ঢাকায় লতিফ সিদ্দিকীর ৪২ ঘণ্টা
নিউইয়র্ক থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকা এসে থামল
লতিফ সিদ্দিকীর ঝড়। এর আগেই ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছেন তিনি। উড়ে
গেছে মন্ত্রিত্ব, হারিয়েছেন প্রেসিডিয়াম এবং দলীয় সদস্য পদ। সব খুইয়ে প্রায়
নিঃস্ব লতিফ সিদ্দিকীর বর্তমান ঠিকানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। মঙ্গলবার
দুপুরের পর তাকে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগের ৪২ ঘণ্টা দাপটের
সঙ্গেই দখলে রেখেছিলেন গণমাধ্যমগুলো।
নিউইয়র্কের লতিফ সিদ্দিকী ঝড় কলকাতায় এসে কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছিল। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় নিস্তেজ হয়ে পড়া ঝড়ো হাওয়া গতি পথ পাল্টে ঢাকার দিকে এগোতে থাকে। রাত সাড়ে আটটার আগে আঘাত হানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় ফিরলে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছুটতে থাকেন বিমানবন্দরে। শুরু হয় তোলপাড়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই সাবেক মন্ত্রীর নাটকটি বিয়োগান্তক পরিণতির দিকে এগোতে থাকে। নাটকের ট্রাজিক হিরো আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। গোপনে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ছেলের বাসার সামনে দিয়ে বন্ধুর বাসা হয়ে সাবেক এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বেছে নেন ধানমণ্ডি থানা। থানা থেকে আদালত, সেখান থেকে কারাগার। এরপর যবনিকা।
রোববার রাত ৮টা ২১ মিনিট থেকে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৪২ ঘণ্টার ঘটনাক্রম প্রায় এমনই। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করায় দেশ-বিদেশে সর্বত্র ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় ২২টি মামলা হয়। জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। এই সাবেক মন্ত্রী ঢাকায় এলে বিশৃংখলার আশংকা দেখা দেয়। হরতালের ডাক দেয় বিভিন্ন সংগঠন।
সাবেক এই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী হযরত শাহজালাল (র) বিমানবন্দরে নেমেই তিনি যাকে ফোন করেন তার অবস্থান ছিল উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টর এলাকা। সেখান থেকে ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে আসেন শাহজালালের এক নম্বর আন্তর্জাতিক টার্মিনালে। এখান থেকে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের তিন নম্বর সড়কের একটি বাসায় যান। কিন্তু বাসায় ঢোকেননি। পরবর্তী ঠিকানা গুলশান বন্ধুর বাড়ি। এখানেই দুদিন অবস্থান করেন। বিমানবন্দর থেকে উত্তরা হয়ে গুলশান আসার পথে গোয়েন্দারা তাকে একবার হারিয়ে ফেলে। ওই ফোনকলের সূত্র ধরে তার সন্ধান পায় গোয়েন্দারা। সাবেক এ মন্ত্রীর দেশে ফেরায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে- এ আশংকায় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তার ওপর নজরদারি শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুলশান-১ নম্বরে তার বন্ধুর বাড়িতেই ডিএমপির একজন উপ-কমিশনার (ডিসি) মর্যাদার কর্মকর্তা তার সঙ্গে সোমবার রাতে দেখা করেন। ওই কর্মকর্তা লতিফ সিদ্দিকীকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, স্যার আপনার জন্য আত্মসমর্পণই হবে শ্রেয়।
