তিন তালিকাতেই সাংসদ বদি by শরিফুল হাসান
মানব
পাচার, ইয়াবা ও রোহিঙ্গাদের বৈধকরণ—এই তিন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে টালমাটাল
পর্যটন শহর কক্সবাজার। এর প্রভাব পড়ছে সারা দেশেও। সরকারের খাতায় এই তিন
অপরাধেরই প্রধান পৃষ্ঠপোষক কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) সাংসদ আবদুর
রহমান বদি। সঙ্গে আছেন তাঁর ছয় ভাইসহ ২৬ জন কাছের ও দূরের আত্মীয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ ৭৯ মানব পাচারকারীর তালিকায় সাংসদ বদির নাম আছে ১ নম্বরে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ তালিকা করা হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে আরেকটি তদন্ত হয়। তাতে সাংসদের আট আত্মীয়কে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায়ও সাংসদ বদিকে মাদকের মূল পৃষ্ঠপোষক বলা হয়। ওই তালিকায় তাঁর ১৭ জন আত্মীয়ের নাম আছে।
আর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সহায়তাকারীদের তালিকায়ও তিনি আছেন ১ নম্বরে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবরে এ তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছিল।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ঢাকার হিসাব অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর এলাকায় মানব পাচারের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে তিন হাজার কোটি টাকার মাদকের বাজারের অর্ধেকই দখল করে রেখেছে ইয়াবা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের একমাত্র রুট টেকনাফ।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে সহায়তা করা, কক্সবাজারে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া এবং পরে তাদের নাগরিক সনদ দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করাও বড় টাকার বাণিজ্য। তবে টাকার অঙ্কে এর কোনো হিসাব গ্রহণযোগ্য কোনো সংস্থা থেকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা জানান, মানব পাচার ও ইয়াবা চোরাচালান—দুটিতেই মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও রোহিঙ্গাদের একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ আছে।
গত বছরের ১১ জুন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের সীতা পাহাড়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জলসীমায় মালয়েশিয়াগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রলারের যাত্রীদের সঙ্গে নাবিক ও পাচারকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচজন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, আহত হন অর্ধশতাধিক। পরবর্তী সময়ে কোস্টগার্ড ২৯৮ জনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সেন্ট মার্টিনে নিয়ে আসে। উদ্ধার করা এবং জড়িত ওই ব্যক্তিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের পেছনের মূল হোতাদের নামের একটি তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে তালিকা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয় ৭৯ জনকে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তাতে সাংসদ আবদুর রহমান বদির নাম ১ নম্বরে রাখা হয়। তাঁর ভাই মুজিবর রহমানের নাম তালিকায় ৩ নম্বরে আছে।
রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহকারীদের তালিকায়ও সাংসদ ভাইয়ের সঙ্গে মুজিবর রহমানের নাম ৮ নম্বরে আছে। আর ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় তাঁর নাম ৭ নম্বরে আছে। এই তালিকার ২ নম্বরে আছে সাংসদের আরেক ভাই আবদুর শুক্কুরের (৩৮) নাম। ওই তালিকার ৪ নম্বরে সাংসদের ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম (২৩), ৫ নম্বরে ফয়সাল রহমান (২০) ও ৮ নম্বরে মোহাম্মদ আলমের (৩৫) নাম রয়েছে। শফিকুল ও ফয়সালের বাড়ি থেকে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর একজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। ওই ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলাও করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে সাতজনকে মুখ্য পাচারকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এঁরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় মাদক পাচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন এবং বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। টেকনাফের চৌধুরীপাড়ার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় ১ নম্বরে থাকা সাংসদ আবদুর রহমানের নামের পাশে লেখা হয়েছে, সাংসদের ছত্রচ্ছায়ায় লোকজন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।
সাংসদের আর যেসব আত্মীয় মানব পাচারকারীদের তালিকায় আছেন, তাঁরা হলেন তাঁর বোন শামসুন্নাহারের ছেলে সায়েদুর রহমান নিপু (২৪), বোনের দেবর হামিদ হোসেন (৪০), চাচাশ্বশুর জহিরউদ্দিন এবং সাংসদের দুই বেয়াই আক্তার কামাল ও শাহেদ কামাল।
