্কুলে শিক্ষিকা। এখন
তাদের সন্তানও ওই স্কুলের ছাত্র। সেই সুবাদে জাকিয়া আক্তারের স্বামী
জহুরুলও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন। গেল বছরের শেষদিকে
গোয়াইনঘাটের এক স্কুল শিক্ষিকার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওই শিক্ষিকার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সবার মোবাইলে
মোবাইলে। একপর্যায়ে ওই ভিডিও ফুটেজটি সংগ্রহ করেন জহিরুল ইসলাম। রেখে দেন
তার মোবাইলের মেমোরিকার্ডে। বিষয়টি নিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের
মধ্যেও ফিসফাস শুরু হয়। তবে, ওই শিক্ষিকা ও স্কুলের সম্মান বিবেচনা করে
কেউ-ই এ ব্যাপারে মুখ খুলেননি। বরং বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান।
এদিকে, মোবাইলে নিজের তোলা কয়েকটি ছবি লোড করতে একটি ইন্টারনেটে দোকানে
মেমোরিকার্ড দেন জহিরুল ইসলাম। আর এই মেমোরিকার্ড থেকে শিক্ষিকার ফুটেজও
ডাউনলোড করে রাখেন দোকানি। পরবর্তীতে ওই দোকানি টাকার বিনিময়ে মোবাইলে
মোবাইলে ভিডিও ফুটেজটি আরেক দফা প্রচারের চেষ্টা চালালে তোলপাড় শুরু হয়। এ
নিয়ে ওই দোকানি পড়েন ছাত্রদের তোপের মুখে। পরবর্তীতে ইন্টারনেট দোকানি
স্বীকার করেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জহিরুলের কাছ থেকে ওই ভিডিও ফুটেজটি
সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষয়টি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির কানে যাওয়ার পরও এ
নিয়ে কেউ কোন কথা বাড়াননি। শিক্ষিকা জাকিয়া আক্তারের স্বামী জহিরুল ইসলাম
জানিয়েছেন, শিক্ষিকার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে যখন তোলপাড় শুরু হয় তখন ম্যানেজিং
কমিটির দু’-একজন সদস্যের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি সেটি ইন্টারনেট থেকে
সংগ্রহ করেন। ওই ভিডিও’র সঙ্গে তার কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সেটি জানতো
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিও। কিন্তু পরবর্তীতে দোকানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে
তার উপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলে। এদিকে, ৬ মিনিটের ভিডিও ফুটেজটি নিয়ে যখন
তোলপাড় চলছিল তখন ২০১৪ সালের ৩রা নভেম্বর আকস্মিকভাবে গোয়াইনঘাট মডেল উচ্চ
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় বিদ্যালয় পরিচালনা
কমিটির সদস্যরা তাদের লিখিত একটি পদত্যাগপত্রে শিক্ষিকা জাকিয়া আক্তারের সই
নেন। এ সময় জাকিয়া আক্তারকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। সমপ্রতি
সিলেটের গোয়াইনঘাটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শিক্ষিকা জাকিয়া আক্তার
জানিয়েছেন, কথিত অপরাধে স্বামী জড়িত থাকায় এ ঘটনা ঘটানোর পাশপাশি স্থানীয়
কতিপয় সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছ। এ কারণে
নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে তারা গোয়াইনঘাট ছাড়া হয়েছেন। তিনি জানান,
বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছেলেকে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের
সুযোগ দেয়া হয়নি। তার বেতন বোনাস আটকে রাখা হয়েছে। এদিকে, কোন উপায় না পেয়ে
অবশেষে সিলেটে আদালতে চাকরি ফিরে পেতে মামলা করেছেন শিক্ষিকা জাকিয়া
আক্তার ভূঁইয়া। আদালত তার অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যে চাকরিচ্যুত করার কারণ
জানতে চেয়েছে। একই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জীববিজ্ঞান
বিভাগে কোন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন। জাকিয়ার স্বামী
জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার স্ত্রী জাকিয়াকে চাকরিচ্যুতকালে মানসিক
নির্যাতন চালানো হয়েছে। এতে করে তিনি প্রথমদিকে কিছুটা মানসিক সমস্যায়
পড়েছিলেন। এখন চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হয়ে মামলা করেছেন। এদিকে,
গোয়াইনঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সচিব ও প্র্রধান শিক্ষক সেলিম
উল্লাহ জানিয়েছেন, চাকরিকালীন সময়ে জাকিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির কোন
অভিযোগ ছিল না। কী কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেটি তার জানা নেই।
বলেন, আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সঠিক
নয়।
No comments