ডিসির কথায় লতিফ সিদ্দিকী তখন কিছুটা ভেঙে পড়েন। বলেন, রাতে নয় দিনেই তিনি নিজে থানায় গিয়ে হাজির হবেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের এই উপ-কমিশনার লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থানের বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরকে অবহিত করেন। পুলিশ কর্মকর্তা গুলশানের ওই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন। তখন সাবেক এ মন্ত্রী এই কর্মকর্তাকে গলা জড়িয়ে ধরেন। বলেন, যাও ভালো থেকো, কাল আমি হাজির হচ্ছি। অবশেষে কথা রেখেছেন ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা সাবেক এই মন্ত্রী। তিনি মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় ধানমণ্ডি থানায় হাজির হন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি গুলশান-১ নম্বরের ওই বাসা থেকে বের হন। আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো একটি সিএনজি নিয়ে ধানমণ্ডির ১২ নম্বরের এক বাসায় গিয়ে কিছু সময় কাটান। নিচে দাঁড়ানো ছিল সিএনজি। পরে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ধানমণ্ডি থানায় প্রবেশ করেন। সাবেক মন্ত্রীকে থানায় প্রবেশ করতে দেখে আঁতকে ওঠেন প্রধান গেটের নিরাপত্তায় থাকা কনস্টেবল নূরুল ইসলাম। জিজ্ঞাসা করেন, স্যার, আপনি কোথায় যাবেন। এমপি নরম স্বরে বলেন আমাকে চিনো না? ওসির রুমে যাচ্ছি। তারপর তিনি সোজা ওসির রুমে যান। তখন কক্ষে থাকা ওসি সোজা হয়ে দাঁড়ান। সম্মান দিয়ে ওসি বলেন, স্যার সালাম। কেমন আছেন? উত্তরে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ভালো আর কই। ওসি বলেন, স্যার আমরা তো আপনাকেই খুঁজছি এলেন ভালোই হল। লতিফ সিদ্দিকী তখন বলেন, ওসি সাহেব ভাবলাম আপনাদের খুঁজতে কষ্ট হবে, তাই নিজেই চলে এলাম। আমি হাজির হলাম।
ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুবকর সিদ্দিক সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তার এই সাক্ষাৎ-আলাপের কথাগুলো যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন। ওসি বলেন, ধানমণ্ডি থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তাই তাকে তিনি আদালতে নিয়ে যান। ধানমণ্ডি থানার ওসি সাবেক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, স্যার এই থানায় তো আপনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা পরোয়ানা নেই? তাহলে আসলেন কেন? উত্তরে সাবেক মন্ত্রী বলেছেন, ইচ্ছে হল তাই এলাম।
কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার এই সদস্য কোন স্থান থেকে সঙ্গী হন লতিফ সিদ্দিকীর? এর উত্তর পাওয়া গেছে অপর এক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকেই। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, রোববার রাতে পুরোদমে নাটক করেছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী। তিনি উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে তিন নম্বর রোডে যাবেন বলে তার প্রাইভেটকার অনুসরণ করেন গোয়েন্দারা। হঠাৎ তার গাড়িটি হাওয়া হয়ে যায়। তারপর গোয়েন্দা টিমের একজন সদস্য উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করেন থানার কাছে লতিফ সিদ্দিকীর কোনো অবস্থানের তথ্য আছে কিনা। থানা থেকে বলা হয়, তাদের কাছে আগে থেকে কোনো বার্তা ছিল না। এ সময়ের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী গুলশানে তার বন্ধুর বাড়িতে চলে আসেন। গোয়েন্দারা তখন প্রযুক্তিগত তদন্ত চালিয়ে জানতে পারেন লতিফ সিদ্দিকী যাকে ফোন করে গাড়িসহ আসতে বলেছিলেন শাহজালাল বিমানবন্দরে তার অবস্থান গুলশানে। ওই সূত্র ধরে গভীর রাতে তারা সাবেক এ মন্ত্রীর অবস্থানের পিন পয়েন্ট চিহ্নিত করেন। ওই রাত থেকেই সেই গোয়েন্দা কর্মকর্তা লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গেই ছিলেন। সর্বশেষ তিনিই তাকে গুলশান থেকে ধানমণ্ডি থানা পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
