মন্তব্য করার আগে ইতিহাসটা জানা দরকার by ইকতেদার আহমেদ
সুদূর অতীত থেকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছিল। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকরা বাংলা দখলের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে তাদের শাসনের সূচনা করে এবং সমগ্র ভারতবর্ষে তাদের শাসনক্ষমতার বিস্তৃতি ঘটাতে এক শতাব্দী সময় লেগে যায়। ১৭৫৭ সালে বাংলা ইংরেজদের পদাবনত হলেও দিল্লি তাদের হস্তগত হয় এর শত বছর পর অর্থাৎ ১৮৫৭ সালে। ইংরেজরা ভারতবর্ষে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সময় এখানে মুসলমানদের শাসনকার্য বলবৎ ছিল। ভারতবর্ষে ইংরেজদের আগমনের আগে মুসলিম শাসকরা ছয় শতাধিক বছর ধরে এ দেশটি শাসন করেন। মুসলিমদের আগমনের আগে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল বিচ্ছিন্নভাবে হিন্দু রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল। ভারতবর্ষের কিছু অঞ্চল কিছু কাল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজারাও শাসন করেন।
ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকরা হিন্দু শাসকদের পরাভূত করে এ দেশের শাসনক্ষমতা দখল করায় ইংরেজ শাসকরা এ দেশে তাদের শাসনক্ষমতার সূচনা ও বিস্তারে হিন্দুদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন। ইংরেজদের শাসনকালের সূচনালগ্ন থেকেই হিন্দুরা ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাতে থাকলে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য উভয় ক্ষেত্রে তারা এ দেশের অপর ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলমানদের চেয়ে প্রাধান্য পেতে থাকে। এ দেশের মুসলমানদের ইংরেজ শাসনের প্রথমদিকে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে অনীহা থাকলেও তাদের শাসনের শেষ দিকে সেই অনীহাভাব ছিল না।
ইংরেজ শাসনামলে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলায়ও হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস ছিল; তবে বাংলার পশ্চিমাংশ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, অপরদিকে বাংলার পূর্বাংশ অর্থাৎ পূর্ব বাংলায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ইংরেজ শাসনামলে কলকাতা বাংলার রাজধানী ছিল। সে সময় কলকাতাকে কেন্দ্র করেই কলকারখানা গড়ে উঠেছিল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। ইংরেজ শাসনামলে পূর্ব বাংলার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর ছিল। এতদাঞ্চলে কোনো শিল্পকারখানা গড়ে না উঠায় এবং পূর্ব বাংলার মানুষ, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায় শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসায় হিন্দুদের চেয়ে পশ্চাৎপদ হওয়ায় এ অঞ্চলের মুসলিম নেতাদের মধ্য থেকে বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল গঠনের দাবি ওঠে। উভয় বাংলার হিন্দু নেতারা প্রথম থেকেই এ দাবির বিরোধিতা করতে থাকেন। কিন্তু পূর্ব বাংলার মুসলমানদের অনগ্রসরতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদের পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চলের দাবিটি ইংরেজদের কাছে যৌক্তিক বিবেচিত হলে তারা পূর্ব বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে একটি পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইংরেজদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯০৫ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করা হয়। এ অঞ্চলটি তাত্ত্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে বাংলার নেতৃস্থানীয় এবং পূর্ব বাংলার কিছু হিন্দু নেতা তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাকারী হিন্দু নেতাদের অন্যতম ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার বড় ভাইয়ের কন্যাজামাতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র। বঙ্গভঙ্গ রবীন্দ্রনাথকে এতই ব্যথিত ও মর্মাহত করেছিল যে, ক্ষোভ, দুঃখ, অপমান ও অভিমানে বাংলার অখণ্ডতাকে অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসে বঙ্গভঙ্গের বছর অর্থাৎ ১৯০৫ সালে তিনি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এ গানটি রচনা করেন।
উভয় বাংলার নেতৃস্থানীয় হিন্দুদের আন্দোলন ও বিরোধিতার কারণে বঙ্গভঙ্গ স্থিতিশীল হতে পারেনি এবং এতদাঞ্চলের মুসলমানদের চরম হতাশা ও ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ইংরেজরা ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে। বঙ্গভঙ্গ রদের কারণে এতদাঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল তা প্রশমনে ইংরেজরা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইংরেজদের এ সিদ্ধান্তটিও রবীন্দ্রনাথসহ হিন্দু নেতাদের বাধার সম্মুখীন হয়। যাহোক সব বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভঙ্গ রদের ১০ বছরের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করতে পেরেছিল।