চীন সাগরে নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বীপ
দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত জলসীমায় দ্বীপ বানাচ্ছে চীন। বিতর্কিত জলসীমার ঠিক মাঝখানে এই দ্বীপে বিমানঘাঁটি নির্মাণ করবে দেশটি। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগস্টে দক্ষিণ চীন সাগরের সপ্রাটলি দ্বীপ নিয়ে নিজেদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করার পর থেকে এখানে বিমান ওঠানামা করার উপযোগী করতে ভূমি বিস্তার করা শুরু হয়েছে। এছাড়া, যুদ্ধবিমান ও ট্যাংকার রাখার মতো পোতাশ্রয় নির্মাণ করা হচ্ছে শৈলশিরার পূর্বদিকে। ফিয়েরি ক্রস নামের এই শৈলশিরাটিও বিতর্কিত দ্বীপমালার অন্তর্ভুক্ত। এ খবর দিয়েছে বৃটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল। বৃটিশ নাবিক রিচার্ড সপ্রাটলি ১৮৪৩ সালে এই দ্বীপমালা আবিষ্কার করায় এর নামকরণ হয়েছে তার নামে। দ্বীপটি ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মাঝামাঝি। কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে চীনা বাহিনী। অনেকে আশঙ্কা করে, চীন খনিজসমৃদ্ধ এই দ্বীপমালাকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করবে। গত আগস্ট থেকেই চীনা কর্তৃপক্ষ দ্বীপটিকে নিজেদের বলে আবারও দাবি করে। এখানকার প্রায় ৭৫০টি ছোট দ্বীপ ও শৈলশিরা চীনা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। তবে দক্ষিণ চীন সাগরে দেশটির নিজস্ব কোন বিমানঘাঁটি ছিল না। কিন্তু এ দ্বীপকে নিজেদের বলে দাবি করা অন্যান্য দেশ, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনের নিজস্ব বিমানঘাঁটি রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে। হংকং ডিফেন্স পাবলিকেশন্স-এ প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ফিয়েরি ক্রস শৈলশিরার পোতাশ্রয় নির্মাণের জন্য খনন করা শুরু হয়েছে। পোতাশ্রয়ে সামরিক ট্যাংকার রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। এছাড়া জনসন সাউথ, চুয়াটেরন, গাভেন শৈলশিরাগুলোও বিস্তার করা হচ্ছে। তবে ফিয়েরি ক্রসই কেবলমাত্র বিমানঘাঁটি বানানোর মতো বড়। চীনা বিমানবাহিনীর কর্নেল চিন চিরুই সেখানে বিমানঘাঁটি বানানোর পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে স্থাপনা নির্মাণ করা কৌশলগত কারণে চীনের জন্য জরুরি ছিল। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য আমাদের অবদান রাখা উচিত। এছাড়া রাডার ও গোয়েন্দা তথ্যের মতো সহায়তাও আমাদের দরকার। সপার্টলি দ্বীপে চীনের প্রশ্নাতীত সার্বভৌমত্ব রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ এ অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করলেও, এর বৃহদাংশই চীনের দখলে। ২০০০ বছর পুরোনো এই ভূমিকে চীন নিজেদের ইতিহাসের অংশ বলে মনে করে। অপরদিকে তাইওয়ানও এই দ্বীপমালাকে নিজেদের দাবি করে। তাইপিং নামের দ্বীপে তাদের একটি নিজস্ব বিমানঘাঁটিও রয়েছে। ভিয়েতনাম বলছে, ১৭ শতক থেকে তারাই এ অঞ্চল শাসন করেছে। অপরদিকে যে সব দেশ এই দ্বীপ দাবি করে, তাদের মধ্যে ফিলিপাইনের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত এটি। ফিলিপাইন তাই একে নিজেদের বলে মনে করে। ১৯৭৪ সালে চীনা বাহিনী ভিয়েতনাম থেকে দ্বীপটি দখল করে নেয়। তখন ভিয়েতনামের ৭০ সেনা মারা যায়। এরপর ১৯৮৮ সালে আবার এই দ্বীপ নিয়ে দুই দেশের সংঘর্ষ হলে ভিয়েতনামের ৬০ জন সেনা মারা যায়। এখানে গজিয়ে ওঠা বালুচর নিয়ে ২০১২ সালে দেশ দু’টির মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। ফিলিপাইন এই দ্বীপমালাকে ডাকে পানাতাং নামে। দক্ষিণ চীন সাগরে দেশটির সর্ববৃহৎ যুদ্ধবিমান নিয়োজিত। দ্বীপ নিয়ে বিরোধিতার জেরে চীনকে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল ভিয়েতনাম।
No comments