নীতি–পরিকল্পনা সমন্বিত হতে হবে: পিআরআইয়ের আলোচনায় অধ্যাপক নূরুল ইসলাম
অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে খাতওয়ারি যেকোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন করার দায়িত্ব কোনো একক মন্ত্রণালয়ের হাতে দেওয়া উচিত নয়; বরং খসড়া পরিকল্পনা প্রণয়ন, মতামত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সমন্বিত ইউনিট তৈরি করা যেতে পারে। প্রয়োজনে এ ধরনের সব নীতি প্রণয়নের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ও থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবার মত নিয়েই যেকোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
>>পিআরআইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল ইসলাম (সর্বডানে)
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নীতিনির্ধারণ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গতকাল শনিবার দেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) ইমেরিটাস রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি একমত প্রকাশ করেন সভায় উপস্থিত অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যাংকাররা। বনানীর পিআরআই কার্যালয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক ইসলামের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তাদের অনেকে বলেন, কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহি না থাকলে কিংবা আইনের শাসন না থাকলে কোনো নীতিই কার্যকর করা যাবে না।
শক্তিশালী পরিকল্পনা প্রণয়নের উদাহরণ হিসেবে অধ্যাপক ইসলাম মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।
জনাব ইসলামের মতে, এ দেশে সব রাজনৈতিক সরকারই তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করে থাকে, যা গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা। আর তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করা হলে কর্মকর্তাদের দক্ষতা থাকলেও তা কাজে লাগবে না।
রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কৌশল জানার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আই জি প্যাটেলের জীবনী পড়ার জন্য সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানকে পরামর্শ দেন অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পরিকল্পনা কমিশন, পরিসংখ্যান বিভাগের স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি ও এসব প্রতিষ্ঠান একে অপরের পরিপূরক।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে, পরিসংখ্যান এখন মূলধনের মতো। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র উঠে আসে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘যে দেশে পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য নয়, সে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য হবে কীভাবে?’
ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা সম্পর্কে মাহমুদ বলেন, ‘সব সরকারের আমলেই কিছু লোককে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিধা দেওয়া হয়। আমাদের ব্যাংকিং খাতেও কিছু “দুষ্টু” ছেলে আছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানকে (নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা) বলা হয়, আমার “দুষ্টু” ছেলেকে দুষ্টামি করার সুযোগ দাও। আর বাকিদের ক্ষেত্রে কঠোর হও। তখন দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানই দুষ্টামি শুরু করে দেয়।’
নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ থাকে—এ কথা স্বীকার করেন গভর্নর আতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যখন নীতি নির্ধারণ করতে গেল, তখন বাইরের অনেক চাপ সামলাতে হয়েছে। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার সময়ও চাপ সামলাতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো চাপ সামলাতে পেরেছে, তা নয়। তবে আমরা চেষ্টা করেছি।’ তবে কারা চাপ দিয়েছিল, তা তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য-উপাত্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের উদাহরণ দিয়ে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার সময়ে দেখেছি, বিবিএস মূল্যস্ফীতির তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, রাখো তিন দিন, তথ্য-উপাত্ত দেখি। তবে এখন এমন হয় কি না জানি না।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। রাজনৈতিক কারণেই যেকোনো পরিকল্পনায় অর্জনযোগ্য লক্ষ্যের চেয়ে বেশি মাত্রায় লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলমের মতে, যেকোনো নীতি প্রণয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তবে একটা অদ্ভুত ও অদ্বিতীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো ১৯৭১ সালে আটকে আছে। যাদের চাপে গণতন্ত্র ও সুশাসন আসবে, তাঁরা এখন ব্যস্ত আছেন ‘জাতীয়তা’, ‘জাতির জনক’, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ এসব বিষয় নিয়ে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এসব বিতর্ক ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অনুষ্ঠানের মূল আলোচক অধ্যাপক নূরুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনাকে যদি আবার পরিকল্পনা কমিশনে ফিরিয়ে আনা হতো, তাহলে কী করতেন? পরিকল্পনা কমিশনে ডেপুটি চেয়ারম্যান থাকাকালে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে কতটা সমন্বয় করেছিলেন?’ অবশ্য এর উত্তর দেননি অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।