লতিফ সিদ্দিকীকে ধানমণ্ডি থানার ওসির গাড়িতে করে আদালতে নেয়া হয়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা স্ট্রাইপ শার্ট, কালো প্যান্ট ও সাদা জুতো। তখন তার সঙ্গে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাবেক এ মন্ত্রীর দীর্ঘ সময় আলাপ হয়। এ সময় লতিফ সিদ্দিকী ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, উত্তরায় তার ছেলের বাসা ছিল সেখানেও যাননি। উত্তরাতে আরেক আত্মীয়ের বাাড়িতে তার ওঠার কথা ছিল সেখানে যাননি। তিনি গুলশানে তার বন্ধুর বাড়িতেই ছিলেন। আবার গুলশানেও ছেলে অনিক সিদ্দিকীর বাসা আছে সেখানেও যাননি। ওই কর্মকর্তাকে তিনি আরও জানিয়েছেন, মানুষের কখন যে কি হয়ে যায় বলা যায় না। এই যে আমি কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছি। আর কিছু না বলে লতিফ সিদ্দিকী ভেঙে পড়েন। অনেকক্ষণ গাড়িতেই চোখ বন্ধ করে থাকেন। চোখ খুলে বলেন, আর কত দূর আদালত? তখন ওই কর্মকর্তা বলেন, স্যার মাঝামাঝি এসেছি।
গাড়িতে থাকা ওই কর্মকর্তাকে বলেছেন, আমি জানি গোয়েন্দারা আমার পিছু নিয়েছেন। আমি তো ধরা দিতেই এসেছি। জানি এটা নিয়ে কোনো সমঝোতা নয়। আর আমি তা আশাও করিনি। এ জন্যই তো দেশে এসেছি। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, লতিফ সিদ্দিকী গুলশানের ওই বাড়িতে অবস্থানের পর সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। তারাও তাকে সাফ বলে দিয়েছেন- উপায় নেই, একমাত্র পথ আদালত। এদিকে লতিফ সিদ্দিকী গাড়িতে থাকা অবস্থায় ধানমণ্ডি থানার ওসিকে বলেছেন, ওসি সাহেব পানি আছে। তখন ওসি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, স্যার ফোটানো ভালো পানি আছে। পানি পান করে লতিফ সিদ্দিকী বোতলটি ওসির হাতে দিয়ে বলেন, থ্যাঙ্কস। ওসি বলেন, ওয়েলকাম স্যার।
ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ৪২ ঘণ্টায় লতিফ সিদ্দিকী অনেকের সঙ্গে শুধু পরামর্শ করেছেন। আর এ সময় পরিবারের লোকদের সঙ্গে তার কথা কমই হয়েছে। তিনি সরকারের উঁচু সারিতে থাকা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেউ তাকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। সবার সে ফ উচ্চারণ ছিল, আপনি আদালতে হাজির হন।
নিউইয়র্কের লতিফ সিদ্দিকী ঝড় কলকাতায় এসে কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছিল। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় নিস্তেজ হয়ে পড়া ঝড়ো হাওয়া গতি পথ পাল্টে ঢাকার দিকে এগোতে থাকে। রাত সাড়ে আটটার আগে আঘাত হানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় ফিরলে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছুটতে থাকেন বিমানবন্দরে। শুরু হয় তোলপাড়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই সাবেক মন্ত্রীর নাটকটি বিয়োগান্তক পরিণতির দিকে এগোতে থাকে। নাটকের ট্রাজিক হিরো আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। গোপনে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ছেলের বাসার সামনে দিয়ে বন্ধুর বাসা হয়ে সাবেক এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বেছে নেন ধানমণ্ডি থানা। থানা থেকে আদালত, সেখান থেকে কারাগার। এরপর যবনিকা।
রোববার রাত ৮টা ২১ মিনিট থেকে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৪২ ঘণ্টার ঘটনাক্রম প্রায় এমনই। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করায় দেশ-বিদেশে সর্বত্র ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় ২২টি মামলা হয়। জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। এই সাবেক মন্ত্রী ঢাকায় এলে বিশৃংখলার আশংকা দেখা দেয়। হরতালের ডাক দেয় বিভিন্ন সংগঠন।
