ছোট কাটরার সামনে এবার উঠছে আটতলা ভবন by মুসা আহমেদ
সংরক্ষণ ও সংস্কার না করায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে পুরান ঢাকার মোগল স্থাপত্য বড় কাটরা ও ছোট কাটরা। এখন স্থাপনা দুটির চিহ্ন বলতে জরাজীর্ণ চারটি ফটক। -প্রথম আলো |
ঐতিহ্য সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে ছোট কাটরার সামনে চলছে আটতলা ভবনের নির্মাণকাজ (ডানে)। -প্রথম আলো |
ঐতিহ্য
সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে পুরান ঢাকার চকবাজারে মোগল স্থাপত্য ‘ছোট কাটরার’
সামনে আবারও বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
(রাজউক)। এখন চলছে ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণকাজ। এর আগে ২০১৩ সালে
অনুমতি পাওয়া আরেকটি ছয়তলা ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন।
অভিযোগ রয়েছে, আইন ভঙ্গ করে একের পর এক স্থাপনা-সংলগ্ন বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে রাজউক, আর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নীরব দর্শক।
জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা-সংলগ্ন নতুন ভবন নির্মাণে অনুমতি দেওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
২০০৯ সালে ঢাকার নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ৯৩টি ভবন, শাঁখারীবাজার এলাকা এবং ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর এলাকার নয়টি সড়ককে সংরক্ষিত ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করা হয়। এতে বলা হয়, সৌন্দর্যমণ্ডিত ভবনের ২৫০ মিটারের মধ্যে (যা মূল ভবনটির সৌন্দর্যের ক্ষতি করে) কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এসব ভবন সংস্কারেও। ছোট কাটরা ও বড় কাটরা ওই ৯৩টি ভবনের মধ্যে দুটি৷ ১১ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, ২০১৩ সালে ছোট কাটরার দেয়াল-সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রাজউক থেকে অনুমতি পাওয়া সেই ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে। ভবনটির পঞ্চম তলায় কাজ করছেন পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক।
এর আগে রাজউকের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাই আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেছিলেন, রাজউক থেকে অনুমতি নিয়েই তিনি ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরে ওই বছরেরই ২৭ জুলাই প্রথম আলোয় ‘ছোট কাটরার সামনে স্থাপনা নির্মাণ চলছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপানোর পর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় রাজউক।
ছোট কাটরা থেকে মাত্র ২০-২৫ মিটার দক্ষিণে সম্প্রতি ‘আব্দুল লতিফ টাওয়ার’ নামে আটতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে রাজউক। এখন চলছে ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণকাজ। ভবনের নকশাসংবলিত ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘রাজউক অনুমোদিত’।
নির্মাণস্থলে টাওয়ারের মালিক আব্দুল লতিফ বলেন, অনুমতি পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে রাজউক।
ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজ করা আরবান স্টাডি গ্রুপের পরিচালক তৈমুর আহমেদ বলেন, আইন না মেনে স্থাপনা-সংলগ্ন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে রাজউক। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অনেকটাই চুপচাপ।
ছোট কাটরা ও বড় কাটরার চিত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ‘মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১ সালে নির্মিত হয় বড় কাটরা। আর মোগল সুবাদার শায়েস্তা খান আনুমানিক ১৬৬৩ থেকে ১৬৬৪ সালে নির্মাণ করেন ছোট কাটরা।’
সরেজমিনে দেখা যায়, চকবাজার শাহি মসজিদ-সংলগ্ন ওয়াকস রোডে রয়েছে বড় কাটরার উত্তর ফটক, সোয়ারীঘাট রোডে দক্ষিণ ফটক। ফটক দুটি বরাবর সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে প্রায় ৪২টি কক্ষ (চেম্বার)। এসব কক্ষে নামে-বেনামে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোকান ও কারখানা। নিজেদের মতো করে কক্ষগুলোতে করা হয়েছে পলেস্তারা।
এ ছাড়া পশ্চিম পাশের প্রায় ১০টি কক্ষসহ বড় কাটরার এক-তৃতীয়াংশ জায়গায় রয়েছে ‘জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলূম বড় কাটারা মাদ্রাসা’। মাদ্রাসার পরিচালক সাইফুল ইসলামের দাবি, ‘ওয়াক্ফ সম্পত্তি ওপর ১৯৩১ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। বড় কাটরা “সংরক্ষণ ঘোষণা” করায় আমরা আর কোন সংস্কার করিনি।’
বড় কাটরার সীমানা থেকে দু-তিন মিনিটের পথ (পূর্ব পাশে) ছোট কাটরা। চাম্পাতলী ঘাট (দক্ষিণ) থেকে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান রোড (উত্তর) পর্যন্ত এ কাটরার সীমানা। ছোট কাটরায় ১২৬টি কক্ষের প্রতিটিতে রয়েছে দোকানপাট। জরাজীর্ণ দুটি ফটক ছাড়া ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে চেনার কোনো আলামত নেই।
