ইরাক থেকে পঙ্গু হয়ে ফিরলেন রাজ্জাক
জিআই
পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। ফলে পায়ের ভেতরে রক্ত জমে গেছে। ভেঙে গেছে হাড়।
একাধিকবার জমাটবাঁধা রক্তও বের করা হয়েছে। কিন্তু যন্ত্রণা কমেনি। এ
যন্ত্রণা এতটাই তীব্র যে, হাঁটতে পারি না। রাতে ঘুমাতে পারি না। এমনকি
অন্যের সাহায্য ছাড়া বাথরুমেও যেতে পারি না। গতকাল হযরত শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব কথা বলেন, ইরাক ফেরত আবদুর রাজ্জাক। ভাগ্য
পরিবর্তনের আশায় জীবিকার সন্ধানে তিনি ৯ মাস আগে ইরাক গিয়েছিলেন। কিন্তু
রোজগার তো দূরের কথা, উল্টো ফিরেছেন পঙ্গু হয়ে। বলেন, ভেবেছিলাম এই ভাঙা পা
নিয়েই ৬ মাস কাজ করবো। কিছু রোজগার করে বাড়ি ফিরবো। কিন্তু এখন কোন কাজই
করতে পারি না। অসুস্থ অবস্থায় দিনের পর দিন তাই ক্যাম্পেই কাটিয়েছি। তার
অভিযোগ, সে দেশে পৌঁছানোর পর কাজ না থাকায় তখনই ফিরে আসতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু আসতে দেয়নি এজেন্সির লোকজন। আক্ষেপ করে বলেন, ওই সময় আসলে হয়তো
পা-টা ঠিক থাকতো। অকর্মা হয়ে দেশে ফিরতে হতো না। আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন,
এই অবস্থায়ও তিনি একাধিকবার দেশে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি
ও দূতাবাস তাকে বাধা দিয়েছে। বিনা চিকিৎসায় বন্দি করে রেখেছে দিনের পর
দিন। অবশেষে সেখানে থাকা অন্যান্যরা চাঁদা তুলে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা
করেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত এজেন্সির ব্যবস্থাপনা
পরিচালক এবিএম বদরুল আমিন। তিনি বলেন, তাদের ওপর কোন নির্যাতন করা হয়নি বা
কাজে যোগ দেয়ার জন্য বাধ্যও করা হয়নি। স্বেচ্ছায় তারা সবকিছু করছে। তিনি
বলেন আবদুর রাজ্জাক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। গতকাল সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে
অ্যারাবিয়ান এয়ার লাইন্সের জি-৯৩৬৯ ফ্লাইটে করে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে
পৌঁছান আবদুর রাজ্জাক ও তার সহযোগী মো. সোহাগ। বিমানবন্দরে নিতে আসা
সোহাগের নিকটাত্মীয় মো. সোহেল আহমেদ জানান, গতকাল (বুধবার) সোহাগের বাবা
মারা গেছেন। এ সংবাদ এখনও দেয়া হয়নি তাকে।
আবদুর রাজ্জাকের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চরবগা গ্রামে। তিনি বলেন, তার এক মামার মাধ্যমে ক্যারিয়ার ওভারসিসকে তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা দেয়। কথা ছিল তাকে কাতারে একটি কোম্পানিতে ফোরম্যানের কাজ দেয়া হবে। সে মোতাবেক তার মৌখিক পরীক্ষাও নেয়া হয়। ফ্লাইট নির্ধারিত হয় ২৮শে আগস্ট। ওইদিন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর বলা হয় তাকে ইরাকে কর্মরত কোরিয়ান কোম্পানি হানওয়াতে ৮০০ ডলার বেতনে কাজ দেয়া হবে। তার সঙ্গে ওই ফ্লাইটে আরও ৯ জন বাংলাদেশী ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক জানান, ৪ দফায় মোট ১৮০ জন বাংলাদেশীকে ইরাক নিয়ে যায় এজেন্সিটি। তারা ছিল চতুর্থ ও সর্বশেষ দফার যাত্রী। তিনি বলেন, ইরাকে পৌঁছানোর পরই তাদেরকে আবু তোরাব শহরে একটি জায়গায় বন্দি করা হয়। সেখানে ৬ জন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী সব সময় তাদের পাহারা দিতো। এজেন্সির লোকজন ওই কোম্পানিতে কাজ নেই বলে অন্য কোম্পানিতে কাজ দেয়ার কথা বলে। কিন্তু সেখানে ৩ মাস কেটে যাওয়ার পরও কোন কাজ দেয়া হয়নি। এই সময়ে একই কক্ষে ১৮০ জনকে গাদাগাদি করে, একবেলা-আধাবেলা খাইয়ে রাখা হয়। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে তারা ওই দেশে একটি মামলা করেন। মামলার পর ক্যারিয়ারের সেদেশের প্রতিনিধি সৈয়দ হালিম ও হায়দার দেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর টিকিট দেখিয়ে তিনিসহ ১৬ জনকে বাছাই করে দেশে পাঠানোর জন্য। কিন্তু দেশে না পাঠিয়ে তাদেরকে নাজ্জাব শহরের দোতলা বাড়ির একটি কক্ষে আটকে রাখে। এরপর দূতাবাস ও এজেন্সির লোকজন মিলে ৬৩ জনকে নিয়ে গিয়ে আল-হাইদি নামে একটি কোম্পানিতে কাজ দেয়। কিন্তু ৭৭ জন কাজে যায়নি। তারা দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। পরে তাদেরকেও জোরপূর্বক একটি বাসে করে রাতের বেলা ওই কোম্পানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালেই কাজে যোগ দিতে বলা হয়। এদের মধ্যে ৫০ জন কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সঙ্গে যাওয়া ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ, দূতাবাসের লোকজন এবং ক্যারিয়ার ওভারসিসের স্থানীয় প্রতিনিধিরা মিলে মারধর করার পরিকল্পনা করে। তারা বলে মারধর করলেই তারা কাজে যোগ দেবে। পরদিন রাতে নোয়াখালী জেলার মাইজদী উপজেলার মহিন নামে একটি ছেলেকে জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ওই রাতেই একইভাবে আরও ১৬জনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। যার মধ্যে আবদুর রাজ্জাকও ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক বলেন, জিআই পাইপের আঘাতে তার পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। তারা তাকে পায়ের নিচেই ফেলে পিষ্ট করে। ওই অবস্থায়ই পরদিন সকালে কাজে পাঠায়। কিন্তু পা ভেঙে যাওয়ায় কাজ করতে পারেননি। ভাঙা পা নিয়ে তাই ক্যাম্পেই ২ মাস পড়েছিলেন। তিনি বলেন, দুই পায়ে আঘাত করলেও ডান পায়ের অবস্থা গুরুতর। তিনি বলেন, যন্ত্রণার কারণে রাতে ঘুমাতে পারি না। বাথরুম করতে গেলে তিনজনের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। বাথরুমে বসতে পারি না। তিনি আরও জানান, মারধরের কারণে আবদুল মান্নান ও হালিম একমাস হাঁটতে পারেননি। তারা কোনরকম সেখানে কাজ করছেন। মেহেরপুরের মারফতের কানে আঘাত লাগায় তিনি শুনতে পান না। এছাড়া একই জেলার রাজন নামে আরও একজন গুরুতর আঘাত পান। আবদুর রাজ্জাক বলেন, তার ৮ বছর বয়সী এক ছেলে আছে। কিন্তু কোন জমিজমা নেই। এখন কিভাবে সংসার চলবে তা বলতে পারেন না। তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে ফেরেন নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার কাশিমালা গ্রামের সোহাগ। সোহাগ জানান, তাকে মারধর করা হয়নি। কিন্তু সব সময় ভয়ে থাকেন। অতিরিক্ত কাজ করানো হয়। তার মতো অনেকেই দেশে চলে আসতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভয়ে কেউ বলার বা প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এ ব্যাপারে ক্যারিয়ার ওভারসিস কনসালটেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম বদরুল আমিন বলেন, কাউকে সেখানে জোর করে কাজ করানো হয় না। অনেকেই সেখানে কাজ করছে এবং নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। তারা সেখানে কাজ করে খুশি বলেও তিনি জানান। আবদুর রাজ্জাকের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। সেখানে তাকে অনেক চিকিৎসাও করানো হয়েছে। তাছাড়া তিনি ৬ মাস কাজ করে বেতনও নিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ করেও সুস্থ না হওয়ায় তিনি স্বেচ্ছায় চলে আসতে চেয়েছেন। আমরাই ব্যবস্থা করেছি।
আবদুর রাজ্জাকের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চরবগা গ্রামে। তিনি বলেন, তার এক মামার মাধ্যমে ক্যারিয়ার ওভারসিসকে তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা দেয়। কথা ছিল তাকে কাতারে একটি কোম্পানিতে ফোরম্যানের কাজ দেয়া হবে। সে মোতাবেক তার মৌখিক পরীক্ষাও নেয়া হয়। ফ্লাইট নির্ধারিত হয় ২৮শে আগস্ট। ওইদিন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর বলা হয় তাকে ইরাকে কর্মরত কোরিয়ান কোম্পানি হানওয়াতে ৮০০ ডলার বেতনে কাজ দেয়া হবে। তার সঙ্গে ওই ফ্লাইটে আরও ৯ জন বাংলাদেশী ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক জানান, ৪ দফায় মোট ১৮০ জন বাংলাদেশীকে ইরাক নিয়ে যায় এজেন্সিটি। তারা ছিল চতুর্থ ও সর্বশেষ দফার যাত্রী। তিনি বলেন, ইরাকে পৌঁছানোর পরই তাদেরকে আবু তোরাব শহরে একটি জায়গায় বন্দি করা হয়। সেখানে ৬ জন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী সব সময় তাদের পাহারা দিতো। এজেন্সির লোকজন ওই কোম্পানিতে কাজ নেই বলে অন্য কোম্পানিতে কাজ দেয়ার কথা বলে। কিন্তু সেখানে ৩ মাস কেটে যাওয়ার পরও কোন কাজ দেয়া হয়নি। এই সময়ে একই কক্ষে ১৮০ জনকে গাদাগাদি করে, একবেলা-আধাবেলা খাইয়ে রাখা হয়। