বরিশালে ছাত্রলীগের বেপরোয়া টেন্ডারবাজি
বেপরোয়া টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত বরিশাল ছাত্রলীগ। বিভিন্ন দফতরের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার দখলে তারা এখন এতটাই মরিয়া যে, এ নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে প্রায়শই সংঘাত-সংঘর্ষ বাধছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ বিষয়টি নিয়ে। যদিও কিছু বলছেন না তারা। টেন্ডার প্রশ্নে তাদেরও যে অসম্মান করে সংগঠনটি। পাশাপাশি সরকারি দফতরগুলোর কর্মকর্তারা হচ্ছেন রোষানলের শিকার।
ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ এখন সরকারি দফতরে। বিশেষ করে যেখানে রয়েছে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। কাকডাকা ভোর থেকে সূর্যাস্ত, পুরো সময়টাই নেতাকর্মীদের দেখা মেলে এসব জায়গায়।
সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন জীবিত থাকাকালে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। টেন্ডার দাখিল, লটারিতে বাধা অথবা কৌশলে নিজেদের ইচ্ছেমতো সাজানো লটারির মাধ্যমে কাজ দখল আর জোর করে গুছ’র মাধ্যমে কাজ হাতিয়ে নেয়া- সবকিছুই করছে ছাত্রলীগ।
হিরনের জীবদ্দশায় একাজে অগ্রভাগে ছিল তুষার-জসিম গ্র“প। বিএম কলেজের ভিপি মঈন তুষার এবং মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিমউদ্দিন মিলেমিশে করতেন সবকিছু। সঙ্গে ছিলেন বিএম কলেজের জিএস নাহিদ সেরনিয়াবাত। মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা তখন অনেকটাই কোনঠাসা।
হিরনের মৃত্যুর পর কিছুটা চুপচাপ তুষার-নাহিদ। তবে অবস্থান বদলে নিজের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করেন জসিম। জোট বাঁধেন হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ অসীমের সঙ্গে। এ নিয়ে তুষার-নাহিদদের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়।
এ সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকে মাথা তোলেন টেন্ডার প্রশ্নে। বরিশাল নগরীর একসময়কার আতংক এমন সাবেক ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাও রয়েছেন এ তালিকায়। ভেঙে যায় সংগঠনের চেইন অব কমান্ড। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শিকেয় তুলে পুরোদমে টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতারা। কেবল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত কিছুটা পিছিয়ে।
বেশ কয়েকজন ঠিকাদার যুগান্তরকে বলেন, গত ৫ মাসে নগরীর বিভিন্ন দফতরে যত টেন্ডার হয়েছে তার সব ক’টিতেই নাক গলিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। সিডিউল জমা দিয়ে লটারির মাধ্যমে কাজ নিলে জটিলতা ছিল না। কিন্তু তাদের টার্গেটই থাকে কাজ ছিনিয়ে নেয়ার। গুছ’র নামে সাধারণ ঠিকাদারদের সিডিউল তুলে নিতে বাধ্য করাসহ হেন কাজ নেই যা তারা করে না। জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু দিন আগে নগরীর রুপাতলী এলাকায় স্টল নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হলে সেখান থেকে ৪টি স্টল দাবি করেন মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা। দাফতরিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টির সমাধান করা হবে বলে জানানো হলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরাসরি হুমকি দেন তিনি। এ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্মারকলিপি দেয়ান এ ছাত্রলীগ নেতা। সাধারণ ঠিকাদারদের বের করে দিয়ে নিজেদের মতো লটারি করে গত মাসের শেষের দিকে জেলা পরিষদের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার টেন্ডার হাতিয়ে নেয় তারা। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট দফতর। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ২৩ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ঘটে সংঘর্ষ।
একাধিক সাধারণ ঠিকাদার যুগান্তরকে বলেন, ‘জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতার কথামতো সিডিউল জমা দেয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনে সিডিউল তুলে পর্যন্ত নিতে হয়। আর কথা না শুনলেই শুরু হয় নানাভাবে হয়রানি-হেনস্থা। টেন্ডার মনেই এখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ আর তাদের পেশিশক্তি প্রদর্শন।’
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান বলেন, ‘টেন্ডারে ছাত্রলীগ নেতাদের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার জন্য মূলত সিনিয়র নেতারা দায়ী। তারা যদি সমবণ্টন করে দিতেন তাহলে আমরা ঘরে বসেই কাজ পেতাম। সেক্ষেত্রে আর আমাদের সরকারি দফতরগুলোতে যেতে হতো না।’ ছাত্রলীগ কর্মীরা পড়াশোনা করবে, ক্যাম্পাসে থাকবে, তাদের ঠিকাদারি করতে হবে কেন? জবাবে অসীম বলেন, ‘সংগঠন পরিচালনা করতে অর্থের দরকার। তাছাড়া আমরা এখন আর আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন নই যে, মূল দলের নেতাদের কাছে হাত পাতব। সংগঠন চালাতে টাকা চাই। আর সেই টাকার জোগান আসার উপায় হচ্ছে ঠিকাদারি। তবে বেপরোয়া টেন্ডারবাজির অভিযোগ সঠিক নয়।’
ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ এখন সরকারি দফতরে। বিশেষ করে যেখানে রয়েছে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। কাকডাকা ভোর থেকে সূর্যাস্ত, পুরো সময়টাই নেতাকর্মীদের দেখা মেলে এসব জায়গায়।
সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন জীবিত থাকাকালে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। টেন্ডার দাখিল, লটারিতে বাধা অথবা কৌশলে নিজেদের ইচ্ছেমতো সাজানো লটারির মাধ্যমে কাজ দখল আর জোর করে গুছ’র মাধ্যমে কাজ হাতিয়ে নেয়া- সবকিছুই করছে ছাত্রলীগ।
হিরনের জীবদ্দশায় একাজে অগ্রভাগে ছিল তুষার-জসিম গ্র“প। বিএম কলেজের ভিপি মঈন তুষার এবং মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিমউদ্দিন মিলেমিশে করতেন সবকিছু। সঙ্গে ছিলেন বিএম কলেজের জিএস নাহিদ সেরনিয়াবাত। মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা তখন অনেকটাই কোনঠাসা।
হিরনের মৃত্যুর পর কিছুটা চুপচাপ তুষার-নাহিদ। তবে অবস্থান বদলে নিজের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করেন জসিম। জোট বাঁধেন হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ অসীমের সঙ্গে। এ নিয়ে তুষার-নাহিদদের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ হয়।
এ সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকে মাথা তোলেন টেন্ডার প্রশ্নে। বরিশাল নগরীর একসময়কার আতংক এমন সাবেক ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাও রয়েছেন এ তালিকায়। ভেঙে যায় সংগঠনের চেইন অব কমান্ড। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শিকেয় তুলে পুরোদমে টেন্ডারবাজিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতারা। কেবল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাত কিছুটা পিছিয়ে।
বেশ কয়েকজন ঠিকাদার যুগান্তরকে বলেন, গত ৫ মাসে নগরীর বিভিন্ন দফতরে যত টেন্ডার হয়েছে তার সব ক’টিতেই নাক গলিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। সিডিউল জমা দিয়ে লটারির মাধ্যমে কাজ নিলে জটিলতা ছিল না। কিন্তু তাদের টার্গেটই থাকে কাজ ছিনিয়ে নেয়ার। গুছ’র নামে সাধারণ ঠিকাদারদের সিডিউল তুলে নিতে বাধ্য করাসহ হেন কাজ নেই যা তারা করে না। জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু দিন আগে নগরীর রুপাতলী এলাকায় স্টল নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হলে সেখান থেকে ৪টি স্টল দাবি করেন মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা। দাফতরিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টির সমাধান করা হবে বলে জানানো হলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরাসরি হুমকি দেন তিনি। এ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্মারকলিপি দেয়ান এ ছাত্রলীগ নেতা। সাধারণ ঠিকাদারদের বের করে দিয়ে নিজেদের মতো লটারি করে গত মাসের শেষের দিকে জেলা পরিষদের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার টেন্ডার হাতিয়ে নেয় তারা। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট দফতর। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ২৩ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ঘটে সংঘর্ষ।
একাধিক সাধারণ ঠিকাদার যুগান্তরকে বলেন, ‘জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতার কথামতো সিডিউল জমা দেয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনে সিডিউল তুলে পর্যন্ত নিতে হয়। আর কথা না শুনলেই শুরু হয় নানাভাবে হয়রানি-হেনস্থা। টেন্ডার মনেই এখন ছাত্রলীগ-যুবলীগ আর তাদের পেশিশক্তি প্রদর্শন।’
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান বলেন, ‘টেন্ডারে ছাত্রলীগ নেতাদের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার জন্য মূলত সিনিয়র নেতারা দায়ী। তারা যদি সমবণ্টন করে দিতেন তাহলে আমরা ঘরে বসেই কাজ পেতাম। সেক্ষেত্রে আর আমাদের সরকারি দফতরগুলোতে যেতে হতো না।’ ছাত্রলীগ কর্মীরা পড়াশোনা করবে, ক্যাম্পাসে থাকবে, তাদের ঠিকাদারি করতে হবে কেন? জবাবে অসীম বলেন, ‘সংগঠন পরিচালনা করতে অর্থের দরকার। তাছাড়া আমরা এখন আর আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন নই যে, মূল দলের নেতাদের কাছে হাত পাতব। সংগঠন চালাতে টাকা চাই। আর সেই টাকার জোগান আসার উপায় হচ্ছে ঠিকাদারি। তবে বেপরোয়া টেন্ডারবাজির অভিযোগ সঠিক নয়।’
No comments