রাজনীতির আলোকবর্তিকা by এমএম হেলাল উদ্দিন
তিনি ছিলেন একাধারে আদর্শ শিক্ষক, জনপ্রিয় রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা। মানুষের অতি কাছের ছিলেন তিনি। ছিলেন শ্রমিকদের বন্ধু। তার আলোয় আলোকিত হয়েছিল গোটা গাজীপুর। ঘুণেধরা সমাজে আর পচনশীল রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একেবারেই ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান রাজনীতিক। নীতি-নৈতিকতা ছিল তার কাছে সবার আগে। তাই তো সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতিকে পেছনে ফেলে তিনি ছুটেছেন অবিরাম সাধারণ মানুষের কাছে। জয় করেছেন তাদের মন, তাদের ভালোবাসা। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই তিনি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অস্ত্রের ঝনঝনানির বিরুদ্ধে। মাদকের বিরুদ্ধে তার ছিল শক্ত অবস্থান। সব মিলিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের এতটাই আপনজন হয়ে উঠেছিলেন যে গাজীপুরের রাজনীতিতে তার বিকল্প অন্য কাউকে ভাবা যায় না। আর এটাই হয়েছে তার জন্য কাল। এ জন্যই তিনি হয়ে যান অনেকের ঈর্ষার কারণ। যার ফলে অকালেই প্রাণ দিতে হয়েছে তাকে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়া এই নির্লোভ, নিঃস্বার্থ, পরোপকারী মানুষটি এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিটি বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়ে। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় তিনি ছিলেন আপসহীন। এতক্ষণ যার কথা বলা হল, তিনি হচ্ছেন নির্লোভ রাজনীতির পথিকৃৎ শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার। যার শুভ জন্মদিন আজ।
অন্যায়, অবিচার বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল খুবই স্পষ্ট। নিজের নির্বাচনী এলাকার যেখানেই দেখেছেন মাদকের আড্ডা কিংবা মাদকের হাট, সেখানেই হানা দিয়েছেন। একইভাবে তিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হানাহানি সবকিছুকে মোকাবেলা করেছেন কঠোর হাতে। নিজ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কোনো প্রভাব পড়ুক এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে তিনি কখনোই প্রশ্রয় দেননি। শুধু তাই নয়, স্থানীয় প্রশাসন যাতে স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য তাদের সহযোগিতা করেছেন অবলীলায়। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রশাসনে তার কোনো প্রভাব ফেলতে দেননি। এসব কারণে তিনি দ্রুততম সময়ে এলাকার মানুষ তথা প্রশাসন সবার কাছে হয়ে ওঠেন একজন জনপ্রিয় রাজনীতিক। অন্যদিকে মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজসহ সব ধরনের অপরাধীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
২০০৪ সালের ৭ মে পূর্বপরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। এজন্য বেছে নেয়া হয় টঙ্গী পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানকে। ওই টঙ্গী স্টেশন রোডের নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন প্রধান অতিথি। মাঠের একপাশে শামিয়ানা টেনে করা হয়েছিল মঞ্চ। আর মঞ্চের পেছনে ছিল শুধু পর্দা। দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে যখন কমিটি ঘোষণা শেষ হয়েছে ঠিক তখনই পেছনের দেয়াল টপকে আসা ১৫-২০ জনের একদল সশস্ত্র ঘাতক পর্দার আড়াল থেকেই এলোপাতাড়ি গুলি করে মঞ্চে থাকা নেতাদের লক্ষ্য করে। তখন মঞ্চে উপবিষ্ট নেতারা মাটিতে শুয়ে পড়লেও আহসান উল্লাহ মাস্টার মঞ্চের পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে তোরা কারা? ঠিক তখনই তার বুকে ও পিঠে বেশ কয়েকটি গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গাজীপুরের প্রিয় নেতা। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজধানীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও পরে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।
আহসান উল্লাহ মাস্টার নিহত হওয়ার পর সরকারি প্রেসনোট দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যা শুধু হাস্যকরই নয়, মিথ্যার বেসাতিও বটে। ওই প্রেসনোট দিয়ে সরকার কার্যত নিজেদের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছিল। আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের বিষয়টি যখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন প্রেসনোটে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে যিনি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। তার এমন অনাকাক্সিক্ষত ও অসময়ে চলে যাওয়া আজও মেনে নিতে
পারেননি গাজীপুরের মানুষ। তার অভাব আজও পূরণ হয়নি। তবে তিনি বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়ে। বেঁচে থাকবেন আজীবন, যতদিন থাকবে পৃথিবী।
এমএম হেলাল উদ্দিন : লেখক ও সাংবাদিক
অন্যায়, অবিচার বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল খুবই স্পষ্ট। নিজের নির্বাচনী এলাকার যেখানেই দেখেছেন মাদকের আড্ডা কিংবা মাদকের হাট, সেখানেই হানা দিয়েছেন। একইভাবে তিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হানাহানি সবকিছুকে মোকাবেলা করেছেন কঠোর হাতে। নিজ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কোনো প্রভাব পড়ুক এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে তিনি কখনোই প্রশ্রয় দেননি। শুধু তাই নয়, স্থানীয় প্রশাসন যাতে স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য তাদের সহযোগিতা করেছেন অবলীলায়। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রশাসনে তার কোনো প্রভাব ফেলতে দেননি। এসব কারণে তিনি দ্রুততম সময়ে এলাকার মানুষ তথা প্রশাসন সবার কাছে হয়ে ওঠেন একজন জনপ্রিয় রাজনীতিক। অন্যদিকে মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজসহ সব ধরনের অপরাধীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
২০০৪ সালের ৭ মে পূর্বপরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। এজন্য বেছে নেয়া হয় টঙ্গী পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানকে। ওই টঙ্গী স্টেশন রোডের নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন প্রধান অতিথি। মাঠের একপাশে শামিয়ানা টেনে করা হয়েছিল মঞ্চ। আর মঞ্চের পেছনে ছিল শুধু পর্দা। দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে যখন কমিটি ঘোষণা শেষ হয়েছে ঠিক তখনই পেছনের দেয়াল টপকে আসা ১৫-২০ জনের একদল সশস্ত্র ঘাতক পর্দার আড়াল থেকেই এলোপাতাড়ি গুলি করে মঞ্চে থাকা নেতাদের লক্ষ্য করে। তখন মঞ্চে উপবিষ্ট নেতারা মাটিতে শুয়ে পড়লেও আহসান উল্লাহ মাস্টার মঞ্চের পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে তোরা কারা? ঠিক তখনই তার বুকে ও পিঠে বেশ কয়েকটি গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গাজীপুরের প্রিয় নেতা। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজধানীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও পরে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।
আহসান উল্লাহ মাস্টার নিহত হওয়ার পর সরকারি প্রেসনোট দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যা শুধু হাস্যকরই নয়, মিথ্যার বেসাতিও বটে। ওই প্রেসনোট দিয়ে সরকার কার্যত নিজেদের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছিল। আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের বিষয়টি যখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন প্রেসনোটে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে যিনি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। তার এমন অনাকাক্সিক্ষত ও অসময়ে চলে যাওয়া আজও মেনে নিতে
পারেননি গাজীপুরের মানুষ। তার অভাব আজও পূরণ হয়নি। তবে তিনি বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়ে। বেঁচে থাকবেন আজীবন, যতদিন থাকবে পৃথিবী।
এমএম হেলাল উদ্দিন : লেখক ও সাংবাদিক
No comments