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে তারা ওই দেশে একটি মামলা করেন। মামলার পর ক্যারিয়ারের সেদেশের প্রতিনিধি সৈয়দ হালিম ও হায়দার দেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর টিকিট দেখিয়ে তিনিসহ ১৬ জনকে বাছাই করে দেশে পাঠানোর জন্য। কিন্তু দেশে না পাঠিয়ে তাদেরকে নাজ্জাব শহরের দোতলা বাড়ির একটি কক্ষে আটকে রাখে। এরপর দূতাবাস ও এজেন্সির লোকজন মিলে ৬৩ জনকে নিয়ে গিয়ে আল-হাইদি নামে একটি কোম্পানিতে কাজ দেয়। কিন্তু ৭৭ জন কাজে যায়নি। তারা দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। পরে তাদেরকেও জোরপূর্বক একটি বাসে করে রাতের বেলা ওই কোম্পানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালেই কাজে যোগ দিতে বলা হয়। এদের মধ্যে ৫০ জন কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সঙ্গে যাওয়া ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ, দূতাবাসের লোকজন এবং ক্যারিয়ার ওভারসিসের স্থানীয় প্রতিনিধিরা মিলে মারধর করার পরিকল্পনা করে। তারা বলে মারধর করলেই তারা কাজে যোগ দেবে। পরদিন রাতে নোয়াখালী জেলার মাইজদী উপজেলার মহিন নামে একটি ছেলেকে জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ওই রাতেই একইভাবে আরও ১৬জনকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। যার মধ্যে আবদুর রাজ্জাকও ছিলেন। আবদুর রাজ্জাক বলেন, জিআই পাইপের আঘাতে তার পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। তারা তাকে পায়ের নিচেই ফেলে পিষ্ট করে। ওই অবস্থায়ই পরদিন সকালে কাজে পাঠায়। কিন্তু পা ভেঙে যাওয়ায় কাজ করতে পারেননি। ভাঙা পা নিয়ে তাই ক্যাম্পেই ২ মাস পড়েছিলেন। তিনি বলেন, দুই পায়ে আঘাত করলেও ডান পায়ের অবস্থা গুরুতর। তিনি বলেন, যন্ত্রণার কারণে রাতে ঘুমাতে পারি না। বাথরুম করতে গেলে তিনজনের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। বাথরুমে বসতে পারি না। তিনি আরও জানান, মারধরের কারণে আবদুল মান্নান ও হালিম একমাস হাঁটতে পারেননি। তারা কোনরকম সেখানে কাজ করছেন। মেহেরপুরের মারফতের কানে আঘাত লাগায় তিনি শুনতে পান না। এছাড়া একই জেলার রাজন নামে আরও একজন গুরুতর আঘাত পান। আবদুর রাজ্জাক বলেন, তার ৮ বছর বয়সী এক ছেলে আছে। কিন্তু কোন জমিজমা নেই। এখন কিভাবে সংসার চলবে তা বলতে পারেন না। তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে ফেরেন নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার কাশিমালা গ্রামের সোহাগ। সোহাগ জানান, তাকে মারধর করা হয়নি। কিন্তু সব সময় ভয়ে থাকেন। অতিরিক্ত কাজ করানো হয়। তার মতো অনেকেই দেশে চলে আসতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভয়ে কেউ বলার বা প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এ ব্যাপারে ক্যারিয়ার ওভারসিস কনসালটেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম বদরুল আমিন বলেন, কাউকে সেখানে জোর করে কাজ করানো হয় না। অনেকেই সেখানে কাজ করছে এবং নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। তারা সেখানে কাজ করে খুশি বলেও তিনি জানান। আবদুর রাজ্জাকের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, তিনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। সেখানে তাকে অনেক চিকিৎসাও করানো হয়েছে। তাছাড়া তিনি ৬ মাস কাজ করে বেতনও নিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য অনেক খরচ করেও সুস্থ না হওয়ায় তিনি স্বেচ্ছায় চলে আসতে চেয়েছেন। আমরাই ব্যবস্থা করেছি।
No comments