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে এ দেশের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতার দাবি উচ্চারিত হতে থাকে। এ দেশের মানুষজন প্রথমে কংগ্রেসের পতাকাতলে সমবেত হয়ে স্বাধীনতার দাবি তোলে। অতঃপর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য মুসলিম লীগ থেকে পৃথক আবাসভূমির দাবি ওঠে। হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলের কংগ্রেস নেতারা প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলিমদের এ দাবিটির বিরোধিতা করলেও শেষ অবধি তাদের সে বিরোধিতা ফলপ্রসূ হয়নি।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারতবর্ষে মুসলমানদের জন্য যে পৃথক আবাসভূমির কথা বলা হয়, সেখানে এক বা একের অধিক মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উল্লেখ ছিল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ ভাগ করে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামক যে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হয়েছিল তা মূলত ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছিল। পূর্ব বাংলার মুসলমানরা জাতিগতভাবে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের জনগোষ্ঠী থেকে পৃথক হলেও ধর্মীয় জাতিসত্তাই প্রায় এক হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত ভারতবর্ষের দুটি পৃথক অঞ্চলকে একটি রাষ্ট্র কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল। যা হোক পাকিস্তানের সে রাষ্ট্র কাঠামোটি বেশি দিন টেকেনি। ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান ২৩ বছরের মাথায় বিভাজিত হয়ে জাতিসত্তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পত্তন ঘটায়।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী দল আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির সূত্রপাত নাও ঘটতে পারত। এ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কর্তৃক যে ছয় দফা দেয়া হয়েছিল তা পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামোকে স্বীকার করেই দেয়া হয়েছিল। নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা না পাওয়ার পেছনে তখনকার সামরিক শাসকরা যতটুকু না দায়ী ছিল, পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর দায় তার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম চলাকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ থাকলেও আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বক্ষণে আত্মগোপনে গেলেন না অথবা ভারতে আশ্রয় গ্রহণপূর্বক মুক্তি সংগ্রাম বা স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনায় আগ্রহী ছিলেন না তা অনুধাবন করতে হলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটি অধ্যয়ন অত্যাবশ্যক। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ গ্রন্থটি প্রকাশে উদ্যোগী হওয়ার কারণে দেশবাসী অনেক অজানা তথ্যসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মসম্মান ও ব্যক্তিত্ব কত প্রবল ছিল, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে তার বাবাকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে, আমার মনে হয় পাকিস্তান না আনতে পারলে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর বইটি পাঠান্তে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুকে ১৯৩৮ সালে, তিনি যখন ১৮ বছরের যুবক তখন গোপালগঞ্জের কিছু হিন্দু নেতা মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার, এ অভিযোগে জেলে যেতে বাধ্য করেছিলেন। হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানরা কীভাবে অবজ্ঞা ও উপেক্ষার শিকার তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, একদিনের একটি ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছিল, আজও সেটা ভুলি নাই। আমার এক বন্ধু ছিল ননী কুমার দাস। একসাথে পড়তাম, কাছাকাছি বাসা ছিল, দিনভরই আমাদের বাসায় কাটাত এবং গোপনে আমার সাথে খেতো। ও ওর কাকার বাড়ীতে থাকতো। একদিন ওদের বাড়ীতে যাই। ও আমাকে ওদের থাকার ঘরে নিয়ে যায়। ওর কাকিমাও আমাকে খুব ভালোবাসত। আমি চলে আসার কিছু সময়ের পর ননী কাঁদো কাঁদো অবস্থায় আমার বাসায় এসে হাজির। আমি বললাম ননী কি হয়েছে? ননী আমাকে বলল, তুই আর আমাদের বাসায় যাস না। কারণ, তুই চলে আসার পর কাকিমা আমাকে খুব বকেছে তোকে ঘরে আনার জন্য এবং সমস্ত ঘর আবার পরিষ্কার করেছে পানি দিয়ে ও আমাকেও ধুতে বাধ্য করেছে।
বঙ্গবন্ধুর আÍজীবনীমূলক গ্রন্থটির পাঠ থেকে জানা যায়, মুসলিম ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে তখনকার অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নির্দেশে এবং নিজ বিবেক দ্বারা তাড়িত হয়ে কলকাতার দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানদের জানমাল রক্ষায় তিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ গণ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শুধু তাই নয় দাঙ্গায় আক্রান্ত বিহারের মুসলিমদের উদ্ধারে তিনি পাটনায় ছুটে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে আহত