এ ছাড়া পুলিশের প্রতিবেদনে এঁদের বাইরে মানব পাচারকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে সাংসদের খালাতো ভাই মং মং সেন, বেয়াই মো. হারুন (৪৫), আক্তার কামাল (৩৫), সাইদ কামাল (৩০), হামিদ হোসেন, হাসু ওরফে শামীম, মফিজুর রহমান ও তালই জহিরউদ্দিনের নাম আছে।
সাংসদের আর যেসব আত্মীয়ের নাম ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় আছে তাঁরা হলেন ভাই আবদুল আমিন (৩৫), শফিকুল ইসলাম (ফয়সাল রহমান) (২০), বোন শামসুন্নাহার, বোনের ছেলে সায়েদুর রহমান ওরফে নিপু, চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলম (৩৫), ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম ওরফে রাসেল, ফুফাতো ভাই নুর আলম (৩২), শামীম, খালাতো ভাই মং মং সেন, বেয়াই আবদুল জব্বার (৪০), বেয়াই আফসার, সৈয়দ হোসেন ও মফিজুর রহমান।
জানতে চাইলে সাংসদ আবদুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াবা হলে আমার নাম, রোহিঙ্গায় আমার নাম, মানব পাচার হলে আমার নাম আসবেই। এগুলো পুরোনো খবর। সীমান্ত এলাকার সাংসদ বলে আমার এই অবস্থা।’ কেন বারবার আপনারই নাম আসে—এ প্রশ্নের জবাবে সাংসদ বলেন, ‘এগুলো বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র। তাদের এখন আর কোনো কাজ নেই। বিএনপি-জামায়াত জানে, আমাকে নির্বাচনে হারাতে পারবে না। তাই তারা এসব ষড়যন্ত্র করছে। যাতে আমি দলের নমিনেশন না পাই।’
এই তিনটি তালিকাই তো আপনার সরকারের সময়ে হয়েছে—এমন প্রশ্নে সাংসদ বলেন, ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই। যারা তালিকা করে, তারাও অবশ্যই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আপনি এলাকায় যান। দেখবেন আমি ইয়াবা, মানব পাচার—এসবের বিরুদ্ধে। আমি মানব পাচারকারীদের ধরিয়ে দিয়েছি। তারপরও ষড়যন্ত্র চলছে।’
সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময় বলে এসেছি, মানব পাচার ও ইয়াবার চক্র একই সূত্রে গাঁথা। এসবের পেছনে মূল হোতা একজন সাংসদ। এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে ইয়াবা ও মানব পাচার দুটিই বন্ধ করা সম্ভব।’
সরকারের হাতে এত তথ্য থাকার পরেও কেন সাংসদ বদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এই সাংসদকে আগেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। এখন আবার কোনো অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় আদালত সাংসদ বদিকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ইয়াবা চোরাচালান বা মানব পাচারের কোনো ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ ৭৯ মানব পাচারকারীর তালিকায় সাংসদ বদির নাম আছে ১ নম্বরে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এ তালিকা করা হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে আরেকটি তদন্ত হয়। তাতে সাংসদের আট আত্মীয়কে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায়ও সাংসদ বদিকে মাদকের মূল পৃষ্ঠপোষক বলা হয়। ওই তালিকায় তাঁর ১৭ জন আত্মীয়ের নাম আছে।
আর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে সহায়তাকারীদের তালিকায়ও তিনি আছেন ১ নম্বরে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবরে এ তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছিল।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ঢাকার হিসাব অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর এলাকায় মানব পাচারের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে তিন হাজার কোটি টাকার মাদকের বাজারের অর্ধেকই দখল করে রেখেছে ইয়াবা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের একমাত্র রুট টেকনাফ।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে সহায়তা করা, কক্সবাজারে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া এবং পরে তাদের নাগরিক সনদ দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করাও বড় টাকার বাণিজ্য। তবে টাকার অঙ্কে এর কোনো হিসাব গ্রহণযোগ্য কোনো সংস্থা থেকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা জানান, মানব পাচার ও ইয়াবা চোরাচালান—দুটিতেই মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও রোহিঙ্গাদের একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ আছে।