চাম্পাতলী ঘাটের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী হাজি মো. ইব্রাহীম (৫৫) বলেন, ‘আমাদের লালবাগ কেল্লায় টিকিট কেটে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ দেখতে আসে৷ তাই এই দুটি স্থাপনা মেরামত করা দরকার।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে থেকে ১১ জুন বদলি হয়েছেন শিরিন আখতার। ছোট কাটরার সামনে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে ১২ জুন রাতে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত সব দায়িত্ব রাজউকের। কীভাবে অনুমতি দিল, তা তারাই ভালো জানে।’
অভিযোগ রয়েছে, আইন ভঙ্গ করে একের পর এক স্থাপনা-সংলগ্ন বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে রাজউক, আর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নীরব দর্শক।
জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা-সংলগ্ন নতুন ভবন নির্মাণে অনুমতি দেওয়ার কথা নয়। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
২০০৯ সালে ঢাকার নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ৯৩টি ভবন, শাঁখারীবাজার এলাকা এবং ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর এলাকার নয়টি সড়ককে সংরক্ষিত ঘোষণা করে আইন প্রণয়ন করা হয়। এতে বলা হয়, সৌন্দর্যমণ্ডিত ভবনের ২৫০ মিটারের মধ্যে (যা মূল ভবনটির সৌন্দর্যের ক্ষতি করে) কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এসব ভবন সংস্কারেও। ছোট কাটরা ও বড় কাটরা ওই ৯৩টি ভবনের মধ্যে দুটি৷ ১১ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, ২০১৩ সালে ছোট কাটরার দেয়াল-সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রাজউক থেকে অনুমতি পাওয়া সেই ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে। ভবনটির পঞ্চম তলায় কাজ করছেন পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক।
এর আগে রাজউকের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাই আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেছিলেন, রাজউক থেকে অনুমতি নিয়েই তিনি ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরে ওই বছরেরই ২৭ জুলাই প্রথম আলোয় ‘ছোট কাটরার সামনে স্থাপনা নির্মাণ চলছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপানোর পর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় রাজউক।
ছোট কাটরা থেকে মাত্র ২০-২৫ মিটার দক্ষিণে সম্প্রতি ‘আব্দুল লতিফ টাওয়ার’ নামে আটতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে রাজউক। এখন চলছে ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণকাজ। ভবনের নকশাসংবলিত ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘রাজউক অনুমোদিত’।
নির্মাণস্থলে টাওয়ারের মালিক আব্দুল লতিফ বলেন, অনুমতি পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে রাজউক।
ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজ করা আরবান স্টাডি গ্রুপের পরিচালক তৈমুর আহমেদ বলেন, আইন না মেনে স্থাপনা-সংলগ্ন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে রাজউক। এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অনেকটাই চুপচাপ।
ছোট কাটরা ও বড় কাটরার চিত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ‘মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১ সালে নির্মিত হয় বড় কাটরা। আর মোগল সুবাদার শায়েস্তা খান আনুমানিক ১৬৬৩ থেকে ১৬৬৪ সালে নির্মাণ করেন ছোট কাটরা।’
সরেজমিনে দেখা যায়, চকবাজার শাহি মসজিদ-সংলগ্ন ওয়াকস রোডে রয়েছে বড় কাটরার উত্তর ফটক, সোয়ারীঘাট রোডে দক্ষিণ ফটক। ফটক দুটি বরাবর সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে প্রায় ৪২টি কক্ষ (চেম্বার)। এসব কক্ষে নামে-বেনামে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোকান ও কারখানা। নিজেদের মতো করে কক্ষগুলোতে করা হয়েছে পলেস্তারা।
এ ছাড়া পশ্চিম পাশের প্রায় ১০টি কক্ষসহ বড় কাটরার এক-তৃতীয়াংশ জায়গায় রয়েছে ‘জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলূম বড় কাটারা মাদ্রাসা’। মাদ্রাসার পরিচালক সাইফুল ইসলামের দাবি, ‘ওয়াক্ফ সম্পত্তি ওপর ১৯৩১ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। বড় কাটরা “সংরক্ষণ ঘোষণা” করায় আমরা আর কোন সংস্কার করিনি।’
বড় কাটরার সীমানা থেকে দু-তিন মিনিটের পথ (পূর্ব পাশে) ছোট কাটরা। চাম্পাতলী ঘাট (দক্ষিণ) থেকে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান রোড (উত্তর) পর্যন্ত এ কাটরার সীমানা। ছোট কাটরায় ১২৬টি কক্ষের প্রতিটিতে রয়েছে দোকানপাট। জরাজীর্ণ দুটি ফটক ছাড়া ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে চেনার কোনো আলামত নেই।
চাম্পাতলী ঘাটের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী হাজি মো. ইব্রাহীম (৫৫) বলেন, ‘আমাদের লালবাগ কেল্লায় টিকিট কেটে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ দেখতে আসে৷ তাই এই দুটি স্থাপনা মেরামত করা দরকার।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে থেকে ১১ জুন বদলি হয়েছেন শিরিন আখতার। ছোট কাটরার সামনে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে ১২ জুন রাতে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত সব দায়িত্ব রাজউকের। কীভাবে অনুমতি দিল, তা তারাই ভালো জানে।’
No comments