‘মমতা জঙ্গিদের সহায়তা করছেন’
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের সঙ্গে বর্ধমান বিস্ফোরণকে জড়িত করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দাবি করেছেন তাতে বাংলাদেশে কোন প্রভাব পড়েনি। ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে ঢাকা থেকে টেলিফোনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশের লোক বুঝে গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গিদের সাহায্য করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় রিসার্চ এনালাইসিস উইং-র’কে ব্যবহার করে থাকতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশের জনগণ মমতার এ বক্তব্যের মধ্যে কোন বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ওই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)’র টিম এখন ঢাকায় রয়েছে। তারা যে তথ্য দিয়েছেন তার ভিত্তিতে আমরা এরই মধ্যে কিছু লোককে গ্রেপ্তার করেছি। শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে তদন্ত দল ভারত সফর করবে। তারা এ ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করবে। জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের হাত থেকে এ উপমহাদেশকে মুক্ত করায় ভারত ও বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে। এটা দু’দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। টেলিগ্রাফে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বের নিন্দা ঢাকায়। জনগণ বুঝতে পেরেছে কে সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে। ওই প্রতিবেদনে আইনজীবী, থিংক ট্যাংক বলে পরিচিত সংস্থা ও ব্যক্তির মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ওদিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস এরই মধ্যে ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আরএসএস’র দিকে আঙুল তুলেছে। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হন নি পশ্চিমবঙ্গের কিছু মন্ত্রী। তারা বলেছেন, এর সঙ্গে তারা জড়াতে চান না। বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতে এ পর্যন্ত ১০ জনের বেশি আটক করা হয়েছে। তবে মমতার বক্তব্য নিয়ে অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অভিযুক্তরা তার বক্তব্যকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। আবার অনেক আইনজীবী বলছেন, প্রমাণের অভাবে এমন বক্তব্য তেমন কোন ব্যবধান সৃষ্টি করবে না। তবে এ নিয়ে নোংরা খেলা হতে পারে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেসব নিরাপত্তা সংস্থা কাজ করছে তাদের কাছে এর মাধ্যমে সংঘাতের একটি সংকেত পাঠাবে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সৃষ্টির চেষ্টা ও এ জন্য অস্ত্র সংগ্রহের অভিযোগ করা হয়েছে। এ অভিযুক্তরা এখনও তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী পায় নি। এনআইএ’র এক তদন্তকারী বলেছেন, যখনই এসব ব্যক্তির মামলা সামনে আসবে তখনই তারা সুবিধা নিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্যকে ব্যবহার করতে পারে। শুধু তা-ই নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা চেষ্টার যে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে সে জন্যই এ মামলায় বাংলাদেশ আগ্রহী। এনআইএ’র একটি টিম যখন বাংলাদেশ সফরে, ঠিক তার মাঝামাঝি সময়ে বর্ধমান বিস্ফোরণ নিয়ে ওই মন্তব্য করলেন মমতা। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ২০০৫ সালে একই দিনে সারা দেশে প্রায় ৫০০ বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পর জেএমবিকে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন দায়িত্বহীনের মতো বিবৃতি দিয়েছেন। এ জন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ উসকে দেয়ার অভিযোগে তাদের বিচার হওয়া উচিত। যদি তার কাছে প্রমাণ থাকে, র’ এ বিস্ফোরণের নেপথ্যে, তাহলে তারা কেন কেন্দ্রের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করছে না? এ বিষয়ে ডেরেক ও’ব্রায়েন টেলিগ্রাফ পত্রিকার কাছে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের এক সিনিয়র মন্ত্রী বলেছেন, আমি তো এ বিবৃতি দিই নি। যিনি ওই সব কথা বলেছেন আপনারা বরং তার সঙ্গেই কথা বলুন। অন্যের দেয়া বিবৃতি নিয়ে আমি কথা বলবো না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি ইস্যুকে রাজনীতি করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কিছু বিশ্লেষক। এর মধ্যে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, এ ইস্যুটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি ইস্যুতে ভারতে বিরোধপূর্ণ রাজনীতি হোক এমনটা আমি চাই না। ঢাকা ভিত্তিক আরেক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ বলেন, ভারতের একটি রাজ্যের একজন মুখ্যমন্ত্রীর অমন বক্তব্যে আমাদের দেশের কট্টরপন্থি শক্তিকে শক্তিশালী করবে এবং তাতে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আপস করতে হবে। এ মন্তব্যের প্রতিধ্বনি উঠেছে ভারতে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের মহাপরিচালক বেদ মারওয়া বলেছেন, মমতার মন্তব্যের নিন্দা জানানো উচিত। এমন কা-জ্ঞানহীন কথাবার্তার সুদূরপ্রসারী পরিণতি আছে। এতে ক্ষোভ বাড়বে। তরুণরা সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। একই সঙ্গে, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিতে রাজনৈতিক এ বিবৃতিকে ব্যবহার করা হতে পারে। বিচারপতি অজিত কুমার সিনহা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ওই বিবৃতি অসত্য। এর কোন ভিত্তি নেই। প্রমাণ ছাড়া এমন বক্তব্য দেয়া উচিত নয় তার।
No comments