গত বছরের ১১ জুন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের সীতা পাহাড়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জলসীমায় মালয়েশিয়াগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রলারের যাত্রীদের সঙ্গে নাবিক ও পাচারকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচজন বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান, আহত হন অর্ধশতাধিক। পরবর্তী সময়ে কোস্টগার্ড ২৯৮ জনকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সেন্ট মার্টিনে নিয়ে আসে। উদ্ধার করা এবং জড়িত ওই ব্যক্তিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ ও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের পেছনের মূল হোতাদের নামের একটি তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে তালিকা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয় ৭৯ জনকে মানব পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তাতে সাংসদ আবদুর রহমান বদির নাম ১ নম্বরে রাখা হয়। তাঁর ভাই মুজিবর রহমানের নাম তালিকায় ৩ নম্বরে আছে।
রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহকারীদের তালিকায়ও সাংসদ ভাইয়ের সঙ্গে মুজিবর রহমানের নাম ৮ নম্বরে আছে। আর ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় তাঁর নাম ৭ নম্বরে আছে। এই তালিকার ২ নম্বরে আছে সাংসদের আরেক ভাই আবদুর শুক্কুরের (৩৮) নাম। ওই তালিকার ৪ নম্বরে সাংসদের ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম (২৩), ৫ নম্বরে ফয়সাল রহমান (২০) ও ৮ নম্বরে মোহাম্মদ আলমের (৩৫) নাম রয়েছে। শফিকুল ও ফয়সালের বাড়ি থেকে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর একজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। ওই ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলাও করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে সাতজনকে মুখ্য পাচারকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এঁরা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় মাদক পাচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন এবং বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। টেকনাফের চৌধুরীপাড়ার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় ১ নম্বরে থাকা সাংসদ আবদুর রহমানের নামের পাশে লেখা হয়েছে, সাংসদের ছত্রচ্ছায়ায় লোকজন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।
সাংসদের আর যেসব আত্মীয় মানব পাচারকারীদের তালিকায় আছেন, তাঁরা হলেন তাঁর বোন শামসুন্নাহারের ছেলে সায়েদুর রহমান নিপু (২৪), বোনের দেবর হামিদ হোসেন (৪০), চাচাশ্বশুর জহিরউদ্দিন এবং সাংসদের দুই বেয়াই আক্তার কামাল ও শাহেদ কামাল।
এ ছাড়া পুলিশের প্রতিবেদনে এঁদের বাইরে মানব পাচারকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসেবে সাংসদের খালাতো ভাই মং মং সেন, বেয়াই মো. হারুন (৪৫), আক্তার কামাল (৩৫), সাইদ কামাল (৩০), হামিদ হোসেন, হাসু ওরফে শামীম, মফিজুর রহমান ও তালই জহিরউদ্দিনের নাম আছে।
সাংসদের আর যেসব আত্মীয়ের নাম ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় আছে তাঁরা হলেন ভাই আবদুল আমিন (৩৫), শফিকুল ইসলাম (ফয়সাল রহমান) (২০), বোন শামসুন্নাহার, বোনের ছেলে সায়েদুর রহমান ওরফে নিপু, চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলম (৩৫), ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম ওরফে রাসেল, ফুফাতো ভাই নুর আলম (৩২), শামীম, খালাতো ভাই মং মং সেন, বেয়াই আবদুল জব্বার (৪০), বেয়াই আফসার, সৈয়দ হোসেন ও মফিজুর রহমান।
জানতে চাইলে সাংসদ আবদুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইয়াবা হলে আমার নাম, রোহিঙ্গায় আমার নাম, মানব পাচার হলে আমার নাম আসবেই। এগুলো পুরোনো খবর। সীমান্ত এলাকার সাংসদ বলে আমার এই অবস্থা।’ কেন বারবার আপনারই নাম আসে—এ প্রশ্নের জবাবে সাংসদ বলেন, ‘এগুলো বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র। তাদের এখন আর কোনো কাজ নেই। বিএনপি-জামায়াত জানে, আমাকে নির্বাচনে হারাতে পারবে না। তাই তারা এসব ষড়যন্ত্র করছে। যাতে আমি দলের নমিনেশন না পাই।’
এই তিনটি তালিকাই তো আপনার সরকারের সময়ে হয়েছে—এমন প্রশ্নে সাংসদ বলেন, ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই। যারা তালিকা করে, তারাও অবশ্যই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আপনি এলাকায় যান। দেখবেন আমি ইয়াবা, মানব পাচার—এসবের বিরুদ্ধে। আমি মানব পাচারকারীদের ধরিয়ে দিয়েছি। তারপরও ষড়যন্ত্র চলছে।’
সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময় বলে এসেছি, মানব পাচার ও ইয়াবার চক্র একই সূত্রে গাঁথা। এসবের পেছনে মূল হোতা একজন সাংসদ। এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে ইয়াবা ও মানব পাচার দুটিই বন্ধ করা সম্ভব।’
সরকারের হাতে এত তথ্য থাকার পরেও কেন সাংসদ বদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এই সাংসদকে আগেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। এখন আবার কোনো অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় আদালত সাংসদ বদিকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ইয়াবা চোরাচালান বা মানব পাচারের কোনো ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
No comments