নেপালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি যা বললেন
চীন যখন আস্তে আস্তে প্রভাব বিস্তার করছে তখন এ অঞ্চলে ভারত নেতৃত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। নেপালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আস্তে আস্তে একত্রিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। রেল, সড়ক, বিদ্যুৎ ও ট্রানজিটের মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক গাঢ়ো করেছে। বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করেছে ভারত ও নেপাল। ভুটানের সঙ্গেও ক্রমান্বয়ে সম্পর্ক গাঢ়ো হচ্ছে। তেলের জন্য মালদ্বীপের সঙ্গে শিগগিরই শুরু হবে নতুন এক উদ্যোগ। দূরত্ব ও জটিলতা দূরে রাখবে না আফগানিস্তানকে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রয়েছে বাস ও রেল যোগাযোগ। দক্ষিণ এশিয়ার অংশীদারদের শতকরা ৯৯.৭ ভাগ পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে ভারত। তিনি বলেন, ভারতের দৃষ্টিতে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা দাঁড়িয়ে আছে ৫টি স্তম্ভের ওপর। তা হলোÑ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সহায়তা, প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও কানেকটিভিটি বা সংযুক্ত থাকা। সম্মেলন শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার চীন ও অন্যান্য পর্যবেক্ষক দেশকে সার্কে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়ার আহ্বান তোলে পাকিস্তান। এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেয় ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবারউদ্দিন বলেন, প্রথমে আমাদেরকে সার্ক সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। এরপর অন্যান্য চিন্তা আসতে পারে। নরেন্দ্র মোদি তার সার্ক ভাষণে বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে রয়েছে বলিষ্ঠ গণতন্ত্র। রয়েছে শক্তিশালী উত্তরাধিকার। রয়েছে শক্তিধর তারুণ্য। রয়েছে পরিবর্তন ও উন্নতির উদগ্র বাসনা। গত কয়েক মাসে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছি। সব খানে দেখেছি সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি। তিনি বলেন, আমরা ছোট হই বা বড় হই সবাই একই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। তা হলো উন্নয়নের চূড়ায় আরোহন। ৩০ বছর আগে সার্কের সূচনা। তখন থেকে আমরা দীর্ঘ পথ একসঙ্গে পাড়ি দিয়েছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতার একটি চুক্তি, একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে আমাদের। যখনই আমরা সার্কের কথা বলি শুনতে পাই দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া। এক হলো নৈরাশ্যবাদ ও অন্যটি হলো সংশয়। বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের শতকরা ৫ ভাগেরও কম বাণিজ্য হয় আমাদের মধ্যে। এর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগেরও কম আন্তঃবাণিজ্য হয় সার্ক ফ্রি ট্রেড এরিয়ার অধীনে। ভারতীয় কোম্পানিগুলো বিদেশে বিনিয়োগ করছে কোটি কোটি ডলার। কিন্তু শতকরা ১ ভাগেরও কম আসছে আমাদের এ অঞ্চলে। ব্যাংক বা সিঙ্গাপুর সফরের চেয়ে এখনও এ অঞ্চলের মধ্যে সফর করা কঠিন। একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও খরচ বেশি। এক দশকেরও বেশি সময় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত প্রায় ৮০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। আমরা প্রত্যেকে আমাদের মতো করে উদ্যোগ নিয়েছি। জনগণের প্রত্যাশা মতো গতিতে সার্ককে এগিয়ে নিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এর কারণ, আঞ্চলিক উন্নয়নে ফারাক। এটা হয়েছে এ জন্য যে, আমরা আমাদের মধ্যকার পার্থক্যের মাঝে আটকে আছি। অতীতের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে দ্বিধা করি। এভাবে আমাদের এই মতপার্থক্যের সমাধান হবে না। এখন এক পাঞ্জাব থেকে আরেক পাঞ্জাবে পণ্য পাঠাতে হলে দিল্লি, মুম্বই, দুবাই ও করাচি হয়ে যেতে হয়। সরাসরি যোগাযোগের চেয়ে এতে ১১ গুণ বেশি সময় লাগে। খরচও বেশি হয় চার গুন। আকার ও অবস্থানের কারণে ভারতের কিছু দায়িত্ব আছে। আমি জানি ভারতকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এতে আমরা আমাদের কাজ করব। আমি আশা করব, আপনারা প্রত্যেকেই সেই চেষ্টা করবেন। নরেন্দ্র মোদি আঞ্চলিক অবকাঠামোর দুর্বলতা ও তার উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা ভারতে বাণিজ্য সহজ করার কথা বলছি। এ উদ্যোগকে এ অঞ্চলে বিস্তৃত করা উচিত। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, সীমান্তে আমাদের বাণিজ্যের সেবার গতি বাড়বে। এখন সার্কের জন্য ভারত বাণিজ্য ভিসা দেবে ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য। বাণিজ্য সহজ করার জন্য তিনি সার্ক বিজনেস ট্রাভেলার কার্ড সহজ করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের প্রতিটি শহর ও গ্রামকে আলোকিত করতে পারি তাহলে আগামীদিনে আমরা এ অঞ্চলকে আরও উজ্জ্বল করে গড়ে তুলতে পারবো। তা যদি না হয় তাহলে ভবিষ্যতে মহাশূন্য থেকে কেউ আমাদের দিকে তাকিয়ে বলবে, এটা বিশ্বের সবচেয়ে অন্ধকারময় স্থান। আমরা যেসব বিনিয়োগ করি বা বাণিজ্য করি তার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যুৎকে নিত্যপ্রয়োজনীয় উপাদানের মতো ভাবতে হবে। এ অঞ্চলে এমন উদ্যোগে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দেবে ভারত। আমাদেরকে সৌরশক্তি ব্যবহারে উচ্চাকাক্সক্ষী হতে হবে। আমাদের এ অঞ্চলের একটি দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে যদি অন্য দেশের নাগরিকের সম্পর্ক গড়তে পারি তাহলে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। এ জন্যই রেল ও সড়ক পথে কানেক্টিভিটি বা সংযুক্তকরণ এতটা জরুরি। আকাশ পথেও আমাদের আরও বেশি সংযুক্ত থাকতে হবে। এ অঞ্চলে যারা আশাহীন অবস্থায় বেঁচে আছেন তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়ার দায়িত্বও আমাদের। টিবি ও এইচআইভির মতো রোগের চিকিৎসায় সার্ক রিজিওনাল সুপ্রা রিফারেন্স ল্যাবরেটরি স্থাপনে তহবিলে যে খাতটি থাকবে তা দেবে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের জন্য একের ভেতর পাঁচ এমন টীকা দিচ্ছি আমরা। পোলিওমুক্ত দেশের দিকে নজরদারি সমর্থন করি আমরা। যারা চিকিৎসার জন্য ভারত আসছেন সেসব রোগী ও তাদের সঙ্গীদের অবিলম্বে মেডিকেল ভিসা দেয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার সব বাধা দূর করেছে। অনলাইন ইংলিশ কোর্ট এবং ই-লাইব্রেরির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে প্রস্তুত ভারত। আমরা ভারতে ন্যাশনাল নলেজ নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে পারলেই এবং তা সার্কের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে খুশি হবো। দক্ষিণ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি স্থাপনের একটি স্বপ্ন নয়া দিল্লিতে বাস্তব রূপ নিয়েছে। সার্কের জন্য একটি স্যাটেলাইট যদি ভারত স্থাপন করতে পারে তাহলে শিক্ষা, টেলিমেডিসিন, দুর্যোগ, সম্পদের ব্যবহার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে তা অন্য সবাইকে সহযোগিতা করবে।
No comments