সাবেক এই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী হযরত শাহজালাল (র) বিমানবন্দরে নেমেই তিনি যাকে ফোন করেন তার অবস্থান ছিল উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টর এলাকা। সেখান থেকে ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে আসেন শাহজালালের এক নম্বর আন্তর্জাতিক টার্মিনালে। এখান থেকে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের তিন নম্বর সড়কের একটি বাসায় যান। কিন্তু বাসায় ঢোকেননি। পরবর্তী ঠিকানা গুলশান বন্ধুর বাড়ি। এখানেই দুদিন অবস্থান করেন। বিমানবন্দর থেকে উত্তরা হয়ে গুলশান আসার পথে গোয়েন্দারা তাকে একবার হারিয়ে ফেলে। ওই ফোনকলের সূত্র ধরে তার সন্ধান পায় গোয়েন্দারা। সাবেক এ মন্ত্রীর দেশে ফেরায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে- এ আশংকায় একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তার ওপর নজরদারি শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুলশান-১ নম্বরে তার বন্ধুর বাড়িতেই ডিএমপির একজন উপ-কমিশনার (ডিসি) মর্যাদার কর্মকর্তা তার সঙ্গে সোমবার রাতে দেখা করেন। ওই কর্মকর্তা লতিফ সিদ্দিকীকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, স্যার আপনার জন্য আত্মসমর্পণই হবে শ্রেয়।
ডিসির কথায় লতিফ সিদ্দিকী তখন কিছুটা ভেঙে পড়েন। বলেন, রাতে নয় দিনেই তিনি নিজে থানায় গিয়ে হাজির হবেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের এই উপ-কমিশনার লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থানের বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরকে অবহিত করেন। পুলিশ কর্মকর্তা গুলশানের ওই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন। তখন সাবেক এ মন্ত্রী এই কর্মকর্তাকে গলা জড়িয়ে ধরেন। বলেন, যাও ভালো থেকো, কাল আমি হাজির হচ্ছি। অবশেষে কথা রেখেছেন ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা সাবেক এই মন্ত্রী। তিনি মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় ধানমণ্ডি থানায় হাজির হন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি গুলশান-১ নম্বরের ওই বাসা থেকে বের হন। আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো একটি সিএনজি নিয়ে ধানমণ্ডির ১২ নম্বরের এক বাসায় গিয়ে কিছু সময় কাটান। নিচে দাঁড়ানো ছিল সিএনজি। পরে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ধানমণ্ডি থানায় প্রবেশ করেন। সাবেক মন্ত্রীকে থানায় প্রবেশ করতে দেখে আঁতকে ওঠেন প্রধান গেটের নিরাপত্তায় থাকা কনস্টেবল নূরুল ইসলাম। জিজ্ঞাসা করেন, স্যার, আপনি কোথায় যাবেন। এমপি নরম স্বরে বলেন আমাকে চিনো না? ওসির রুমে যাচ্ছি। তারপর তিনি সোজা ওসির রুমে যান। তখন কক্ষে থাকা ওসি সোজা হয়ে দাঁড়ান। সম্মান দিয়ে ওসি বলেন, স্যার সালাম। কেমন আছেন? উত্তরে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ভালো আর কই। ওসি বলেন, স্যার আমরা তো আপনাকেই খুঁজছি এলেন ভালোই হল। লতিফ সিদ্দিকী তখন বলেন, ওসি সাহেব ভাবলাম আপনাদের খুঁজতে কষ্ট হবে, তাই নিজেই চলে এলাম। আমি হাজির হলাম।
ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুবকর সিদ্দিক সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তার এই সাক্ষাৎ-আলাপের কথাগুলো যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন। ওসি বলেন, ধানমণ্ডি থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তাই তাকে তিনি আদালতে নিয়ে যান। ধানমণ্ডি থানার ওসি সাবেক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, স্যার এই থানায় তো আপনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা পরোয়ানা নেই? তাহলে আসলেন কেন? উত্তরে সাবেক মন্ত্রী বলেছেন, ইচ্ছে হল তাই এলাম।
কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার এই সদস্য কোন স্থান থেকে সঙ্গী হন লতিফ সিদ্দিকীর? এর উত্তর পাওয়া গেছে অপর এক গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকেই। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, রোববার রাতে পুরোদমে নাটক করেছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী। তিনি উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে তিন নম্বর রোডে যাবেন বলে তার প্রাইভেটকার অনুসরণ করেন গোয়েন্দারা। হঠাৎ তার গাড়িটি হাওয়া হয়ে যায়। তারপর গোয়েন্দা টিমের একজন সদস্য উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করেন থানার কাছে লতিফ সিদ্দিকীর কোনো অবস্থানের তথ্য আছে কিনা। থানা থেকে বলা হয়, তাদের কাছে আগে থেকে কোনো বার্তা ছিল না। এ সময়ের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী গুলশানে তার বন্ধুর বাড়িতে চলে আসেন। গোয়েন্দারা তখন প্রযুক্তিগত তদন্ত চালিয়ে জানতে পারেন লতিফ সিদ্দিকী যাকে ফোন করে গাড়িসহ আসতে বলেছিলেন শাহজালাল বিমানবন্দরে তার অবস্থান গুলশানে। ওই সূত্র ধরে গভীর রাতে তারা সাবেক এ মন্ত্রীর অবস্থানের পিন পয়েন্ট চিহ্নিত করেন। ওই রাত থেকেই সেই গোয়েন্দা কর্মকর্তা লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গেই ছিলেন। সর্বশেষ তিনিই তাকে গুলশান থেকে ধানমণ্ডি থানা পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
লতিফ সিদ্দিকীকে ধানমণ্ডি থানার ওসির গাড়িতে করে আদালতে নেয়া হয়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা স্ট্রাইপ শার্ট, কালো প্যান্ট ও সাদা জুতো। তখন তার সঙ্গে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাবেক এ মন্ত্রীর দীর্ঘ সময় আলাপ হয়। এ সময় লতিফ সিদ্দিকী ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, উত্তরায় তার ছেলের বাসা ছিল সেখানেও যাননি। উত্তরাতে আরেক আত্মীয়ের বাাড়িতে তার ওঠার কথা ছিল সেখানে যাননি। তিনি গুলশানে তার বন্ধুর বাড়িতেই ছিলেন। আবার গুলশানেও ছেলে অনিক সিদ্দিকীর বাসা আছে সেখানেও যাননি। ওই কর্মকর্তাকে তিনি আরও জানিয়েছেন, মানুষের কখন যে কি হয়ে যায় বলা যায় না। এই যে আমি কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছি। আর কিছু না বলে লতিফ সিদ্দিকী ভেঙে পড়েন। অনেকক্ষণ গাড়িতেই চোখ বন্ধ করে থাকেন। চোখ খুলে বলেন, আর কত দূর আদালত? তখন ওই কর্মকর্তা বলেন, স্যার মাঝামাঝি এসেছি।
গাড়িতে থাকা ওই কর্মকর্তাকে বলেছেন, আমি জানি গোয়েন্দারা আমার পিছু নিয়েছেন। আমি তো ধরা দিতেই এসেছি। জানি এটা নিয়ে কোনো সমঝোতা নয়। আর আমি তা আশাও করিনি। এ জন্যই তো দেশে এসেছি। গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, লতিফ সিদ্দিকী গুলশানের ওই বাড়িতে অবস্থানের পর সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। তারাও তাকে সাফ বলে দিয়েছেন- উপায় নেই, একমাত্র পথ আদালত। এদিকে লতিফ সিদ্দিকী গাড়িতে থাকা অবস্থায় ধানমণ্ডি থানার ওসিকে বলেছেন, ওসি সাহেব পানি আছে। তখন ওসি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, স্যার ফোটানো ভালো পানি আছে। পানি পান করে লতিফ সিদ্দিকী বোতলটি ওসির হাতে দিয়ে বলেন, থ্যাঙ্কস। ওসি বলেন, ওয়েলকাম স্যার।
ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ৪২ ঘণ্টায় লতিফ সিদ্দিকী অনেকের সঙ্গে শুধু পরামর্শ করেছেন। আর এ সময় পরিবারের লোকদের সঙ্গে তার কথা কমই হয়েছে। তিনি সরকারের উঁচু সারিতে থাকা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কেউ তাকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। সবার সে ফ উচ্চারণ ছিল, আপনি আদালতে হাজির হন।
No comments