ও ক্ষতিগ্রস্তদের ট্রেনে করে আসানসোলে নিয়ে এসেছিলেন।
পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি সৃষ্টির জন্য যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের অধিকাংশই মুসলিম লীগের হয়ে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও আরও অন্যান্য দলের জন্ম হয়। বাংলাদেশের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থাকলেও দলটির নেতারা নিজ দেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করে মুক্তি বা স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করতে পারেননি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম ভারতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিসমাপ্ত না হলে আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম দীর্ঘায়ত হতো; তবে কত দিন বা কত মাস বা কত বছর দীর্ঘায়ত হতো তা বলা কঠিন।
আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দলগতভাবে মুসলিম লীগ ও জামায়াতের অবস্থান বঙ্গভঙ্গ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দর্শনের মতো ভারতের বিপক্ষে ছিল। আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মুসলিম লীগ ও জামায়াতের বহু নেতা মুক্তিযোদ্ধাদের তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছিলেন। ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে আমাদের পূর্ব বাংলার যেসব নেতা বঙ্গভঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের উত্তরসূরিরাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। যে দর্শনের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল এবং ভারতবর্ষ বিভাজিত হয়েছিল, সে দর্শন যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়; তবে সে একই দর্শন ভারতের অখণ্ডতার জন্যও হুমকিস্বরূপ। ভারতবিদ্বেষী বিএনপি ও জামায়াতের অনেক নেতাকে পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধী বলে আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু ইতিহাস অবলোকনে এ কথাটি ভুলে গেলে চলবে না, ভারত বিরোধিতা ও স্বাধীনতা বিরোধিতা এক নয়। ভারত বিরোধিতার কারণেই আমাদের পূর্বসূরিরা বঙ্গভঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এবং মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তিতে সফল হয়েছিলেন। এ সাফল্যের মধ্যে লুকিয়ে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ। তাই ভারতবিরোধীদের স্বাধীনতাবিরোধী বলা হলে তাতে আমাদের পূর্বসূরি যেসব নেতা বঙ্গভঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এবং পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের অবদান খাটো হয়ে যায়।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ; সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকরা হিন্দু শাসকদের পরাভূত করে এ দেশের শাসনক্ষমতা দখল করায় ইংরেজ শাসকরা এ দেশে তাদের শাসনক্ষমতার সূচনা ও বিস্তারে হিন্দুদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন। ইংরেজদের শাসনকালের সূচনালগ্ন থেকেই হিন্দুরা ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাতে থাকলে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য উভয় ক্ষেত্রে তারা এ দেশের অপর ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলমানদের চেয়ে প্রাধান্য পেতে থাকে। এ দেশের মুসলমানদের ইংরেজ শাসনের প্রথমদিকে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে অনীহা থাকলেও তাদের শাসনের শেষ দিকে সেই অনীহাভাব ছিল না।
ইংরেজ শাসনামলে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলায়ও হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস ছিল; তবে বাংলার পশ্চিমাংশ অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, অপরদিকে বাংলার পূর্বাংশ অর্থাৎ পূর্ব বাংলায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ইংরেজ শাসনামলে কলকাতা বাংলার রাজধানী ছিল। সে সময় কলকাতাকে কেন্দ্র করেই কলকারখানা গড়ে উঠেছিল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। ইংরেজ শাসনামলে পূর্ব বাংলার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর ছিল। এতদাঞ্চলে কোনো শিল্পকারখানা গড়ে না উঠায় এবং পূর্ব বাংলার মানুষ, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায় শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসায় হিন্দুদের চেয়ে পশ্চাৎপদ হওয়ায় এ অঞ্চলের মুসলিম নেতাদের মধ্য থেকে বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল গঠনের দাবি ওঠে। উভয় বাংলার হিন্দু নেতারা প্রথম থেকেই এ দাবির বিরোধিতা করতে থাকেন। কিন্তু পূর্ব বাংলার মুসলমানদের অনগ্রসরতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদের পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চলের দাবিটি ইংরেজদের কাছে যৌক্তিক বিবেচিত হলে তারা পূর্ব বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে একটি পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইংরেজদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯০৫ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে একটি প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করা হয়। এ অঞ্চলটি তাত্ত্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে বাংলার নেতৃস্থানীয় এবং পূর্ব বাংলার কিছু হিন্দু নেতা তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাকারী হিন্দু নেতাদের অন্যতম ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার বড় ভাইয়ের কন্যাজামাতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র। বঙ্গভঙ্গ রবীন্দ্রনাথকে এতই ব্যথিত ও মর্মাহত করেছিল যে, ক্ষোভ, দুঃখ, অপমান ও অভিমানে বাংলার অখণ্ডতাকে অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়াসে বঙ্গভঙ্গের বছর অর্থাৎ ১৯০৫ সালে তিনি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এ গানটি রচনা করেন।
উভয় বাংলার নেতৃস্থানীয় হিন্দুদের আন্দোলন ও বিরোধিতার কারণে বঙ্গভঙ্গ স্থিতিশীল হতে পারেনি এবং এতদাঞ্চলের মুসলমানদের চরম হতাশা ও ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ইংরেজরা ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে। বঙ্গভঙ্গ রদের কারণে এতদাঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল তা প্রশমনে ইংরেজরা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইংরেজদের এ সিদ্ধান্তটিও রবীন্দ্রনাথসহ হিন্দু নেতাদের বাধার সম্মুখীন হয়। যাহোক সব বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভঙ্গ রদের ১০ বছরের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করতে পেরেছিল।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে এ দেশের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্য থেকে স্বাধীনতার দাবি উচ্চারিত হতে থাকে। এ দেশের মানুষজন প্রথমে কংগ্রেসের পতাকাতলে সমবেত হয়ে স্বাধীনতার দাবি তোলে। অতঃপর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য মুসলিম লীগ থেকে পৃথক আবাসভূমির দাবি ওঠে। হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলের কংগ্রেস নেতারা প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলিমদের এ দাবিটির বিরোধিতা করলেও শেষ অবধি তাদের সে বিরোধিতা ফলপ্রসূ হয়নি।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারতবর্ষে মুসলমানদের জন্য যে পৃথক আবাসভূমির কথা বলা হয়, সেখানে এক বা একের অধিক মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উল্লেখ ছিল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ ভাগ করে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামক যে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হয়েছিল তা মূলত ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছিল। পূর্ব বাংলার মুসলমানরা জাতিগতভাবে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের জনগোষ্ঠী থেকে পৃথক হলেও ধর্মীয় জাতিসত্তাই প্রায় এক হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত ভারতবর্ষের দুটি পৃথক অঞ্চলকে একটি রাষ্ট্র কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিল। যা হোক পাকিস্তানের সে রাষ্ট্র কাঠামোটি বেশি দিন টেকেনি। ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান ২৩ বছরের মাথায় বিভাজিত হয়ে জাতিসত্তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পত্তন ঘটায়।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী দল আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির সূত্রপাত নাও ঘটতে পারত। এ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কর্তৃক যে ছয় দফা দেয়া হয়েছিল তা পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামোকে স্বীকার করেই দেয়া হয়েছিল। নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা না পাওয়ার পেছনে তখনকার সামরিক শাসকরা যতটুকু না দায়ী ছিল, পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর দায় তার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম চলাকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ থাকলেও আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বক্ষণে আত্মগোপনে গেলেন না অথবা ভারতে আশ্রয় গ্রহণপূর্বক মুক্তি সংগ্রাম বা স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনায় আগ্রহী ছিলেন না তা অনুধাবন করতে হলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটি অধ্যয়ন অত্যাবশ্যক। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ গ্রন্থটি প্রকাশে উদ্যোগী হওয়ার কারণে দেশবাসী অনেক অজানা তথ্যসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মসম্মান ও ব্যক্তিত্ব কত প্রবল ছিল, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে তার বাবাকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে, আমার মনে হয় পাকিস্তান না আনতে পারলে মুসলমানদের অস্তিত্ব থাকবে না। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর বইটি পাঠান্তে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুকে ১৯৩৮ সালে, তিনি যখন ১৮ বছরের যুবক তখন গোপালগঞ্জের কিছু হিন্দু নেতা মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার, এ অভিযোগে জেলে যেতে বাধ্য করেছিলেন। হিন্দুদের দ্বারা মুসলমানরা কীভাবে অবজ্ঞা ও উপেক্ষার শিকার তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, একদিনের একটি ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছিল, আজও সেটা ভুলি নাই। আমার এক বন্ধু ছিল ননী কুমার দাস। একসাথে পড়তাম, কাছাকাছি বাসা ছিল, দিনভরই আমাদের বাসায় কাটাত এবং গোপনে আমার সাথে খেতো। ও ওর কাকার বাড়ীতে থাকতো। একদিন ওদের বাড়ীতে যাই। ও আমাকে ওদের থাকার ঘরে নিয়ে যায়। ওর কাকিমাও আমাকে খুব ভালোবাসত। আমি চলে আসার কিছু সময়ের পর ননী কাঁদো কাঁদো অবস্থায় আমার বাসায় এসে হাজির। আমি বললাম ননী কি হয়েছে? ননী আমাকে বলল, তুই আর আমাদের বাসায় যাস না। কারণ, তুই চলে আসার পর কাকিমা আমাকে খুব বকেছে তোকে ঘরে আনার জন্য এবং সমস্ত ঘর আবার পরিষ্কার করেছে পানি দিয়ে ও আমাকেও ধুতে বাধ্য করেছে।
বঙ্গবন্ধুর আÍজীবনীমূলক গ্রন্থটির পাঠ থেকে জানা যায়, মুসলিম ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে তখনকার অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেবের নির্দেশে এবং নিজ বিবেক দ্বারা তাড়িত হয়ে কলকাতার দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানদের জানমাল রক্ষায় তিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ গণ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শুধু তাই নয় দাঙ্গায় আক্রান্ত বিহারের মুসলিমদের উদ্ধারে তিনি পাটনায় ছুটে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে আহত
ও ক্ষতিগ্রস্তদের ট্রেনে করে আসানসোলে নিয়ে এসেছিলেন।
পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি সৃষ্টির জন্য যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের অধিকাংশই মুসলিম লীগের হয়ে কাজ করেছিলেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও আরও অন্যান্য দলের জন্ম হয়। বাংলাদেশের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থাকলেও দলটির নেতারা নিজ দেশের ভূখণ্ডে অবস্থান করে মুক্তি বা স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করতে পারেননি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম ভারতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিসমাপ্ত না হলে আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম দীর্ঘায়ত হতো; তবে কত দিন বা কত মাস বা কত বছর দীর্ঘায়ত হতো তা বলা কঠিন।
আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দলগতভাবে মুসলিম লীগ ও জামায়াতের অবস্থান বঙ্গভঙ্গ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দর্শনের মতো ভারতের বিপক্ষে ছিল। আমাদের মুক্তি তথা স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মুসলিম লীগ ও জামায়াতের বহু নেতা মুক্তিযোদ্ধাদের তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছিলেন। ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে আমাদের পূর্ব বাংলার যেসব নেতা বঙ্গভঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের উত্তরসূরিরাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। যে দর্শনের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল এবং ভারতবর্ষ বিভাজিত হয়েছিল, সে দর্শন যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়; তবে সে একই দর্শন ভারতের অখণ্ডতার জন্যও হুমকিস্বরূপ। ভারতবিদ্বেষী বিএনপি ও জামায়াতের অনেক নেতাকে পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতাবিরোধী বলে আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু ইতিহাস অবলোকনে এ কথাটি ভুলে গেলে চলবে না, ভারত বিরোধিতা ও স্বাধীনতা বিরোধিতা এক নয়। ভারত বিরোধিতার কারণেই আমাদের পূর্বসূরিরা বঙ্গভঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এবং মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তিতে সফল হয়েছিলেন। এ সাফল্যের মধ্যে লুকিয়ে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ। তাই ভারতবিরোধীদের স্বাধীনতাবিরোধী বলা হলে তাতে আমাদের পূর্বসূরি যেসব নেতা বঙ্গভঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এবং পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের অবদান খাটো হয়ে যায়।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ; সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
No comments