আলোচনায় আরও অংশ নেন অর্থনীতিবিদ মহিউদ্দিন আলমগীর, সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী ও গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন, পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার, ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমদ, নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।
অধ্যাপক ইসলামের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তাদের অনেকে বলেন, কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহি না থাকলে কিংবা আইনের শাসন না থাকলে কোনো নীতিই কার্যকর করা যাবে না।
শক্তিশালী পরিকল্পনা প্রণয়নের উদাহরণ হিসেবে অধ্যাপক ইসলাম মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।
জনাব ইসলামের মতে, এ দেশে সব রাজনৈতিক সরকারই তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করে থাকে, যা গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা। আর তথ্য-উপাত্ত বিকৃত করা হলে কর্মকর্তাদের দক্ষতা থাকলেও তা কাজে লাগবে না।
রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কৌশল জানার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আই জি প্যাটেলের জীবনী পড়ার জন্য সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানকে পরামর্শ দেন অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পরিকল্পনা কমিশন, পরিসংখ্যান বিভাগের স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি ও এসব প্রতিষ্ঠান একে অপরের পরিপূরক।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে, পরিসংখ্যান এখন মূলধনের মতো। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র উঠে আসে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘যে দেশে পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য নয়, সে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য হবে কীভাবে?’
ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা সম্পর্কে মাহমুদ বলেন, ‘সব সরকারের আমলেই কিছু লোককে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিধা দেওয়া হয়। আমাদের ব্যাংকিং খাতেও কিছু “দুষ্টু” ছেলে আছে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানকে (নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা) বলা হয়, আমার “দুষ্টু” ছেলেকে দুষ্টামি করার সুযোগ দাও। আর বাকিদের ক্ষেত্রে কঠোর হও। তখন দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানই দুষ্টামি শুরু করে দেয়।’
নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর চাপ থাকে—এ কথা স্বীকার করেন গভর্নর আতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যখন নীতি নির্ধারণ করতে গেল, তখন বাইরের অনেক চাপ সামলাতে হয়েছে। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার সময়ও চাপ সামলাতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো চাপ সামলাতে পেরেছে, তা নয়। তবে আমরা চেষ্টা করেছি।’ তবে কারা চাপ দিয়েছিল, তা তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য-উপাত্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের উদাহরণ দিয়ে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার সময়ে দেখেছি, বিবিএস মূল্যস্ফীতির তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, রাখো তিন দিন, তথ্য-উপাত্ত দেখি। তবে এখন এমন হয় কি না জানি না।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে সমন্বয় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। রাজনৈতিক কারণেই যেকোনো পরিকল্পনায় অর্জনযোগ্য লক্ষ্যের চেয়ে বেশি মাত্রায় লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলমের মতে, যেকোনো নীতি প্রণয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তবে একটা অদ্ভুত ও অদ্বিতীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি এখনো ১৯৭১ সালে আটকে আছে। যাদের চাপে গণতন্ত্র ও সুশাসন আসবে, তাঁরা এখন ব্যস্ত আছেন ‘জাতীয়তা’, ‘জাতির জনক’, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ এসব বিষয় নিয়ে। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এসব বিতর্ক ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অনুষ্ঠানের মূল আলোচক অধ্যাপক নূরুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনাকে যদি আবার পরিকল্পনা কমিশনে ফিরিয়ে আনা হতো, তাহলে কী করতেন? পরিকল্পনা কমিশনে ডেপুটি চেয়ারম্যান থাকাকালে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে কতটা সমন্বয় করেছিলেন?’ অবশ্য এর উত্তর দেননি অধ্যাপক নূরুল ইসলাম।
আলোচনায় আরও অংশ নেন অর্থনীতিবিদ মহিউদ্দিন আলমগীর, সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী ও গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন, পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার, ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমদ, নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।
No comments